সম্প্রতি সায়ণাচার্যকৃত বেদ ভাষ্য দ্বারা নাস্তিক-কাঠমোল্লা ও তান্ত্রিকরা বেদে মেষ মাংস রান্নার কথা আছে এই রূপ দাবি করে থাকে । প্রকৃতপক্ষে তাদের এই বেদ ভাষ্য অপ্রামাণিক ও কপোলকল্পিত । তা আমরা নিম্নে প্রমাণাদিসহ প্রমাণ করব ।
পীবানং মেষমপচন্ত বীরা ন্যুপ্তা অক্ষা অনু দীব আসন্ ।
দ্বা ধনুং বৃহতীমপ্স্বন্তঃ পবিত্রবন্তা চরতঃ পুনন্তা ॥
▶ ঋগ্বেদ ১০.২৭.১৭ ◀
👉 সায়ণভাষ্যঃ “বীরাঃ প্রজাপতেঃ পুত্রা অঙ্গিরসঃ "পীবানং স্থূলম্ । মেদোমাংসাদিয়ুক্তমিত্যর্থঃ। "মেষম্ অজম্ “অপচন্ত প্রজাপতিরূপস্যেন্দ্রস্যার্থায় পক্ববন্তোঽভবন্ । পশুয়াগং কুর্বন্ত ইত্যর্থঃ । কিংচ। লুপ্তোপমমেতৎ । যথা দেবানাম্ "অক্ষাঃ “দীবে দেবনে রমণস্থানে “ন্যুপ্তাঃ নিক্ষিপ্তাঃ সন্তঃ "অনু “আসন্ সংক্রীডমানয়োর্দ্বয়োরেকতরস্যানুগতা ভবন্তি তথা সর্বেঽঙ্গিরসঃ প্রজাপতেরনুগতা ভবন্তি। “দ্বা অঙ্গিরসাং মধ্যে দ্বাবঙ্গিরসৌ “ধনুম্ । ধনুশব্দোঽত্র ধনুঃশব্দপর্যায়ো ধনশব্দপর্যায়ো বা । ধনুর্যথা বধসাধনং তথাজ্ঞানাদিবধসাধনং ধনবৎপ্রীতিকরং বা। কপিলমিত্যর্থঃ । "বৃহতীং প্রজাপতেরাজ্ঞয়া বর্ধয়িত্রীং প্রকৃতিম্ "অপ্স্বন্তঃ প্রকৃতিস্থানাং সূক্ষ্মণামুদকানাং মধ্যে "চরতঃ প্রজাপত্যাদেশাদারাধয়তঃ। কীদৃশৌ । "পবিত্রবন্তা পবিত্রবন্তৌ । মন্ত্রঃ পবিত্রমুচ্যতে । ধ্যানসাধনপ্রণবমন্ত্রবন্তৌ "পুনন্তা শুদ্ধৌ। প্রণবধ্যানেনাত্মানং সংস্কুর্বন্তাবিত্যর্থঃ ॥
সায়ণভাষ্যে -
বীরাঃ = বীরাঃ প্রজাপতেঃ পুত্রা অঙ্গিরসঃ - প্রজাপতি পুত্র অঙ্গিরসের [ অঙ্গিরা ] কথা বলা হয়েছে । যেখানে মূল মন্ত্রে কেবল বীরাঃ উল্লেখ আছে সেখানে এই পুত্রাদি খুঁজে পাওয়া সম্পূর্ণ কল্পনা মাত্র ।
অক্ষ= পাশা, অর্থ করে লিখেছেন ' সংক্রীডমানয়োর্দ্বয়োরেকতরস্যানুগতা ভবন্তি ' ; যেখানে বেদে দ্যূতক্রীড়া নিষেধ করা হয়েছে অক্ষকিতব নিন্দা সূক্তে সেখানে সায়ণাচার্য এখানে অক্ষক্রীড়াপূরক অর্থ করে বেদের মধ্যেই পরস্পর বিরোধীতামূলক ভাষ্য করেছেন ।
👉 বাংলা অনুবাদঃ পুরুষগণ স্থূলকায় মেষপশু পাক করিল। পাশক্রীড়াস্থলে পাশ গুলি নিক্ষিপ্ত হইতে লাগল। আর দুই জন প্রকাণ্ড ধনু ধারণপূর্বক মন্ত্র উচ্চারণ দ্বারা আপনাদিগের দেহ শুদ্ধ করিতে করিতে জলের মধ্যে বিচরণ করিতে লাগিল।
[ রমেশচন্দ্র দত্ত কৃত অনুবাদ ]
এখন এর সদর্থ আমরা দেখি -
সংস্কৃত ভাষ্যঃ (বীরাঃ) দশ প্রাণাঃ “প্রাণা বৈ দশ বীরাঃ” [শ০ ১২।৮।১।২২] (অক্ষাঃ অনু) ইন্দ্রিয়াণি অনু “অক্ষা ইন্দ্রিয়াণি” [মৈ০ ৪।৫।৯] (দিবে ন্যুপ্তাঃ আসন্) রমণস্থানে শরীরে ক্ষিপ্তাঃ অন্তর্হিতাঃ সন্তি (মেষং পীবানম্-অপচন্ত) ইন্দ্রমাত্মানম্ “ইন্দ্রস্য মেষস্য” [কাঠ০ ১৬।২১, ১৮.২১] পুষ্টং পূর্ণশরীরবন্তং কুর্বন্তি (দ্বা) দ্বৌ প্রাণাপানৌ (বৃহতীং ধনুম্) মহতীং তনুম্ (অপ্সু অন্তঃ) দেহজলেষু (পুনন্তা পবিত্রবন্তা চরতঃ) পবিত্রয়ন্তৌ পবিত্রভূতৌ চরতঃ ॥
বঙ্গানুবাদঃ ( বীরাঃ) দশ প্রাণ (অক্ষাঃ-অনু) ইন্দ্রিয়ের সাথে (দিবং ন্যুপ্তাঃ-আসন্) রমণস্থান শরীরে রাখা হয়েছে। ( মেষং পীবানম্-অপচন্ত) আত্মাকে পূর্ণাঙ্গ করে । (দ্বা) উভয় প্রাণ ও অপান ( বৃহতীং ধনুম্) মহান দেহকে ( অপ্সু-অন্তঃ) দেহজলে পবিত্র করার মাধ্যমে পবিত্ররূপে বিচরণ করে৷
ভাবার্থঃ আত্মা যখন শরীরে আগমন করে তখন প্রথমে দশ প্রাণ প্রাপ্ত হয় । তারপরে ইন্দ্রিয়গণের বিকাশ হয় এবং শরীর সর্বাঙ্গীনভাবে পরিপূর্ণ হয় । অভ্যন্তরীণ রস ( রক্ত) -কে পবিত্র করতে থেকে স্বয়ং পবিত্রস্বরূপ প্রাণ-অপান তথা শ্বাস-প্রশ্বাস চলতে থাকে৷
[ ভাষ্যকারঃ স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক , আর্যসমাজ ]
স্বাধ্যায়ী পাঠক , দেখতেই পাচ্ছেন সায়ণাদি পৌরাণিক ভাষ্য ও আর্যভাষ্যে কত বিশাল পার্থক্য ! যেখানে সায়ণাচার্য মন্ত্রের পদসমূহকে টেনেটুনে নিজের ইচ্ছামত কাল্পনিক ভাষ্য করেছেন যা কিনা পরবর্তীতে রমেশচন্দ্র দত্ত, ম্যাক্স মুলার,গ্রিফিত অন্যাদি অনুবাদকের মূল আধার । এভাবেই বেদের অপ্রামাণিক ভাষ্য দ্বারা পাশ্চাত্য ও সাধারণ সনাতনীদের নিকট বেদ দুর্বোধ্য ও অবজ্ঞার স্থানে চলে গিয়েছে । তাই আমাদের সকলের উচিৎ এসব ভাষ্য বর্জন করা ও অপরকে করতে উৎসাহিত করা ।
🖋প্রস্তুতে ,
🚩 বাংলাদেশ অগ্নিবীর 🚩
0 মন্তব্য(গুলি)