আমরা দশম মণ্ডলের বিষয়ে বিচার করব যে এটি পরবর্তীকালের সংযুক্তি কি না। অন্য পাশ্চাত্য বিদ্বানগণ এই বিষয়ে অবিবেকী পন্থা অনুসরণ করেছেন। 'বৈদিক এজ' এর লেখকবৃন্দ ২২৮ পৃষ্ঠাতে লিখেছেন -
"অর্থাৎ ঋগ্বেদের দশম মণ্ডল স্পষ্টতঃ পরবর্তীকালের সংযুক্তি, যেখানে অথর্ববেদের মত জাদু-টোনার কথা পাওয়া যায়* ৷
[ বেদে কালোজাদু-বিদ্যা রয়েছে এহেন দাবি সর্বথা মিথ্যা। বিস্তারিত জানতে নিচের আর্টিকেলটি পড়ুন 


এক জায়গায় এটাও লেখা হয়েছে—
❝That the tenth Mandala is later in origin than the first nine is however, perfectly certain the evidence of the language.❞
- Vedic Age P.229.
অর্থাৎ, ভাষাগত প্রমাণের দিক থেকে এটা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত যে প্রথম নয়টি মণ্ডল অপেক্ষা দশম মণ্ডল পরবর্তীকালে রচিত ৷
অর্থাৎ, ভাষাগত প্রমাণের দিক থেকে এটা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত যে প্রথম নয়টি মণ্ডল অপেক্ষা দশম মণ্ডল পরবর্তীকালে রচিত ৷
উদাহরণের মাধ্যমে যে কথা 'বৈদিক এজ' এর ৩৩৯ পৃষ্ঠায় দেখানো হয়েছে তা অধিকতর কষ্টকল্পিত৷
একজন গ্রন্থকার তার গ্রন্থে নানা ধাঁচের ভাষার প্রয়োগ করেন ৷ কোথাও ভাষা সরল হয় তো কোথাও কঠিন হয় ৷ বেদ তো সকল প্রকার লোকের লাভের জন্যই ৷ বেদেই বলা আছে, 'যথেমাং বাচং কল্যাণীমাবদানি জনেভ্যঃ।' [যজু০ ২৬।২]
তাই এখানে যেমন অতিসরলার্থক মন্ত্র রয়েছে তেমনি এত কঠিন মন্ত্রও রয়েছে যে বড় বড় বিদ্বান ও পূর্ণ স্বাধ্যায়ী লোকেদেরও সেগুলোর বাস্তবিক অর্থ জানতে মস্তিষ্কের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে হয় ৷ এমন কোনো নিয়ম নেই যে, অমুক প্রকার শব্দ এখানে অবশ্যই থাকা উচিত যদি এ প্রকার শব্দ না থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি নতুন! — এমন হঠকারী বিচার নিঃসন্দেহে ভ্রমপূর্ণ। বৈদিক এজের লেখকগণ বলেন যে, দশম মণ্ডলে লোক, মোঘ, বিসর্গ, গুন ইত্যাদি কিছু নতুন শব্দ এসেছে যেগুলো তথাকথিত প্রক্ষিপ্ত ভাগসমূহ আর বালখিল্য সূক্তাদি ছাড়া ঋগ্বেদের অন্যত্র পাওয়া যায় না ৷ যেখানেই এই শব্দগুলো পাওয়া যায় সেখানে আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী প্রথমেই সেগুলোকে প্রক্ষিপ্ত মেনে নিচ্ছেন অথচ এরূপ বিচারের নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণে কোনো অকাট্য দলিল আপনার কাছে নেই ৷ বালখিল্য সূক্তাদির ঋচাসমূহের বিবিধ শব্দের উপর ভিত্তি করে যে কপোলকল্পিত প্রক্ষিপ্ততার আরোপ আনা হয়েছে আমরা এস্থলে আগে তার বিচার করব এবং দেখাব যে উক্ত মন্ত্রসমূহকে প্রক্ষিপ্ত মানার কোনো যৌক্তিক ভিত্তি নেই ৷

বস্তুত, “লোকঃ” তথা লোক এই শব্দ বিভক্তিসহ দশম মণ্ডল অতিরিক্ত নিম্নস্থানসমূহেও এসেছে ৷
ঋগ্বেদ- ১/৯৩/৬, ২/৩০/৬, ৩/২/৯, ৩/৩৭/১১, ৫/১/৬, ৫/৪/১১, ৬/২৩/৩, ৬/২৩/৭, ৬/৪৭/৮, ৬/৭৩/২, ৭/২০/২, ৭/৩৩/৫, ৭/৬০/৯, ৭/৮৪/২, ৭/৯৯/৪, ৮/১০০/১২, ৯/৯২/৫, ৯/১১৩/৭ ৷
“লোক” এর বহুবচন হলো “লোকাঃ”
ঋগ্বেদ - ৯/১১৩/৯
“লোক” এর একবচন হলো “লোকম্”
ঋগ্বেদ - ৪/১৭/১৭,
এছাড়া, 'লোকে' এই সপ্তমী একবচনের প্রয়োগ ঋগ০ ৩/২৯/৮, ৫/১/৬ এই মন্ত্রগুলোতে আসার পর দশম মণ্ডলে [১০/১৩/২] 'লোকম্' শব্দটি এসেছে ৷ এভাবে দশম মণ্ডল ব্যতীত ঋগ্বেদের অন্য যেসকল মণ্ডলে “লোক” শব্দের এতো বিস্তর উল্লেখ রয়েছে সেই মণ্ডলগুলোকে তো 'বৈদিক এজ' এর লেখকবৃন্দ প্রক্ষিপ্ত মানেন না ৷ তাহলে “লোক” শব্দ থাকার কারণে ঋগ্বেদের দশম মণ্ডল প্রক্ষিপ্ত হয়ে যায় - এ ধরনের অযৌক্তিক, সত্য বিরুদ্ধ কথা তারা কি করে লিখলো ?

'মোঘম্' এর প্রয়োগ ঋগ্বেদের ১০ম মণ্ডল ছাড়াও ৭ম মণ্ডলের নিম্ন মন্ত্রদ্বয়ে পাওয়া যায় যেমনঃ
যদি বাহমনৃতদেব আস মোঘং বা ….৷
[ঋগ০ ৭/১০৪/১৪]
…অধা স বীরৈর্দশভির্বিযুযা যো মা মোঘং যাতুধানেত্যাহ ॥
[ঋগ০ ৭।১০৪।১৫]
অতএব 'বৈদিক এজ' এর লেখকদের বক্তব্য সর্বথা মিথ্যা৷

ঋগ্বেদের সপ্তম মণ্ডলের ১০৩ সূক্তের নবম মন্ত্রে "তপ্তা ধর্মা অশ্নুবতে বিসর্গম" এইভাবে বিসর্গ শব্দ এসেছে ৷
দশম মণ্ডলেও শুধুমাত্র ১০/৫/৬ এ ই আছে ৷








‘সোম্' এর বিষয়ে আপনি বলেছেন যে ঋগ্বেদের প্রথম ৯ মণ্ডলে এটি ৫০ বার এসেছে আর দশম মণ্ডলে কেবল ১ বার ৷ এতে কিছুই প্রমাণিত হয় না ৷ এসেছে তো ! আর এটা আপনি মানছেনও ৷ এক শব্দ বারবার অনাবশ্যকভাবে আসবে এটা আবশ্যক নয় ৷
আজ্য, কাল, লোহিত আর বিজয় এই শব্দ প্রথমবার দশম মণ্ডলে এসেছে এবং এতে কিছুই প্রমাণিত হয় না ৷ ভিন্ন-ভিন্ন মণ্ডলে যদি ভিন্ন-ভিন্ন বিষয় আর তৎপ্রতিপাদক শব্দসমূহের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তো এতে এর নবীনতা কিভাবে সিদ্ধ হয়ে যায় ? সর্ব, ভগবান, প্রাণ, হৃদয় ইত্যাদি শব্দের ব্যাপারে আপনি বলছেন Mostly, though not exclusively — প্রায়, সর্বথা নয়, এই দশম মণ্ডলে এসেছে ৷ যখন এইসকল শব্দ অন্য মণ্ডলেও আসে তো পুনরায় আপনার এই নবীনতার যুক্তির কি হবে, যদি কথাপ্রসঙ্গে মেনেও নিই যে —নতুন কিছু অথবা প্রথমে অপ্রযুক্ত শব্দ এলে নবীনতা প্রমাণিত হয় ৷ যেটাকে আমরা মানি না ৷ বেদকে তো আমরা ঈশ্বরীয় বাক্ মান্য করি যেখানে আবশ্যকতানুসারে পূর্ণবুদ্ধিপূর্বক শব্দসমূহের প্রয়োগ আছে ৷
“বুদ্ধিপূর্বা বাক্যকৃতির্বেদে।”....বৈশেষিক দর্শন

একজন লেখক তার গ্রন্থে বিষয়ভেদে ভিন্ন প্রকার শৈলীর ভাষা প্রয়োগ করেন এর কিছু স্পষ্ট উদাহরণ নিচে লেখা হলো ৷
১) পাণিণির অষ্টাধ্যায়ী সূত্রের ভাষা উনার "জাম্ববতী বিজয় মহাকাব্য" এর ভাষা থেকে ভিন্ন ৷
২) জৈমিনীয় মীমাংসা সূত্রের ভাষা জৈমিনীয় ব্রাহ্মণের ভাষা থেকে অত্যন্ত ভিন্ন ৷
৩) শৌনকের ঋক প্রাতিশাখ্য থেকে শৌনকপ্রোক্ত ঐতরেয় আরণ্যকের পঞ্চম আরণ্যকের ভাষা ভিন্ন প্রকার ৷
৪) কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্র থেকে কাত্যায়ন স্মৃতির ভাষা সম্পূর্ণ ভিন্ন ৷
এভাবে এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যায় ৷ বর্তমান কালের সুপ্রসিদ্ধ লেখকগণের উদাহরণ নিতে হলে বলা যায় যে শ্রী অরবিন্দজীর Life Divine এর ক্লিষ্ট ভাষা শৈলী থেকে The Yoga and its object বা Bases of Yoga বইসমূহের সরল ভাষা ও শৈলীর আকাশ পাতাল পার্থক্য বিদ্যমান ৷

তো কি হয়েছে ? একই ধরনের শব্দের প্রয়োগ সর্বত্র ব্যাবহার করা কি আবশ্যক ?

বস্তুত, এই সকল কথা ম্যোকডোনল প্রমুখ পাশ্চাত্য লেখকগণের গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে যিনি হিরণ্যগর্ভ সূক্ত, নাসদীয় সূক্ত, শ্রদ্ধাসূক্ত, মন্যুসূক্তাদি দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন যে, জংলী-আদিবাসী লোকেরা এধরনের আধ্যাত্মিক, দার্শনিক এবং মনোবৈজ্ঞানিক বিষয়ের উপর কিভাব বিচার প্রকট করতে পারে ? অতএব এই সকলকিছু পরবর্তীকালীন হওয়া মানাই যথার্থ!

এবং দশমমণ্ডলস্য ঋকপরিশিষ্টরূপত্বং কল্পয়িতুং তৈঃ (পাশ্চাত্যবিপশ্চিদ্ভিঃ) ভাষাপার্থক্যপ্রদর্শনাদিপ্রয়াসঃ স্বীকৃতঃ — দশমমণ্ডলস্য ভাষা মন্ত্রার্থগততাৎপর্যাণি চ প্রথমমণ্ডলাদিভ্যঃ পৃথগেবেতি নূনং তস্য নবমমণ্ডলপরিশিষ্টরূপত্বমিতি তদাশয়ঃ ৷ কিমত্র ব্রুমো বয়ম্ ? অস্মচ্ছতিষু হি দশমমণ্ডলস্য মণ্ডলান্তরাণাং চ ভাষা একবিশ্রেবোপ একবিধৈবোপলভ্যতে, অস্মদ্বুদ্ধিষু চ তথৈকবিধমেব তাৎপর্যমিতি ন জানীমহে কেষাং বুদ্ধিমালিন্যং কেষাং বা হঠকারিত্বমিতি ॥ (ত্রয়ীপরিচয় - পৃষ্ঠা ৪৯)
প্রথমাদিমণ্ডলেষু শ্রুতানাং বহুনাং সূক্তানাং দশমমণ্ডলস্থিতানাং চ বহুনাং সূক্তানাং দ্রষ্টারোऽভিন্না এবাবগম্যন্তে পরিশিষ্টবাদিনাং মতে তৎ কথমুপপদ্যেতেতি বিচারয়ন্ত্বত্র মাধ্যস্থ্যপদমাদধানা এবেতি ॥
(ত্রয়ীপরিচয় - পৃষ্ঠা ৫১)
অর্থাৎ, এভাবে দশম মণ্ডলকে ঋগ্বেদের পরিশিষ্ট দেখানোর জন্য পাশ্চাত্য বিদ্বানগণ ভাষাভেদ ইত্যাদি বিষয়কে কারণ দেখানোর চেষ্টা করেছেন ৷ তাদের বক্তব্য হলো দশম মণ্ডলের ভাষা আর মন্ত্রের তাৎপর্য প্রথম দিকের মণ্ডল হতে পৃথক, অতএব এটা নবম মণ্ডলের পরিশিষ্ট ৷ আমাদের কাছে তো দশম মণ্ডল আর অন্যান্য মণ্ডলগুলোর ভাষা শ্রুতিগোচরকালে একই ধরনের বলে বোধ হয় আর আমাদের বুদ্ধিতে এগুলোর তাৎপর্যও একই ধরনের (অন্য মণ্ডলগুলোর সদৃশ) আমরা জানি না কার বুদ্ধি মলিন আর কে পরিষ্কার ?


❝This is one the hymns which have always been suspected as modern by European interpreters.❞
—Vedic Hymns by Prof. Max Muller.
অর্থাৎ , এই হিরণ্যগর্ভ সূক্ত ওই সূক্তগুলোর মধ্যে একটি যার বিষয়ে ইউরোপীয় ব্যাখ্যাকারীগণ সর্বদাই নবীনত্বের সন্দেহ করে আসছেন ৷
“প্রজাপতে ন সত্বদেতান্যন্যো বিশ্বা জাতানি পরি তা বভূব৷”
এই মন্ত্রের উপর টিপ্পণী করতে গিয়ে প্রফেসর ম্যাক্সমূলর খ্রিস্টীয় মতের প্রতি পক্ষপাতবশত লিখেছেন-
❝The last verse is to my mind the most suspicious of all.❞
অর্থাৎ, আমার বিচারে এই শেষ মন্ত্র তো অত্যন্ত সন্দেহপূর্ণ ৷

ইন্দ্রং মিত্রং বরুণমগ্নিমাহুরথো দিব্যঃ স সুপর্ণো গরুত্নান্ ৷একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্ত্যগ্নিং যমং মাতরিশ্বানমাহুঃ॥
[ঋগ্বেদ ১/১৬৪/৪৬]
অর্থাৎ বিদ্বানগণ সেই এক পরমেশ্বরকেই ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি, যম, মাতরিশ্বা প্রভৃতি অনেক নামে ডাকেন ৷

ত্বমগ্ন ইন্দ্রো বৃষভঃ সতামসি ত্বং বিষ্ণরুরুগায়ো নমস্যঃ ৷ ত্বং ব্রহ্মা রযিবিদ্ ব্রহ্মণস্পতে ত্বং বিধর্তঃ সচসে পুরন্ধ্যা ॥
[ঋগ্বেদ ২/১/৩ ]
ত্বমগ্নে রাজা বরুণো ধৃতব্রতস্ত্বং মিত্রো ভবসি দস্ম ইড্যঃ ৷ ত্বমর্যমা সৎপতির্যস্য সংভূজং ত্বমংশো বিদথে দেবভাজয়ুঃ ॥
[ঋগ্বেদ ২/১/৪ ]
প্রভৃতি মন্ত্রসমূহ দ্বারা এক পরমেশ্বরকেই অগ্নি, ইন্দ্র, বিষ্ণু, বরুণ, মিত্র, অর্যমা আদি নামসমূহে আহবান করে একেশ্বরবাদের প্রবল সমর্থন করা হয়েছে যা সংখ্যায় দশম মণ্ডল থেকে কোনোভাবেই কম নয় ৷

ত্বং হি ষ্মা চ্যাবযন্নচ্যূতান্যেকো বৃত্রা চরসি জিঘ্নমানঃ ৷তব দ্যাবাপৃথিবী পর্বতাসোঅনু ব্রতায় নিমিতেব তস্থুঃ ॥
[ঋগ্বেদ ৩/৩০/৪]
উতাভয়ে পুরুহুত শ্রবোভিরেকো দৃল়্হমবদো বৃত্রহা সন্ ৷ ইমে চিদিন্দ্র রোদসী অপারে যৎ সংগৃভ্ণা মঘবন্কাশিরিত্তে ॥ [ঋগ্বেদ ৩/৩০/৫]
ইত্যাদি মন্ত্রে বর্ণনা এসেছে তা হলো—”তুমি এক, যিনি সকল বিঘ্ন, পাপ তথা অজ্ঞানকে বিনষ্ট কর ৷ পৃথিবী, আকাশ, পর্বত সব তোমার নিয়ম অনুসারে কার্য করছে ৷ এ সকল কিছুর পরমেশ্বর তুমিই নিয়ন্ত্রকারী ৷”- এটি দশম মণ্ডলের একেশ্বরবাদ প্রতিপাদক মন্ত্রসম ৷
ইত্যাদি মন্ত্রে বর্ণনা এসেছে তা হলো, তুমি এক, যিনি সকল বিঘ্ন, পাপ তথা অজ্ঞানকে নষ্ট কর ৷ পৃথিবী, আকাশ, পর্বত সব তোমার নিয়ম অনুসারে কার্য করছে ৷ এ সকল কিছুর পরমেশ্বর তুমিই নিয়ন্ত্রকারী ৷ এইটি দশম মণ্ডলের একেশ্বরবাদ প্রতিপাদক মন্ত্রের সমান ৷

য এক ইচ্চ্যাবয়তি প্র ভূমা রাজা কৃষ্টীনাং পুরুহূত ইন্দ্রঃ ৷ সত্যমেনমনু বিশ্বে মদন্তি রাতি দেবস্য গৃণতো মঘোনঃ ॥
[ঋগবেদ ৪/১৭/৫]
ইত্যাদি মন্ত্রে একেশ্বরের পূজার ভাব অত্যন্ত স্পষ্ট যে - “এক ঈশ্বরই সব মনুষ্যের রাজা ৷ সেই সত্যস্বরূপ পরমেশ্বরের দানকে সকল বিদ্বানগণ কীর্তন করেন ৷”

একং নু ত্বা সৎপতি পাঞ্চজন্যং জাতং শ্রীণোমি যশসং জনেষু ৷ তং মে জগৃভ্র আশসো নবিষ্ঠং দোষা বস্তোর্হবমানাস ইন্দ্রম্ ৷
[ঋগ্বেদ ৫/৩২/১১]
ইত্যাদি মন্ত্রে এটাই বলা হয়েছে যে, পরমেশ্বর এক ৷ তিনিই সকলের উত্তম স্বামী ও সবার হিতকারী ৷

য এক ইত্তমু ষ্টুহি কৃষ্টীনাং বিচর্ষণিঃ ৷
পতির্জজ্ঞে বৃষক্রতুঃ ॥ ৬/৪৫/১৬
ইত্যাদি মন্ত্রে স্পষ্ট আদেশ আছে যে, “যে পরমেশ্বর সর্বজ্ঞ, সকলের স্বামী ও সর্বশক্তিমান ; হে মনুষ্য তুমি সেই এক’কে সদা স্তুতি কর ৷”
এভাবেই অন্য সব মণ্ডলে প্রচুর এইধরনের একেশ্বর-পূজা প্রতিপাদক মন্ত্র
রয়েছে ৷ অতএব, এটাই স্পষ্ট যে ‘দশম মণ্ডলেই এ ধরনের কিছু কিছু একেশ্বরপূজা
প্রতিপাদক বা দার্শনিক ভাবের মন্ত্র আছে, যেগুলো ঋগ্বেদের অন্য মণ্ডলে
নেই’ — এই ধরনের কথা সর্বথা অশুদ্ধ ৷

স ইজ্জনেন স বিশা স জন্মনা স পুত্রৈর্বাজং ভরতে ধনা নৃভিঃ ৷ দেবানাং যঃ পিতরমাবিবাসতি শ্রদ্ধামনা হবিষা ব্রহ্মণস্পতিম ॥
[ঋগ্বেদ ২/২৬/৩]
তথা অন্য মণ্ডলের মন্ত্রতে শ্রদ্ধার প্রতিপাদন করে এর উত্তম ফলের বর্ণনা আছে ৷

এই বিষয়ে আরেকটা কথা উল্লেখ্য যে একদিকে ডঃ ম্যেকডোনাল আদি লেখকগণ ভাষার পার্থক্যের কল্পিত ভিত্তিতে দশম মণ্ডলকে পরবর্তী রচনা হিসেবে বলার চেষ্টা করেছেন, অন্যদিকে আবার লিখেছেন—
❝Nevertheless the supplements collected in it (Tenth Mandal) appear for the most Part to be older than the additions which occur in the earlier books.❞
-The History of Sanskrit Literature by Macdonel p. 44.
অর্থাৎ তারপরও এই দশম মণ্ডলের 'পরবর্তীতে যুক্ত' সূক্তগুলো বেশিরভাগই অন্যান্য মণ্ডলগুলোর 'পরবর্তীতে যুক্ত' সূক্তগুলোর চেয়ে প্রাচীনতর প্রতীয়মান হয় ৷

বৈন্য পৃথু — ১০/১৪৮
অদিতি দাক্ষায়ণী — ১০/৭২
প্রজাপতি পরমেষ্ঠী — ১০/১২৯ ; নাসদীয় সূক্তের ঋষি
বিবস্বান্ — ১০/১৩
যম বৈবস্বত — ১০/১৪
যমী বৈবস্বতী — ১০/১৫৪
যম-যমী — ১০/১০
নাভা নেদিষ্ঠ — ১০/৬১-৬২
শর্যাত — ১০/৯২
বুধ — ১০/১০১
পুরূরবা — ১০/৯১
শচী পৌলমী — ১০/১৫৯
ত্রিশিরাঃ — ১০/৮৯
বৃহষ্পতি আঙ্গিরস — ১০/৭১; জ্ঞান সূক্ত
চ্যবন — ১০/১৯
মান্ধাতা যৌবনাশ্ব — ১০/১৩৪
জমদগ্নি — ১০/১১০
যেই সূক্তগুলোর ঋষিই প্রাচীন বৈবস্বত মনুর কাছাকাছি সময়ের, সে সূক্তগুলোকে নবীন রচনা বলা কতটা স্পর্ধার কাজ ৷ মন্যু শব্দটি ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলে ৩ বার, দ্বিতীয় মণ্ডলে ২ বার, চতুর্থ মণ্ডলে ২ বার, পঞ্চম ও ষষ্ঠ মণ্ডলে ২ বার, সপ্তম মণ্ডলে ৪ বার, নবম মণ্ডলে ১ বার ও দশম মণ্ডলে ৪ বার এসেছে ৷ তাহলে এই শব্দটিকে নতুন বলা এবং দশম মণ্ডলে প্রথমবার এসেছে তাই এর নবীনতা সিদ্ধ হয় একথাগুলো সর্বৈব মিথ্যা ৷



অধ্যাযাশ্চ চতুঃ, ষষ্টি, মণ্ডলানি দশৈব তু ৷
অর্থাৎ, ঋগ্বেদে ৬৪ অধ্যায় আর ১০ মণ্ডল আছে ৷


0 মন্তব্য(গুলি)