সংস্কৃতে একটি একটি নীতিবাক্য আছে মূর্খের পরিচয় নিয়ে -
মূর্খস্য পঞ্চ চিহ্নানি গর্বো দুর্বচনং তথা।
ক্রোধশ্চ দৃঢ়বাদশ্চ পরবাক্যেষ্বনাদরঃ ।।
অর্থাৎ - মূর্খের ৫টি লক্ষণ - গর্ব , কটুবচন, ক্রোধ, অপরিমিত কথা বলা ও পরবাক্যে অনাদর ।
সম্প্রতি মহর্ষি স্বামী শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতীর চরিত্র নিয়ে পৌরাণিকগণের এহেন আচরণই লক্ষ্যণীয় । আমরা প্রতিবারই তাদের সমুচিত খণ্ডন করে থাকি কিন্তু তৎপশ্চাতও তারা একই বুলি আওড়ে যান এবং নতুন নতুন অপপ্রচার তৈরী করেন । অবশ্য অপপ্রচার করাটাই স্বাভাবিক কারণ শাস্ত্রে অনধিকারী ও মূর্খদের যতই যুক্তি প্রমাণ দেওয়া হোক না কেন তারা তা বুঝতে অক্ষম । তবে এদের মূর্খ না বলে অসম্পূর্ণ পাঠক কিংবা স্বল্প পড়ুয়া জ্ঞানপাপী বলাই শ্রেয় । কারণ স্বয়ং ভর্তৃহরিও বলেছেন ।
অজ্ঞঃ সুখমারাধ্যঃ সুখতরমারাধ্যতে বিশেষজ্ঞঃ ।
জ্ঞানলবদুর্বিদগ্ধং ব্রহ্মাপি নরং ন রঞ্জয়তি ॥৩
- অজ্ঞ ও জ্ঞানীকে বোঝানো যায় কিন্তু অল্পজ্ঞ পাণ্ডিত্যাভিমানীকে বোঝানো অসাধ্য ।
আসুন তাদের আরোপ আগে পর্যবেক্ষণ করি ।
আরোপঃ কবিরত্ন শ্রীমৎ অখিলানন্দ শর্মা ছিলেন আর্য সমাজের একজন সদস্য, আর্যসমাজী থাকাকালীন দয়ানন্দের ভক্ত হওয়ার দরুণ ‘দয়ানন্দদিগ্বিজয়ম্’ নামক সংস্কৃত কাব্যগ্রন্থ লেখেন ৷ কিন্তু পরে তিনি উপলব্ধি করেন যে তিনি ভুল পথে হাঁটছেন, আর্যসমাজীরা কেবল বেদাদি শাস্ত্রের অপব্যাখ্যাকারী ৷ তাই তিনি আর্যসমাজ ত্যাগ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী হন এবং দয়ানন্দের 'সত্যার্থপ্রকাশ' খণ্ডন করে ‘সত্যার্থপ্রকাশালোচনম্’ গ্রন্থ লেখেন ৷
খণ্ডনঃ পণ্ডিত অখিলানন্দ আর্যসমাজ ত্যাগ করেছেন আর বলেছেন যে আর্যসমাজ ভুল তাই হলো যুক্তি । বলহারি মশাই । আর্যসমাজের সাথে এই অখিলানন্দের একাধিকবার বিতর্ক হয়েছে যেখানে সে গোহারা হেরেছে । এখন কোন এক্স-হিন্দু যদি সমালোচনা করে তাহলেই কি সনাতন ধর্ম ভুলে ধরে নেবো আমরা ? নাকি যৌক্তিক ও প্রামাণিক আলোচনা করবো ?
তাদের দাবীর প্রথম লাইনেই ভূল। গোড়ায় গলদ
অখিলানন্দ আর্য সমাজ ত্যগ করেছিলেন বর্ণ ব্যবস্থা নিয়ে মতভেদের কারণে-
http://aryamantavya.in/kavi-ratna-akhilanand-sharma/
এই অখিলানন্দ শর্মা আর্যসমাজে থাকা অবস্থায় থাকা অবস্থায় সংস্কৃতে কাব্য রচনা করতেন। বর্ণব্যবস্থা নিয়ে মতভেদ হওয়ার কারণে আর্যসমাজ ত্যাগ করেন। তিনি তখন পুরোপুরি আর্যসমাজ বিরোধী হয়ে যান এবং যত্রতত্র মহর্ষির নামে কুৎসা রটাতে থাকেন। অথচ আর্যসমাজে থাকা অবস্থায় মহর্ষির গুণগাণ করে লিখেছিলেন 'দয়ানন্দ দিগ্বিজয়' এর মতো গ্রন্থ। এর থেকেই উনার মানসিক বিকৃতি বোঝা যায়।
আর্য সমাজ ত্যাগ করেছিলেন বর্ণ প্রথা নিয়ে বিরোধের জন্য ! অথচ কুৎসা রটাচ্ছেন মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর নামে ! তাও প্রমাণবিহীনভাবে ।আর্যসমাজের ঐতিহাসিক শাস্ত্রার্থ সংগ্রহ ' নির্ণয় কি তট পর ' এর ৫টি খণ্ডে সম্পূর্ণ শাস্ত্রার্থ পরাজয়ের স্বীকারোক্তিসহ লিপিবদ্ধ আছে । দেখুন কিছু শাস্ত্রার্থের উল্লেখ -
১. আর্য সমাজের বিরোধী হওয়ার পর এনার সাথে পণ্ডির শিবশংকর শর্মার শাস্ত্রার্থ হয়,যাতে উনি আর্যসমাজের সাথে শাস্ত্রার্থে আসতে সাহস দেখানোর ফল ভোগ করেন।
২.ডিডওয়ানা অঞ্চলে শাস্ত্রার্থে উপস্থিত হয়েও আর্যসমাজের উপস্থিতিতে অংশগ্রহণ করার সাহস হয়নি উনার।
৩.১৯২৯ সালে পালী (মারওয়ার) এ শাস্ত্রার্থ করতে আসলে পরে আর্য সমাজের পণ্ডিত বুদ্ধদেব উপাধ্যায় এনাকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন।
আরোপঃ ইতোপূর্বে রাজস্থানের আজমীর থেকে আর্য সমাজ কর্তৃক স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর জীবনী ছাপা হয়েছিলো; তো এই গ্রন্থের রেফারেন্স দিয়ে অখিলানন্দ শর্মা তার সত্যার্থপ্রকাশালোচনম্ গ্রন্থের ২২-২৪ পৃষ্ঠায় দয়ানন্দ সম্পর্কে লিখেছেন-
রমাবাঈ নামে অতি বিদুষী এক নারীর খ্যাতি চারিদিকে পরিব্যাপ্ত হয় ৷ তার সামনে দয়ানন্দের বিদ্যাবুদ্ধি অতি নগণ্য ছিল ৷ দয়ানন্দ তাই তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে তাকে চিঠি পাঠাতে থাকেন ৷
খণ্ডনঃ এই বইটি আমাদের সংগ্রহেই আছে এবং মূর্খ পৌরাণিক বোধহয় তা জীবনে চোখেও দেখেনি বরং অন্ধভাবে অখিলানন্দের কথাই তুলে ধরেছে ।
পৌরাণিকদের দাবী অনুযায়ী মহর্ষি দয়ানন্দ রমাবাঈকে দুই-একটি পত্র লেখেন কুশলাদি জানার জন্য ও তাদের দাবী স্বামী দয়ানন্দ আশ্রমে রমাবাঈ এর সাথে রাত্রিযাপন করছেন
এখন তাদের দাবীর এই যৌক্তিকতায় আসা যাক
রামায়ণে পৌরাণিকদের প্রিয় উত্তর কাণ্ড অনুসারে (আর্যরা উত্তর কান্ড মানে না ও এটা প্রক্ষিপ্ত)বাল্মিকীও অসহায় সীতাকে আশ্রমে ঠাঁই দিয়েছিলেন। তাই বলে এখন কি এটা বলা উচিত যে বাল্মিকী মুনি নিজের বিকৃত কাম চরিতার্থের জন্য সীতাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন
যদি এই কাহিনীকে সত্য ও ধরি আমরা, তাও সমস্যা নেই। যার মন যেমন আপনারা নেগেটিভ ভাবে নিছেন আমরা পজেটিভ। আপনি এই কাহিনী দ্বারা প্রমাণ করতে পারবেন মহর্ষির মন্দ অভিলাষ ছিলো
আশ্রমে আশ্রয় দেওয়া কিভাবে মন্দ অভিলাসের মধ্যে পরে আপনি কি প্রমাণ করতে করতে পারবেন যে মহর্ষির সাথে রমাবাঈ এর শারীরিক সম্পর্ক ছিলো
এখন অখিলানন্দ ছিলো এক্স আর্যসমাজী! তার "দয়ানন্দ ও রমাবাঈ সংবাদ " যেটা কিনা প্রমাণহীন গল্পে ঠাসা সেই বই আমরা আর্যরা কেন মানতে যাবো ?
অখিলানন্দ আর্যসমাজী ছিলো না পৌরাণিক যদি পৌরাণিক হয়ে থাকে তার কথা কেন মানা হবে সে কি কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করছে আর্যসমাজের কাছে
আপনারা অখিলানন্দের "দয়ানন্দ দ্বিগ্বিজয়ম্ " দয়ানন্দ লহরী " পৌরাণিকরা কি প্রমাণ্য মানবে ? তখন আমরা কেন "দয়ানন্দ-রমাবাঈ" সংবাদকে প্রামাণ্য মানতে যাবো?
হ্যাঁ,যদি আপনারা "দয়ানন্দ দিগ্বিজয়ম্ ", দয়ানন্দ লহরী" মানেন তাহলে এই পুস্তক মানতে আমাদের কোনো বাধা নেই।
কবিরত্ন অখিলানন্দের যে পুস্তকের কথা বলেছেন তা প্রামাণ্য কি প্রকারে
আপনাকে উদ্ধৃতি দিতে হবে মূল গ্রন্থ থেকে ।
ধরা যাক, একজন প্রাক্তন সনাতনী যিনি কিনা কোন সেমেটিক মতবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যা গ্রহণ করে 'ধর্মান্তরিত' হয়েছেন [ উদাহরণ স্বরূপ - আবুল হোসেন ভট্টাচার্য কিংবা হাল আমলের আবদুল আজিজ ] তিনি যদি সনাতন ধর্ম ভুল (?) এই মর্মে কোন বই বা প্রবন্ধ রচনা করেন আপনি কি সেটা প্রামাণ্য ধরবেন ? যদি আপনি ধরতে রাজি থাকেন তাহলে আমরাও এই বই প্রামাণ্য মেনে নেবো ৷
যদি কোনো যবন বা খ্রিস্টান তাদের লেখা পুস্তকে সনাতন ধর্মের বিরোধীতা করে আপনিকি সেটা মানবেন ?
- মানবেন না। বিরোধীদের লেখা প্রমাণিক মানা হয় না। এর জন্য যে যে ধর্মের সে সে ধর্মের গ্রন্থই মানে এবং তার কাছে সেটাই হলো প্রামাণিক। পৌরাণিকরা পুরাণ বিশ্বাস করে জন্য আমরা তাদের পুরাণ এর রেফারেন্স দেখাই অশ্লীলতা,অবৈজ্ঞানিকতা ইত্যাদি।অখিলানন্দ ছিলো বিরোধী তার লেখা বই কিভাবে মানা যায় ?
যদি মানতে হয় তাহলে তাহলে আর্য সমাজে থাকা কালিন সময়ে "দয়ানন্দ দ্বিগ্বিজয়ম্ " "দয়ানন্দ লহরী"এই গুলি কেন মানবেন না ?
অখিলানন্দ কবিরত্ন আর্যসমাজে থাকাকালীন দয়ানন্দ বিজয়ম্ , দয়ানন্দ দিগ্বিজয়ম্ মহাকাব্য রচনা করেন ।
সূত্রঃ দয়ানন্দ দিগ্বিজয় -
দয়ানন্দ দ্বিগ্বিজয়ম্ - পণ্ডিত অখিলানন্দ কবিরত্ন
কিন্তু পরবর্তীতে আর্যসমাজ বিধবা বিবাহ , জন্মগুণে নয় বরং কর্মগুণে বর্ণ ইত্যাদি ব্যক্তিগত মতবিরোধের কারণে আর্যসমাজ ত্যাগ করেন ও ইটাবা নিবাসী ব্রাহ্মণ্যবাদ সমর্থক , বলি সমর্থক , বিধবাবিবাহ বিরোধী জ্বালাপ্রসাদ মিশ্রের সনাতন ধর্ম রক্ষাতে যোগ দেন ও বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে কাব্য রচনা করেন । আপনি কি সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত ?
আর সবথেকে বড় ও কমনসেন্সের বিষয় এটিই যে ধরা যাক দূর্জনসন্তোষ ন্যায় অনুযায়ী মেনেও যদি নেই কিছুক্ষণের জন্য যে উক্ত পত্রের ন্যায় কথা আছে তাহলে তা উল্লেখ করুন পৃষ্ঠা ও প্রমাণাদি সহ । কারো বইয়ের উদ্ধৃতি প্রমাণ কিভাবে
আর কেউ যেন পারলে উক্ত জীবনীর কোথায় আছে তা যেন জানায় । আমাদের কাছে জীবনী আছে সেই সংস্করণটাই । ২৬৭-৩০৯ অব্দি যে রেফারেন্স উল্লেখ করা হয় দয়া করে সেটা দিতে আসবেন না । ওতে কিছুই নেই । প্রমাণ চাইলে স্ক্রিনশট দিয়ে দেওয়া যাবে ।
আর আর্যসমাজ কি ঘাসপাতা খায় যে যদি সত্যিই এমন হতো তাহলে তারা প্রকাশ করতো ? অর্থাৎ নিশ্চয়ই এমন নয় বলেই প্রকাশ করা হয়েছে যা কিনা এই বিকৃত পুরাণবাদীদের মস্তিষ্কে কদর্যভাবেই প্রোথিত হয়েছে কারণ তাদের শিক্ষাই এমন ।
আরোপঃ দয়ানন্দের কাছ থেকে রমাবাঈের প্রতি প্রথম চিঠিতে লেখা ছিল—
“... আপনার কীর্তি শুনে মনে আনন্দ পেয়েছি ৷ শ্রীমতীর নিকট পত্র দ্বারা নিজের অভিপ্রায় প্রকাশ করে আপনার অভিপ্রায়ও এই প্রকার জানতে চাই.... আমি শুনেছি যে আপনি বিবাহের জন্য স্বয়ম্বর বিধি দ্বারা নিজের তুল্য গুণ-কর্ম-স্বভাবের উত্তম কুমার পুরুষ খুঁজছেন? ইহা কি সত্য অথবা নয়?.... যদি এখানে আসার ইচ্ছা থাকে তো চলে আসুন ৷ আসতে যত টাকা পথখরচ হিসেবে ব্যয় হবে তা এখান থেকে আপনাকে দেওয়া হবে ৷”
দয়ানন্দের ২য় পত্র—
“শ্রীমতী, আপনার প্রেমাস্পদ আনন্দপ্রদ পত্র পেয়েছি ৷ ঐ পত্র দেখে আমি অতীব সন্তুষ্ট হয়েছি ৷ শ্রীমতীকে সামান্য কষ্ট দিচ্ছি তা ক্ষমা করবেন ৷ ... শ্রীমতীর জন্ম কোথায়? বয়স কত? আপনার কি কোন সঙ্গী আছে না আপনি একাকিনী?....
যদি আপনার পথখরচের অসুবিধা থাকে, তাহলে শীঘ্রই জানান, যত টাকা লাগে আমি এখান থেকে পাঠিয়ে দিচ্ছি ৷”
খেয়াল করুন-দয়ানন্দের আর দেরী সহ্য হচ্ছে না ।
এই চিঠির উত্তরে রমাবাঈ তার জন্মস্থানের বৃত্তান্ত লেখেন, তার বয়স ২৩ বছর জানান, আরো জানান যে তিনি একাকিনী, তার কোন সঙ্গী নাই ৷
খণ্ডনঃ আশ্চর্যজনকভাবে তারা এই পত্রের কোন স্ক্রিনশট বা প্রমাণ বা ছবি কিছুই দেয়নি । এমনকি কত পৃষ্ঠায় আছে তাও বলেনি । কেউ কেউ দেখা যায় ২৬৭-৩০৯ পৃষ্ঠা উল্লেখ করেন । তাদের জন্য সেই অংশটার পিডিএফ ফাইল আমরা উপরেই দিয়ে দিলাম ।
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী জীবন চরিত - আজমের - প্রথমাবৃত্তি
দেখুন বের করতে পারেন কিনা । ওপেন চ্যালেঞ্জ রইলো ।
আরোপঃ
দয়ানন্দ ও রমাবাঈের মধ্যের পরবর্তী পত্রব্যবহার আর্যসমাজীরা আর ছাপায়নি, সম্ভবত ছাপানোর অযোগ্য ছিলো বলে বা পত্রালাপ হয় নি বলেই ছাপাই নি; কারণ, এরপর রমাবাঈ মেরঠে দয়ানন্দের সাথে কয়েক মাস কাটিয়ে যান ৷
খণ্ডনঃ আপনি পূর্ব ও পরবর্তী পত্রব্যবহারগুলো কি তা সম্পূর্ণ স্ক্রিনশট ও প্রমাণ সহ দেখিয়ে নিজের পিতার সংখ্যা একজনই এটা লাক্ষণিক ভাবে প্রমাণ করবেন আশা করি ।
0 মন্তব্য(গুলি)