https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

যজুর্বেদ ৩।৬ ও মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষ্য নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব

Monday, April 19, 2021


সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি পৌরাণিকগণ যজুর্বেদ ৩।৬ এ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী কৃত ভাষ্যকে ভুল দাবি করে ও মহীধর-উব্বট-করপাত্রী-জ্বালাপ্রসাদের অবৈজ্ঞানিক ও ভুল অর্থকে সঠিক বলে দাবি করছে । আজ আমরা এই দাবির সত্যতা পর্যালোচনা করব৷ 


আয়ং গৌঃ পৃশ্নিরক্রমীদসন্ মাতরং পুরঃ।
পিতরং চ প্রযন্তস্বঃ ।। 
(শুক্লযজুর্বেদ ৩/৬)
ঋষ্যাদি— ওঁআয়ংগৌরিতি সর্পরাজ্ঞীকদ্রূর্ঋষিঃ ৷ গায়ত্রী ছন্দঃ ৷ অগ্নিদেবতা ৷ 

পৌরাণিক মন্তব্য - 
গার্হপত্যাহবনীয়দক্ষিণাগ্নিস্থাপনে বিনিয়োগ ৷
(এই মন্ত্রের ঋষি- সর্পরাজ্ঞী ৷ ছন্দ- গায়ত্রী ৷ দেবতা- অগ্নি ৷ গার্হপত্য, আহবনীয় ও দক্ষিণাগ্নি স্থাপনে এই মন্ত্রের বিনিয়োগ)
.
মন্ত্রার্থ— (অয়ম্) এই দৃশ্যমান অগ্নি (গৌঃ) যজ্ঞনিষ্পত্তির নিমিত্ত যজমানের গৃহে গমনশীল, (পৃশ্নিঃ) লোহিত, শ্বেত, পীত প্রভৃতি বর্ণের শিখাযুক্ত হয়ে (আ) সর্ব প্রকারে অর্থাৎ আহবনীয়, গার্হপত্য ও দক্ষিণাগ্নি স্থানে (অক্রমীৎ) পাদবিক্ষেপ করে ; (পুরঃ) পূর্ব দিকে (মাতরম্) মাতৃরূপা পৃথিবীকে (অসদৎ) প্রাপ্ত করে, (স্বঃ) সূর্যরূপে (প্রয়ন্) সঞ্চরণ করে (পিতরঞ্চ) পিতারূপ দ্যুলোককে (অসদৎ) প্রাপ্ত করে ৷
.
প্রমাণ— ‘স্বঃ আদিত্যো ভবতি’ (নিরুঃ ২৷১৪)
‘দ্যৌর্নঃ পিতা ... মাতা পৃথিবী’ (অথর্ববেদ ৯৷১০৷১২)
.
দয়ানন্দ কৃত মনগড়া ব্যাখ্যা— (অয়ম্) এই প্রত্যক্ষ (গৌঃ) গোলরূপী পৃথিবী (পিতরম্) পালনকারী (স্বঃ) সূর্যলোককে (পুরঃ) আগে আগে (মাতরম্) নিজের যোনিরূপ জলের সাথে বর্তমান হয়ে (প্রয়ন্) প্রকৃষ্টভাবে চলতে থেকে (পৃশ্নিঃ) অন্তরিক্ষে (অক্রমীৎ) চারিদিকে ঘুরতে থাকে ৷



আরোপঃ 
দয়ানন্দের ব্যাখার সমালোচনা—
i) মন্ত্রটির দেবতা অগ্নি, তাই মন্ত্রের ‘অয়ম্’ পদে অগ্নিই নির্দেশিত হওয়া উচিত ৷ কিন্তু দয়ানন্দ ‘অয়ম্’ পদটি পৃথিবী নির্দেশার্থ ব্যবহার করেছে, আর মন্ত্রটির দেবতা অগ্নি হওয়া সত্ত্বেও দয়ানন্দের কৃত মূল ব্যাখ্যাতে অগ্নির কোন প্রসঙ্গই নাই ৷

জবাবঃ অয়ম্ এখানে গৌঃ এর বিশেষণ । তাই অয়ম্ অর্থ অগ্নি হবে তার কোন মানে নেই । আর গৌ অর্থ পৃথিবী তার প্রমাণ - 



নিঘণ্টু ১।১ 



নিরুক্ত ২।৫
  

তাছাড়া মহর্ষি ভাবার্থে বলেছেন  ' অগ্নি ও জলের নিমিত্ত হতে উৎপন্ন এই পৃথিবী ' । তাহলে মন্ত্রের দেবতা ঠিক নেই কিভাবে ?  অর্থ প্রকরণ অনুযায়ীই রয়েছে যা কিনা বিজ্ঞানবিরোধী মায়াবাদী ও পৌরাণিকরা দেখতে অক্ষম ।

 অধর্মসম্রাট করপাত্রী তার যজুর্বেদ  ৩।৬ এর ভাষ্যে বলেছেন ' সূর্য ভ্রমণশীল আর পৃথিবী স্থির '  - 


করপাত্রীর ভাব শিষ্যরা একে আপেক্ষিকতা দেখাতে চায়, তাদের জন্য পারিজাত নাম করপাত্রীকৃত ভূমিকা থেকেই সরাসরি দেওয়া হল যে করপাত্রী প্রকৃতপক্ষেই পৃথিবীকে স্থির ও অচল মানতো -




বিরোধীরা বলে থাকে  ///কিন্তু নিঘুণ্টে গৌঃ শব্দ পৃথিবীর নাম হিসেবে পঠিত হলেও নিরুক্তকার যাস্ক অন্তরীক্ষে গতিশীল বোঝাতে গৌঃ শব্দটি পৃথিবী অর্থে ব্যবহার না করে বরং সূর্য অর্থেই ব্যবহার করেছেন ৷ প্রমাণ - “গৌঃ আদিত্যো ভবতি ৷ গময়তি রসান্, গচ্ছতি অন্তরিক্ষে” (নিরুক্ত ২.১৪) ৷” সূর্যের নামও গৌঃ, আবার পৃথিবীর নামও গৌঃ ৷ কিন্তু মহর্ষি যাস্ক সূর্যেকেই অন্তরীক্ষে গমনশীল বলেছেন, পৃথিবীকে নয় ৷ ///

১. পরবর্তীতে তারা নিজেরাও স্বীকার করেছে যে গৌঃ অর্থ গমনশীল পৃথিবী  ///  गौरिति पृथिव्या नामधेयम्। यद् दूरं गता भवति। यच्चास्यां भूतानि गच्छन्ति -[निरु॰२.५] অর্থঃ পৃথিবী দূর গতা বলে বা এর মধ্যে প্রাণীসমূহ গমন করে বলে, পৃথিবীর নাম গৌঃ ৷ পৃথিবীর দূর গতা অর্থ পৃথিবী দূর-দূরান্ত ব্যাপী ৷ পৃথিবীর মধ্যে প্রাণীসমূহ দূর থেকে সুদূরে গমানাগমন করে, তাই পৃথিবীর নাম গৌঃ ///

নিরুক্তে (২।৫) সহজভাবে বলেছেন–

"গৌরিতি পৃথিব্যা নামধেয়ম্। যদ্ দূরং গতা ভবতি, যচ্চাস্যাং ভূতানি গচ্ছন্তি।।"
অর্থাৎ গৌঃ এটি পৃথিবীর নাম। যা দূর দূরান্তে গমন করে এবং যাতে প্রাণীগণ চলাচল করে, (এজন্য একে গৌ বলে)।


২. এরপরেও তারা আপত্তি করে এখানে যে - ///৷ মহর্ষি যাস্ক কিন্তু পৃথিবীকে অন্তরীক্ষে গমনকারী বলেন নাই, তাই দয়ানন্দ যে পৃথিবীকে অন্তরীক্ষে গমনশীল বলেছেন তা প্রামণহীন ৷ আর গৌঃ শব্দটি √গাম্ ধাতু থেকে এসেছে যার অর্থ গমন ৷ যেহেতু মন্ত্রটির দেবতা অগ্নি, তাই গৌঃ অর্থে যজ্ঞনিষ্পত্তির জন্য যজমানের গৃহে গমনশীল---এই অর্থই সমুচিত ৷ ///

গাম্ এর অর্থ গমন, এটি ভুল। ধাতুপাঠের ভ্বাদিগণে √গাঙ্ (গাম্) এর অর্থ দেওয়া গতৌ অর্থাৎ গতি । ফলে গাম্ ধাতু থেকে গৌঃ মানলেও এর অর্থ দ্বারা গতিশীলতাই বোঝায়।


আর গৌঃ শব্দটি √গাম থেকে আসেনি। √গম্লৃ থেকে এসেছে । অপপ্রচারকারী যে ব্যাকরণগতভাবে মহামূর্খ তা প্রমাণিত । 

পৃথিবীর এই নিঘণ্টুগত অর্থ দেখে অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কোন যুক্তিতে গৌঃ আর পৃথিবী সমার্থক হয় ? এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের 'গৌঃ' শব্দটির ধাতুগত বিশ্লেষণ করতে হবে এবং একই সাথে এর নিরুক্তগত অর্থ দেখতে হবে৷ 

কোন ধাতুর কী অর্থ এটি প্রাচীন বৈয়াকরণ 'পাণিনি' তাঁর 'ধাতুপাঠ' নামক গ্রন্থে উল্লেখ করে দিয়েছেন৷ এই 'গৌঃ' শব্দটি 'গম্লৃ' ধাতু থেকে উৎপন্ন৷ পাণিনিয় ধাতুপাঠের ভ্বাদি (ভূ + আদি) গণে এই 'গম্লৃ' ধাতুর অর্থ বলেছেন 'গম্লৃ গতৌ'। অর্থাৎ 'গম্লৃ' ধাতুর অর্থ হচ্ছে 'গতি'। এই 'গম্লৃ' ধাতুর সাথে উণাদি কোষের 'গমের্ডোঃ' (২।৬৭) সূত্র অনুসারে কর্তৃ কারকে বা অধিকরণ কারকে 'ডোঃ' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে 'গৌঃ' শব্দটি সিদ্ধ হয়৷ 




পতঞ্জলিকৃত 'মহাভাষ্য' অনুসারে, 
'নৈরুক্ত প্রক্রিয়ায় শব্দের ধাতুগত গ্রহণীয়'৷ ফলে আমরা 'গৌঃ' শব্দের ধাতুগত অর্থ বিশ্লেষণে দেখলাম 'গৌঃ' দ্বারা মূলত গতিশীল বস্তুকে বোঝায়। আর পৃথিবী গতিশীল, এটি আমরা বিজ্ঞানের কল্যাণে জানতে পারায় বুঝতে পারি গতিশীলতার কারণেই এই পৃথিবীর নাম হলো 'গৌঃ'।

এছাড়া শতপথে বলা হয়েছে  ' এই লোকই গৌ ' 


শতপথ ব্রাহ্মণ ৬।৫।২।১৭


প্রশ্ন হলো যেখানে আপনারা নিজেরাই পৃশ্নি অর্থ অন্তরিক্ষ করেননি সেখানে গৌঃ অর্থ পৃথিবী বা পৃশ্নি অর্থ অন্তরিক্ষ নিয়ে আপনাদের শিরঃপীড়ার কারণ কি ? 
আর পৃথিবী অন্তরিক্ষে গমন না করলে ঠিক কোথা দিয়ে ভ্রমণ করে জানাবেন কি ?  আপনার গৃহের উপর দিয়ে কি ? 

যাস্কাচার্য পৃথিবীকে নিরুক্তে ২।৫ গতিশীল বলেছেন, আর পৃথিবী কোথায় গতিশীল থাকে তা আমরা বেদের অন্যান্য মন্ত্রে স্পষ্ট দেখতে পাই। 




বেদ হতে পৃথিবীর অন্তরিক্ষ ও সূর্যের চারিদিকে পরিভ্রমণের কিছু প্রমাণ নিম্নরূপ -


অথর্ববেদ ১২।১।৫২



ঋগ্বেদ ৮।১০১।১৪



ঋগ্বেদ ১০।৬৫।৬



ঋগ্বেদ ১০।২২।১৪



যজুর্বেদ ৮।৯



ঋগ্বেদ ১।১৬৪।১৭



ঋগ্বেদ ২।১১।২০

এছাড়া জ্যোতিষ শাস্ত্রে -

অনুলোমগতিনৌংস্থঃ পশ্যত্যচলং বিলোমগং যদ্বৎ । 
অচলানি ভানি তদ্বৎ সমপশ্চিমগানি লঙ্কায়াম্ ॥৯ ॥
আর্যভট্টীয়ম্ গোলপাদ:৪:৯
💢যজ্বপ্রকাশিকা:💢

 নাবি স্থিত : পুরুষ : অচলং পরং পারং প্রতি নৌগমনবশাদ্ অনুলোমং গচ্ছন্ তদেব পরং পারং বিলোমগং প্রতিলোমং গচ্ছতীব পশ্যতি । তথা লঙ্কায়াং সমপশ্চিমগানি ভানি ভূস্থান্যচলানি বস্তূনি প্রাঙ্মুখং গচ্ছন্তীব পশ্যন্তি । এবং ভচক্রস্যৈব প্রত্যগ্গমনম্ । ন তু পরমার্থতো ভূমেভ্রমণমস্তি । ইতি নবমং সূত্রম্॥৯ ॥
চিদ্ধর্ষিণী টীকা:
 💢যথা নৌস্থো নৌয়ানং কুর্বন্ পুরুষোঽনুলোমগতিস্স্বাভিমতাং পশ্চিমাং দিশং গচ্ছন্নচলং নদ্যা উভয়পার্শ্বগতমচলং বৃক্ষপর্বতাদিবস্তু বিলোমগং প্রাচী দিশং গচ্ছদিব পশ্যতি তথা ভানি নক্ষত্রাণি লঙ্কায়াং সমপশ্চিমগানি কর্তৃভূতানি অচলানি ভূমিগতান্যচলবস্তূনি কর্মভূতানি বিলোমগানীব প্রাচী দিশং গচ্ছন্তীব পশ্যন্তি । লঙ্কাদি বিষুবদ্দেশে হ্যেব নক্ষত্রপঞ্জরস্য সমপশ্চিমগৎবম্ । এবং তারাণাং মিথ্যাজ্ঞানবশাদুৎপন্নাং প্রত্যগ্গমনপ্রতীতি মঙ্গীকৃত্য ভূমেঃ প্রাগ্গতিরভিধীয়তে । পরমার্থতস্তু স্থিরৈব ভূমিরিত্যর্থঃ । ভপঞ্চরস্য ভ্রমণ হেতুমাহ॥৯ ॥



আরোপঃ
ii) এই মন্ত্রের বিনিয়োগ গার্হপত্য, আহবনীয় ও দক্ষিণাগ্নি স্থাপনে, অথচ দয়ানন্দের ব্যাখ্যাতে বিনিয়োগাদির বিন্দুমাত্র উল্লেখ নাই ৷ যজুর্বেদ যজ্ঞ সম্পাদনের নিমিত্ত, তাই দয়ানন্দের ভাষ্যে যজ্ঞের কোন বিধি-বিধান ও বিনিয়োগের উল্লেখ না থাকায়, উহা ভাষ্যের নামে কেবল ফাঁজলামি মাত্র ৷ সুতরাং উহা তা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাজ্য ৷

খণ্ডনঃ 
এই অর্থ কাল্পনিক বিনিয়োগ অনুযায়ী যার দ্বারা কখনোই মন্ত্রার্থ সসম্পূর্ণ নির্ভর করে না । যেমন যজুর্বেদ ২৩। ১৯-৩১ যে অশ্বের সাথে রাজমহিষীর সঙ্গমের যে অশ্লীল অর্থ করা হয়েছে কাত্যায়ন শ্রৌত সূত্র  ২০।৬।১৩-১৭ অনুযায়ী তা সম্পূর্ণ কদার্থ ।

"প্রক্ষালিতেষু মহিষ্যশ্বমুপসংবিশত্যাহমজানীতি।"
[কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্র– ২০।৬।১৪]
পশুর প্রাণ শুদ্ধ হওয়ার পরে যজমানের পত্নী ঘোড়ার কাছে শয়ন করে এবং 'আহমজানি' ইত্যাদি [যজু -২৩/১৯] মন্ত্র পাঠ করবেন। 



"অশ্বশিশ্নমুপস্থে কুরুতে বৃষা বাজীতি।"
[কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্র– ২০।৬।১৬]
যজমানের স্ত্রী ঘোড়ার লিঙ্গকে যোনীতে প্রবেশ করিয়ে 'বৃষা বাজী' ইত্যাদি [যজু- ২৩/২০] মন্ত্র পাঠ করবেন৷
 






তা বিনিয়োগবাদী পৌরাণিকগণ কি এই অর্থ স্বীকার করতে প্রস্তুত ? নাকি আপনাদের ডিএনএতে ঘোড়ার জিন পাওয়া যাবে আপনাদের পূর্বজদের পদাঙ্ক অনুসরণ করাতে ? 

এছাড়া প্রতিটি মন্ত্রের ত্রিবিধ অর্থ সম্ভব আধ্যাত্মিক , আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক । যদি মেনেও নেওয়া হয় আপনার দেওয়া অর্থ আধিভৌতিক তথা যাজ্ঞিক সেখানে বাকি অর্থ অস্বীকৃত হবে কোন যুক্তিতে ?

মহর্ষি তার ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা গ্রন্থে বলেছেন যে শতপথসহ যেখানে যথাযথ যাজ্ঞিক অর্থ রয়েছে তিনি তার ভাষ্য করে পিষ্টপেষণ করেননি । অতঃ মহর্ষি যাজ্ঞিক অর্থ অস্বীকার করেছেন তা মিথ্যে । 



ঋ০ভা০ভূ০ প্রতিজ্ঞা বিষয় 

তাছাড়া অরূপসমৃদ্ধ অর্থ যে অশুদ্ধ এটা ব্রাহ্মণগ্রন্থ নিজেই স্বীকার করে - 




ঐ০ব্রা০ ১।১৬ [ ১।৪।৯ ]




গো০ব্রা০ উ০ ২।৬




নিরুক্ত ১।১৬

এছাড়া বিনিয়োগের উপর যে মন্ত্রার্থ নির্ভর করে না।  বরং একই মন্ত্রের বিনিয়োগ বিবিধস্থলে রয়েছে যার সাথে মন্ত্রের অর্থের কোন সম্পর্ক নেই ও পরস্পর বিরোধী তা আমরা অন্য একটি আর্টিকেলে অখণ্ডনীয় প্রমাণসহ প্রমাণ করবো । 

আরোপঃ
iii) দয়ানন্দ ‘গৌঃ’ অর্থ গোলরূপী পৃথিবী লিখে, পৃথিবীকে গতিশীল সিদ্ধ করেছে ৷ কিন্তু নিঘুণ্টে গৌঃ শব্দ পৃথিবীর নাম হিসেবে পঠিত হলেও নিরুক্তকার যাস্ক অন্তরিক্ষে গতিশীল বোঝাতে গৌঃ শব্দটি পৃথিবী অর্থে ব্যবহার না করে বরং সূর্য অর্থেই ব্যবহার করেছেন ৷ প্রমাণ - “গৌঃ আদিত্যো ভবতি ৷ গময়তি রসান্, গচ্ছতি অন্তরিক্ষে” (নিরুক্ত ২.১৪) ৷ আবার মন্ত্রে যে ‘পৃশ্নিঃ’ শব্দটি আছে তাও সূর্যেরই বোধক ৷ প্রমাণ- “পৃশ্নিঃ আদিত্যো ভবতি ৷ প্রাশ্নুতে এনং বর্ণঃ ইতি নৈরুক্তা” (নিরুক্ত ২.১৪)৷ বিচিত্র বর্ণ অগ্নিই সূর্যরূপে অন্তরীক্ষে গমন করে ৷ 

জবাবঃ নিরুক্তের উক্ত স্থল একটি ভিন্ন প্রকরণের । সেখানকার ব্যাখ্যা এখানে টানা চোখে ধুলো দেওয়ার অপচেষ্টা মাত্র । আবার আপনারা // অগ্নি (গৌঃ) যজ্ঞনিষ্পত্তির নিমিত্ত যজমানের গৃহে গমনশীল// অর্থাৎ গৌঃ অর্থ গমনশীল অগ্নি নিয়েছেন । এর সাথে নিরুক্তের সূর্যের গমনশীলতার কি সম্পর্ক বলবেন কি ?  আর পৃশ্নি অর্থ তবে  আপনারা সূর্য গ্রহণ করেননি । আপনাদের পদার্থ অনুযায়ী //(পৃশ্নিঃ) লোহিত, শ্বেত, পীত প্রভৃতি বর্ণের শিখাযুক্ত হয়ে // সেখানে আপনার অর্থ যে নিরুক্ত সম্মত নয় তা প্রমাণিত বরং দয়ানন্দজী যে পৃশ্নি অর্থ নিঘণ্টু ১।৪ অনুযায়ী করেছেন তা সঠিক -



///৷ নিরুক্তে বলা হয়েছে- “পৃশ্নিঃ আদিত্যো ভবতি ৷ প্রাশ্নুতে এনং বর্ণঃ ইতি নৈরুক্তা” (নিরুক্ত ২.১৪)৷ এখানে স্পষ্টই আদিত্য অর্থাৎ সূর্যকেই পৃশ্নিঃ বলা হয়েছে, যেহেতু সূর্য সকল বর্ণ শোষণ করেন ৷ যেহেতু মন্ত্রটির দেবতা অগ্নি, তাই প্রাচীন ভাষ্যকারগণ পৃশ্নি অর্থ বিচিত্র বর্ণের শিখাযুক্ত অগ্নি করেছেন ৷ আবার অগ্নিই সূর্যরূপে অন্তরীক্ষে গমন করে ৷ সুতরাং প্রাচীন ভাষ্যকারগণ কৃত অর্থই সমীচিন, অর্বাচীন দয়ানন্দ কৃত অর্থ বানোয়াট ///

প্রথমতঃ নিঘণ্টুতে পৃশ্নি সাধারণ বাচক । সাধারণ অর্থ এই শব্দের বিভিন্ন অর্থ হতে পারে । নিরুক্তে যাস্ক বিভিন্ন যে অর্থ হতে পারে তার মধ্যে সূর্য বাচক করে উদাহরণ দিয়েছেন । আপনি পৃশ্নির যে অর্থ দিয়েছেন ওটা যাস্ক আদিত্য পক্ষে নিয়েই ব্যাখ্যা করেছেন । 


পণ্ডিত ভগবদ্দত্ত নিরুক্ত ভাষাভাষ্যে উল্লেখ করেছেন যে পৃশ্নি যেমন আদিত্য তেমনি স্বতন্ত্রও  -



নিঘণ্টুতে যে একে সাধারণ বলা হয়েছে এখানে সাধারণ তাৎপর্য অতি মহত্ত্বপূর্ণ । আসমন্তাৎ ধারণ, আধারণ এর সাথে বর্তমানকে ' সাধারণ ' বলা হয় অর্থাৎ যা সমস্ত বস্তুকে ধারণ করে তাই সাধারণ । এছাড়া এখানে নভ শব্দটি রয়েছে এবং নভোমণ্ডল যে অন্তরিক্ষবাচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এটা কে না জানে 


 আবার আদিত্যও সাধারণে গ্রহণীয় ৷ এখানে অন্যাদি অর্থের চেয়েও অধিকতর উপযুক্ত অর্থ  ' অন্তরিক্ষ'ই -


অষ্টাধ্যায়ী ৬।৩।৮১

উদাহরণস্বরূপ নিঘণ্টুতে উক্ত ৬ শব্দে আদিত্য তথা দিব্  অর্থ রয়েছে। 
ঋগ্বেদ ১।১৬৪।৫১ তে দিব স্পষ্টই অন্তরিক্ষ বাচক - 


তথা যজুর্বেদ  ৩৩।৯০ এ সূর্য দ্যুস্থানীয় । আদিত্যরূপে সূর্য দ্যুলোকে প্রকাশিত । এখানে পৌরাণিক তথা আপনাদের ভাবপিতা উব্বটও দিব্ অর্থ অন্তরিক্ষ গ্রহণ করেছেন ।


 
এখন আপনি যদি বলেন না এসবের ওই নিরুক্ত ২।১৪ই গ্রহণীয় , দয়ানন্দ বা নিঘণ্টু সাধারণ বলেছে তা মানি না তাহলে আপনাদের মহীধরই আপনাদের গালে চপেটাঘাত করেছে দেখুন -



যজুর্বেদ ১৭।৬৫



যজুর্বেদ ২৯।১৭


এখানে আকাশ অন্তরিক্ষ ও দ্যৌ সব এক হয়ে গেলো কি গেলো না ?  অতঃ পৃশ্নি অর্থ দ্যুলোক বা অন্তরিক্ষ হবেই ধাতুগত ভাবে হলেও । প্রকাশময় স্থানকেই দ্যুলোক বলা হয় । 



উণাদি কোষ ৪।৫২

আপনার মতে পৃশ্নি অর্থ নাকি অন্তরিক্ষ কেউ করেনি !  আবার খুব দাপটে বলেছেন  // প্রাচীন ভাষ্যকারগণ কৃত অর্থই সমীচিন, // ওরে মূর্খ , কপি তো করেছেন জ্বালাপ্রসাদ মিশ্রের পদার্থ আর যুক্তি টেনেছেন করপাত্রীর থেকে । তা দুই পিতার সম্মিলিত সন্তান মহাশয়  , গর্ত থেকে বেরিয়ে নিজের দাদু মহীধর যথাক্রমে নিচের মন্ত্রে বিচিত্রবর্ণ অর্থ করেছেন আলাদা আলাদা শব্দেই কেবল সূর্যেতেই নয় । 



পৃশ্নি = বিন্দু  [ যজুর্বেদ ২৪।৪ ] সাধারণ বাচক । পৃশ্নি এখানে না আদিত্য না বিচিত্রবর্ণ । 





পৃশ্নি = দ্যুলোক , [ যজুর্বেদ ২।১৬ ] 





পৃশ্নিগর্ভাঃ = দ্যুলোক [ যজুর্বেদ ৭।১৬ ] এখানে পৃশ্নি অর্থ আদিত্য ধরেছে । যদি পৃশ্নির সাধারণতা না থাকতো তাহলে পৃশ্নির গর্ভ অন্তরিক্ষ না হয়ে দ্যুলোক হতো না । 



পৃশ্নি = বিচিত্রবর্ণ রশ্মি  [ যজুর্বেদ ১৭।৬০ ]

অতঃ পৃশ্নি অর্থ দ্যু, অন্তরিক্ষ ইত্যাদি নাম হবে তা প্রমাণিত । 

আর পরিশেষে পিতর ও মাতর নিয়ে আক্ষেপ যে কেন এখানে তা যথাক্রমে দ্যুলোক ও পৃথিবী হবে না৷  কারণ তা মূল বেদার্থ বিরুদ্ধ । সূর্য উদিত ও অস্ত হয় এই মতে যা কিনা আমরা মহা মূর্খ করপাত্রীর ভাষ্যে দেখেছি  । 

কিন্তু ঐতরেয় ব্রাহ্মণ অনুযায়ী সূর্য উদয় বা অস্ত যায় না - 


গোপথ ব্রাহ্মণ উ০ ৪।১০ ও এই কথার পুষ্টি করে - 



মহর্ষি পিতর অর্থ পালনকারী [  সূর্য ] করেছেন যা শতপথেই আছে - 



শতপথ ব্রাহ্মণ  ১৪।১।৪।১৫

মাতরম্ অর্থ জল করেছেন তাও অনুযায়ী সঠিক -



নিরুক্ত ৪।১৪



উণাদি কোষ ২।৯৫



অষ্টাধ্যায়ী ৬।১।১৬৩ 


পৌরাণিকগণ এখানে  "দ্যৌর্নঃ পিতা জনিতা নাভিরত্র বন্ধুর্নো মাতা পৃথিবী মহীয়ম্। " (অথর্ব ৯।১০।১২) যে প্রমাণ দেয় তা সম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ৷ কারণ এই মন্ত্র নঃ অর্থ আমাদের (মনুষ্যদের)৷ কিন্তু সেটাকে এরা এই মন্ত্রে অগ্নির মাতা পিতা হিসেবে পৃথিবী এবং দ্যুলোকের উল্লেখ করেছে৷ অর্থাৎ সম্পূর্ণটাই যে গোজামিল অর্থ তা প্রমাণিত ।


আর পরিশেষে দেখি পৌরাণিকগণের ইচ্ছা করপাত্রীর ভাষ্য নাকি বাংলাতে অনুবাদ হোক । তা বেশ হোক । তার ভাষ্যে কি কি মহা বিজ্ঞান আছে তা তো আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন উপরে৷  তাহলে আবার এই পোস্ট লেখার সময় পদার্থে জ্বালাপ্রসাদকে নিজের পিতা বানালো কেন ?  
অতঃ মহর্ষিকৃত অর্থক সামগ্রিকভাবে ব্রাহ্মণাদি ও বিজ্ঞান অনুকূল ও যথাযথ তা প্রমাণিত৷