প্রশ্নঃ চন্দ্র, সূর্য এবং নক্ষত্র কিরূপ পদার্থ? ঐ সকলের মধ্যে মনুষ্যাদি সৃষ্টি আছে কি না ?
উত্তরঃ এই সমস্ত ভূগোল লোক এবং ইহাদের মধ্যে মনুষ্যাদি প্রজাও আছে। কেননা—
‘এতেষু হীদঃ সর্বং বসু হিতমেতে হীদঃ সর্বং বাসযন্তে, তদাদিদঃ সর্বং বাসযন্তে তস্মাদ্বসব ইতি৷৷
শত কা০ ১৪ ॥ [ ১৪.৬.৯.৪ ]
পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ, চন্দ্র, নক্ষত্র ও সূর্য—এই সকলের নাম ‘বসু’। কারণ এই সকলের মধ্যে যাবতীয় পদার্থ এবং প্রজা বাস করে। ইহারাই সকলকে বাস করাইয়া থাকে। যেহেতু এই সকল বাসগৃহ স্বরূপ, অতএব এই সকলের নাম ‘বসু’।
পৃথিবীর ন্যায় চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্র বসু। সুতরাং এই সকলের মধ্যে এইরূপ প্রজা থাকা সম্বন্ধে কি সন্দেহ থাকিতে পারে ? পরমেশ্বরের এই ক্ষুদ্র পৃথিবী মনুষ্যাদি জীব সৃষ্টিতে পরিপূর্ণ। সুতরাং ঐ সকল লোক কি শূন্য থাকিবে ? পরমেশ্বরের কোন কর্মই নিরর্থক নহে। এই সকল অসংখ্য লোকে কি মনুষ্যাদি সৃষ্টি ব্যতীত কখনও সফল হইতে পারে ? অতএব সর্বত্র মনুষ্যাদির সৃষ্টি আছে।
১। প্রথমে বসু শব্দ দ্বারা মহর্ষি বুঝিয়েছেন তা সরলভাবে পণ্ডিত প্রিয়দর্শন সিদ্ধান্তভূষণ বলেছেন -
যে সমস্ত লোকে মানবাদি প্রাণীর অস্তিত্ব নাই, সেগুলিও বাস হেতু বলিয়া ‘বসু' বলা হয়। যথা—চন্দ্ৰমায় প্রাণী সমূহের বাস না থাকায় উহা পৃথিবী লোকের প্রাণী সমূহের বাসার্থে স্বীয় প্রকাশ সোম দিয়া সহায়ক রইয়াছে ।
মহর্ষিও বলেছেন ' ইহারাই সকলকে বাস করাইয়া থাকে ' । অর্থাৎ দুইটি কারণে বসু সংজ্ঞা -
(১) তাতে বাস করা হয় বলে
(২) বাস করতে সাহায্য করে বলে
২। আমরা আলোচ্য অংশে হাইলাইট করে দিয়েছি যে মহর্ষি ' মনুষ্যাদি ' শব্দ প্রয়োগ করেছেন । অর্থাৎ শুধুমাত্র মানুষ নয় বরং মনুষ্যেতর প্রাণীও এখানে অপেক্ষিত । তাই ' মহর্ষি সূর্যে মানুষ আছে বলেছেন ' এটি পরিপূর্ণ ছল বিশেষ ।
৩। মহর্ষি চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্র এই ৩ টি শব্দ প্রয়োগ করেছেন । এখানে সূক্ষ্মভাবে লক্ষ্যণীয় মহর্ষি যদি নির্দিষ্টভাবে কেবল আমাদের সৌরজগতকেই বোঝাতেন তবে তিনি কখনোই আলাদাভাবে নক্ষত্র শব্দটি উল্লেখ করতেন না । কেননা সূর্য তো নক্ষত্রই ।
অর্থাৎ মহর্ষি এখানে চন্দ্র , সূর্য ও নক্ষত্র নামবাচক বিশেষ নয় বরং Common Noun হিসেবে ব্যবহার করেছেন । এর পক্ষে প্রবল প্রমাণ তারপরে ২য় বাক্য ' এই সকল অসংখ্য লোকে কি মনুষ্যাদি সৃষ্টি ব্যতীত কখনও সফল হইতে পারে ? '
পাঠক, এখানে দেখুন । মহর্ষি সূর্য বলতে কেবল এই সূর্যকে বোঝালে কেবল ৩টি নাম থাকতো [ চন্দ্র , সূর্য ও নক্ষত্র ] । কিন্তু মহর্ষি লিখেছেন ' এই সকল অসংখ্য লোকে.. ' এখানে এই সকল অসংখ্য লোক দ্বারা এটাই প্রমাণ হয় যে মহর্ষি সমগ্র দৃশ্যমান জগতের সূর্য , নক্ষত্রাদি , গ্রহের চারিদিকে বর্তমান উপগ্রহদের চন্দ্ররূপে নির্দেশ করেছেন ।
শুধু তাই নয় মহর্ষি পরবর্তীতে এই "মনুষ্যাদি"র আকৃতিভেদও স্বীকার করেছেন । এজন্য মহর্ষি সূর্যে মনুষ্য আছে এটা বলেছেন তা সম্পূর্ণ অমূলক একটি দাবি ।
এটাও যারা মানতে চাইবেন না তারা দেখুন জৈনমত সমীক্ষায় ১২তম সমুল্লাসে মহর্ষি নিজে সূর্য উত্তাপে যে মানুষ মারা যাবে তা স্পষ্টভাবে লিখেছেন ও এই যুক্তিতেই জৈনমত খণ্ডন করেছেন -
ন্যায়দর্শনে [ ৩.১.২৭] ভাষ্যকার বাৎস্যায়নও ভিন্ন লোকে সেসব লোকের উপযোগী দেহের কথা উল্লেখ করেছেন ।
এখনো অব্দি প্রাপ্ত তথ্যে কতগুলো নক্ষত্র আছে তা দেখুন এখানে -
নানা গ্রহের চন্দ্র সম্পর্কে দেখুন -
অন্যাদি গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে অসংখ্য লেখা , ভিডিয়ো পাওয়া যায় । আপনারা নিচেরটিও দেখতে পারেন -
- বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা:
বিজ্ঞানীদের মতে, ইউরোপা পৃথিবীর বাইরে সৌরজগতের সবচেয়ে
বাসযোগ্য স্থান, যেখানে এক্সট্রিমোফাইলের বসবাসের সম্ভাবনা আছে। এই
সংক্রান্ত পেপার: https://web.archive.org/web/20070609150109/http://people.msoe.edu/~tritt/sf/europa.life.html
- শনির উপগ্রহ টাইটান
শনি
গ্রহের আরেক উপগ্রহ টাইটান, টাইটান সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যেখানে তরল
হাইড্রোকার্বনের হ্রদ পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা টাইটানেও ক্ষুদ্র
প্রাণী বসবাসের সম্ভাবনা আছে।
https://www.space.com/2681-lakes-saturn-moon-titan.html
মহাবিশ্বের এমন নানা গ্রহ বা উপগ্রহেই প্রাণের বিকাশের সম্ভাবনা আছে।
বিজ্ঞানীরা তাই বারবার আশেপাশের গ্রহ, উপগ্রহে অজস্র টাকা খরচ করে
মহাকাশযান পাঠান, সেখানকার পরিবেশ ও প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা করার
জন্য।
10 Planets Where There’s Life According to NASA!
NASA discovers Earth-like planet in 'habitable zone...
অর্থাৎ আমরা এই সিদ্ধান্তে এলাম যে -
মহর্ষি সাধারণ সংজ্ঞা হিসেবে " চন্দ্র , সূর্য ও নক্ষত্র ' উল্লেখ করে ' বসু ' = নিবাসের স্থান ও নিবাসের সহায়ক উপাদান [ তাতে জীবন থাকুক বা না থাকুক ] হওয়ায় স্পষ্টরূপে " এই সকলের মধ্যে এইরূপ প্রজা" দ্বারা সমষ্টিগতরূপে একটি সৌর ব্যবস্থায় মানবাকৃতি বা অন্যাদি আকার বিশিষ্ট প্রাণ থাকা বিষয়ে মত দিয়েছেন । এটি গবেষণাধীন বলে কোনভাবেই ভুল হিসেবে পূর্বঘোষিত করা যাবে না ।
ইত্যোম্
0 মন্তব্য(গুলি)