প্রশ্ন- ১. অনেকে বলে আর্যরা নাকি দেবীর উপাসনা করে না। এটা কি ঠিক দাদা?
২. বেদ এর মধ্যে কি দূর্গার কথা আছে?
উত্তর-
১. যারা এটা বলে তারা হয়তো প্রকৃত সত্য জানে না অথবা জানলেও মিথ্যাচার করছে। প্রথমে দেখুন দেবী মানে কি-
দেব দেবী- (দিবু ক্রীডাবিজিগীষাব্যবহারদ্যুতি স্তুতিমোদমদস্বপ্নকান্তিগতিষ) এই ধাতু থেকে দেব ও দেবী দুইটা শব্দই সিদ্ধ হয়। পরমাত্মা তথা পরমেশ্বরের নাম তিন লিঙ্গেই আছে যথা- "ব্রহ্মচিতিরীশ্বরশ্চেতি"। যখন ঈশ্বরের বিশেষণ হবে তখন 'দেব', আর যখন চিতির বিশেষণ হবে তখন 'দেবী'। এই কারণে পরমেশ্বরের একটা নাম দেবী।
(ক্রীডা) যিনি শুদ্ধ [সমস্ত] জগতকে ক্রীড়া করাইবার, (বিজিগীষা) ধার্মিকদের জয়যুক্ত
করাইবার ইচ্ছুক [ব্যবহার] যিনি সকল চেষ্টার সাধন ও উপসাধন সমূহের দাতা, (দ্যুতি) স্বয়ং
প্রকাশ স্বরূপ ও সকলের প্রকাশক, (স্তুতি) প্রশংসার যোগ্য, (মোদ) স্বয়ং আনন্দস্বরূপ এবং অপরের আনন্দদাতা, (মদ) মদোম্মত্তদের
তাড়নাকারী, (স্বপ্ন) সকলের নিদ্রার জন্য রাত্রি ও প্রলয়ের কর্তা, (কান্তি) কামনার যোগ্য এবং (গতি) জ্ঞানস্বরূপ- এই জন্য সেই পরমেশ্বরের নাম 'দেব'। দেব শব্দের যতগুলো অর্থ লিখিত
হয়েছে 'দেবী' শব্দের অর্থও ততগুলি আছে।
এখন ঋগবেদের দেবী সুক্তের সকল মন্ত্রের ভাবার্থ দেওয়া হল-
ঋগবেদ ১০/১২৫/১-৮
১)আমি বাক্-আমব্রীনী, অসীম জ্ঞানের কন্ঠস্বর, মহাবিশ্বের বাক্, (আমি) ১১ রুদ্র, ৮ বসু, ১২ আদিত্য এবং সকল বিশ্বদেবগনের সহিত সকল
কিছু বহনকারী ও একই সঙ্গে বিদ্যমান৷ আমি মিত্র ও বরুন (দিবস ও রাত্রি) উভয়ের
সাথে ব্যাপ্ত ও ইহাদের ধারন করি৷ আমি ইন্দ্র ও অগ্নি (বাতাস ও আগুন) উভয়ের সহিত ব্যাপ্ত ও ইহাদের ধারন করি৷ আমি অশ্বিনীদ্বয়কে বহন করি ও ধারন করি৷
২)আমি যোগাযোগের ক্ষেত্রে এবং দলগত সোম
আনন্দের ক্ষেত্রে অভ্যর্থনা ও অভিজ্ঞতার
প্রকাশকে বহন করি৷ আমি আকৃতি গঠনগত (পুষ্টি ও বৃদ্ধি) বিকাশ প্রক্রিয়া বহন করি, জীবনের শক্তি ও মহিমাকে এবং অগ্রগতিকে বহন করি৷ আমি যজমানগনের জন্য সম্পদ ও অগ্রগতি বহন করি যারা জীবনের জন্য মিষ্টতা ও সৌন্দর্য সৃষ্টি করে এবং যারা মনুষ্যগন ও সকল প্রাণীগনের কল্যানের জন্য যজ্ঞের প্রচুর হবি বহন করে৷
৩)আমি সমাজ ব্যবস্থার শক্তি ও সংগঠন
প্রনালী৷ আমি মনুষ্যগনের যুথবদ্ধ ব্যবস্থায় সম্পদ, সন্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের অগ্রদূত৷ আমি মনুষ্য
জীবনের মৌলিক বিষয়সমূহ ও এর
মূল্যবোধের চিন্তা, সচেতনতা ও সুনির্দিষ্ট সংগঠিত প্রক্রিয়া৷ জ্ঞানী ও ঋষিগন আমাকে বিবিধ সামাজিক রাজনৈতিক কাঠামোতে স্থাপন
করেন নানাবিধ সুস্থিত অবস্থায় এবং বিবিধ দিকে অগ্রগতির বিবিধ বিকাশশীল শক্তি ও
সম্ভাবনার সহিত (আমাকে স্থাপন করেন)৷
৪)হে শ্রোতাগন আমি তোমাদের কি বলি তা শোন, ইহা বিশ্বাসের সহিত শ্রবনযোগ্য এবং অনুশীলনযোগ্য৷ যে কেহ দেখে যাহাই দেখে, যে কেহ প্রাণধারন করে, যাহা বলা হয়েছে যে কেহই তা শ্রবন করে, সে আমা কর্তৃকই জীবনের অন্ন
গ্রহন করে৷ আমি যাহা বলি তা যাহারা শোনে না,
যত্নবান হয় না এবং আমাকে অবজ্ঞা করে তাহারা
পতিত হয়, তাহারা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়৷
৫)এবং এ সকল কিছু যাহা ঋষিগন ও অভিজ্ঞ বিদ্বানগন কর্তৃক প্রশংসিত ও আদরনীয় এবং এমনকি সৎ মানসিকতাপূর্ণ মনুষ্যগন কর্তৃক প্রশংসিত, তাহা আমিই (দিব্য বাক্) স্বয়ং বলি৷ যাকে আমি ইচ্ছা করি তাকে তার যোগ্যতার গুনে, বৈশিষ্ট্য ও কর্মের গুনে তার মেধা বৃদ্ধি করি,
যজ্ঞীয় ব্রহ্মার যোগ্য ধর্মানুরাগী করি, কাব্যিক ঋষির দর্শন বৃদ্ধি করি, ব্যাতিক্রমী চিন্তাশীলদের বুদ্ধিমত্তাকে বর্ধিত করি৷
৬)আমি রুদ্রের জন্য ধনু (ন্যায় বিচার ও শাস্তি
প্রদান শক্তি) উত্তোলন করি, ভক্তি ও দেবত্বের
অনুসরনকারীদের বিরুদ্ধে ঘৃনা ও হিংস্র শক্তিকে
দূর করতে৷ মনুষ্যগনের জন্য আমিই যুদ্ধ করি
এবং তাহাদের জন্য পরিতৃপ্তি ও সুখ সৃষ্টি করি,
এবং আমি পৃথিবী ও অন্তরীক্ষে ব্যাপ্ত আছি৷
৭)আমি এই মনুষ্যজাতির এবং এই জগতের
রক্ষাকারী অভিভাবক দ্যুলোককে শাসকরূপে সৃষ্টি করি এবং সুর্যকে সৃষ্টি করি৷ জলের গভীরে ও সমূদ্রে এবং মহাকাশের অনুতে আমার স্থান৷
একইভাবে আমি ব্যাপ্ত আছি মহাবিশ্বের সকল
স্থানে, এবং আমি আলোর আকাশে পৌছাই এবং
আমার আলো ও মহিমা দ্বারা উর্দ্ধে দ্যুলোককে স্পর্শ করি৷
৮)মহাজগতের সকল স্থানে ব্যাপ্ত হয়ে ও তাকে
অর্ন্তভুক্ত করে, আমি সম্মুখে যাই ঠিক যেভাবে
বাতাস আকাশ জুড়ে প্রবাহিত হয়৷ অন্তরীক্ষ
ছাড়িয়ে, এই জগত ছাড়িয়ে আমি (আমার শক্তি ও ক্ষমতা এতই) সর্বব্যাপী এবং আমার অস্তিত্ব
বর্ণনাযোগ্য নয়৷
এখন কিছু শ্লোকের মাধ্যমে দেবী বন্দনা করি-
"য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ, নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু চেতনেত্যভিধীয়তে।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু বুদ্ধিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু নিদ্রারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু ক্ষুধারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু ছায়ারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।"
এবার ২য় নং প্রশ্নের ব্যাপারে বলা যাক-
বেদ এর মধ্যে দূর্গা শব্দ সরাসরি দেবী অর্থে নেই। তবে নিম্নরূপ 'দূর্গাণি' আছে, যার অর্থ নিরুক্ত অনুসারে "দুর্গতি ও দুর্গম স্থান"! এই মন্ত্রে মূলত অগ্নি তথা বিজ্ঞান স্বরূপ জগদীশ্বরকেই তথা পরমাত্মাকেই 'দূর্গানি' বলা হয়েছে। কারণ অগ্নিই আমাদের দুর্গতি ও দূর্গম স্থান এবং সকল দুঃখদানকারী পাপচার থেকে পার করেন। বাকিটুকু নিজেরাই দেখুন-
"জাতবেদসে সুনবাম সোমমরাতী যতো নি দহাতি বেদঃ।
স নঃ পর্ষদতি দূর্গাণি বিশ্বা নাবেব সিন্ধং দুরিতাত্যগ্নিঃ।।"
ঋগবেদ ১।৯৯।১.
পদার্থঃ (জাতবেদসে) উৎপন্ন চরাচর কে জ্ঞাত জগদীশ্বরের জন্য আমরা (সোমম্) সমস্ত ঐশ্বর্যযুক্ত সাংসারিক পদার্থের (সুনবাম) নিষ্কর্ষন করি, তিনি (অরাতীয়তঃ) অধর্মী দুষ্টজনের (বেদঃ) ধন কে [ বেদ ইতি ধননামানি; নিঘন্টু ২/১০] (নি দহাতি) নিরন্তন নষ্ট করেন (সঃ) তিনি (অগ্নিঃ) বিজ্ঞানস্বরূপ জগদীশ্বর! যেমন মাঝি (নাবেব) নৌকা দ্বারা (সিন্ধুম) নদী বা সমুদ্রের পার করেন, সেরূপ (নঃ) আমাদের (অতিঃ) অত্যন্ত (দূর্গাণি) দুর্গতি, দূর্গম স্থান ও [দূর্গণি দূর্গমনানি স্থানানি; নিরুক্ত ১৪।৩৩]
(অতিদুরিতা) অতি দুঃখদানকারী (বিশ্বা) সমস্ত পাপাচরন থেকে (পর্ষত) পার করেন।।
সরলার্থঃ উৎপন্ন চরাচর কে জ্ঞাত জগদীশ্বরের জন্য আমরা সমস্ত ঐশ্বর্যযুক্ত সাংসারিক পদার্থের নিষ্কর্ষন করি, তিনি অধর্মী দুষ্টজনের ধন কে নিরন্তন নষ্ট করেন, তিনি বিজ্ঞানস্বরূপ জগদীশ্বর! যেমন মাঝি নৌকা দ্বারা নদী বা সমুদ্রের পার করেন, সেরূপ আমাদের অত্যন্ত দুর্গতি, দূর্গম স্থান ও অতি দুঃখদানকারী সমস্ত পাপাচরন থেকে পার করেন।।
(বিঃদ্রঃ ছবিতে যাহা দেখছেন তাহা দেবীও নয়, দুর্গতি নাশকারি অগ্নিও নয়!)
ওম্ শান্তি শান্তি শান্তি
২. বেদ এর মধ্যে কি দূর্গার কথা আছে?
উত্তর-
১. যারা এটা বলে তারা হয়তো প্রকৃত সত্য জানে না অথবা জানলেও মিথ্যাচার করছে। প্রথমে দেখুন দেবী মানে কি-
দেব দেবী- (দিবু ক্রীডাবিজিগীষাব্যবহারদ্যুতি স্তুতিমোদমদস্বপ্নকান্তিগতিষ) এই ধাতু থেকে দেব ও দেবী দুইটা শব্দই সিদ্ধ হয়। পরমাত্মা তথা পরমেশ্বরের নাম তিন লিঙ্গেই আছে যথা- "ব্রহ্মচিতিরীশ্বরশ্চেতি"। যখন ঈশ্বরের বিশেষণ হবে তখন 'দেব', আর যখন চিতির বিশেষণ হবে তখন 'দেবী'। এই কারণে পরমেশ্বরের একটা নাম দেবী।
(ক্রীডা) যিনি শুদ্ধ [সমস্ত] জগতকে ক্রীড়া করাইবার, (বিজিগীষা) ধার্মিকদের জয়যুক্ত
করাইবার ইচ্ছুক [ব্যবহার] যিনি সকল চেষ্টার সাধন ও উপসাধন সমূহের দাতা, (দ্যুতি) স্বয়ং
প্রকাশ স্বরূপ ও সকলের প্রকাশক, (স্তুতি) প্রশংসার যোগ্য, (মোদ) স্বয়ং আনন্দস্বরূপ এবং অপরের আনন্দদাতা, (মদ) মদোম্মত্তদের
তাড়নাকারী, (স্বপ্ন) সকলের নিদ্রার জন্য রাত্রি ও প্রলয়ের কর্তা, (কান্তি) কামনার যোগ্য এবং (গতি) জ্ঞানস্বরূপ- এই জন্য সেই পরমেশ্বরের নাম 'দেব'। দেব শব্দের যতগুলো অর্থ লিখিত
হয়েছে 'দেবী' শব্দের অর্থও ততগুলি আছে।
এখন ঋগবেদের দেবী সুক্তের সকল মন্ত্রের ভাবার্থ দেওয়া হল-
ঋগবেদ ১০/১২৫/১-৮
১)আমি বাক্-আমব্রীনী, অসীম জ্ঞানের কন্ঠস্বর, মহাবিশ্বের বাক্, (আমি) ১১ রুদ্র, ৮ বসু, ১২ আদিত্য এবং সকল বিশ্বদেবগনের সহিত সকল
কিছু বহনকারী ও একই সঙ্গে বিদ্যমান৷ আমি মিত্র ও বরুন (দিবস ও রাত্রি) উভয়ের
সাথে ব্যাপ্ত ও ইহাদের ধারন করি৷ আমি ইন্দ্র ও অগ্নি (বাতাস ও আগুন) উভয়ের সহিত ব্যাপ্ত ও ইহাদের ধারন করি৷ আমি অশ্বিনীদ্বয়কে বহন করি ও ধারন করি৷
২)আমি যোগাযোগের ক্ষেত্রে এবং দলগত সোম
আনন্দের ক্ষেত্রে অভ্যর্থনা ও অভিজ্ঞতার
প্রকাশকে বহন করি৷ আমি আকৃতি গঠনগত (পুষ্টি ও বৃদ্ধি) বিকাশ প্রক্রিয়া বহন করি, জীবনের শক্তি ও মহিমাকে এবং অগ্রগতিকে বহন করি৷ আমি যজমানগনের জন্য সম্পদ ও অগ্রগতি বহন করি যারা জীবনের জন্য মিষ্টতা ও সৌন্দর্য সৃষ্টি করে এবং যারা মনুষ্যগন ও সকল প্রাণীগনের কল্যানের জন্য যজ্ঞের প্রচুর হবি বহন করে৷
৩)আমি সমাজ ব্যবস্থার শক্তি ও সংগঠন
প্রনালী৷ আমি মনুষ্যগনের যুথবদ্ধ ব্যবস্থায় সম্পদ, সন্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের অগ্রদূত৷ আমি মনুষ্য
জীবনের মৌলিক বিষয়সমূহ ও এর
মূল্যবোধের চিন্তা, সচেতনতা ও সুনির্দিষ্ট সংগঠিত প্রক্রিয়া৷ জ্ঞানী ও ঋষিগন আমাকে বিবিধ সামাজিক রাজনৈতিক কাঠামোতে স্থাপন
করেন নানাবিধ সুস্থিত অবস্থায় এবং বিবিধ দিকে অগ্রগতির বিবিধ বিকাশশীল শক্তি ও
সম্ভাবনার সহিত (আমাকে স্থাপন করেন)৷
৪)হে শ্রোতাগন আমি তোমাদের কি বলি তা শোন, ইহা বিশ্বাসের সহিত শ্রবনযোগ্য এবং অনুশীলনযোগ্য৷ যে কেহ দেখে যাহাই দেখে, যে কেহ প্রাণধারন করে, যাহা বলা হয়েছে যে কেহই তা শ্রবন করে, সে আমা কর্তৃকই জীবনের অন্ন
গ্রহন করে৷ আমি যাহা বলি তা যাহারা শোনে না,
যত্নবান হয় না এবং আমাকে অবজ্ঞা করে তাহারা
পতিত হয়, তাহারা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়৷
৫)এবং এ সকল কিছু যাহা ঋষিগন ও অভিজ্ঞ বিদ্বানগন কর্তৃক প্রশংসিত ও আদরনীয় এবং এমনকি সৎ মানসিকতাপূর্ণ মনুষ্যগন কর্তৃক প্রশংসিত, তাহা আমিই (দিব্য বাক্) স্বয়ং বলি৷ যাকে আমি ইচ্ছা করি তাকে তার যোগ্যতার গুনে, বৈশিষ্ট্য ও কর্মের গুনে তার মেধা বৃদ্ধি করি,
যজ্ঞীয় ব্রহ্মার যোগ্য ধর্মানুরাগী করি, কাব্যিক ঋষির দর্শন বৃদ্ধি করি, ব্যাতিক্রমী চিন্তাশীলদের বুদ্ধিমত্তাকে বর্ধিত করি৷
৬)আমি রুদ্রের জন্য ধনু (ন্যায় বিচার ও শাস্তি
প্রদান শক্তি) উত্তোলন করি, ভক্তি ও দেবত্বের
অনুসরনকারীদের বিরুদ্ধে ঘৃনা ও হিংস্র শক্তিকে
দূর করতে৷ মনুষ্যগনের জন্য আমিই যুদ্ধ করি
এবং তাহাদের জন্য পরিতৃপ্তি ও সুখ সৃষ্টি করি,
এবং আমি পৃথিবী ও অন্তরীক্ষে ব্যাপ্ত আছি৷
৭)আমি এই মনুষ্যজাতির এবং এই জগতের
রক্ষাকারী অভিভাবক দ্যুলোককে শাসকরূপে সৃষ্টি করি এবং সুর্যকে সৃষ্টি করি৷ জলের গভীরে ও সমূদ্রে এবং মহাকাশের অনুতে আমার স্থান৷
একইভাবে আমি ব্যাপ্ত আছি মহাবিশ্বের সকল
স্থানে, এবং আমি আলোর আকাশে পৌছাই এবং
আমার আলো ও মহিমা দ্বারা উর্দ্ধে দ্যুলোককে স্পর্শ করি৷
৮)মহাজগতের সকল স্থানে ব্যাপ্ত হয়ে ও তাকে
অর্ন্তভুক্ত করে, আমি সম্মুখে যাই ঠিক যেভাবে
বাতাস আকাশ জুড়ে প্রবাহিত হয়৷ অন্তরীক্ষ
ছাড়িয়ে, এই জগত ছাড়িয়ে আমি (আমার শক্তি ও ক্ষমতা এতই) সর্বব্যাপী এবং আমার অস্তিত্ব
বর্ণনাযোগ্য নয়৷
এখন কিছু শ্লোকের মাধ্যমে দেবী বন্দনা করি-
"য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ, নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু চেতনেত্যভিধীয়তে।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু বুদ্ধিরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু নিদ্রারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু ক্ষুধারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু ছায়ারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।
য়া দেবী সর্ব্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।।"
এবার ২য় নং প্রশ্নের ব্যাপারে বলা যাক-
বেদ এর মধ্যে দূর্গা শব্দ সরাসরি দেবী অর্থে নেই। তবে নিম্নরূপ 'দূর্গাণি' আছে, যার অর্থ নিরুক্ত অনুসারে "দুর্গতি ও দুর্গম স্থান"! এই মন্ত্রে মূলত অগ্নি তথা বিজ্ঞান স্বরূপ জগদীশ্বরকেই তথা পরমাত্মাকেই 'দূর্গানি' বলা হয়েছে। কারণ অগ্নিই আমাদের দুর্গতি ও দূর্গম স্থান এবং সকল দুঃখদানকারী পাপচার থেকে পার করেন। বাকিটুকু নিজেরাই দেখুন-
"জাতবেদসে সুনবাম সোমমরাতী যতো নি দহাতি বেদঃ।
স নঃ পর্ষদতি দূর্গাণি বিশ্বা নাবেব সিন্ধং দুরিতাত্যগ্নিঃ।।"
ঋগবেদ ১।৯৯।১.
পদার্থঃ (জাতবেদসে) উৎপন্ন চরাচর কে জ্ঞাত জগদীশ্বরের জন্য আমরা (সোমম্) সমস্ত ঐশ্বর্যযুক্ত সাংসারিক পদার্থের (সুনবাম) নিষ্কর্ষন করি, তিনি (অরাতীয়তঃ) অধর্মী দুষ্টজনের (বেদঃ) ধন কে [ বেদ ইতি ধননামানি; নিঘন্টু ২/১০] (নি দহাতি) নিরন্তন নষ্ট করেন (সঃ) তিনি (অগ্নিঃ) বিজ্ঞানস্বরূপ জগদীশ্বর! যেমন মাঝি (নাবেব) নৌকা দ্বারা (সিন্ধুম) নদী বা সমুদ্রের পার করেন, সেরূপ (নঃ) আমাদের (অতিঃ) অত্যন্ত (দূর্গাণি) দুর্গতি, দূর্গম স্থান ও [দূর্গণি দূর্গমনানি স্থানানি; নিরুক্ত ১৪।৩৩]
(অতিদুরিতা) অতি দুঃখদানকারী (বিশ্বা) সমস্ত পাপাচরন থেকে (পর্ষত) পার করেন।।
সরলার্থঃ উৎপন্ন চরাচর কে জ্ঞাত জগদীশ্বরের জন্য আমরা সমস্ত ঐশ্বর্যযুক্ত সাংসারিক পদার্থের নিষ্কর্ষন করি, তিনি অধর্মী দুষ্টজনের ধন কে নিরন্তন নষ্ট করেন, তিনি বিজ্ঞানস্বরূপ জগদীশ্বর! যেমন মাঝি নৌকা দ্বারা নদী বা সমুদ্রের পার করেন, সেরূপ আমাদের অত্যন্ত দুর্গতি, দূর্গম স্থান ও অতি দুঃখদানকারী সমস্ত পাপাচরন থেকে পার করেন।।
(বিঃদ্রঃ ছবিতে যাহা দেখছেন তাহা দেবীও নয়, দুর্গতি নাশকারি অগ্নিও নয়!)
ওম্ শান্তি শান্তি শান্তি
0 মন্তব্য(গুলি)