https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদমন্ত্রের তুলনামূলক ভাষ্য বিশ্লেষণ

Friday, November 10, 2017
                       
          
সায়নাচার্য্য পৌরাণিকদের অত্যন্ত্য জনপ্রিয় বেদ ভাষ্যকার তাহার ভাষ্যের কদর্য কতটুকু তাহা আমরা দুই একটি বেদমন্ত্র আলোচনা করে, তুলনাত্মক বিশ্লেষণ করে দেখাবো -
ডাঃ সেনগুপ্ত যাদের চরনচিহ্ন অনুসরণ করে কয়েকটি বেদমন্ত্র তুলে দিয়ে সাধারণ পাঠক সমাজকে ধোঁকা দিতে চাইছেন তা কতদূর শূণ্যগর্ভ !!

১। আগধিতা পরিগধিতা যা কোশীকেব জঙ্গহে।
দদাতি মহ্যং যাদুরী যাশূনাং ভোজ্যা শতা ।।(ঋগ্বেদ ১/১২৬/৬)


যে বেদকে আমরা ঈশ্বরীয় জ্ঞাণ বলে মনে করি , প্রাচীন ভাষ্যকারগণ এই ঋক্ মন্ত্রটির কিরকম কদর্থ করে হিন্দুধর্মের গৌরবহানি করেছে দেখুন-

ডাঃ সেনগুপ্তের আদর্শ সায়নাচার্য্যের  ভাষ্য :- 

"সংভোগায় প্রার্থিতো ভাবয়ব্যঃ স্বভার্য্যয়াং রোমশাম্ অপৌঢ়েতি বৃদ্ধয়া পরিহসন্নাহ (ভোজ্যা) ভোগযোগ্যৈষা (আগধিতা) আসমন্তাৎ গৃহীতা স্বীকৃতা তথা (পরিগধিতা) পরিতো গৃহীতা। আদরাতিশয়ায় পুনর্বচনম্। গধ্যং গৃহ্যাতেরিতি যাস্কঃ । যদ্ধা (আগধিতা) আ সমন্তান্মিশ্রয়ন্তো আন্তরং প্রজনেন বাহ্যং ভূজাদিভিরিত্যর্থঃ। গধ্যতির্মিশ্রীভাব কর্ম্মেতি য্যস্কঃ । পূর্বস্মিন পক্ষে পুরুষস্য প্রধান্যম্, উক্তরস্মিংন্তু যোষিতঃ ইতি ভেদঃ। কিদৃশী সা (যা) (জংগহে) কদাচিদপি ন বিমুঞ্চতি, অত্যাগে দৃষ্টান্তঃ ( কশীকেব ) কশীকা নাম সুতবৎসা নকুলী সা যথা পত্যা সহ চিরকালং ক্রীড়তি ন কদাচিদপি বিমুঞ্চতি তথৈযাপি। কিংচ ভোজৈষা (যাদুরী) যাদুরিত্যুদকনাম্। রেতলক্ষণমুদকং প্রভূতং রাতি দদাতীতি যাদুরী বহুরেতোযুক্তেত্যর্থঃ। তাদৃশী সতী (যাশূনাম্) সম্ভোগানাম্ যশ ইতি প্রজননাম্ তৎ সম্বন্ধীনি কর্ম্মানি যাশূনি ভোগাঃ তেষাং (শতা) শতানি অসংখ্যাতানি (মহ্যম্) দদাতি। 
( সায়ণকৃত ঋঘ্বেদেভাষ্য , তিলকসংস্থান )।

.
                         




ঐ সায়ণ ভাষ্যের সম্পূর্ণ বাংলা অনুবাদ দিতে প্রবৃত্তি হয় না , বেদমন্ত্রটির এমনি অশ্লীল কদর্থ করা হয়েছে এখানে। তবুও কিছুটা ভাবানুবাদ দিচ্ছি এইজন্য যে তথাকথিত "শাস্ত্রমর্য্যাদারক্ষাকারী" "হিন্দু ধর্মের রক্ষক" বলে পরিচয়দানকারী ডাঃ সেনগুপ্তের আদর্শস্থানীয়রা কিভাবে বেদের অপব্যখ্যা করে হিন্দুধর্ম্মের গৌরবহানি করেছে তা জানা বোঝার সুবিধা হবে -

সায়ণভাষ্যের ভাবানুবাদ-
"ভাবয়ব্য রাজার পত্নী রোমশা সম্ভোগ প্রার্থিনী হইলে পর রাজা তাহাকে অপৌঢ়া (অপ্রাপ্তরজধর্ম্মা) জানিয়া পরিহাস করিয়া বলিতেছেন যে, এই সম্ভোগযোগ্যা রমণী উত্তমরূপে আলীঙ্গনবদ্ধা হইয়া শতবৎসা নকুলীর ন্যায় দীর্ঘকাল পর্যন্ত রমন করে। বসুরেতযুক্তা এই রমণী আমাকে (স্বনয়রাজাকে) বসুবার সম্ভোগসুখ প্রদান করে ।" 

স্কন্দস্বামী, দূর্গাচার্য্য এবং বেঙ্কটমাধবও ঠিক এইরকম অশ্লীল অর্থ করেছেন। বেঙ্কটমাধব আবার তাঁর উর্বর মস্তিষ্কে- ঐ ঋক্ মন্ত্রের সঙ্গে একটি আখ্যায়িকাও যোজনা করেছেন। তিনি বলেছেন - "

বৃহস্পতি নিজ কন্যা রোমশাকে ভাবয়ব্য রাজার সহিত বিবাহ দিয়েছিলেন। ইন্দ্র ইহা জানিতে পারিয়া নিজ পত্নী সহ বন্ধু ভাবয়ব্যের নিকট আগমন করিলেন। রাজা প্রেমসহকারে তাহাদের সৎকার করিলেন। রোমশাও শ্রদ্ধা সহকারে উভয়ের চরণস্পর্শ করিয়া প্রণাম করিলেন। ইন্দ্র তখন বন্ধুত্বের খাতিরে রোমশাকে জিজেস করিলেন- " রোমশা ! তোমার নিম্নাংশে কেশ উৎপন্ন হইয়াছে তো ?" রোমশা উত্তর দিলেন- " তুমি নিকটে আসিয়ে স্পর্শ করিয়া দেখ " [ বেঙ্কটমাধব কৃতা "ঋগর্থ দীপিকা, "ডাঃ লক্ষনস্বরূপ কর্তৃত্ফ সম্পাদিত, ২য় ভাগ ]
.
কিরকম কদর্যপূর্ণ ব্যখ্যা দেখুন !! এরই ফলে পরবর্ত্তীকালে ধূর্ত্তদের প্রণীত পুরাণগুলিতে আজগুবি অশ্লীল কথার সমাবেশ ঘটেছে। এজন্যই পাশ্চাত্য পন্ডিতদের কাছে বেদাভিমানী হিন্দুধর্ম্ম হেয় হয়েছে। অর এইজন্যই পুরাণপ্রিয় ডাঃ সেনগুপ্তের দল ঐসব কদর্থপূর্ণ বেদভাষ্যকেই আদর্শ ধরে হিন্দুধর্ম্মকে আজ মাটি কাঠ পাথর পূজায় পরিণত করেছেন। যাইহোক, ঐ বেদার্থের ঐরূপ অশ্লীল অর্থ দেখে Griffith সাহেব এইটির এবং এর পরের মন্ত্রটির (ঋ ১/১২৬/৭) ইংরেজী অনুবাদ করতেও লজ্জা পেয়েছেন। পরিশিষ্ঠভাবে ল্যাটিন অনুবাদ দিয়ে মন্তব্য করেছেন-- " They look like fragment of liberal, shepherd's love song." [Vide- Griffith's Hymns of the Rigveda,' Vol 1.]



                    


এইবার দেখুন মহর্ষি দয়ানন্দ ঐ ঋক্ মন্ত্রটির কীরূপ অপূর্ব মর্ম উদ্ধার করেছেন--
তাঁকে সমাধিজাত প্রজ্ঞা প্রভাবে-

"কৈঃ কাহত্র রাজ্যেহবশ্যং প্রাপ্ত্যব্যেতত্রাহ-যা (আগধিতা) সমন্তাদ্ গৃহীতা। গধ্যং গৃহ্যাতে (নিরুক্ত ৫/১৫) (পরিগধিতা) পরিতঃ সর্ব্বতঃ গধিতা শুভগুণের্যুক্তা নীতিঃ গধ্যতিমিশ্রীভাবকর্মা। নিরু ৫/১৫। (জংগহে) অত্যন্তং গ্রহীতব্যে (কশীকা ইব) যথা তাড়নাথং কশীকা (যাশূনাং) প্রযতমানানং। অত্র যসু প্রযত্নে ধাতোবার্হুলকাদন প্রত্যয়ঃ সস্য (শশ্চ যাদুরী) প্রযত্নশীপা (শতা) শতানি অসংখ্যাতানি বসূনি (ভোজ্যা) ভোত্তুং যোগ্যানি (মহ্যম) (দদাতি) সা সর্বৈঃ স্বীকার্য্যা"। 

এর ভাবার্থঃ- অত্রোপমালঙ্কারঃ- যয়া নীত্যাহসংখ্যাতানি সুখানি স্যুঃ সা সর্বঃ সম্পাদনীয়া। অর্থাৎ, 
যে নীতিতে অসঃখ্য সুখ হয়, ঐ নীতিই সকলের গ্রহণ করা উচিৎ । যেমন চাবুক দ্বারা দুষ্ট অশ্বকে বশে রাখা হয়, তেমনি যেরূপ উত্তম নীতিতে দুষ্ট গুণগুলিকে বা দুর্জন লোকদিগকে বশে রাখা যায় তাহাই অবলম্বনীয়। 



আরও একটি গভীর অর্থ পরিলক্ষণীয়ঃ- সাধক ভগবানের নিকট অন্তরের আকুতি জানাচ্ছেন- " হে প্রভু। অন্তরস্থ দুই খল (ষড়রিপু) বশীভূত করে তোমার সমীপস্থ হওয়া দুঃসাধ্য। তুমিই কৃপা করে আমার হৃদয়ে প্রকাশ হও, তোমার দিব্য চিদ্জ্যোতির ধারা আমার মনকে স্পর্শ করুক' (  পুরাণপ্রিয়দের কদর্থ অনুযায়ী 'নিম্নাংশ স্পর্শ' করা নয়!!)


সুধী পাঠক এইবার বিচার করে দেখুন মহর্ষি দয়ানন্দের ভাষ্যলোকে কী অপূর্ব সুন্দর অর্থ আমাদের সামনে প্রকট হল। ডাঃ সেনগুপ্ত, সীতারামদাস, "উদ্বোধনের" পুণ্য মিত্র, সারস্বত গৌড়িয়দের অবশ্য এই অর্থ রুচিকর হবেনা ।
.
এর পরের ঋগ্বেদ মন্ত্রটিও আপনাদের কাছে পর্য্যালোচনা করা হচ্ছে, দয়া করে অনুধাবন করুন-

২।উপোপ মে পরামৃশ মা ম দ্রভ্রাণি মন্যথাঃ।
সর্ব্বাহমস্মি রোমসা গন্ধারীণামিবাবিকা।। 
(ঋ ১/১২৬/৭)

এই মন্ত্রেরও সায়ানাচার্য্যাদি ভাষ্যকারগণ কি রকম অশ্লীল ব্যখ্যা করে হিন্দুধর্ম্মের গৌরব তথা বেদের গৌরবহানি করেছেন দেখুনঃ--

সায়ণকৃত ভাষ্যঃ- রোমশা নাম বৃহস্পতেঃ পূত্রী ব্রহ্মবাদিনী পরিহসন্তং স্বপতিং প্রাহ ভোঃ পতে। (মে) মাং দ্বিতীয়ার্থে চতুর্থী (উপোপ) দ্বিতীয় উপশব্দঃ পাদপূরণঃ। উপত্য (পরামৃশঃ) সম্যক স্পৃশ ভোগযোগ্যাম্ অবগচ্ছেত্যর্থঃ। যদ্বা মে মম গোপনীয়মঙ্গম্ (উপোপ পরামৃশ) অত্যন্তমান্তরং স্পৃশ। পরামর্শাভাবশঙ্কাং নিবারয়তি (মে) মদঙ্গানি রোমানি (দভ্রাণি) ( মা মন্যথাঃ) মা বুধস্ব্য। অদভ্রত্বমেব বিশদয়তি অহং (রোমশা) বহুরোমযুক্তা অস্মি যতোহহমীদৃশী অতঃ (সর্বা) সম্পূর্ণাবয়বাস্মি। রোমসত্বে দৃষ্টন্তঃ। গন্ধারীণাম্ অবিকা ইব। গন্ধারাদেশাঃ তেষাং সম্বন্ধিনী অবিজাতিরিব। তদ্দেশস্থা অবয়োমেষা যথা রোমশাঃ তথা অহমস্মি। যদ্বা (গন্ধারীনাম্) গর্ভধারিণাম্ স্ত্রীণাং অবিকা অত্যন্তং তর্পয়ন্তী যোনিরিব। তাসাম্ আপ্রসবং রোমাদি বিকর্ত্তনস্য শাস্ত্রে নিষিদ্ধত্বাৎ যানিঃ রোমশা ভবতি অতঃ সা উপমীয়তে। যতোহহমীদৃশী অতো মাম্ অপৌঢ়াং মা অববুদ্ধস্বেত্যর্থঃ।। [ ঋগ্বেদ সংহিতা । সায়ণভাষ্য। তিলকবৈদিক সংস্থান প্রকাশিত ১ম খন্ড ]



                    


.
অত্যন্ত অশ্লীল এই কদর্থ রুচিবিরুদ্ধ হলেও পাঠকদের অবগতির জন্য এর ভাবার্থ দিতে বাধ্য হচ্ছি-

"স্বামীর সঙ্গে পরিহাস করতে করতে রোমশা তাঁকে বলছেন, তুমি আমার গোপনীয় নিম্নাংশ স্পর্শ করে দেখো- সেখানের কেশগুলি ছোট বলে ভেবো না । আমার রোমগুলি বড় বড়, কাজেই সম্ভোগযোগ্যা ইত্যাদি"।


স্কন্দস্বামী, দুর্গাচার্য্য, বেঙ্কটমাধবের ভাষ্যও ঐরূপ কুরুচিপূর্ণ বিকৃত। Griffith সাহেব এদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে যেমন এর ইংরাজী অনুবাদ করতে লজ্জাবোধ করেছেন, তেমনি "ভারতীয় বিদ্যাভবন" (বোম্বাই) হতে প্রকাশিত "VEDIC AGE" নামক পুস্তকে ঐ মন্ত্রের টিপ্পনী লেখা হয়েছে- "This dismal hymn ends with two more verses notable only for their buthus extreme obscenity."


অর্থাৎ,- "এই নিরাশজনক সুক্তের শেষ দুই মন্ত্র অশ্লীলতার পরকাষ্ঠার জন্য কুখ্যাত।"

সায়ণাচার্য্য প্রভৃতির কদর্য্য বেদ ব্যখ্যার ফলে শিক্ষিত মহলেও কিভাবে বেদ সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারনা সংক্রমিত হয়েছে ভেবে দেখুন। কিন্তু তারা দয়া করে মহর্ষি দয়ানন্দের ব্যখ্যা অনুশীলণ করতেন তাহলে বুঝতে পারতেন, ভারতীয় সংস্কৃতির রত্নভান্ডার বেদে কোনদিন অশ্লীল কথা থাকতে পারে না । ডাঃ সেনগুপ্ত জাতীয় পন্ডিতরাজরাই এজন্য দায়ী। 
মহর্ষি দয়ানন্দ ঐ মন্ত্রের কী সুন্দর মর্ম্ম উদ্ধার করেছেন দেখি আসুন-- 

"পুনঃ রাজ্ঞী কিং কুর্য্যাদিত্যাহ -- হে পতে রাজন ! যাহহং (গন্ধারীণাম্ ইব অবিকা) পৃথিবীরাজ্যধর্ত্রীণাং মধ্যে রক্ষিকা (রোমশা) প্রশস্তলোমা সর্ব্বা অস্মি তস্যা মে গুণান্ (পরামৃশ) বিচারয় (মে) (দভ্রাণি) কর্ম্মানি (মা) (উপোপ) অতি সমীপত্বে (মন্যথাঃ) জানীথাঃ।।

অস্যভাবার্থঃ- রাজ্ঞী রাজানং প্রতি ব্রূয়াৎ ভবতো ন্যূনা নাস্মি। যথা ভবান্ পুরুষাণাং ন্যায়াধীশোহস্তি তথাহং ন্যায়কারিণী ভবামি। 
অর্থাৎ- রাণী রাজাকে বলছেন- "তুমি আমার গুণের বিচার করে দেখ। আমাকে তুচ্ছ ভেবো না। আমার কর্মক্ষমতাকে ছোট করে দেখো না। আমি তোমার চেয়ে কোন অংশে ন্যূন নই। যেমন তুমি পুরুষদের পক্ষে ন্যায়কারী, তেমনি আমিও নারীদের জন্যে ন্যায়কারিণী, স্ত্রীজাতির হিতসাধনে সমর্থা।

         


সুধী পাঠক, বিচার করে দেখুন ঐ মন্ত্রে অশ্লীলতার গন্ধমাত্র নেই। পতিপত্নী সংবাদছলে বেদে ঐখানে কিরূপ উচ্চ ব্যবহারিক শিক্ষা এবং পুরুষের সঙ্গে নারীরও যে সমান যোগ্যতা ও অধিকার আছে , তারই ভাব প্রকাশিত হয়েছে। 
ডাঃ নলিনীরঞ্জন সেনগুপ্তদের বিন্দুমাত্র সত্যনিষ্ঠা, বেদে শ্রদ্ধা এবং শাস্ত্রজ্ঞান থাকলে ভারতীয় সংস্কৃতির গৌরব মহর্ষি দয়ানন্দকে হিন্দুধর্ম্মের রক্ষক বলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন। শ্রী অরবিন্দ সায়ণাচার্য্যদির ঐরূপ বিকৃত ভাষ্যের নমুনা দেখে পৌরাণিক পন্ডিত এবং তদীয় অনুচর বর্গের হস্তে হিন্দুধর্ম্মের লাঞ্ছনা দেখে অত্যন্ত ব্যাথিত হয়েছিলেন। তাই মহর্ষির ঐরূপ অপূর্ব মর্মব্যখ্যা দেখে সশ্রদ্ধভাবে বলেছেন--

"Immediately the whole character of the Veda is fixed in the sense Dayananda gave to it; the merely ritual, mythological, polytheistic interpretation of Sayana collapse, the merely meteorological and naturalistic European interpretation collapse. We have instead a real scripture, one of the world's sacred books and the divine word of a noble and lofty religion."
.
সুখের বিষয় ঐসব গোড়াদের প্রাণপন প্রচেষ্টাতেও সকলের দৃষ্টি আচ্ছন্ন হয়নি। Whetney, J.Muir, Biber, Mr. Roth প্রভৃতি বিদেশী পন্ডিতগণও বেদে যে উত্তুঙ্গ ভাবসম্পদ লুকিয়ে আছে, তা ক্রমে ক্রমে বুঝতে পারছেন। Mr. Roth তাঁর কোষগ্রন্থের প্রথমভাগে বলছেন-- "বেদের উদ্দেশ্য সায়ণাদিকৃত অর্থ গ্রহণ করা নয়। বরং প্রকৃতপক্ষে বৈদিক ঋষিদের মনে যে গভীর অর্থ নিহিত ছিল তাই আবিষ্কার করতে হবে। সায়ণাচার্য্যের সমসাময়িককালে যে ভাবধারা (বলাই বাহুল্য, তা পুরাণ প্রদর্শিত বহিরাচার, জড়পূজা, কর্ম্মকান্ড ইত্যাদি) ছিল, তাতে প্রভাবিত হয়ে তারই প্রতিবিম্ব তিনি বেদের মধ্যে দেখতে চেষ্টা করেছেন। এইভাবে সত্যকার বেদের মর্ম্ম সকল বিদ্বান ভুলতে বসেছিলেন ইত্যাদি। 
দয়ানন্দই প্রথম বেদের মধ্য থেকে মহান্ আধ্যাত্ম ভাবসম্পদ সকলের সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এবারে আসুন আমরা মহর্ষি দয়ানন্দের সেই মহনীয় ভাবপূর্ণ ভাষ্যালোকে বুঝতে চেষ্টা করি-- ডাঃ সেনগুপ্ত তদীয় সায়াণাচার্য্যকে আশ্রয় করে বেদের যে মন্ত্রগুলি দ্বারা তথাকথিত "শাস্ত্রমর্য্যাদা রক্ষা" নামক কদর্য্য পুস্তকে মূর্ত্তিপূজা ও অবতারবাদ সমর্থন করবার অপচেষ্টা করেছেন, তা কতদূর দূরভিসন্ধিপূর্ণ, কদর্থময় এবং বিভ্রান্তিমূলক।
ডাঃ সেনগুপ্ত নিম্নলিখিত বেদমন্ত্রটি সাধারণকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য মূর্ত্তিপূজার অনুকূলে উদ্ধৃত করেছেন --
.
অদো যদ্দারু প্লবতে সিন্ধোঃ পারেহপুরুষম্।
ভদারভস্ব দুর্হণো তেন গচ্ছ পরস্তুরম্।। 
(ঋ ১০/১
৫/৩)
সায়ণাচার্য্য ব্যখ্যা করিয়াছেন সমুদ্রতীরে দারুমূর্ত্তি। পুরুষোত্তম্ বিগ্রহের মূর্ত্তি।"



.
জবাবঃ- সায়ণাচার্য্যের ভাষ্যের নমুনা পূর্বেই আপনারা দেখেছেন। 'সমুদ্র, দারু' দেখেই পুরাণপ্রিয় মূর্ত্তিপূজকের দল--শ্রীমতি যেমন ময়ূরপুচ্ছ এবং কদম্বগাছ দেখলেই কৃষ্ণ স্মরণে ব্যকুলা হতেন, তেমনি পুরীর সমুদ্রতীরে দারুমূর্ত্তি জগন্নাথের অনুধ্যানে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন !! কিন্তু বেদের মর্ম্ম এখানে তা নয়। ঐ মন্ত্রের দেবতা অর্থাৎ প্রতিপাদ্য বিষয় "অলক্ষ্মীঘ্নম" অর্থাৎ "দারিদ্র্যনাশ"। মন্ত্রের দেবতা এবং পূর্ব প্রসঙ্গের সঙ্গতি বজায় রেখে মর্ম বুঝতে হয়। কাষ্ঠময় জাহাজের সাহায্যে সমুদ্রপথে বানিজ্য করে মানুষের দারিদ্র কিভাবে দূর হতে পারে - সেই বিষয়েই ঈঙ্গিত করা হয়েছে এখানে।

যথার্থ ভাবার্থ-- এই যে (অদো) কাষ্ঠময় জাহাজ এতে ভাসমান হও (প্লবতে)। এই বাস্পযান বিনা লোকের সাহায্যেই (অপুরুষং) (অর্থাৎ লোক দিয়ে টানতে হবে না) বাষ্পের দ্বারাই সমুদ্রের পরপারে (সিন্ধোঃ পারে) নিয়ে যেতে সমর্থ। দৃঢ মজবুত করে ঐ বাস্পযান প্রস্তুত করে , তার আশ্রয়ে দূর দূর দেশে সমুদ্রপথে যাত্রা কর। এই বানিজ্যের দ্বারাই তোমার দারিদ্র নাশ হবে।



.



আমাদের আর্য্য পূর্বপুরুষগণ যে বাস্পযানের(জাহাজের) ব্যবহার জানতেন, তাঁদের এই বিজ্ঞান তত্ত্বের (The knowledge of science) গৌরবময় পরিচয়-- এই মন্ত্রে প্রকাশ পাচ্ছে। এই মন্ত্রের আরও একটি গভীর আধ্যাত্মিক অর্থ আছেঃ-
সমুদ্রের বুকে একখন্ড কাষ্ঠ যেমন অসহায় হয়ে তরঙ্গের আঘাতে ভেসে চলে, তেমনি এই ভবসমুদ্রে কর্ম্ম তরঙ্গের অভিঘাতে জীবও জন্ম হতে জন্মান্তরে ঘুরে বেড়াচ্চে। এই ভবসমুদ্রের ওপারে (সিন্ধোঃ পারে) নিত্য পুরুষ স্বয়ং প্রকাশিত। কাষ্ঠময় জাহাজের সাহায্যে (অদো) যেমন সমুদ্র অতিক্রম করা যায়, বানিজ্য করে সম্পদ লাভ হয়, তেমনি মানুষ যদি প্রজ্ঞা ও তপঃশক্তিতে আত্মার উৎক্রমণ সেই দিব্যপথে ঘটাতে পারে , তার আধ্যাত্ম সম্পদ লাভ কবে। ভব সমুদ্রের কর্ম্মজাল ছিন্ন-ভিন্ন করে দিব্যচেতনার সমুথ্থানে--জীবাত্মা মিলিত হবে সেই পরম পুরুষের সঙ্গে।
পুরীতে জগন্নাথ মূর্ত্তি স্থাপিত হওযার পূর্বেই বেদের প্রকাশ। কাজেই বেদে জগন্নাথ মূর্ত্তির কথা থাকতে পারে না, পুরাণরসিক পুতুলপ্রিয়দের যে ওটি কষ্ট কল্পনা মাত্র--- আশাারি আপনারা তা বুঝেছেন।

  1. যার যেই ভাব তিনি সেই ভাবে ভাবার্থ করেছেন সেই সকাল বেলায় একই পুকুরে চোর আর সাধুর স্নানের গল্পের মতো।

    ReplyDelete
  2. একই মন্ত্র কিন্তু ভাষ্য এইরকম বিস্তর পার্থক্য দেখা যায় কেন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ব্যাকরন গত তথ্যের ভিত্তিতে

      Delete
    2. কেউ যদি উপর্যুক্ত প্রমান ছাড়া কিছু লেখে তাহলে ভুলত হবেই। একটা অংকে ভুল হলেই ভিন্ন উওর পাওয়া যায়। সায়নাচার্য সেই পথেরই পথিক।

      Delete
    3. কেউ যদি উপর্যুক্ত প্রমান ছাড়া কিছু লেখে তাহলে ভুলত হবেই। একটা অংকে ভুল হলেই ভিন্ন উওর পাওয়া যায়। সায়নাচার্য সেই পথেরই পথিক।

      Delete