https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদে রাম কথা দাবীর উন্মোচন পর্ব ০১

Friday, December 29, 2017
প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত ভারতীয় ভাষ্যকারদেরমধ্যে একজনও ভাষ্যকার পাওয়া যায় নি, যারা বেদ মন্ত্রে রাম কথার অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন।

কিন্তু বর্তমানে কিছু লৌকিক পন্ডিত রয়েছে যারা বেদে রাম কথা অনুসন্ধানে ব্যস্ত।

মন্ত্র দ্রষ্টা ঋষিগণ কখনো কল্পনা করতে পারেন নি যে,মন্ত্রার্থের বিকৃতি এই সীমা পর্যন্ত কেউ করবে।
তাই  সেচ্চাচারিতা ও নিয়মহীনতা যাতে না হয় তার জন্য মন্ত্রার্থ প্রক্রিয়ার নির্ধারন নিয়ম করেন এবং তাতে দেবতা প্রকরন, স্বর , পদপাঠ , ছন্দ ইত্যাদির গুরুত্ব প্রতিপাদন করে দেন।

মহর্ষি যাস্ক নিরুক্ত শাস্ত্রে মন্ত্রার্থ ও তার পদ্ধতি সম্বন্ধে পর্যাপ্ত আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে , বেদ মন্ত্রের যথার্থ অর্থ জ্ঞাত হতে গেলে তার ব্যাখ্যা প্রকরণ ও দেবতা অনুযায়ী করা উচিত ।। তবে এই নিয়ে রামকথা অনুসন্ধানকারীদের কোন মাথাব্যাথা নেই । তারা বেদের কোন মন্ত্রে রাম শব্দটি দেখলেই হলো। আর কিছু দেখার দরকার নেই। পুরো মন্ত্রটিকে রামায়ন বানিয়ে ছাড়বে।

এসব লৌকিক পন্ডিত দের ব্যাখ্যা দেখে অল্প সংস্কৃত জানা ব্যাক্তিও তার হাসি গোপন রাখতে পারবে না। তাহলে আসুন আমরা এইসব লৌকিক পন্ডিতদের দ্বারা প্রস্তুত অথর্ববেদের একটি মন্ত্রের ব্যাখ্যা দেখি-

নক্তং জাতাস্যোষধে রামে কৃষ্ণে অসিক্নি চ। 
ইদং রজনি রন্জয় কিলাস পলিতং চ যৎ।। 
(অথর্ববেদ ১.২৩.১)।

★নক্তং জাতস্য হল একটি পদ অর্থাৎ চন্দ্রের সমান মুখ যার।
 ★ওষ অথবা দোষ শব্দ উপপদ রেখে ধেট্ ধাতু দ্বারা কর্মে কি প্রত্যয় হয়ে ওষধি শব্দ তৈরী হয়। ওষধয়তে যে ত্রিবিধ তাপের পান-নাশ করে তার নাম ওষধি। ★কিলাস=কিল+আস। যে ক্রীড়া দূর করে তা হল কিলাস। ক্রীড়া-বিরক্ত।
★পলিত= শুভ্র কেশ(শ্বেত কেশ)। এখানে রাজা দশরথকে বোঝানো হয়েছে।
★রজনী অর্থ পতির রন্জনকারিনী পত্নী। আবার , র=রাম , জমি=জন্ম। অর্থাৎ রামের জন্ম যার থেকে তিনিই রজনী। অর্থাৎ কৌশল্যা দেবী 
★আসিক্নি- যে স্ত্রীর কেশ এখনো শুভ্র হয়নি । অর্থাৎ যার মৃত্যু এখনো অনেক দূরে । এখানেও তাৎপর্য্য কৌশল্যা দেবীই।

তাহলে মন্ত্রটির সরলার্থ এই দাড়ায় যে, -" হে চন্দ্রের সমান মুখযুক্তা এবং ভগবদদর্শন দ্বারা ত্রিতাপনাশিনী, হে মৃত্যু থেকে দূরে থাকা চিরন্জীবিনী,হে স্বপতি মহারাজ দশরথের অনরন্জনকারিনী কৌশল্যা দেবী , এই ক্রিড়া -বিরক্ত এবং শুভ্রকেশধারী রাজা দশরথকে কৃষ্ণে শ্যামবর্ন যুক্ত স্বীয় পুত্র ভগবান রামে, শ্যামসরূপ ভগবনে রামের প্রকট হলে বৃদ্ধ দশরথকে আপনি প্রসন্ন করুন।" (তত্বদীপিকা ৩য় বর্ষ, ৪র্থ অঙ্ক)

=>সমীক্ষাঃ- অতি সাধারন পাঠক ও বুঝতে পারবেন যে , এখানে রাম পদ ব্যতিত এমন কোন শব্দ নেই যা রামায়নের কোন চরিত্রের সাথে মেলে। কিন্তু রামে পদ দেখে উল্টো পাল্টা টানাটানি করে একটি মনগড়া ব্যাখ্যা তৈরী করে তার মধ্যে আবার দশরথ, কৌশল্যাকেও টেনে আনা হল ।

আর দশরথ স্বয়ং রামের প্রতি আসক্ত এবং মোহগ্রস্থ। পুত্রশোকে দশরথের মৃত্যু হয়েছিলো। কৌশল্যাকে এই কথা বলার কি যুক্তি থাকতে পারে?

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , এই মন্ত্রগুলির দেবতা বনস্পতি । এই মন্ত ও সুক্তে কুষ্ঠরোগাদীনাশক বনস্পতির উল্লেখ আছে। এখানে কিলাসের অর্থ কুষ্ঠরোগ এবং পলিতর অর্থ শ্বেত কুষ্ঠ এবং ঔষধী দ্বারা সেগুলো নিরাময়ের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে -

নক্তং জাতাস্যোষধে রামে কৃষ্ণে অসিক্লি চ।
ইদং রজনি রজয় কিলাসং পলিতং চ যত্।।
(অথর্ববেদ ১।২৩।১)

ভাষার্থঃ (ঔষধে) ঔষুধি তুমি (নক্তজাতা) রাত্রিতে উৎপন্ন (অসি) হও, যে তুমি (রামে) রমন কারক (কৃষ্ণে) চিত্তকে আকর্ষন কারক () এবং (অসিক্লি) পূর্ণ সার সম্পন্ন (রজনি) হে উত্তম অঙ্গ কারক!  তুমি (ইদম্) এই (যত্) যে (কিলাসম্) রূপের হানিকারক কুষ্ট আদি (চ) এবং (পলিতম্) শরীরে শ্বেতপন রোগ [তাহাকে] (রজয়) রঙ প্রদান করো। 

মন্ত্রে,
রামে - রমু ক্রীড়ায়াম ণিচ বা ঘঞ। রমতে রময়েতি চেত্তি রামা, হে রমনশীল, রমনকারিণি, সুখপ্রদ।

কৃষ্ণে - কৃষ্ণেবর্ণে।। কৃষ্ণ (উ০ ৩।৪) ইতি বাহুলকাত বর্ণ বিনাপি।  কৃষ্ আকর্ষনে। কর্ষতি আনন্দয়তি চিত্তানি সমনোহরগুণেন।  যদ্ধা, কর্ষতি বশীকরোতি রোগান সা কৃষ্ণা।

পরবর্তি মন্ত্র দেখলে প্রকরন আরো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
উক্ত মন্ত্রের পরবর্তী মন্ত্রটি হলো-

"কিলাসং চ পলিতং নিরিতো নানায়া পৃষৎ।" (অথর্ব০ ১.২৩.২). অর্থাৎ, -"কুষ্ঠরোগ ও শ্বেতকুষ্ঠ এবং তার দাগকে নাশ-দূর করে দাও। এই রকম অভিপ্রায় পরবর্তি কয়েকটি মন্ত্রেই দেখতে পাওয়া যায়।

কিন্তু আমরা যদি  এসব পন্ডিতদের ব্যাখ্যা অনুসারে এ মন্ত্রের অর্থ করি  তাহলে মন্ত্রটির অর্থ দাড়ায়- ক্রিড়াবিরক্ত(কিলাসং), সুভ্রকেশধারী দশরথকে (পলিতং) এখানে ডেকে এনে সম্পূর্ন নষ্ট করে দাও।
এই রকম অর্থ কি তারা স্বীকার করবেন?? তারা সুক্তের একটি মন্ত্র ব্যাখ্যা করলেন এবং অন্য মন্ত্রগুলি বাদ দিলেন। সেগুলোর একটা প্রকরন এবং দেবতা কিছুই গ্রহন করলেন না। নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মনগড়া ব্যাখ্যার উপস্থাপন করলেন।

তাহলে পাঠকগণ আপনারাই চিন্তা করুন,  এসব পন্ডিতরা অর্থের কেমন অনর্থ করেছে এবং নিজের বিকৃত অর্থের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
তাই সত্যকে আকড়ে ধরুন মিথ্যাকে পরিত্যাগ করুন