https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

সত্যব্রত সামশ্রমী - প্রদীপের নিচেই যিনি অন্ধকারের স্রষ্টা

Wednesday, March 23, 2022




বঙ্গীয় পণ্ডিতদের মধ্যে প্রকৃতভাবে বেদচর্চা করেছেন সে বিষয়ে একজনের নামই অগ্রগণ্য তিনি হলেন সত্যব্রত সামশ্রমী । বঙ্গাক্ষরে সায়ণভাষ্যসহ সামবেদ প্রকাশ , টীকা, অনুবাদ ; যজুর্বেদ মহীধর ভাষ্যানুযায়ী অনুবাদ , গোভিল গৃহ্যসূত্রের নিজস্ব টীকা - বঙ্গানুবাদ ; ঐতরেয় ব্রাহ্মণ সায়ণভাষ্যসহ প্রকাশ , নিরুক্তালোচন , ঐতরেয়ালোচন ইত্যাদি তার বিখ্যাত কীর্তি । প্রসঙ্গতঃ বলে রাখা ভালো তাকে নিয়ে সমালোচনা করে সময় অপচয়ের কোন আগ্রহ বা ইচ্ছা ছিলো না । কিন্তু সম্প্রতি তাকে ঢাল করে ভিক্ষাজীবীগণ যেভাবে খণ্ডিত অংশকে অজ্ঞতাবশতঃ কিংবা মূর্খের ন্যায় উদ্ধৃত করেছে তার জন্যই আজকের এই নিবন্ধের অবতারণা । 
 
সত্যব্রত সামশ্রমী তার সামবেদের গেয় গানের ভূমিকায় বলেছেন -

বেদবিৎ অন্ধ - মাথুর - শিষ্য দয়ানন্দস্বামী , সমস্ত মন্ত্রই ঈশ্বরে পর্য্যবসন্ন দেখিতেন এবং একমাত্র স্বীয় হঠকারিতা সুদৃঢ় রাখিবার জন্যই অগ্নি , বায়ু ও ভূঃ , ভূবঃ প্রভৃতি সমস্ত শব্দেরই উদ্দেশ্যহীন ঈশ্বর অর্থ করিতেন অর্থাৎ সমস্ত পদেরই ঈশ্বর অর্থ না করিলে যে ঈশ্বরভাব না পাওয়া যায় তাহ নহে। তথাপি সমস্ত পদই ঈশ্বরার্থক বলিয়া নিজ - মত - বৈচিত্র্য প্রচার করিতেন ; নিরক্ষর মাড়বাড় প্রদেশে তাঁহার শিষ্যেরও অভাব হয় নাই।




উক্ত অংশটি প্রকৃষ্টরূপেই মিথ্যাচার । কেননা তার ধারণা ছিলো যে বেদচর্চাবিহীন বঙ্গে হয়তো এই কথাটির ভুল কেউ ধরতে পারবে না । অথচ সেই গ্রন্থে তিনি নিজেই ইন্দ্রাদি যা কিনা সায়ণভাষ্যে আলাদা দেব হিসেবে উল্লেখিত তা নিজেই ঈশ্বরবাচক করেছেন । অর্থাৎ যে বিষয়ের তিনি সমালোচনা করলেন সেই কাজ তিনি নিজেও করলেন -

‘ বা.টী.৷ ‘ ইন্দ্ৰ ’ ‘ অধিক্ষমা ’ এই পৃথিবীতে ‘ জগতঃ , .চর্ষণীনাম্ ’ চরাচর সমস্ত পদার্থের ‘ রাজা ’ একমাত্র অধীশ্বর ; ‘ যং ’ , যেহেতু ‘ বিশ্বরূপং ' নানারূপ এ ব্রহ্মাণ্ড ' অস্য ' ইহার , ‘ ততঃ ” সেই জন্যই ‘ দাগুষে’ দানশীলব্যঞ্জিদিগকে ‘ বসূনি ’ সম্পত্তি ‘ দদাতি ’ প্রদান করিয়া থাকেন , — ' উপস্তুত ’ তাহদের অভিলষিত ‘ রাধঃ’ ধন ‘ অর্ব্বাক্ ’ তাহাদের সম্মুখেই
‘ চোদৎ ' প্রেরণ করেন ।
- অর্থাৎ ঈশ্বর , নিজ রাজ্য রক্ষা করিতে স্বয়ংই প্রবৃত্ত আছেন , ক্ষুদ্রতম হইতে বৃহত্তম পর্য্যন্ত এক এক পরিবারের এক একটি কর্তাকে স্বীয় দানশালার , এক এক জনা কর্মচারী বিবেচনায় যথাযোগ্য পাত্রে বিতরণার্থ যথাযোগ্য অর্থ দান করিয়া থাকেন , —তদনুসারে তাহাদের সম্মুখে অর্থাগমের পথ আপনিই দেখা যায় ।



যজুর্বেদ ২৬।২ মন্ত্রে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীই সর্বাগ্রে সকলের বেদাধিকার প্রদর্শন করেন । যাকে কিনা সত্যব্রত সামশ্রমী কিছুক্ষণ আগেই হঠকারী বলেছিলেন তারই নাম উল্লেখ করে তিনিও সমর্থন করেছেন যে বেদে সকলের অধিকার বিদ্যমান । সত্যব্রত সামশ্রমী লিখেছেন–

"শূদ্রস্য বেদাধিকারে বেদবচনমপি প্রদর্শিতং স্বামিদয়ানন্দেন (বা০ সং০ ২৬.২)—
'যথেমাং বাচং কল্যাণীমাবদানি জনেভ্যঃ।
ব্রহ্ম রাজন্যাভ্যাং শূদ্রায় চার্যায় চ স্বায় চারণায়।।' ইতি।"
[তথ্যসূত্র– "ঐতরেয়ালোচনম্" সত্যব্রত সামশ্রমী। দ্বিতীয় সংস্করণ। পৃষ্ঠা ১৭]
অর্থাৎ শূদ্রের বেদাধিকারে সাক্ষাৎ বেদবচনও প্রদর্শিত করেছেন স্বামী দয়ানন্দ (যজু ২৬।২ মন্ত্র)।
 




প্রসঙ্গতঃ ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী তাঁর "বেদ-বেদান্ত পূর্বখণ্ড" (যেটি মূলত ব্রহ্মসূত্রের ব্যাখ্যা) গ্রন্থের ১০৪-১০৫ পৃষ্ঠায় শূদ্রের বেদাধিকার বিষয়ে রামানুজ ও শঙ্করাচার্যের সমালোচনা করে যজুর্বেদের ২৬.২ মন্ত্র ও মহর্ষি দয়ানন্দকৃত সেটির অনুবাদ উল্লেখ করে শূদ্রের বেদাধিকার মেনেছেন । 
 


 

প্রকৃতপক্ষে সত্যব্রত সামশ্রমী মহাশয় মেধাবী ও অশেষ কীর্তিবান হলেও কখনোই মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ন্যায় বেদার্থে দিব্য ব্যুৎপত্তি লাভ করতে পারেননি । একারণেই ছলনা কিংবা স্বীয় অজ্ঞতাবশতঃ ভ্রান্তির ছলেই উক্ত মন্তব্য করেছিলেন । তার বেদভাষ্য থেকে আরো কিছু অবৈদিক উপাদান প্রদর্শিত হলো - 
 


  • যজুর্বেদ ৮।২৮-৩২ ~ গর্ভবতী গাভীকে যজ্ঞে আহুতি দেওয়া , তার রক্ত আহুতি দেওয়া , প্রায়শ্চিত্ত করা ইত্যাদি


[ অথ প্রায়শ্চিত্ত ]
.২৮ কণ্ডিকা।
অনুবন্ধ্যা গর্ভিণী হইলে তদ্বিষয়ে প্রায়শ্চিত বিহিত হইতেছে। যদি অনুবন্ধ্যা বশা গর্ভিণী হয়, তাহা হইলে বিশসনান্তে সেই গর্ভ এই মন্ত্রে পৃথক্ করিবে-
এই গর্ভ দশ মাসের পূর্ণাবয়ব গর্ভের ন্যায় জরায়ুর সহিত সচল হউক ! যেমন বায়ু সচল, যেমন সমুদ্র সচল, এই গর্ভও সেইরূপ সচল ভাবে জরায়ুব সহিত নির্গত হউক । ১
.২৯ কণ্ডিকা
বশাবদান সকল হবনানস্তর এই মন্ত্রে গর্ভ রক্ত হোম করিবে-
হে বশে ! তোমার গর্ভ যজ্ঞীয় দেবগণের তৃপ্তির জন্যই হইয়াছিল ; তোমার যোনি, হিরণ্ময়ী ; এপর্য্যন্তও যে গর্ভের কোন অঙ্গ খণ্ডিত হয় নাই, তাহা তদীয় মাতার সহিত সম্মিলিত করিতেছি । এই আহুতি সম্যক্ রূপে গৃহীত হউক ।১
.৩০ কণ্ডিকা।
প্রতিপ্রস্থাতা প্রচরণীতে সমস্ত গর্ভরস গ্রহণ করিয়া (অধ্বর্য্যু কর্ত্তৃক স্বিষ্টকৃৎ হোম সম্পন্ন হইলে পরে) হবন করিবে-
বিচিত্র বর্ণ, ধীর, বদান্যবর, ইন্দু দেবতা এই উদরান্তধ্বর্ত্তী রসের মহিমা ব্যক্ত করুন। এই একপদী, দ্বিপদী, ত্রিপদী, চতুষ্পদী, অষ্টাপদী* অনুবন্ধ্যাকে ত্রিভুবনে প্রথিতা করুন । এই আকুতি সম্যকরূপে গৃহীত হউক।১
• এক, দ্বি ক্রমে সংখ্যা গণনা করিয়া চতুষ্পদী গাভী এবং তাহাই চতুষ্পদ গর্ভের সহিত স লিড করিলে অষ্টাপদী হইল।
.৩১ কণ্ডিকা।
পূৰ্ব্ব বিহিত সমিষ্ট যজুর্হোমের পরে শামিত্র বেদীস্থ অগ্নিতে উষ্ণীশে বেষ্টিত গর্ভ হোম করিবে, এই মন্ত্রের অস্তে স্বাহা শব্দের প্রয়োগ হইবে—
দ্যুলোকে বিশেষ মহিমান্বিত যে মরুদ্গণ, তাহারা যাহার গৃহে আহুত হইয়া গর্ভ সার ভক্ষণ করেন, সেই ব্যক্তি চির দিন তাঁহাদিগ কর্তৃক সুরক্ষিত হয়। ১

 

 







  • অধুনা অক্ষয় লাইব্রেরীর অনুবাদে এই অর্থ এই প্রকার দৃষ্ট হয় -


(এই মন্ত্রগুলিতে যজ্ঞার্থে যে গাভীটিকে উৎসর্গ করা হবে, যদি সেটি গর্ভিণী হয়, তাহলে সেই গর্ভের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ আহুতর বিধান করা হয়েছে। গাভীটিকে মেরে সেটির গর্ভটি বের করা হয়ে থাকে। গর্ভটির রক্তের আহুতি দিয়ে বাকী গর্ভপিণ্ডটিকে পাগড়ীতে বেঁধে মন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত করে অগ্নিতে একসাথে নিক্ষেপ করা হয়) (এই সময় প্রথম মন্ত্রটির গর্ভের থেকে পৃথক করা মাংসপিণ্ডটিকে অভিমন্ত্রিত করবে)। যে ঝিল্লিটি গর্ভকে বেষ্টন করে রয়েছে, সেটির সাথে দশমাসের গর্ভটিকে কম্পন করাতে হবে। যেমন বায়ু কম্পিত হয় এবং সমুদ্রে ঢেউ উত্তোলিত হতে থাকে, সেই ভাবে এই দশমাসের গর্ভটিও ঝিল্লীর সাথে কম্পন করুক॥২৮॥
হে বশাগায় বা বশাগাভী! যে তোমার গর্ভটি যজ্ঞের যোগ্য, যে তোমার যোনি স্বর্ণময়ী, যে তোমার গর্ভের শরীরাবয়ব অকুটিল—আমরা সেই গর্ভকে মাতৃরূপী তোমার সাথে সংযোজিত করি। (এই মন্ত্রে পড়ে গর্ভের রক্তের হোম কার্য করে দেবে) ৷৷২৯৷৷
(এর পরবর্তী মন্ত্রের থেকে প্রতিপ্রস্থাতা প্রচরীণামের স্রুবায় গর্ভের রক্তের ভরে অধ্বর্যুর হোম সমাপ্ত করার পর স্বিষ্টকৃত আহুতি প্রদান করবেন) (এতে গর্ভকে ইন্দু = সোমরূপের দ্বারা স্রবণ করা হচ্ছে । বহুদশনীয়, অনেক স্বরূপ যুক্ত এবং ধীর গর্ভরূপী সোম পেটের ভেতরে মহিমা প্রাপ্ত করে থাকে। বশা গাভীকে এক, দুই, তিন, চার এবং আট পদযুক্ত মেনে সর্বভূতের বিস্তার প্রাপ্ত করুক, এই প্রার্থনা। এটাই আহুতিস্বরূপ ৷৷৩০৷৷
(সমিষ্টযজুঃ নামক আহুতিগুলির পরে শামিত্র নামক অগ্নিতে পাগড়ী বাঁধা গর্ভপিণ্ডটিকে নিক্ষেপ করবেন)। হে মরুৎগণ! যে যজমানের ঘরে দ্যুলোকের বিশিষ্ট প্রকাশ সম্পন্ন তোমরা সবাই সোমরস পান করে থাকো, সেই যজমানই অত্যন্ত সুরক্ষাপ্রাপ্ত হয়।।৩১ ৷৷








  • যজুর্বেদ ২৩।১৮-৩১ অশ্বমেধে রাজমহিষীর সাথে অশ্বের সমাগম ও অশ্লীলতা সমর্থন ।

২০ কণ্ডিকা।
প্রথম মন্ত্রটি পাঠ করত ঐ শয়ানা মহিষী ঐ অশ্বের পশ্চাৎ পাদ-দ্বয়ের মধ্যে স্বীয় পাদ-দ্বয় প্রবেশ করাইবে -
অশ্ব ! তোমার এই পাদ-দ্বয়ের মধ্যে আমার এই পাদ-দ্বয় প্রবেশ করাইয়া পাদ চতুষ্টয়ত্ব সম্পন্ন করি। ১
অধ্বর্য্যু দ্বিতীয় মন্ত্র পাঠ করত অধীবাসের দ্বারা তাহাদিগকে আচ্ছাদিত করিবে -
হে অশ্ব ও মহিষি! তোমরা উভয়ে একত্র.এই স্বর্গলোকে আচ্ছাদিত হও।
মহিষী তৃতীয় মন্ত্র পাঠ করত অশ্ব শিশ্ন আকর্ষণ পূর্ব্বক স্বীয় যোনিতে স্থাপন করিবে -
রেতব্রত, ফলবর্ষিতা, বাজী রেতঃ প্রদান করুন। ৩
২১ কণ্ডিকা
এই মন্ত্র পাঠ করত যজমান ঐ ক্রিয়ার অনুমোদন করিবে ।
*যে বসনের দ্বারা উপরি আচ্ছাদন করা যা তাহাকে অধীবাস করে (বড় চাদর)
হে ফলবর্ষিন ! অশ্ব! মহিষী স্বীয় উপস্থ ঊর্দ্ধে উত্তোলিত করিয়াছেন, তুমি উহাতে শিশ্ন চালনা কর; স্ত্রী জাতির ইহাই প্রধান ভোগ ও জীবন। ১
২২ – ৩১ কণ্ডিকা
( অতঃপর দশটি কণ্ডিকা মহিষ্যাদির সহিত ব্রহ্মা প্রভৃতি ঋত্বিকগণের হাসো পহাসি' প্রকরণ, ইহা এতদূর অশ্লীল যে অনুবাদের নিতান্ত অযোগ্য সুতরাং এ স্থল পরিত্যক্ত হইল)
৩২ কণ্ডিকা
অনন্তর সেই অশ্বের সমীপ হইতে মহিষীকে উত্থান করাইয়া অধ্বর্য্যু, ব্রহ্মা, উদ্‌গাতা, হোতা ও ক্ষত্তা এই পঞ্চ ঋত্বিক্ একবাক্যে এই মন্ত্র পাঠ করিবে দধিক্রাবা, জিষ্ণু, বাজী, অশ্বের স হিত মহিষীর সঙ্গমকালে আমরা বহুতর অশ্লীল ভাষণ করিয়াছি তাহাতে আমাদের মুখ নিতান্ত দুর্গন্ধ হইয়াছে, ঈশ্বর আমাদের সেই মুখ সুরভি করুন এবং পরমায়ু বৃদ্ধি করুন ।


 
 
  •  কামদেবের জন্য ব্যভিচারিণীকে যূপে বন্ধন - যজুর্বেদ ৩০.৫
 
 

 
  • সন্ধি ও গেহ নামক দেবতার (?) জন্য জার ও উপপতির ব্যবস্থা-  যজুর্বেদ ৩.৯
 

 
 
অতঃ সামশ্রমীর বেদার্থ জ্ঞান সহজেই অনুমেয় ।