https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গীতা বিশ্লেষণ পর্ব-৫৩-গীতা ১৪/২৭ নং শ্লোকে বলা আছে "আমি ব্রহ্মে প্রতিষ্ঠা " ইহার প্রকৃত তাৎপর্য কি?

Wednesday, August 21, 2019
 
প্রশ্ন- গীতা ১৪/২৭ নং শ্লোকে বলা আছে "আমি ব্রহ্মে প্রতিষ্ঠা!" ইহার প্রকৃত তাৎপর্য কি?
 
উত্তর- গীতা ১৪/২৭ নং শ্লোক দেখিয়ে অনেক পন্ডিতকেই বলতে শুনা যায়, শ্রী কৃষ্ণ স্বয়ং ব্রহ্মকে(পরমাত্মাকে) তৈরি বা প্রতিষ্ঠা করেছেন। অনেকে আবার এভাবেও বলে যে, ব্রহ্ম(পরমাত্মা) শ্রী কৃষ্ণের আশ্রয়ে আছেন।

কিন্তু বাস্তবে যারা প্রশ্ন উপনিষদ অধ্যায়ন করেছেন তাদের দৃষ্টিতে এই ব্যাখ্যা যথোপযুক্ত নয়। কারণ, প্রশ্নোপনিষদ ৪/৭ নং এ স্পষ্ট বলা হয়েছে যে-


"স যথা সোম্য বয়াংসি বাসোবৃক্ষং সম্প্রতিষ্ঠন্তে এবং হ বৈ তৎ সর্বং পর আত্মানি সম্প্রতিষ্ঠতে।।"
প্রশ্ন_উপনিষদ ৪/৭.
অর্থাৎ হে প্রিয়দর্শন! এই বিষয়ে (সমস্ত জীবজগৎ অক্ষরে তথা পরমাত্মায় সম্প্রতিষ্ঠিত হয়) দৃষ্টান্ত এই যে- পক্ষিগণ যেরূপ আবাস বৃক্ষের প্রতি ধাবিত হয়, ঠিক সেইরূপই বক্ষ্যমাণ সকল পদার্থ অক্ষর পুরুষে(পরমাত্মায়) সাম্যক প্রতিষ্ঠিত হয়।

এছাড়াও প্রশ্ন উপনিষদের ৪/৮-১১ নং এর শ্লোকগুলাতে আরো স্পষ্ট ভাবেই বলা হয়েছে যে-

পৃথিবী এবং তার মাত্রা গন্ধ, জল এবং তার মাত্রা রস, বায়ু এবং তার মাত্রা স্পর্শ, আকাশ এবং তার মাত্রা শব্দ 'এই স্থুল এবং পঞ্চ ভূত' এবং চক্ষু এবং তার বিষয় দর্শন করা, শ্রোত্র এবং তার বিষয় শ্রবণ করা, নাসিকা এবং তার বিষয় আঘ্রাণ, রসনা এবং তার বিষয় রসের স্বাদ গ্রহণ এবং ত্বক এবং তার বিষয় স্পর্শ, এই পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং এদের বিষয় বাক এবং বক্তব্য, হস্ত এবং তা দ্বারা গ্রহন করা, উপেস্থেন্দ্রিয় এবং তা দ্বারা হওয়া মৈথুনবিষয়ক আনন্দ, পায়ু ইন্দ্রিয় এবং তা দ্বারা মলমূত্র ত্যাগ, পদ এবং তার কার্য চলা, এই পঞ্চকর্মেন্দ্রিয় এবং এদের বিষয় মন এবং মননযোগ্য বিষয়, বুদ্ধি এবং তার জানারূপ বিষয়, অহংকার এবং অহং যোগ্য বিষয়, চিত্ত এবং তার চিন্তনরূপ বিষয়, এই চার অন্তঃকরণ এবং তাদের বিষয় এবং তেজ এবং তার দ্যুতি প্রাণ এবং তার ধারণ করা, এই সমস্ত পদার্থ অক্ষর পুরুষ বা পরমাত্মাতে প্রতিষ্ঠিত থাকে।।৮।।

নিশ্চয়রূপে এই জীবাত্মা যিনি দ্রষ্টা, শ্রোতা, রস গ্রহনকর্তা, মননকর্তা, বোধকর্তা এবং যিনি শুভাশুভকর্ম কর্তা, বিজ্ঞানস্বরূপ আত্মা এই শরীররূপী পুরে শয়নকর্তা তিনিও সর্বোপরি অবিনাশী পরমাত্মাতে প্রতিষ্ঠিত।।৯।।

হে প্রিয়দর্শন! নিশ্চয়রূপে যা প্রসিদ্ধ যে, যিনি সেই অজ্ঞানরহিত, শরীররহিত, রক্তাদি বর্ণ রহিত, প্রকাশস্বরূপ অবিনাশী পরমাত্মাকে জানেন তিনি সূক্ষ্ম থেকেও সূক্ষ্ম অবিনাশী পরমাত্মকে প্রাপ্ত হন। তিনি সম্পূর্ণরূপে ব্রহ্মের জ্ঞাতা তদ্ধর্মতাপত্তি দ্বারা ব্রহ্মের গুণ ধারণ করে তদ্রুপ হন। এই বিষয়ে পরবর্তী এই শ্লোক।।১০।।

হে প্রিয়বর! পঞ্চপ্রাণ পৃথিব্যাদি পঞ্চ ভূত এবং চক্ষুরাদি সকল ইন্দ্রসমূহ যার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সেই পরমাত্মাকে যে জীবাত্মা জানেন তিনি সর্ব নাম পরমাত্মার জ্ঞাতা হয়ে সর্বজ্ঞ ব্রহ্ম কে নিশ্চয়রূপে প্রাপ্ত হন।।১১।।

তাই উপনিষদের আলোকে গীতা উক্ত ১৪/২৭ নং শ্লোকের প্রকৃত অর্থ দাঁড়ায়-

"যেহেতু আমি নিত্য অমৃতের অর্থাৎ মোক্ষের, সনাতন ধর্মের এবং ঐকান্তিক সুখস্বরূপ ব্রহ্ম=বেদ এর আশ্রয় বা প্রতিষ্ঠা।"

আশাকরি বুঝতে পেরেছেন, নমস্কার।