ঈশ্বরের কৃপায় বাংলাদেশে বেদ প্রচার সাম্প্রতিককালে অত্যন্ত বেগবান হওয়ায়, এতদিনকার অবৈদিক সম্প্রদায়দের ভেতর হাহাকার পড়ে গেছে। এর ভেতর এক নম্বরে আছে আমেরিকায় জন্মানো ইহুদিবাদী ভুঁইফোড় সংগঠনটি। আমরা সঙ্গত কারণেই তাদের প্রতি কুভাষা প্রয়োগ করব না, কারণ কেউ কুভাষা প্রয়োগ তখনই করে যখন তার যুক্তি ও স্ট্যান্ড দুর্বল থাকে। যদিও তাদের আচার্যেরা এতদিন কলিতে বেদপাঠ নিষিদ্ধ, কলির জীব স্বল্পায়ু, বেদ পাওয়া যায় না, নারী ও শূদ্রের বেদপাঠ নিষেধ, বেদ লিখে ব্যাসদেব শান্তি পান নি- এসব বলে সাধারণ সনাতনীদের বিভ্রান্ত করে এসেছে; এখন স্বাধ্যায়শীল মানুষের হাতে যুক্তি এবং শাস্ত্রপ্রমাণের বিচারে যখন তাদের এসব সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে, তারাও বেদপ্রচারের জোয়ারে নিজেদের 'বৈদিক' বলতে ব্যস্ত। তবে খুবই হাস্যকর কথা এই যে, তাদের বেদ বলতে সম্বল ঋগ্বেদের মাত্র 40 সূক্ত, যার ভাষ্যকার মধ্বাচার্য। যদিও গৌড়ীয় আর মধ্বের মাঝে ভাগবতের ভাষ্য নিয়ে বিরোধ রয়েছে (ভাগবতে গোপিনীদের বে*শ্যা বলা নিয়ে) এবং শ্রীচৈতন্য নিজেও মধ্ব পরম্পরার নন, উপনিষদ বা দর্শনের কথায় আসলে গৌড়ীয়দের পুরাতন স্বভাব হল মধ্বের কোলে উঠে পড়া। যাহোক, তা আমাদের দেখায় বিষয় নয়।
প্রথম কথা, মধ্বভাষ্য আছে আমরা তা অস্বীকার করি নি। বরং মধ্বভাষ্য তাদের কাছে না থাকলেও আমাদের সংগ্রহে রয়েছে মধ্বভাষ্য ও তার ওপর জয়তীর্থের টীকা। উভয়েই কেবল ৪০ সূক্ত অব্দিই করেছেন।
দ্বিতীয়ত, রাঘবেন্দ্র তীর্থের বেদভাষ্য নিয়ে নেহাতই গুল মেরেছেন প্রভু। কারণ তাদের ওয়েবসাইটই বলছে, রাঘবেন্দ্র তীর্থ বেদভাষ্য করেছেন, তা নাকি বিলুপ্ত, কেবল ৪০ সূক্তই পাওয়া যায়। যদিও তা বিলুপ্ত হয়েছে কী না, নাকি পুরোটাই ভাওতা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। রাঘবেন্দ্র তীর্থ নিজেই খুব প্রাচীন নন, বরং জীবগোস্বামীর ও পরবর্তীকালীন।
বাংলাতে সুন্দরানন্দ বিদ্যাবিনোদ রচিত ❝বৈষ্ণবাচার্য শ্রীমধ্ব❞ গ্রন্থেও রাঘবেন্দ্র তীর্থের রচিত গ্রন্থ তালিকায় কেবল ' মন্ত্রার্থমঞ্জরি'র উল্লেখই পাওয়া যায়।
মহর্ষি দয়ানন্দ জীবিত অবস্থায় যজুর্বেদ সম্পূর্ণ এবং ঋগ্বেদের ৭ম মণ্ডলের ৬১ তম সূক্ত অর্থাৎ আংশিক হয়ে প্রায় ৭০% কাজ সমাপ্ত করে গিয়েছিলেন। তারপরে প্রথম চার বেদের একত্রে ভাষ্য করেন পণ্ডিত জয়দেব শর্মা বিদ্যালঙ্কার জী। এছাড়া আর্যসমাজের হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার জী চার বেদ হিন্দিতে আধ্যাত্মিক ভাষ্য করেছেন। এছাড়া আর্যসমাজের বিদ্বানগণের মাঝে উল্লেখযোগ্য পণ্ডিত ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী (অথর্ববেদ ), ড. রামনাথ বেদালঙ্কার (সামবেদ), তুলসীরাম স্বামী (সামবেদ), স্বামী ব্রহ্মমুনি (ঋগ্বেদ দশম মণ্ডল, সামবেদ), বিশ্বনাথ বেদালঙ্কার (অথর্ববেদ), পণ্ডিত দেবীচাঁদ (সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ ইংরেজি), ড. তুলসীরাম (চার বেদ ইংরেজি) রয়েছেন।
এবার আসি সবচেয়ে হাস্যকর ভাঁওতাবাজিতে। বৈষ্ণবীয় বেদভাষ্য নাকি সর্বমান্য, সর্বত্র পড়ানো হয়; আর আর্যসমাজের বেদভাষ্য কেউ মানে না, কোনো একাডেমিক ইনস্টিটিউটে পড়ানো হয় না ইত্যাদি। তো আমরা এখন দেখি প্রকৃত সত্য কী। আমরা সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণ করব কার ভাষ্য গ্রহণযোগ্য, আর কারটা নয়।
(পুরো ব্যাপারটা একদম সরাসরি অধ্যাপকদের কাছ থেকে ভেরিফাইড।)
প্রথমে আসি ভারতের অন্যতম সেরা দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে। দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত এম.এতে কেউ বেদ নিয়ে স্পেশালি পড়তে চাইলে তাঁকে যে ভাষ্য পড়তে হবে সে তালিকায় আর্যসমাজের বেদভাষ্যসমূহের মাঝে রয়েছে,
ঋগ্বেদ- পণ্ডিত জয়দেব শর্মা
অথর্ববেদ- পণ্ডিত জয়দেব শর্মা ও
যজুর্বেদ- মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী।
দ্বিতীয়, বামঘেঁষা জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় বা JNU, JNU মূলত পশ্চিমাদের করা অনুবাদ বা ইংরেজি বেদই বেশি পড়ায়। কিন্তু তারপরেও গ্রন্থের তালিকায় সায়ণকৃত ঋগ্বেদভাষ্যভূমিকা আর মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী কৃত ঋগ্বেদাদি ভাষ্যভূমিকা রয়েছে।
হরিয়াণার রোহতকে রয়েছে মহর্ষি দয়ানন্দ বিশ্ববিদ্যালয় যা পুরো উত্তর ভারতে র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে আগের দিকে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও নাম দয়ানন্দ সরস্বতী জীর নামে, কিন্তু সেটার প্রতিষ্ঠাতা ভারত সরকার। MDU এর সিলেবাসেও রয়েছে সামবেদে ডঃ রামনাথ জী, সত্যপ্রকাশ সরস্বতী জী; অথর্বে পণ্ডিত ক্ষেমকরণ দাস ত্রিবেদী, ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষ্য।
হরিয়ানা অঞ্চলের দ্বিতীয় র্যাঙ্কিংয়ে আছে কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়। কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনলাইনে উপলব্ধ নয়। তবে প্রাধ্যাপক ডঃ রাম চন্দ্র জী ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের পর তিনি বলেছেন, কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়েও আর্যসমাজের বেদভাষ্য পড়ানো হয়।
পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় উত্তর ভারতের আরেকটি শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদবিষয়ক কোর্সে নির্বাচিত সূক্ত পড়ানোর পাশাপাশি মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী রচিত "ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা" পড়ানো হয়। পরবর্তী উপনিষদ্ ও ভাষ্যভূমিকা কোর্সের পাঠ্যক্রমেও "ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা" রয়েছে।
এছাড়া বেদ বিষয়ক মূল কোর্সে সায়ণ ভাষ্য এবং মহর্ষি দয়ানন্দের ভাষ্য তুলনাত্মকভাবে পড়ানো হয়।
হিমাচল প্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়েও মূলত সূক্ত সংগ্রহের পাশাপাশি মহামহোপাধ্যায় যুধিষ্ঠির মীমাংসক রচিত দুটি বই "বৈদিক স্বর মীমাংসা" এবং "বৈদিক ছন্দ মীমাংসা" পড়ানো হয়। এছাড়াও নিরুক্ত এবং অষ্টাধ্যায়ী কোর্সে ব্রহ্মদত্ত জিজ্ঞাসু রচিত গ্রন্থসমূহের উল্লেখ রয়েছে।
জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদ বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ডঃ সত্যপ্রিয় আর্য জীর সাথেও যোগাযোগ হয়েছে, জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে বেদ বিষয়ক বেশিকিছু নেই যদিও, মূলত ভাষ্যের বদলে সূক্ত সংগ্রহ জাতীয় বই রয়েছে; তবে সেখানেও বেদ বিষয়ক পাঠ্যসূচিতে পণ্ডিত যুধিষ্ঠির জী মীমাংসকের "বৈদিক স্বর মীমাংসা" রয়েছে।
মজার বিষয় হলো প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় যাতে বেদ নিয়ে আলাদা কোর্স আছে, দুই প্রকার ভাষ্যই পড়ানো হয়, কিংবা কেবল সূক্তের কোর্স থাকলেও অন্যান্য কোনো না কোনো কোর্সে [ব্যাকরণ, নিরুক্ত কিংবা স্বর-ছন্দ] আর্যসমাজী বিদ্বানগণের বই ব্যবহার করাই হয়। অথচ তথাকথিত সর্বমান্য(!) গান্ডাভেরুন্ডা পার্টির বেদভাষ্যের কোনো উল্লেখই নেই। তা কোথাও পড়ানো হয় না।
চূড়ান্ত হাস্যকর দাবি, আর্যসমাজের উপনিষদ্ ভাষ্য নেই। আর্যসমাজের উপনিষদ্ ভাষ্যকারের ভেতরে মহামহোপাধ্যায় আর্যমুনি প্রথম। এছাড়া মহাত্মা নারায়ণ স্বামী, ড. সত্যব্রত সিদ্ধান্তালংকার, রাজবীর শাস্ত্রী, তুলসীরাম স্বামী, পণ্ডিত শিবশঙ্কর শর্মা কাব্যতীর্থ, এডভোকেট প্রেমনাথ প্রমুখ রয়েছেন। গীতাপ্রেস শঙ্কর ভাষ্যের গোহত্যার পেঁচিয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের আগেই (কারণ সরাসরি শঙ্কর পরম্পরায় রচিত বার্তিকেও গোহত্যা স্বীকার করা হয়েছে) আর্যমুনি জী স্বীয় উপনিষদে তার অন্যথা ব্যাখ্যা করেছেন যা উদ্ধৃত করেছেন পণ্ডিত ধর্মদেব জী বিদ্যামার্তণ্ড তাঁর "বেদো কা যথার্থ স্বরূপ" গ্রন্থে, সেখান থেকে মহেন্দ্র পাল আর্য ব্রাদার রাহুলের বিতর্কে প্রমাণ দিয়েছিলেন, যা এই মিথ্যাচারীরা জীবনে চোখেও দেখে নি বলে ইচ্ছামত মনগড়া তথ্য দিয়েছে। খুবই খুশির সংবাদ এই যে, তাদের ভাষ্যের অনুবাদ "বাংলাদেশ অগ্নিবীর" এর পক্ষ থেকে বাংলায় প্রকাশিত হবে শীঘ্রই।
কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম্!


Special Thanks to,
Dr. Surender Kumar
Former Vice Chancellor, Gurukul Kangri University, Uttarakhand
Dr. Pratap Chandra Roy, Assistant Professor, Sanskrit, Sidho Kanho Birsha University, Purulia.
(Ph.D from Delhi University)
Dr. Surendra Kumar, Former Head of the Department, Sanskrit, Maharshi Dayanand University, Rohtak.
Dr. Ram Chandra, Head of the Department and Assistant Professor, Sanskrit, Kurukshetra University
Dr. Satyapriya Arya, Assistant Professor, Jammu University.
Dr. Balvir, Former Department Head, Sanskrit Department, Maharshi Dayanand University, Rohtak
Dr. Virendra Kumar Alankar, Former Dayanand Chair for Vedic Studies, Punjab University
Dr. Naresh Kumar Dhiman, Principal, Doaba College, Jalandhar.
Dayanand Chair, Maharshi Dayanand Saraswati University, Ajmer, Rajasthan
0 মন্তব্য(গুলি)
Author
সত্যান্বেষী