ओ३म्
নমস্কার
বেদে
এমন অনেক মন্ত্র, মন্ত্রার্ধ তথা মন্ত্রাংশ উপলব্ধ রয়েছে যা অপর বেদে
অথবা একই বেদে অনেক বার, অর্থাৎ পুনরুক্ত হয়েছে । এসব পুনরুক্তি দর্শন
হেতু আর্ষ সাহিত্য প্রণালী সম্বন্ধে পুরোপুরিভাবে অজ্ঞ, নির্বোধগণ বেদ
পুনরুক্তি-দোষে তুষ্ট এমনটা ভ্রান্তিপূর্ণ আক্ষেপ করে থাকে ।মন্ত্রবিষয়ক
পুনরুক্তি'র বিচার করার পূর্বে পুনরুক্তি'র মূল সংজ্ঞা এবং পুনরুক্তি
কত প্রকারের হয়ে থাকে এসব বিষয়ে বিচার করা অতি আবশ্যক ।
পুনরুক্তি
পুনরুক্তি শব্দের শব্দার্থ - পুনঃ কথন
পুনরুক্তি'র ভেদ
পুনরুক্তি তিন প্রকার -
১. শব্দ-পুনরুক্তি
২. অর্থ-পুনরুক্তি
৩. শব্দার্থ-পুনরুক্তি
পুনঃ দুই ভেদ — উক্ত তিন প্রকার পুনরুক্তি'রও দুইটি ভেদ বিদ্যমান --
১. সপ্রয়োজন
২. নিষ্প্রয়োজন
সপ্রয়োজন পুনরুক্তি তো যেকোনো প্রকারের হতে পারে , দোষাবহ নয় ।
পরন্তু নিষ্প্রয়োজন পুনরুক্তি দোষাবহ'র অন্তর্গত ।
এখানে মন্ত্র-পুনরুক্তি'র প্রসঙ্গে শাব্দিক পুনরুক্তি বিষয়েই বিচার করা হবে ।
মন্ত্র-পুনরুক্তি
বিষয়ে বিচার করার পূর্বে প্রসঙ্গাৎ আর্ষ শাস্ত্রে প্রাপ্ত শাব্দিক,
আর্থিক এবং মিশ্রিত পুনরুক্তি সম্বন্ধে কিছু কথন আবশ্যক ।
এ দ্বারা মন্ত্র-পুনরুক্তি বিষয়টি বোধগম্য হতে অত্যন্ত সুগমতা হবে ।
মন্ত্র পুনরুক্তি'র ভেদ
মন্ত্রগত শাব্দিক পুনরুক্তি নিম্ন প্রকার উপলব্ধ হয়ে থাকে –
১. পদ-পুনরুক্তি — একই মন্ত্রে এক পদ বা অনেকবার পুনঃ প্রযুক্ত হয় তাকে পদ-পুনরুক্তি বলে ।
যথা -
उप त्वाग्रे दिवेदिवे ।
मन्म रेजति रक्षोहा मन्म रेजति ।
[ ঋগ্বেদ. ১.১.৭ ]
अव स्त्रवेदघशंसोऽवतरमव क्षुद्रमिव स्रवेत् ।
[ ঋগ্বেদ. ১.১২৯.৬ ]
এর মধ্যে दिवे, मन्म, रेजति, अव स्त्रवेत् পদ দুই-দুই বার প্রযুক্ত হয়েছে ।
২. পাদ-পুনরুক্তি — যে স্থলে সম্পূর্ণ পাদ (চরণ) পুন: পুন: প্রযুক্ত হয় তাকে পাদ-পুনরুক্তি বলে ।
যথা –
इन्द्रायेन्दो परिस्त्रव
উক্ত পদ ঋগ্বেদ এর ৯ম মণ্ডলের ১১২, ১১৩,১১৪ নং সূ্ক্তের প্রত্যেক মন্ত্রে অন্তে পুনঃ পুনঃ প্রযুক্ত হয়েছে ।
৩. অর্ধর্চ-পুনরুক্তি — যে স্থলে অর্ধ ঋচা (অর্ধ মন্ত্র) পুন: পুনঃ প্রযুক্ত হয় তাকে অর্ধর্চ-পুনরুক্তি বলে ।
যথা --
तत्त आवर्त्तयामसीह क्षयाय जीवसे ।
উক্ত অর্ধ ঋচা ঋগ্বেদের ১০ম মণ্ডলের, ৫৮তম সূক্তের সব (১২) মন্ত্রে পুনঃ পুনঃ উল্লেখ হয়েছে ।
৪. মন্ত্র-পুনরুক্তি — যে স্থলে সম্পূর্ণ মন্ত্রই পুনঃ উপলব্ধ হয় তাকে মন্ত্র-পুনরুক্তি বলে। যথা ---
इळामग्ने पुरुदंसं……..।
উক্ত সম্পূর্ণ মন্ত্রটি ঋগ্বেদের ৩য় মণ্ডলের ১, ৫, ৬, ৭, ১৫ নং সূক্তের অন্তে উপলব্ধ ।
৫. সন্দর্ভ-পুনরুক্তি — যে স্থলে সম্পূর্ণ একটি সন্দর্ভ পুনঃ প্রযুক্ত হয় তাকে সন্দর্ভ-পুনরুক্তি বলে ।
সন্দর্ভ-পুনরুক্তি'র সাক্ষাৎ প্রয়োগ চতুর্বেদ এর কোনো স্থলেই উপলব্ধ নয় ।
পুনরপি যজুর্বেদে -
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিꣳসীদিত্যেষা য়স্মান্ন জাত ইত্যেষঃ । ( যজু.৩২/৩ )
এখানে
বৈদিকগণের মতানুসারে 'হিরণ্যগর্ভঃ' প্রতীক নির্দেশ দ্বারা যজু. ২৫/১০-১৩
মন্ত্রসমূহ এবং 'য়স্মান্ন জাতঃ ' প্রতীক দ্বারা যজু. ৮/৩৬-৩৭
মন্ত্রদ্বয়ের সম্পূর্ণ অনুবাকের পাঠ সঙ্কেতিত লক্ষ্যণীয় ।
এই
প্রকারের পুনরুক্তি মহাভাষ্যে প্রায়ঃ উপলব্ধ । যথা- 'बह्वर्था अपि धातवो
भवन्ति', উক্ত ৪-৫ পঙ্ক্তির সম্পূর্ণ সন্দর্ভ অনেকবার পঠিত হয়েছে ।
উক্ত প্রকারের মন্ত্র-পুনরুক্তি'র বিচার করার পূর্বে এটাও বিচার করা আবশ্যক, এই প্রকারের পুনরুক্তি'র মূল কারণ কী ?
এরূপ পুনরুক্তি'র মূল কারণসমূহ --
১. অর্থের বৈশিষ্ট্য দর্শানো ।
২. ভিন্নার্থ প্রদর্শন করা ।
৩. কাব্যশাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তানুসারে অলঙ্কারে যোজনা ।
৪. কোনো বিশেষ প্রকরণের অর্থতত্ত্বের উপর মনোনিবেশ করা ।
৫. প্রকরণ ভেদে ভিন্নার্থ বোধন করা ।
৬. কোনো বিশেষ প্রকরণের প্রতি ধ্যান আকৃষ্ট করা অথবা বিশেষ অর্থতত্ত্বের অধ্যেতার মনের ওপর ভালোভাবে জমা করা ।
মন্ত্র-গত
উক্ত বিবিধ প্রকারের পুনরুক্তি'র উপর বিচারকে আরও অধিক স্পষ্ট করার জন্য
পাণিনীয় অষ্টাধ্যায়ীর কিছু সূত্রের এমন কিছু উদাহরণ দর্শানো হচ্ছে যা
দ্বারা এতদ্বিষয়ক বিচারে সুগমতা হবে ।
এই
স্থলে অষ্টাধ্যায়ীকে এ কারণে নির্বাচন করা হয়েছে, পৌরস্ত্য এবং
পাশ্চাত্য উভয়বিধ বিদ্বান্ এক মতি দ্বারা অষ্টাধ্যায়ীর সূক্ষ্মেক্ষিকাপূর্ণ
বিশিষ্ট অল্পাক্ষর-রচনার উপর অত্যন্ত মুগ্ধ । ভারতীয় বৈয়াকরণগণ
তো'অর্ধমাত্রালাঘবেন পুত্রোৎসবং মন্যন্তে বৈয়াকরণাঃ' উক্তি দ্বারা
অষ্টাধ্যায়ীর অল্পাক্ষর-রচনা-পদ্ধতির প্রশংসা করতে বিন্দুমাত্র পিছু পা হন
।
মহাভাষ্যকার মহর্ষি পতঞ্জলিও বর্ণনা করেছেন —
সামর্থ্যয়োগান্নহি কিঞ্চিদস্মিন্ পশ্যামি শাস্ত্রে য়দনর্থকং স্বাৎ ।
এখন এতো সূক্ষ্ম অল্পাক্ষর-পূর্ণ অষ্টাধ্যায়ীর সূত্র বিচার করা আবশ্যক --
১.
পদ-পুনরুক্তি — পাণিনীয় অষ্টাধ্যায়ীতে একটি সূত্র বিদ্যমান -- ''तदधीते
तद् वेद'' (৪/২/৫৮) । এই সূত্রে तद् শব্দ দুইবার প্রয়োগ হয়েছে । এর
প্রয়োজন হলো, 'तद्' শব্দের সম্বন্ধ অধীতে এবং বেদ উভয় ক্রিয়ার সাথে ।
'ব্যাকরণমধীতে য়ঃ স বৈয়াকরণঃ ' এবং 'ব্যাকরণং বেদ স বৈয়াকরণঃ', অর্থাৎ
যিনি ব্যাকরণের সূত্রমাত্র কণ্ঠস্থ করেছেন, তা যদি সমঝোতা না হয়, তবুও
তাকে বৈয়াকরণ বলা হয় এবং যিনি কোনোরূপ অধ্যয়ন করেন নাই (অধ্যয়ন সম্পন্ন
হওয়ার পশ্চাৎ) যিনি ব্যাকরণ সম্বন্ধে জ্ঞাত তিনিও বৈয়াকরণ পদ বাচ্য ।
অন্যথা এক तद् গ্রহণ করার দরুন তার উভয় ক্রিয়ার সহিত সম্বন্ধ হওয়ায়
-'ব্যাকরণমধীতে বেদ চ' যিনি ব্যাকরণ অধ্যয়ন করেছেন এবং জানেনও, অর্থাৎ,
সার্থ অধ্যেতা'র জন্যই বৈয়াকরণ শব্দের প্রয়োগ হবে ।এই প্রকারে উক্ত স্থলে
'यद्' পদের পুনরুক্তি হওয়ায়ও তা সপ্রয়োজন; অনর্থক নয় ।
২.
পূর্ণ সূত্রের পুনরুক্তি — পাণিনীয় অষ্টাধ্যায়ীতে এমন অনেক সূত্র উপলব্ধ
যা সেই শব্দানুপূর্বীতে এক থেকে অধিকবার পঠিত হয়েছে । এখানে অত্যন্ত
প্রসিদ্ধ "বহুলং ছন্দসি" সূত্রের বিচারার্থ উপস্থিত করা হচ্ছে । এই সূত্র
উক্ত শব্দানুপূর্বীতে ১৪ বার পঠিত হয়েছে, পরন্তু প্রত্যেক প্রকরণে এই
সূত্রের প্রকরণ-ভেদে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ হয়ে থাকে । কোনো বিচারকই এই
শব্দাত্মক পুনরুক্তিকে অনর্থক বলতে অসমর্থ।
স্পষ্টীকরণের জন্য এক সন্দর্ভ উপস্থিত করা হচ্ছে এ স্থলে, উক্ত সূত্র নিকটবর্তী দুইবার প্রযুক্ত হয়েছে –
অদিপ্রভৃতিভ্যঃ
শপঃ (২.৪.৭২), বহুলং ছন্দসি ( ২.৪.৭৩ ), য়ঙোऽচি ( ২.৪.৭৪ ),
জুহোত্যাদিভ্যঃ শ্লুঃ ( ২.৪.৭৫ ), বহুলং ছন্দসি (২.৪.৭৬ ) ।
এর
মধ্যে প্রথমবার " বহুলং ছন্দসি " (২.৪.৭৩) সূত্রে ‘শপ: লুক্' পদের
অনুবৃত্তি হওয়ায় অর্থ হয় – ছন্দে শপ্ এর বহুল করে লুক্ হয়ে থাকে ।
দ্বিতীয়বার পঠিত সূত্রে ' শপ: শ্লুঃ ' পদের অনুবৃত্তি হওয়ায় অর্থ হয় –
ছন্দে শপ্ এর বহুল করে শ্লু হয়ে থাকে । শপ্ এবং শ্লু প্রত্যয়ের অদর্শন
অর্থাৎ, লোপ-ই সংজ্ঞা, পরন্তু উভয়ের কার্য পৃথক্-পৃথক্ । যেখানে শ্লু
দ্বারা প্রত্যয়ের অদর্শন বিদ্যমান সেখানে ধাতুর দ্বির্বচন হয়ে থাকে ।
এখানেও উভয় কার্যের ছন্দে ভেদ দর্শানোর জন্য শপ্ এর লুক্ এবং শ্লু
বিধানার্থ দুটি সূত্র পৃথক্-পৃথক্ পঠিত হয়েছে ।
এই
প্রকারে উক্ত সূত্র বেদে ভিন্ন-ভিন্ন স্থানে স্ব-স্ব প্রকরণানুকূল অনুসারে
ভিন্ন-ভিন্ন কার্যের বিধানের জন্য পঠিত হয়েছে । সর্বত্র শব্দানুপূর্বীর
সমান হওয়ার পরও কোনো বিচারক উক্ত বিষয়কে পুনরুক্ত মানেন না ।
৩. অর্থের পুনরুক্তি – অর্থের পুনরুক্তিও পাণিনীয় অষ্টাধ্যায়ীতে বহুত্র উপলব্ধ ।
যথা
– 'বিশেষণং বিশেষ্যেণ বহুলম্' (২/১/৫৬) সূত্রে পঠিত বহুল শব্দ দ্বারা
পূর্ব ৫২-৫৫ পর্যন্ত তথা ৫৭-৭২ পর্যন্ত পঠিত সূত্রের বিষয় সংগৃহীত হয়ে
থাকে । কেননা, বহুল শব্দের অর্থ - 'বহূন্ অর্থান্ লাতি আদত্তে ইতি বহুলম্'
(বহুল অর্থকে প্রকটকারী ) ।
বহুল শব্দ দ্বারা যে যে অর্থের বোধ হয় তা বৈয়াকরণ এই প্রকারে স্পষ্টীকরণ করেছেন –
ক্বচিৎ প্রবৃত্তিঃ ক্বচিদপ্রবৃত্তিঃ ক্বচিদ্ বিভাষা ক্বচিদন্যদেব ।
বিধের্বিধানং বহুধা সমীক্ষ্য চতুর্বিধং বাহুলকং বদন্তি ॥
অর্থাৎ,
কিছু সূত্র কার্যের প্রবৃত্তি হওয়া, কিছু প্রবৃত্তি না হওয়া, কিছু
বিকল্পের মাধ্যমে কার্য হওয়া তথা কিছু সূত্র কার্য অপেক্ষা ভিন্ন কার্যও
সম্পাদন করা ।
এই
প্রকারে পূর্ব-পর সূত্রসমূহ দ্বারা প্রতিপাদিত সমস্ত কার্য এই একই সূত্র
দ্বারা সম্পন্ন হয়ে থাকে । পুনরপি মহর্ষি পাণিনি উক্ত প্রকরণের ১৯টি
সূত্র পুনরায় পড়েছেন ।
এই প্রকারে অষ্টাধ্যায়ীর আরেকটি সূত্র - - 'তৎপুরুষে কৃতি বহুলম্' (৬/৩/১৩)
উক্ত
সূত্রে পঠিত বহুল শব্দ গ্রহণের মাধ্যমেও তৎপুরুষ-সমাস বিষয়ক ১৪-২৩
সূত্র পর্যন্ত সমস্ত বিভক্তির অলুক্ বিষয় সংগৃহীত হয়ে থাকে । [ 1 ]
সংক্ষেপ-রুচি হয়েও মহর্ষি পাণিনি উভয় প্রকরণে অনেক সূত্রের প্রণয়ন করেছেন ।
এই অর্থ-পুনরুক্তি'র প্রয়োজন মহাভাষ্যকার নিম্ন শব্দে ব্যক্ত করেছেন —
"
অথ কিমর্থং লুগলুগনুক্রমণং ক্রিয়তে ন 'তৎপুরুষে কৃতি বহুলম্' ইত্যেব
সিদ্ধম্ ? উদাহরণভূয়স্ত্বাৎ । তে বৈ খল্বপি বিধয়ঃ সুপরিগৃহীতা ভবন্তি যেষাং
লক্ষণং প্রপঞ্চশ্চ । ন কেবলং লক্ষণং প্রপঞ্চো বা তথা কারকং ভবতি । অবশ্যং
খল্বপ্য স্মাভিরিদং বক্তব্যম্ – বহুলম্, অন্যতরস্যাম্, উভয়থা, একে ষামিতি।
সর্ববেদপারিষদং হীদং শাস্ত্রম্, তত্র নৈকঃ পন্থাঃ শক্য আস্থাতুম্ ।"
অর্থাৎ
- ১৪-২৩ সূত্র পর্যন্ত লুক্ এবং অলুক্ এর বিধান কেনো করা হয়েছে ?
'তৎপুরুষে কৃতি বহুলম্' সূত্র দ্বারাই ( বহুল গ্রহণ) সিদ্ধ হওয়া সম্ভবপর
নয় ? (উত্তর – হওয়া সম্ভব, পরন্তু) লুগ্ অলূক্ এর উদাহরণ অধিক হওয়ার
দরুন ( পরবর্তী সূত্রে পঠিত হয়েছে), কেননা, এই বিধিসমূহ (অধ্যেতা দ্বারা)
উত্তম প্রকারে গৃহীত হয়ে থাকে, যার (সংক্ষিপ্ত) লক্ষণ এবং প্রপঞ্চ
(বিস্তার) উভয়ই বিদ্যমান । যার কেবল লক্ষণ অথবা প্রপঞ্চ-ই (বিস্তার) হয়ে
থাকে, তা সুগৃহীত হয় না – অবশ্যই আমাদের 'বহুলম্', অন্যতরস্যাম্, উময়থা,
একেষাম্ আদি শব্দে পঠন এবং উচ্চারণ করতে হয়, কেননা, উক্ত শাস্ত্র সমগ্র
বেদের সহিত সম্বন্ধ রাখে, এ কারণে এতে একই মার্গ (কেবল লক্ষণ বা কেবল
প্রপঞ্চ) গ্রহণযোগ্যতা পাবে না ।
এরূপ একটি প্রকরণ পূর্বমীমাংসা শাস্ত্রেও দ্রষ্টব্য ।
পূর্বমীমাংসা ৮/১/২ নং সূত্র -- 'য়স্য লিঙ্গমর্থসংয়োগাদ্ অভিধানবৎ।'
এই
সূত্রে সম্পূর্ণ অধ্যায়ে বর্ণিত অর্থের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে, পুনরপি
আচার্য জৈমিনি এই বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য সম্পূর্ণ চারটি পাদ (১২৯টি
সূত্র) প্রণয়ন করেছেন । উক্ত বিষয়ে মীমাংসাভাষ্যকার শবর স্বামী বর্ণনা
করেছেন --
তদেতৎ সঙ্ক্ষেপেণাত্রৈব সর্বমুক্তম্, শিষ্যহিতার্থমুত্তরপ্রপঞ্চঃ ।
শ্লোকমপ্যুদাহরন্তি -
বিস্তীর্য় হি মহজ্জ্ঞানমৃষিঃ সঙ্ক্ষিপ্য চাব্রবীৎ । ইষ্টং হি বিদুষাং লোকে সমাসব্যাসধারণম্ ॥
অর্থাৎ-
সম্পূর্ণ অষ্টম অধ্যায়ে বর্ণিত অর্থকে সূত্রকার সংক্ষেপে এই (৮/১/২) নং
সূত্রে বর্ণনা করেছেন, শিষ্যগণের হিতার্থে (১২৯টি সূত্রাত্মক) প্রপঞ্চ
বর্ণনা করা হয়েছে ( বিস্তার করা হয়েছে ) । এই বিষয়ে (প্রাচীন এক
ব্যাখ্যাকার ) একটি শ্লোক উদ্ধৃত আবশ্যক । ঋষি ( ব্যাস) মহান্ জ্ঞান
(মহাভারতাত্মক) বিস্তার করে (বিষয়ানুক্রমণী রূপে ) সংক্ষেপে পুন: বর্ণনা
করেছেন, কেননা, লোকে বিদ্বানগণের সমাস (সংক্ষেপ) এবং ব্যাস ( বিস্তার )
উভয় প্রকারে ধারণ করা ইষ্ট । ( এটি মহাভারতের আদিপর্বের শ্লোক )
মহাভাষ্যকার
এবং শবর স্বামী দ্বারা অর্থ পুনরুক্তি'র উপর কৃত বিচার দ্বারা স্পষ্ট হয়
যে, একই শাস্ত্রে সংক্ষেপ এবং বিস্তাররূপে বর্ণিত অর্থ-পুনরুক্তি
সার্থক, নিরর্থক নয়।
বেদগত শব্দ-পুনরুক্তি'র উপর মহর্ষি যাস্কের মত –
এই প্রসঙ্গে বেদে এক অথবা অনেক পদের পুনরুক্তি সম্বন্ধে মহর্ষি যাস্কের মহত্ত্বপূর্ণ বচন উদ্ধৃত করা আবশ্যক –
মহর্ষি
যাস্ক ঋগ্বেদ. ১/১২৯/৬ ( পূর্ব উদ্ধৃত) নং মন্ত্রে উল্লেখিত ‘মন্ম রেজতি
অব স্ত্রবেৎ' পদের পুনরুক্তি বিষয়ে বর্ণনা করেছেন ---
অভ্যাসে ভূয়াংসমর্থং মন্যন্তে, য়থা অহোদর্শনীয়োঽহোদর্শনীয়ঃ ।
অর্থাৎ–
যেখানে অভিন্ন পদের পুনরুক্তি হয় এবং অর্থও অভিন্ন হয় সেখানে অভ্যাস
(পুনরুচ্চারণ) দ্বারা অর্থের বিশেষতা দ্যোতিত হয়ে থাকে ।
যেমন
ধরণিতে কোনো পুরুষের সহিত সাক্ষাতে প্রযুক্ত 'অহো দর্শনীয়ঃ, অহো
দর্শনীয়ঃ' পদের পুনরুচ্চারণ দ্বারা সেই পুরুষের দর্শনীয়ত্ব গুণের
বৈশিষ্ট্যের বোধ হয়ে থাকে, সেই প্রকার বেদে প্রযুক্ত পদের পুনরুচ্চারণ
দ্বারা সেইসব পদ দ্বারা প্রতীয়মান অর্থের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে । [ 2 ]
এই
প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করা আবশ্যক, যেসব স্থলে শব্দ অথবা অর্থের
পুনরুক্তি প্রতীত হয়, সেসব স্থলে তার বিশেষ অভিপ্রায়কে জ্ঞাত হওয়ার
জন্য গম্ভীরতার মাধ্যমে প্রযত্ন করা অতি আবশ্যক । যদি কোনো ব্যাখ্যাকার
এই প্রকারের পুনরুক্তি প্রসঙ্গে বিশেষার্থে প্রকট না করে তো সেটা উক্ত
ব্যাখ্যাকারের দোষ বলে বিবেচিত হবে , কদাপি মূল গ্রন্থের নয় ।
এই বিষয়ে অধিক স্পষ্ট করার জন্য এ স্থলে মীমাংসা শাস্ত্রের এক প্রকরণ উপস্থিত করা আবশ্যক --
" ক্রমেণ বা নিয়ম্যেত ক্রত্বেক্রত্বে তদগুণত্বাৎ । " ( ৫/১/৪ )
এই
সূত্র দ্বারা এই সিদ্ধান্ত স্থাপিত করা হয়েছে যে, অভ্যাসে যে ক্রম
দ্বারা কর্মের নির্দেশ করা হয়, সেই ক্রম দ্বারা কর্ম করা উচিত ।
তৎপশ্চাৎ আরেকটি সূত্র –
স্থানাচ্চোৎপত্তিং সংয়োগত্বাৎ । ( ৫/১/১৩ )
উক্ত সূত্রের ব্যাখ্যায় -
" একবিংশেনাতিরাত্রেণ প্রজাকামং য়াজয়েৎ, ত্রিণবেনৈবোজস্কামম্, ত্রয়স্ত্রিশেন প্রতিষ্ঠাকামম্' "
উদাহরণ উদ্ধৃত করে শবর স্বামী পূর্বাচার্যগণের ব্যাখ্যা অনুসারে বর্ণনা করেছেন –
উক্ত
বাক্য দ্বারা বিহিত কর্ম যেখানে প্রকৃতিযাগে (অগ্নিষ্টোম ) পঠিত মন্ত্র
অপেক্ষা অধিক মন্ত্রের আবশ্যকতা বিদ্যমান, সেই অধিক মন্ত্রের স্থান দ্বারা,
অর্থাৎ উক্ত প্রকরণে পঠিত মন্ত্রের পূর্তি করা অনিবার্য, তখনই সে
স্থলে উক্ত মন্ত্রের পাঠ সার্থক হবে ।
পূর্বাচার্যগণের উক্ত ব্যাখ্যা দ্বারা পুনরুক্তি-দোষ কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে শবর স্বামী ব্যক্ত করেছেন। --
'সমাম্নায়পাঠক্রমাদেবাত্র নিয়ম ইতি পুনরুক্ততা গম্যতে, ইত্যন্যথা বর্ণ্যতে । "
অর্থাৎ
— পূর্বাচার্যগণের ব্যাখ্যা 'সমাম্নায় পাঠের মাধ্যমে নিয়ম হয়ে থাকে'
(ক্রমেণ বা নিয়ম্যেত. ৫/১/৪ সূত্র ) উক্ত নিয়মের পুনরুক্তি প্রতীত হয়, অতঃ
আমি এই সূত্রের অন্যথা ( ভিন্ন প্রকারের মাধ্যমে ) ব্যাখ্যা করছি ।
এই প্রসঙ্গে কাব্যশাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারেও কিছু বিবেচনা করা আবশ্যক --
বেদের
কর্তা যদি ঈশ্বর হন ( বৈদিক মতানুসারে) তো ঈশ্বর যজু. ৪০/৮ নং
মন্ত্রানুসারে 'মনীষী' (সাধারণ নয় ) 'কবি' এবং এর রচয়িতা মানব ঋষি [
পাশ্চাত্য মতানুসারে ] হন তবুও তিনি 'ঋষিদর্শনাৎ' শব্দার্থ অনুসারে
সূক্ষ্মার্থ দ্রষ্টা কবি, সাধারণ ছড়াকার নয় । কবির কৃতিকেই কাব্য বলা হয়
। বেদও কাব্য – "দেবস্য পশ্য কাব্যং ন মমার ন জীর্য়তি" [অথর্ব ১০/৮/৩২]
।
এমতাবস্থায় কাব্যশাস্ত্রের সিদ্ধান্তানুসারেও পুনরুক্ততা'র উপর বিচার করা আবশ্যক ।
যদি
কালিদাস প্রভৃতি কবিগণের কাব্যে পদ, চরণ, শ্লোকার্ধ অথবা সম্পূর্ণ শ্লোক
অভিন্নরূপে অনেক বার প্রযুক্ত হওয়ার পরও যদি তা পুনরুক্ত হিসেবে
বিবেচিত না হয় এবং অলঙ্কার যোজনা অথবা অন্যার্থ বোধনের জন্য সার্থক মানা
হয় তো বেদরূপী কাব্যে উক্ত প্রকারের পুনরুক্তিসমূহ পুনরুক্তি দোষে তুষ্ট
কীরূপ হতে পারে ? গীতি কাব্যে একটি ভাগ বার-বার প্রযুক্ত হয় [ যথা-' ভজ
গোবিন্দং ভজ গোবিন্দং ভজ গোবিন্দং মূঢ়মতে'] যদি গীতি কাব্যের উৎকর্ষতাকে
প্রকট করা হয় তো সেই মনীষী কবি [ ঈশ্বর] অথবা মনীষী কবিগণের [ ঋষিগণ ]
কাব্যে সেই প্রকারের পুনরুক্তিসমূহকে দোষাবহ সম্বোধন করে পুনরক্তি দোষে
তুষ্ট কথাটি কীরূপে বলা যায় ? উক্ত প্রকারের পুনরুক্তিসমূহের উপর সহৃদয়তা
দ্বারা কাব্যশাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তানুসারেও বিবেচন করা অত্যন্ত উচিত কার্য
।
বেঙ্কটমাধব বর্ণনা করেছেন —
আবর্তয়ন্তি সূক্তীশ্চ যথাঽর্চন্ননু স্বরাজ্যম্ ।
অর্থাৎ – অনেক স্থলে ( গীতি কাব্যের সিদ্ধান্তানুসারে) সূক্তিসমূহের আবৃত্তি হয়ে থাকে । যেমন – ' অর্চন্ননু স্বরাজ্যম্ ' ।
এ
বিষয়ে বিস্তৃত লেখনের তাৎপর্য এটাই যে, যেমনভাবে মনুষ্যগণ আর্ষ বা
অনার্ষ গ্রন্থসমূহের পুনরুক্ততা-দোষের নিবৃত্তির জন্য সূক্ষ্ম বিবেচনারূপ
প্রযত্ন করে থাকে, তদ্রুপ বৈদিক পুনরুক্ততা-দোষের নিবারণার্থ বিষয়েও
গম্ভীর বিবেচনা করা উচিত । পুনরুক্তিদর্শন মাত্র পুনরুক্ত বোধগম্য
হওয়া কদাপি অনুচিত ।
মহাভাষ্যকার পাণিনীয় শাস্ত্রের জন্য (অ. ১ পা. ১ আ. ২ ) বর্ণনা করেছেন --
"ব্যাখ্যানতো বিশেষপ্রতিপত্তির্নহি সন্দেহাৎ অলক্ষণম্ ।"
অর্থাৎ,
কোনো সূত্রকে সন্দেহমাত্র দ্বারা অলক্ষণ (শাস্ত্র নিয়ম বিপরীত) বোধ করা
কদাপি উচিত নয়, বরং ব্যাখ্যান দ্বারা বিশেষার্থের পরিজ্ঞান প্রযত্ন করা
উচিত ।
এখন পূর্ব বিবেচিত সিদ্ধান্ত অনুসারে এই লেখ এর প্রারম্ভে উদ্ধৃত বৈদিক পুনরুক্ততা উদাহরণের উপর বিচার করা আবশ্যক --
১. পদ-পুনরুক্তি – এর সাপেক্ষে দুইটি উদাহরণ উদ্ধৃত করা হয়েছে --
(ক) দিবেদিবে – এই প্রকার পুনরুক্তিরও দুইটি ভেদ রয়েছে --
সুবন্ত'র পুনরুক্তি এবং তিঙন্ত'র পুনরুক্তি ।
বৈয়াকরণগণের
মতানুসারে সুবন্ত'র পুনরুক্তি দ্বারা বীপ্সা = ব্যাপ্তি অর্থ গম্যমান হয় ।
যেমন – গ্রামো গ্রামো রমণীয়ঃ = প্রত্যেক গ্রামে রমণীয় রয়েছে। এখানে
রমণীয়তার ব্যাপ্তি গ্রামে-গ্রামে অবস্থান করছে, এই অর্থ প্রতীত হয় ।
তিঙন্ত'র
পুনরুক্তি দ্বারা নিত্য = আভীক্ষ্ণ্য পুনঃ পুনঃ ক্রিয়া হওয়া বিদিত হয়।
যেমন – দেবদত্তঃ পচতি পচতি = দেবদত্ত রন্ধনকার্যেই রত । এর সাপেক্ষে
পাণিনীয় সূত্র -- নিত্যবীপ্সয়ো: ( ৮/১/৪) ।
এই নিয়ম অনুসারে 'দিবেদিবে' এর অর্থ – প্রতিদিনম্ (সায়ণ) ।
মহর্ষি
দয়ানন্দ জী ধাত্বর্থ প্রধানতাকে কেন্দ্র করে অর্থ করেছেন - 'বিজ্ঞানস্য
প্রকাশায় প্রকাশায়', অর্থাৎ, বিজ্ঞানের প্রত্যেক প্রকাশের জন্য । এই
প্রকারে বেদে যেসব স্থলে তিঙন্ত পদের পুনরুক্তি হয়েছে, সেসব স্থলে এর
অর্থ ' সেই ক্রিয়ার পুনঃ পুনঃ হওয়া' হবে ।
সুবন্ত
পদের পুনরুক্তি'র সমানই যেসব স্থলে উপসর্গ এবং নিপাতের পুনরুক্তি হয়
সেসব স্থলেও বীপ্সা অর্থ হবে, পরন্তু মহর্ষি পাণিনি "প্রসমুপোদঃ পাদপূরণে"
(৮/১/৬) সূত্র দ্বারা প্র, সম্, উপ এর ঋক্ (পাদবদ্ধ) মন্ত্রসমূহে
পাদপূর্তির প্রয়োজনও দর্শিয়েছেন । যদ্যপি এর পুনরুক্তি অর্থের দৃষ্টিতে
নিষ্প্রয়োজন, পরন্তু ছন্দঃ শাস্ত্রের দৃষ্টিতে সপ্রয়োজন । সূত্রকার পাণিনি
এবং বার্তিককার কাত্যায়ন এই প্রকরণের (৮/১/৪-১৫) সূত্রগুলো এবং বার্তিকে
পুনরুক্তি দ্বারা অন্য কোনো বিশেষ অর্থের প্রতীতি হওয়ারও নির্দেশ দেওয়া
হয়েছে ।
(খ) মন্ম রেজতি, অবস্রবেৎ — এই উদাহরণে উভয় পদসমুদায়ের সামান্য অর্থে পুনরুক্তি দ্বারা এর বৈশিষ্ট্য প্রতীত হয় ।
এই
বিষয়ে উক্ত মন্ত্রের ব্যাখ্যান - প্রসঙ্গে নিরুক্তকার মহর্ষি যাস্ক
দ্বারা প্রতিপাদিত " অভ্যাসে ভূয়াংসমর্থং মন্যন্তে, অহো দর্শনীয়োऽহো
দর্শনীয়ঃ " সিদ্ধান্তের স্পষ্টীকরণ পূর্বে বিস্তারভাবে দর্শানো হয়েছে ।
ঋগ্বেদের প্রাচীন ব্যাখ্যাকার বেঙ্কটমাধব শব্দাবৃত্ত্যনুক্রমণীতে বর্ণনা করেছেন --
এবং চ পূরণঃ পাদো নিস্থিরাণি চিদোজসা । অভ্যাসান্ননু চাত্রাপি ভূয়ানর্থঃ প্রতীয়তে ॥
( ৪/১/১২ )
অর্থাৎ—ঋগ্
১/১২৭/৪ নং মন্ত্রের 'স্থিরাণি চিন্না নিরিণাত্যোজসা নি স্থিরাণি চিদোজসা'
পাঠে 'নি স্থিরাণি চিৎ ওজসা' পাদ পুনরুক্ত । উক্ত পাদেও অভ্যাস দ্বারা
ভূয়ান্ বিশেষ অর্থ প্রতীত হয় ।
২. পাদ-পুনরুক্তি
-- এর উদাহরণ - 'ইন্দো ইন্দ্রায় পরিস্রব' । উক্ত পদ ঋগ্বেদ. ৯/১১২, ১১৩,
১১৪ এই তিনটি সূক্তের প্রত্যেক মন্ত্রের অন্তে পঠিত হয়েছে ।
অর্থ - - হে ইন্দু [3] = পরমৈশ্বর্যবান্ প্রভো, ইন্দ্রায় [4] =
আত্মার জন্য, অর্থাৎ আমার জন্য, পরিস্রব = দ্রবিত হূজিয়ে = কৃপাকারী
হূজিয়ে । এসব সূক্তের প্রতিমন্ত্র ভিন্ন-ভিন্ন প্রকারে পরমাত্মার স্তুতি
করে ভক্ত এই পাদ দ্বারা প্রভুকে তার প্রতি দ্রবিত = কৃপালু হওয়ার
প্রার্থনা করে । এই প্রকারে প্রত্যেক মন্ত্রে ভক্ত স্বীয় কৃত স্তুতির
প্রয়োজনের কথন করে থাকে । এ দ্বারা ভক্ত বিশেষার্থ প্রকট করে চায় যে, হে
প্রভো ! আপনার
কৃপায়-ই আমার আকাঙ্ক্ষা, অন্য কিছুর প্রয়োজন নাই ।
গীতি
কাব্যে, বিশেষত ভক্তিপ্রধান কাব্যে এই প্রকারের পুনরুক্তি প্রায়ঃ
বিদ্যমান । যথা - চর্পটমঞ্জরী স্তোত্রে 'ভজ গোবিন্দং ভজ গোবিন্দং ভজ
গোবিন্দং মূঢ়মতে' লক্ষ্যণীয় । ভাষার গীতি-প্রধান কাব্যে উক্ত নিয়মই
উপলব্ধ । যেমন - ' ওম্ জয় জগদীশ হরে, স্বামী জয় জগদীশ হরে ' - উক্ত স্বর
প্রত্যেক ছন্দের অন্তে প্রযুক্ত হয়ে থাকে । এই প্রকারের পাদ-পুনরুক্তি
গীতি কাব্যে সার্থক মানা হয় এবং এ দ্বারা এসব কাব্যের সৌন্দর্যেরও
অভিবৃদ্ধি হয়ে থাকে । সুতরাং, বৈদিক কাব্যে এই প্রকারের পুনরুক্তিকে
নিরর্থক বলা মহা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বৈ আর কিছু নয় ।
৩. অর্ধর্চ-পুনরুক্তি
-- ভক্তি প্রকরণে অর্ধর্চোং এর পুনরুক্তি'রও একই প্রয়োজন রয়েছে, পরন্তু
অর্ধর্চ-পুনরুক্তি'র নিদর্শনের জন্য যে ' তত্ত আবর্তয়ামসীহ ক্ষয়ায়
জীবসে' উদাহরণ দেওয়া হয়েছে পূর্বে, তা ভক্তি-প্রকরণের অন্তর্গত নয় ।
অতঃ এই বিষয়ের উপর ভিন্ন দৃষ্টিতে বিচার করা আবশ্যক ।
উক্ত
অর্ধ ঋচা ঋগ্বেদ ১০ম মণ্ডলের , ৫৮তম সূক্তের সব (১২টি ) মন্ত্রে বিদ্যমান ।
উক্ত সূক্তের প্রত্যেক মন্ত্রে 'মনো জগাম দূরকম্' দ্বিতীয় চরণও পুনঃ পুনঃ
প্রযুক্ত হয়েছে । এই সূক্তে মূর্চ্ছিত হওয়া ব্যক্তির মন ( মন জ্ঞানে) =
চেতনা পুনঃ প্রাপ্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । ভিষক্ = চিকিৎসক
রোগীর নষ্ট হয়ে যাওয়া চেতনার জন্য "যদি তোমার চেতনা বৈবস্বত যমকে অর্থাৎ
কাল বা মৃত্যুকে প্রাপ্ত হয়ে থাকে, তাহলেও আমি তাকে এই শরীরে জীবন আধারের
জন্য পুনরায় ফিরিয়ে দিচ্ছি" আদি বিবিধরূপে নষ্ট হওয়া চেতনাকে পুনরাবৃত্ত
করার স্বীয় দৃঢ় সঙ্কল্প এবং ভৈষজ্য কৌশলকে ব্যক্ত করার জন্য "তত্ত
আবর্তয়ামসি" আদি অর্ধ ঋচাকে বার-বার পাঠ করে। দৃঢ় সঙ্কল্প এবং
ভৈষজ্য-কৌশলের পুনঃ পুনঃ অভিব্যক্তি দ্বারা মূর্চ্ছিত ব্যক্তিগণের
সম্বন্ধীকে সান্ত্বনা প্রদান করাও উক্ত পুনরুক্তি'র প্রয়োজন রয়েছে ।
উক্ত
প্রকরণের তুলনা অথর্ববেদ ২য় কাণ্ডের ৩৩তম সূক্তের সহিত করা যায় । এই
সূক্তে যক্ষ্মা রোগ নির্মূল করার বিধান রয়েছে । সূক্তের প্রত্যেক
মন্ত্রে 'বিবৃহামি তে' (২টি মন্ত্রে 'বিবৃহামসি') পদ প্রযুক্ত । ভিষক্
যক্ষ্মাপীড়িত ব্যক্তির মনোবলকে বাড়ানোর জন্য প্রত্যেক মন্ত্রে বিবিধ
শরীরাবয়বের নির্দেশ করে বর্ণনা করা হয়েছে যে, যদি যক্ষ্মা তোমার এসব
অবয়বে প্রবিষ্ট হয়, তো আমি এসব অবয়ব থেকে একে পৃথক্ করছি = বিনষ্ট করছি ।
ব্যাধিগ্রস্তকে প্রেরণা প্রদানের জন্য- তোমার যেকোন অঙ্গেই যক্ষ্মা
প্রবিষ্ট করুক না কেনো, আমি এই রোগকে অবশ্যই নির্মূল করবো, তোমাকে
মৃত্যুপ্রাপ্ত হতে দিবো না । এমন সুদৃঢ় ভাব এবং রোগীর মনোবলকে বাড়ানোর
জন্য এই সূক্তের মন্ত্রগুলোতে বার-বার 'বিবৃহামি তে' পদের পুনরুক্তি হয়েছে
।
এমন আরেকটি অর্ধর্চ'র পুনরুক্তি –
" তন্নো মিত্রো বরুণো মামহন্তামদিতিঃ সিন্ধুঃ পৃথিবী উত দ্যৌঃ " ।
উক্ত
অর্ধর্চ ঋগ্বেদ ১ম মণ্ডলের ১০৫-১১৬ সূক্ত, এই ১১টি সূক্তের অন্তে পুনঃ
পুনঃ উপলব্ধ হয় । এই সূক্তগুলোতে বিবিধ নামে সেইসব দেবগণের (আধ্যাত্মে
অনেক নামে সম্বোধনকারী এক দেব) স্তুতি, যাঁদের নাম ( আধ্যাত্মে – যাঁর নাম
) প্রায়ঃ এই অর্ধর্চ-এ বিদ্যমান, করা হয়েছে । অতঃ সেই সেই দেবের
(আধ্যাত্মে সেই সেই নাম দ্বারা অভিব্যক্ত দেব ) সহযোগী অন্য দেবগণেরও
(আধ্যাত্মে অন্য নামে সেই দেব) সংকীর্তন করা হয়েছে । এই পুনঃ পুনঃ
সংর্কীতন সেই দেবগণের পরস্পরের সহযোগিত্বের দ্যোতনের (আধ্যাত্মে অনেক নামে
অভিব্যঞ্জিত এক দেবের বোধন) জন্য তত্তৎ সূক্তগুলো অন্তে পঠিত হয় । এই
প্রকারে উক্ত অর্ধর্চ পুনঃ পুনঃ পঠিত হওয়ার পরও তা সার্থক ।
বেঙ্কটমাধব শব্দাবৃত্যনুক্রমণীর অন্তিম ভাগে এই অর্ধর্চ-কে নির্দেশ করে বর্ণনা করেছেন -
অথার্ধচস্তন্নো মিত্রঃ সন্ত্যপ্যন্যে চ তাদৃশাঃ । প্রাতর্মক্ষ্বিতি পাদঃ স্যাৎ সন্ত্যন্যেঽপি চ তাদৃশাঃ ॥
স্তুত্বান্যমন্যদেবানাং তত্তদাশাসতে পুনঃ । ঋষয়ো য়দ্যদিচ্ছন্তি তদর্থাস্তে ন পূরণাঃ ॥
( ৪/৮/৩-৪ )
অর্থাৎ-
'তন্নো মিত্রঃ' অর্ধর্চ দ্বারা ঔর 'প্রাতর্মক্ষু' পাদ দ্বারা দেব-সমুদায়ে
এক-এক দেব দ্বারা সেই সেই পদার্থের যাচনা করে তাকে অন্য দেবের সহিত সহযোগী
ভাব সূচিত করা হয়েছে । অর্থাৎ, প্রতিসূক্ত স্তুত দেব একাই অভিলাষিত
কামনাকে পূর্ণ করতে অক্ষম, বরং অন্য দেবের, যার নাম উক্ত অর্ধর্চ-এ
উল্লেখ রয়েছে, একত্র হয়েই কামনাকে পূর্ণ করা সম্ভব । অতঃ উক্ত অর্ধর্চ
অথবা 'প্রাতর্মক্ষু' পাদ মন্ত্রপূর্তিমাত্রের জন্য নয়, অর্থাৎ, নিরর্থক
নয় ।
৪. মন্ত্র-পুনরুক্তি
— সম্পূর্ণ মন্ত্রের পুনরুক্তি'র দুইটি ভেদ বিদ্যমান । একটি ভেদ,
প্রকরণান্তরে সমানপদাত্মক মন্ত্রের পুনরুক্তি । প্রকরণান্তরে পুনরুক্তি
সম্বন্ধ প্রসঙ্গে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, উক্ত পুনরুক্তি সমানাক্ষর
হয়েও প্রকরণ-ভেদে অর্থভেদের জন্য প্রযুক্ত হয়ে থাকে ।
অতঃ
এই পুনরুক্তি'র সেই-সেই প্রকরণ-ভেদে অর্থ দর্শানো ভাষ্যকারের জন্য অতি
আবশ্যক । যদি কোনো ভাষ্যকার "পূর্বময়ং মন্ত্রো ব্যাখ্যাতঃ " এরূপ বাক্য
উল্লেখ করে, তো এটা তার স্বীয় অজ্ঞতারই পরিচয় ।
প্রশ্ন
থেকে যায়, একই প্রকরণে, অর্থাৎ একই দেবতার প্রকরণে মন্ত্রের পুনরুক্তি
বিষয়ে । উদাহরণ -- 'इळामग्ने'... পূর্ব নির্দিষ্ট মন্ত্র। যে-যে সূক্তে
উক্ত মন্ত্রের পুনরুক্তি হয়েছে, সেসব সূক্তে সর্বত্র অগ্নিরই প্রকরণ
বর্ণিত হয়েছে এবং পুনরুক্ত মন্ত্রেও ' অগ্নে ' পদই পঠিত হয়েছে ।
এই
বিষয়ে মূল নির্ণয় এই যে, যদ্যপি সামান্যরূপে সর্বত্র এক অগ্নি দেবতাই
উল্লিখিত হয়েছে অথবা ভাষিত হয়েছে, পুনরপি সেসব স্থলে ভিন্ন-ভিন্ন গুণ বা
কর্ম বিশিষ্ট অগ্নিরই বর্ণন করা হয়েছে এবং সেই সেই প্রকরণের অন্তে পঠিত
'इळामग्ने' মন্ত্রেও অগ্নি পদ দ্বারা তত্তদ্ গুণ বা কর্ম বিশিষ্ট ( যে
গুণসমূহ'র নির্দেশ পূর্ব প্রকরণে ) অগ্নিরই অগ্নি সামান্য পদে সঙ্কেত
করা হয়েছে । অতঃ তত্তৎ গুণ বা কর্ম বিশিষ্ট অগ্নি প্রকরণের অন্তে পঠিত
মন্ত্র সূক্ষ্মার্থ ভেদের কারণে তা পুনরুক্ত নয় । উক্ত সিদ্ধান্তের আধার
স্বয়ং এই মন্ত্রের বিভিন্ন প্রকারে পঠিত পাঠ । ঋগ্বেদ ৩য় মণ্ডলের ১ম
সূক্তের অন্তে এর পাঠ বর্ণিত হওয়ার পশ্চাৎ পুনঃ পাঠ ৫ম সূক্তের অন্তে
বিদ্যমান (২,৩,৪ সূক্তের অন্তে মেং অবিদ্যমান ) । পুনঃ ৬, ৭ সূক্তের অন্তে
নিরন্তর পাঠ উপলব্ধের পশ্চাৎ ১৫তম সূক্তের অন্তে বিদ্যমান (৮-১৪ সূক্তে
অবিদ্যমান ) । যদি বিশেষার্থের অভিব্যক্তি ইষ্ট না হয়ে কেবল পুন: পাঠই
ইষ্ট হতো তো প্রত্যেক সূক্তের অন্তেই উক্ত মন্ত্রের পাঠ উপলব্ধ হওয়া
উচিত ছিলো , মধ্যস্থলের সূক্তগুলোকে পরিত্যাগ করা যথার্থ ছিলো না । দুটি
স্থলের মধ্যবর্তী সূক্তগুলোর ( ২, ৩, ৪ তথা ৮-১৪) অন্তে উক্ত মন্ত্রের
পাঠ অনুপলব্ধ, অতঃ এই বিষয় জ্ঞাপন হয় যে, ১, ২ থেকে ৫, ৬, ৭, ৮-১৫
সূক্তগুলোতে কিছু অবান্তর প্রকরণ বিদ্যমান, অর্থাৎ এসব সূক্তে ভিন্ন-ভিন্ন
গুণ বা কর্ম বিশিষ্ট অগ্নির বর্ণন রয়েছে ; এ কারণে যেখানে-যেখানে ( হোক
সেটা একটি সূক্তে অথবা অনেক সূক্তে ) অবান্তর প্রকরণের সহিত সম্বন্ধ
হওয়ায় সমানবর্ণানুপূর্বী হওয়ার পরও সূক্ষ্মার্থভেদ দ্বারা ভিন্নার্থক
নির্দেশ করে ।
৫. সন্দর্ভ পুনরুক্তি – এই পুনরুক্তি বিষয়ে দুই প্রকারের সন্দর্ভ দর্শানো হয়েছে, বৈদিক এবং লৌকিক (মহাভাষ্যের ) ।
বৈদিক
সন্দর্ভের পুনরুক্তি বিষয়ে যে উদাহরণ দর্শানো হয়েছে তা ইতি পদ দ্বারা
নির্দিষ্ট । কিছু কিছু ইতি পদে নির্দিষ্টও নয় । যথা - যজু. ১৩/৫৮ তথা
১৪/১০, ২২, ৩১ নং মন্ত্রে 'লোকং তা ইন্দ্রম্' পদ দ্বারা যজু. ১২/৫৪, ৫৫, ৫৬
নং মন্ত্রের প্রতি সঙ্কেত করা হয়েছে । এই প্রকারে সন্দর্ভের পুনরুক্তি
যজুর্বেদের মূল পাঠের অঙ্গ নয়। এই বিষয় মহর্ষি দয়ানন্দ জীও স্বীকার
করেছেন ।
তিনি বর্ণনা করেছেন --
'অত্র
শ্লোকং তা ইন্দ্রম্' ইতি দ্বাদশাধ্যায়স্থানাং ত্রয়াণাং মন্ত্রাণাং
প্রতীকানি সূত্রব্যাখ্যানং দৃষ্ট্বা কেনচিদুদ্ধৃতানি ।
শতপথেঽব্যাখ্যাতত্বাদত্র ন গৃহ্যন্তে ' । ( যজুর্ভাষ্য ১৩.৫৮ )
অর্থাৎ–
এখানে (৫৮নং মন্ত্রের অন্তে ) 'লোকং তা ইন্দ্রম্' ১২তম অধ্যায়ের
(৫৪,৫৫,৫৬) মন্ত্রের প্রতীকের (কাত্যায়ন শ্রৌতসূত্র ) ব্যাখ্যান দেখে কেউ
উদ্ধৃত করেছে, আমি এর নির্দেশ না হওয়ায় উক্ত স্থল ( মন্ত্রপাঠে )
গ্রহণ করি না ।
মহাভাষ্যের
সন্দর্ভ-পুনরুক্তি সম্বন্ধে বৈয়াকরণগণের মত, আচার্য পতঞ্জলি যে বিষয়
অধ্যেতা'র হৃদয়ে সম্যক্ প্রকার উপবিষ্ট করাতে চেয়েছেন, সেই বিষয়ের
সম্পূর্ণ সন্দর্ভ প্রসঙ্গানুসারে অনেকবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে । অতঃ
বিদ্যার্থীদের উপকার-দৃষ্টি দ্বারা মহাভাষ্যোক্ত সন্দর্ভের পুনঃ পাঠ
সপ্রয়োজন রয়েছে, নিষ্প্রয়োজন নয় ।
শবর স্বামীও মীমাংসাভাষ্যে বিদ্যার্থীদের লাভার্থে সন্দর্ভ-পুনরুক্তিকে সার্থক মেনেছেন ।
উপর্যুক্ত
প্রমাণ এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে দৃঢ়পূর্ণভাবে সিদ্ধ হয় যে,
বেদ পুনরুক্তি দোষে বিন্দুমাত্রও তুষ্ট নয় । বেদের পুনরুক্তি সেই
প্রকারের পুনরুক্তি, যেই প্রকারে মহর্ষি পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী গ্রন্থে
“বহুলং ছন্দসি " সূত্রের পুনরুক্তি হয়েছে । উক্ত সূত্র অষ্টাধ্যায়ীর
বিবিধ স্থলে বিদ্যমান । পরন্তু প্রত্যেক স্থলে প্রকরণানুসারে এই সূত্রের
অর্থ ভিন্ন হয়ে থাকে ।
যদি
এই পদ্ধতিতে বৈদিক পুনরুক্তি'র উপর গম্ভীরভাবে বিচার করা হয় তো,
নিরুক্তকারের 'অভ্যাসে ভূয়াংসমর্থং মন্যন্তে' এই মহত্ত্বপূর্ণ উক্তির
চরিতার্থ সর্বত্র প্রতীত হবে ।
যেসব গ্রন্থে নিষ্প্রয়োজন পুনরুক্তি বিদ্যমান, তা সদোষে তুষ্ট ।
সমগ্র বেদে নিষ্প্রয়োজন পুনরুক্তি'র অভাব সর্বথা বিদ্যমান ।
" অলমতিবিস্তরেণ বিদ্বদ্বর্য়েষু "
———————————————
1. উক্ত বিষয়কে স্বীকার করে মহর্ষি দয়ানন্দ জী তাঁর স্বীয় বেদভাষ্যে বহুত্র উক্ত সূত্র দ্বারা বিভক্তির অলুক্ এর উল্লেখ করেছেন ।
যথা – "ধিয়াবসু শুদ্ধকর্মণা সহবাসপ্রাপিকা । তৎপুরুষে কৃতি বহুলম্ (৬/৩/১৩) অনেন তৃতীয়াতৎপুরুষে বিভক্ত্যলুক্।"
সূত্রে
পূর্বতঃ সপ্তমীর অনুবৃত্তি হওয়ার টরও বহুল গ্রহণ সামর্থ্য দ্বারা
(ক্বচিদন্যদেব-নিয়মের সাপেক্ষে ) তৃতীয়া বিভক্তির অলুক্ এরও নির্দেশ করা
হয়েছে । দ্র. মহাভাষ্যের পূর্বে উদ্ধ্রিয়মাণ বচন ।
2.
উক্ত পদ্ধতির অনুরূপ কৌটিল্য অর্থশাস্ত্র সদৃশ ( যার আরম্ভে সূত্ররূপে
সমস্ত প্রকরণের নির্দেশ করে পরবর্তী প্রকরণে সেই-ই ভাষ্যরূপেই বিদ্যমান )
অনেক গ্রন্থের রচনা হয়েছে ।
3.
উক্ত প্রকরণ আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ানুসারে অর্থ করা হয়েছে । অন্য
প্রক্রিয়ায়ও এই পদসমূহের ভিন্নার্থ হবে । পরন্তু পুনরুক্তি-প্রয়োজন সেসব
স্থলে সমানই থাকবে ।
4. ইন্দ্র শব্দ আত্মা বাচক ।
দ্রষ্টব্য - " ইন্দ্রলিঙ্গমিন্দ্রদৃষ্ট. " (পা. ৫/২৯/৩) সূত্র ।
0 মন্তব্য(গুলি)
Author
সত্যান্বেষী