https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষণ পর্ব-৫১ : যোগ সাধনায় তথা প্রাণায়াম এর মাধ্যমে কি মুক্তি লাভ করা সম্ভব?

Wednesday, December 20, 2017
                                  Image result for yogi krishna 


প্রশ্ন- যোগ সাধনায় তথা প্রাণায়াম এর মাধ্যমে কি মুক্তি লাভ করা সম্ভব? প্রাণায়াম কি কলি কালে অচল নাকি সচল?
উত্তর- গীতা অনুসারে তো অবশ্যই প্রাণায়ামের মাধ্যমে মুক্তি লাভ সম্ভব, যদিও বর্তমান কালের কিছু নব্য কৃষ্ণ ভক্তরা তা মানে নারাজ। তাই আজকে ওনাদের উদ্দেশ্যেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। দেখুন গীতা কি বলে-

"যোগী বর্তমান জম্মে পূর্বজন্ম অপেক্ষা অধিকতর প্রচেষ্টা করে নিষ্পাপ হন ও পরে অনেক জম্মের সাধনার ফলে পরম গতি লাভ করেন। তপস্বী, জ্ঞানী ও কর্মী হতেও যোগী শ্রেষ্ঠ, ইহাই আমার মত। অতএব হে অর্জুন! যোগী হও।।"
গীতা ৬/৪৫,৪৬.
প্রশ্ন হল যোগ কাকে বলে? এর উত্তরে বলা যায়-

"সঙ্গং ত্যক্ত্বা ধনঞ্জয়। সিদ্ধি অসিদ্ধ্যোঃ সমো ভূত্বা সমত্বং যোগ উচ্যতে।।"
গীতা ২/৪৮.
অর্থাৎ, হে ধনঞ্জয়! কর্ম ফলের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ এবং সিদ্ধি অসিদ্ধিতে সমজ্ঞান করে কর্ম কর। ফলাফলে চিত্তের সমত্বকেই "যোগ" বলে।
আবার গীতা ৬/২৩এ বলা আছে- "দুঃখের সহিত সম্পর্কশূন্য অবস্থাকে যোগ বলে।"
এছাড়াও বলা হয়েছে-"যোগঃ কর্মসু কৌশলম্।" গীতা ২/৫০ অর্থাৎ কর্মের কৌশলই হল "যোগ"।
অর্থাৎ যোগ হল কর্মের এমন কৌশল-যা দ্বারা সকল ধরণের দুঃখ হতে মুক্ত থাকা যায় এবং অপার আনন্দ অনুভব করা যায়।

সমস্যা হল নব্য কৃষ্ণ ভক্তরা তখন বলেন যে প্রাণায়াম বর্তমান কালে অচল এবং এর দ্বারা মুক্তি লাভ সম্ভব নয়। তখন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয় সম্ভবত ওনারা গীতাটাই ভালো করে উল্টিয়ে দেখেনি। কারণ, গীতা বলে-

"তদ্রূপ অন্যেরা প্রাণবায়ুকে অপান বায়ুতে আহুতি দেন অর্থাৎ পূরক করেন। কেহ বা প্রাণবায়ুতে অপানবায়ুকে আহুতি দেন অর্থাৎ রেচক করেন এবং পরে প্রাণ ও অপানবায়ুকে রূদ্ধ করে কুম্ভকরূপ প্রাণায়াম করেন। কেহ কেহ সংযত আহারী হয়ে প্রাণবায়ু সকল অপর প্রাণবায়ুতে হবন করেন, অর্থাৎ যে যে বায়ু জয় করেন সেই সেই বায়ুতে অপর বায়ু সকল যেন প্রবেশ করান। এই সকল যজ্ঞবিদেরা যজ্ঞ দ্বারা পাপমুক্ত হন। যজ্ঞ অবশেষে অমৃত ভোজিগণ সনাতন ব্রহ্মকে লাভ করেন। হে কুরু শ্রেষ্ঠ, যজ্ঞহীনদের এই লোকই নাই, পর লোকই বা কোথায়? বেদ মুখে এরূপ বহুবিদ যজ্ঞ বিহিত হয়েছে, সেই সকলই কর্মজাত বলে জানবে, এরূপ জেনে মুক্তি লাভ করবে।
গীতা ৪/২৯-৩২.

গীতায় স্পষ্ট ভাবেই বলা আছে যোগ ব্যায়াম তথা প্রাণায়ামের মাধ্যমে মুক্তি লাভ সম্ভব, তবুও নব্য কৃষ্ণ ভক্তরা যখন বলে এগুলো কলি কালে অচল তখন শুনে খুব হাঁসি পায়। এখন প্রাণায়াম সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জেনে নেই। প্রশ্ন হতে পারে প্রাণায়াম কি? এই ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে-

"প্রাণাপানসমাযোগঃ প্রাণায়াম ইতীরিতঃ
প্রাণায়াম ইতি প্রক্তো রেচপূরককুম্ভকৈঃ।"
যোগী যাজ্ঞবল্ক্য ৬/২.
অর্থাৎ প্রাণ ও অপান বায়ুর পরস্পর সংযোগকে প্রাণায়াম বলে। প্রাণায়াম রেচক, পূরক ও কুম্ভক- এই তিন প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়।

শরীরের বায়ু বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাহির করে দেওয়াকে রেচক, বাহিরের বায়ু বিশেষ প্রক্রিয়ায় দেহের মধ্যে আনাকে পূরক এবং বিশেষ প্রক্রিয়ায় বায়ু নিশ্চলভাবে ধারণ করাকে কুম্ভক বলে। পুরকের শেষে বায়ু ধারণ করাকে বলে আভ্যন্তরীক কুম্ভক, আর রেচকের শেষে বায়ু ধারণ করাকে বলে বাহির কুম্ভক।

প্রাণায়াম চারি প্রকার, যথা- সহজ প্রাণায়াম, লঘু প্রণায়াম, বৈদিক প্রাণায়াম ও রাজযোগ প্রাণায়াম। ঘেরন্ড সংহিতার  ৫/১ নং শ্লোকে ঋষি বলেছেন-
"প্রাণায়াম অভ্যাসে মানুষ দেবতার মত গুণসম্পন্ন হন।" কিন্তু তিনি ২য় শ্লোকে আবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন-
"আদৌ স্থানং তথা কালং মিতাহারং তথা পরম।
নাড়ীশুদ্ধিঞ্চ তৎপশ্চাৎ প্রাণায়ামঞ্চ সাধয়েৎ।।"
অর্থাৎ প্রাণায়াম অব্যাস করতে যে চারটি বস্তুর আয়ত্ত একান্ত প্রয়োজন তা হল- উপযুক্ত স্থান, বিহিত কাল, পরিমিত আহার ও নাড়ীশুদ্ধি।