https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

অষ্টাধ্যায়ীতে অর্চা শব্দের অর্থ

Sunday, April 23, 2023



আক্ষেপ– অষ্টাধ্যায়ী ৫।২।১০১ সূত্রে অর্চা বা দেবতার প্রতিকৃতির উল্লেখ লক্ষ্যনীয়। মূর্তিপূজককে তখন বলা হত "আর্চ"।

সমাধান– এখানে মজার ব্যাপার হলো, প্রতিপক্ষ অষ্টাধ্যায়ী থেকে দাবি করছে যে, সে অষ্টাধ্যায়ী থেকে মূর্তিপূজা সিদ্ধ করবে ৷ কিন্তু এখানে সে মূর্তিপূজা সিদ্ধ করার আগেই স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে 'অর্চা' শব্দটির অর্থ 'দেবতার প্রতিকৃতি' এবং 'আর্চ' শব্দটিকে 'মূর্তিপূজক' ধরে নিয়েছে৷ এই অর্থ তারা কোথায় পেলো? অষ্টাধ্যায়ীতে? অবশ্যই না ৷ অষ্টাধ্যায়ীতে এরূপ অর্থ প্রদান করা হয়নি। তাহলে নিজের ইচ্ছে মতো এই অর্থকে প্রামাণ্য হিসেবে গ্রহণ করে সেটি দিয়ে অষ্টাধ্যায়ীতে মূর্তিপূজার যে দাবি করা হচ্ছে তা শঠতার ও মূর্খতার পরিচায়ক।



আক্ষেপ–  এই সূত্রে প্রজ্ঞা, শ্রদ্ধা, অর্চা ও বৃত্তি শব্দ পরপর ব্যবহৃত হয়েছে। সূত্রটি হলো– "প্রজ্ঞাশ্রদ্ধার্চাবৃত্তিভ্যো ণঃ"
অনুবাদ: প্রজ্ঞা, শ্রদ্ধা, অর্চা এবং বৃত্তি শব্দের পরে 'ণ' প্রত্যয় হয় মত্বর্থে বা অভিজ্ঞ অর্থে।
যেমন– প্রাজ্ঞো ব্যাকরণে অর্থাৎ ব্যাকরণে অভিজ্ঞ যিনি। এরকমভাবে মূর্তি বা প্রতিমা পূজায় যিনি অভিজ্ঞ তাকে বলা হয়েছে "আর্চ"।


সমাধান– প্রদত্ত সূত্রটি কাশিকাবৃত্তি অনুসারে দেওয়া৷ তাই সূত্রটিতে 'বৃত্তি' শব্দটি অতিরিক্ত পাঠ হিসেবে রয়েছে। 


এই বৃত্তি শব্দটি মূলত বার্তিকের পাঠ৷ যাই হোক, এবার মূল আলোচনায় আসি৷ মূল সূত্রটি হলো– "প্রজ্ঞাশ্রদ্ধার্চাভ্যো ণঃ"৷ 


 

অনুবৃত্তিসহ সূত্রটির অর্থ হলো– প্রজ্ঞা, শ্রদ্ধা, অর্চা এই প্রাতিপদিকসমূহে মতুবর্থে বিকল্পে 'ণ' প্রত্যয় হয়৷ পক্ষে 'মতুপ্' প্রত্যয় হয়৷ 


যেমন– প্রজ্ঞা + ণ = প্রাজ্ঞ। প্রজ্ঞা + মতুপ্ = প্রজ্ঞাবান্।
শ্রদ্ধা + ণ = শ্রাদ্ধ। শ্রদ্ধা + মতুপ্ = শ্রদ্ধাবান্ ৷
অর্চা + ণ = আর্চ। অর্চা + মতুপ্ = অর্চাবান্ ৷ 


এই সূত্র দ্বারা অর্চা অর্থ কিভাবে দেবতার মূর্তি পূজা এবং আর্চ দ্বারা মূর্তিপূজক সিদ্ধ হয় তা পাঠকই চিন্তা করে দেখুন !

এখানে আবার আক্ষেপকারীরা পরবর্তীতে গোরুর রচনা লিখে অমরকোষ বা শব্দকল্পদ্রুম থেকে দাবি করতে পারে, অর্চা অর্থ প্রতিমা ৷ তাই অষ্টাধ্যায়ীর এখানেও অর্চা দ্বারা প্রতিমা এবং আর্চ দ্বারা প্রতিমা পূজককে বোঝাচ্ছে। 

কিন্তু তাদের জন্য দুঃসংবাদ হলো সেই অমরকোষ বা শব্দকল্পদ্রুমেই অর্চা অর্থ পূজা দেওয়া আছে৷ পূজা শব্দ দেখেই আবার আক্ষেপকারীর মনে মূর্তিপূজার ছবি ভেবে উঠবে, যেভাবে খাবার দেখলে কুকুরের মুখে লালা চলে আসে। তাই তাদের জেনে রাখা উচিত, অর্চ, অর্চা, অর্চতি, পূজা, পূজয়তি এসব শব্দ সেই বৈদিক যুগ থেকে প্রচলিত। সেই সময়ে এগুলো মূর্তিপূজার সমার্থক শব্দ হিসেবে প্রচলিত ছিল না৷ কারণ তখন মূর্তিপূজাই ছিল না, তাহলে মূর্তিপূজার সমার্থক শব্দ আসবে কোথা থেকে? তাহলে এসব শব্দের অর্থ কী ?


নিঘণ্টুতে (৩।১৪) অর্চতি শব্দের ৪৪টি সমার্থক শব্দ রয়েছে৷ 

 

 

'অর্চতি' শব্দটি একটি ক্রিয়া পদ, যার অর্থ হলো 'অর্চনা করা'৷ 'অর্চতি' এবং 'অর্চা' উভয় শব্দেরই মূল হলো 'অর্চ'৷ আর বেদে অর্চ শব্দের ভুরি ভুরি প্রয়োগ আছে৷ যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি৷ নিঘণ্টুতে 'অর্চতি'-র সমার্থক হিসেবে 'গৃণাতি', 'স্তোভতি', 'শংসতি', 'স্তৌতি', 'পূজয়তি' প্রভৃতি শব্দ রয়েছে৷ অর্থাৎ অর্চতি শব্দের অর্থ এখানে হলো ঈশ্বরের গুণগান করা, স্তুতি করা, প্রশংসা করা, পূজা করা প্রভৃতি৷ আর মজার ব্যাপার হলো, এখানে 'পূজয়তি' শব্দ দেখেই মূর্তিপূজার কল্পনাকারীদের এটি ভালো করে দেখে রাখা উচিত যে, 'পূজয়তি'-র সমার্থক শব্দ হিসেবেও কিন্তু এখানে 'গৃণাতি', 'স্তোভতি', 'শংসতি', 'স্তৌতি' প্রভৃতি শব্দ রয়েছে৷

 

 

 তাই এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, পূজা বা অর্চ শব্দ দেখলেই মূর্তিপূজা কল্পনা করা মূর্খতার পরিচায়ক। কারণ এসব বৈদিক শব্দ বৈদিক যুগ থেকে ঈশ্বরের গুণগান, স্তুতি এসব অর্থে প্রযুক্ত, মূর্তিপূজা অর্থে নয়৷