https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

ঋগ্বেদের আশ্বলায়ন শাখায় কি কালিয় নাগ ও শ্রীকৃষ্ণের কথা আছে ?

Monday, August 28, 2023

আর্যসমাজের প্রতি বিদ্বেষবশতঃ অপ্রামাণিক উদ্ধৃতি দিতে দিতে অনেকেই সংজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন । কিছু কিছু নিবন্ধে অযাচিতভাবে আর্যসমাজ বা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীকে না আনলে অনেকেরই নিজের আত্মপ্রশংসা করার সাধ কিংবা মুষ্টিমেয় কিছু চাটুকারকে তুষ্ট করা সম্ভব হয় না । সাম্প্রতিক সময়ে ঋগ্বেদের আশ্বলায়ন শাখার খিল ও এক্সট্রা সূক্ত বা মন্ত্র যা কিনা মূল শাকল শাখায় নেই তা নিয়ে বেদে অমুক সাকার দেবতা কিংবা পূজার উল্লেখ আছে দেখানোর অপচেষ্টা চলছে । আমরা ইতোপূর্বে আশ্বলায়ন শাখায় দুর্গা নিয়ে এহেন অপচেষ্টার সপ্রমাণ খণ্ডন করেছি ও এসব মন্ত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি । আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন - https://back2thevedas.blogspot.com/2022/08/blog-post_9.html?m=1

  • প্রথমত আমাদের জানতে হবে শাখা কী! মীমাংসানুযায়ী শাখার উৎপত্তি প্রবচনের জন্য। শাখা মূলত স্থানভেদে প্রবচনের জন্য সৃষ্ট বেদের সংরক্ষণ পদ্ধতি। দেখা গেল, কোনো এক ঋষির নিকট হতে তাঁর শিষ্যগণ গুরুপরম্পরায় বেদ শিখে, নানা স্থানে প্রচার ও প্রবচন আরম্ভ করলেন। কালক্রমে তাঁদের ও শিষ্য হল ও এভাবে শাখার সৃষ্টি হল। চার বেদের এমন অনেক শাখা থাকলেও, মূল নিয়ে কোনো সংশয় নেই।

  • বিন্যাস, পাঠের নিয়ম, উচ্চারণে শাখাভেদে পার্থক্য থাকলেও সাধারণত সব শাখার সংহিতা একই হবার কথা। কারণ সেগুলো কমন সোর্স থেকে এসেছে। যদিও শাখাভেদে নিজস্ব ব্রাহ্মণ, উপনিষদ্ সম্ভব; তবে বেদ সব শাখাতেই সমান হবার কথা যদি তা যথাযথ সংরক্ষিত হয়। ঋগ্বেদের তিনটি শাখা পাওয়া যায়, শাকল, বাস্কল ও আশ্বলায়ন। তবে অনুক্রমণিকা মতে, শাকলের শিষ্যগণই বাস্কল বা আশ্বলায়ন শাখা রচনা করেছেন। 
পাণিনি অষ্টাধ্যায়ী বা যাস্কের নিরুক্তেও শাকল শাখার উল্লেখ পাওয়া যায় যার দ্বারা শাকল শাখার প্রাচীনত্ব ও প্রধানতা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়‌‌। বর্তমানে আমরা ঋগ্বেদ বলে যা জানি, তা মূলত এই বিশুদ্ধ ও প্রাচীন শাকল শাখার সংহিতা। 
 
বাস্কল ও আশ্বলায়ন শাখাতেও এই সূক্ত ও মন্ত্রগুলো উপস্থিত। তবে বাস্কল ও আশ্বলায়ন শাখাতে এমন অনেক পৃথক মন্ত্র আছে যেগুলো তিন শাখার ভেতরে কমন না। অর্থাৎ, যেগুলো মূল ঋগ্বেদের অংশ নয়, বরং পরবর্তীতে ঐ ঐ শাখার সংহিতায় প্রবেশ করানো। এদেরকেই খিল বলে। খিল বিচার করবার ২ রকম উপায় আছে। 
 

  1. প্রথমত, কমন সোর্স বা সব শাখায় উপস্থিত না থাকা।
  2. দ্বিতীয়ত, খিলের ভাষা, দেবতা, ছন্দ তুলনামূলক নবীন হয়।


▪️ যারা কিনা বলবেন না শাকলও আসলে শাখা হয়েও যেমন মান্য মূল হিসেবে তাহলে এগুলোও মান্য তাদের কাছে প্রশ্ন রইলো , উত্তর প্রমাণযুক্তিসহ দেবেন আশা করি -

১। যদি শাখাই হয় সব নানা লেখাতে ঋগ্বেদ না লিখে কেন ঋগ্বেদের শাকল শাখা লিখেন না কেন ?
২। আশ্বলায়ন শাখার মত অন্য শাখাতেও তো এক্সট্রা এমন সূক্ত বা মন্ত্র আছে । এখন সব শাখা তো পাওয়া যায় না । প্রায় ৯০% শাখাই হারিয়ে গিয়েছে । তারমানে কি বেদের অনেক মন্ত্র হারিয়ে গিয়েছে ?  কেননা আপনার যুক্তি অনুযায়ী সব শাখাই বেদ হলে হারিয়ে যাওয়া শাখার মন্ত্রও নিশ্চয়ই বেদের বাইরে হবে না ।


উল্লেখ্য, ঋগ্বেদের ৫টি, সামবেদের ১০০০টি, যজুর্বেদের ১০০ শাখা, অথর্ববেদের ৯টি শাখার নাম পাওয়া যায় ৷ এই নিয়েও মহাভাষ্যের সাথে চরণব্যূহের অমিল দেখা যায় । এখন, ঋগ্বেদের ৪টি, সামবেদের ৩টি, যজুর্বেদের ৩টি [ মৈত্রেয়াণী, কাঠকসহ ৫টি ] ও অথর্ববেদের ২টি শাখা এখন পাওয়া যায় ।

⛔ আগ্রহী পাঠকরা শাখা নিয়ে এই নিবন্ধটি পড়তে পারেন - https://back2thevedas.blogspot.com/2021/12/blog-post_43.html?m=1

এবার আসা যাক আলোচ্য সূক্ত নিয়ে । আশ্বলায়ন শাখার সম্পাদক এই সূক্ত অর্থাৎ ৭ম মণ্ডলের ৫৬ সূক্তকে * দিয়ে আলাদা করে চিহ্নিত করে প্রথমেই দেখিয়েছেন যে এটি খিল । 



✴️ এই সূক্তের ঋষি মৈত্রার্বরুণির্বৈশিষ্ট্য । ৮টি মন্ত্র আছে এই সূক্তে । যার ১মটির দেবতা সর্প ও ২-৮ এর দেবতা সর্পভয়বাধঃ । আলোচ্য মন্ত্রটি হলো -

কাল়িকো নাম সৰ্পো নবনাগসহস্রবলঃ ।
যমুনহ্রদে হ সো জাতো অসৌ নারায়ণবাহনঃ ॥
যদি কাল়িকদূতস্য যদি কাঃকাল়িকাদ্ ভয়ম্ ।
জন্মভূমিং পরিক্রান্তো নির্বিষো যাতি কাল়িকঃ ॥
ঋগ্বেদীয় আশ্বলায়ন শাখা ৭।৫৬।৪-৫


বাংলা ভাষায় প্রথম অনুবাদ করেছে বলে গর্ব প্রদর্শনকারী এই বিষয়টি অত্যন্ত সযতনে চেপে গিয়েছেন যে এই সংহিতার শেষেই অতিরিক্ত মন্ত্রগুলোর ইংরেজি ও হিন্দি অনুবাদ দেওয়াই আছে,  যার সাথে তার অনুবাদ ও ব্যাখ্যার বেশ গড়মিল । আমরা সেগুলো একটু দেখি -
 
🔴 ৪র্থ মন্ত্রটির আশ্বলায়ন সংহিতার সম্পাদকদের অনুবাদ - The serpent, known as Kalika, the possessor of strength of a thousand young elephants: verily he is born in the Yamuna river. He is the carrier of Narayana.

(वह) काळिक नाम का सर्प नये सहस्र हाथियों के बल वाला है। वही यमुन सरोवर में पैदा हुआ है, वही नारायण का वाहन है।

অর্থাৎ, কাল়িক নামের সর্প নতুন সহস্র হাতির ন্যায় বলশালী । সে-ই যমুন সরোবরে জন্ম নিয়েছে,  সে-ই নারায়ণের বাহন । 



➡️ তথাকথিত প্রথম বাংলা অনুবাদঃ যমুনার হ্রদে জন্মলাভ করা সহস্রহাতির ন্যায় বলশালী সেই কালিক নামক সর্প নারায়ণের বাহন।

▪️ সমীক্ষাঃ
১। এখানে কাল়িক [ ল নয় কিন্তু ' ল়' ]  নাম লেখা । কালিয় নয় । ভাগবত অনুযায়ী কালিয় নাগ নাম । তাহলে পঞ্চমবেদ পুরাণ (?) ভাগবতের [ ১০।১৬।৪] নাম কী ভুল ?  সঠিক নাম কোনটি ?  

 


২। মূল মন্ত্র  ও হিন্দি উভয় অনুবাদে ' যমুন ' হ্রদের কথা । ইংরেজিতে Yamuna River এবং হিন্দি অনুবাদের সাথে মেলালেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ পাওয়া যাবে, এটাও এই মন্ত্রের সন্দিগ্ধতার একটি প্রমাণ । কেননা মূলে ' যমুন হ্রদ আছে '।  বাংলার গর্বিত গর্হিত অনুবাদক মূল মন্ত্রের উপর চালাকি করে অনুবাদে ' যমুনা ' লিখেছেন । এটা কি অর্থ বিকৃতি নয় মহাশয় ?  


 



৩। কালিয় নাগ বা কালিক নাগ যদি একই হয় তাহলেও তো কালিয় নাগ যমুনার হ্রদে জন্মগ্রহণ করেনি, বরং সে যমুনার পাশে হ্রদে থাকতো ও সেখান থেকেই তার বিষে নদীর জল বিষাক্ত হয়েছে [ ভাগবত ১০।১৬।৪ ]  । 


 



যমুনা মূলতঃ নদী । কোন হ্রদ না [ ১০।১৬।৬ -৭ ] । কোন অভিধানে উনি পেয়েছেন যে হ্রদ ও নদী এক ?  



৪। নারায়ণের বাহন গরুড় [ স্কন্দপুরাণ ব্রহ্মখণ্ড সেতুমাহাত্ম্য ৩৭.৯০-৯৩] । কালিয় নাগ কবে থেকে নারায়ণের বাহন হওয়া শুরু করলো ?  



🔴৪র্থ মন্ত্রটির আশ্বলায়ন সংহিতার সম্পাদকদের অনুবাদ - - If there is a fear from the messenger of Kalika, if there is a fear from the Kähklika a particular type of serpent, moving in the area of the birthplace the Kalika becomes poisonless

यदि उस काळिक सर्प के दूत को का: कालिक (सर्प की एक विशेष जाति) से भय है तो (यह ठीक नहीं, क्योंकि)  जन्मभूमि को पार करने पर वह काळिक विषरहित हो जाता है।

যদি সেই কালিক সর্পের দূতের কাঃকালিক [ সর্পের এক বিশেষ জাতি ] ভয় হয় তবে [ তা ঠিক নয়, কেননা ] জন্মভূমি অতিক্রম করলে কালিক বিষরহিত হয়ে যায় । 


 
➡️ তথাকথিত প্রথম বাংলা অনুবাদঃ যদি ঐ কালিক সর্পের দূত কাঃকালিক নামক সর্পের থেকে ভয় পায়, তাহলে জন্মভূমি অতিক্রম করে সেই কালিক সর্প বিষহীন হয়ে যায়।

▪️ সমীক্ষাঃ এই মন্ত্রের অনুবাদ কি বুঝে দেওয়া হলো ?  বোধহয় একটা মন্ত্র দিলে খারাপ দেখা যায় এজন্য । নতুবা এই যে কালিক সাপের দূতের কথা বলা এটা কোথায় আছে ?  আর কালিয় সাপ নিজেই তো পুরাণ অনুযায়ী বহিরাগত ছিলো ।  তাহলে হিসেবে তার জন্মস্থান রমণক দ্বীপ থেকে গরুড়ের জন্য সরার কারণে তো যমুনায় তার বিষ থাকার কথা না । দেখুন ভাগবত ১০।১৭।১, ৮ ।





শুধু তাই নয় , ৮ম মন্ত্রে বলা হচ্ছে, 

কর্কোটক নামের সাপ যাকে দেখা মাত্র বিষ ব্যাপ্ত হয় সেটিই সাপের সর্পত্ব , হে সর্প তোমাকে আমার নমস্কার  । 

 

এবার কি প্রাকৃত সাপও পুজা করা শুরু করবেন হে মহানুভব  ? চাইলে এমন খিল অংশ থেকে মজাদার বিষয় আরো দেখানো যায় । 

 
আশা করি সম্মানিত পাঠক বুঝতে পারছেন শাখার এসব মন্ত্রের প্রামাণিকতা কতটুকু ও পুরাণের সাথেই কতটা গড়মিল আছে । পাশাপাশি এটাও স্পষ্ট যে অত্যন্ত সুচতুরভাবে অনুবাদ পালটে দিয়ে কেন বেদের নামে এসব মন্ত্র অনুপ্রবিষ্ট করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে । এতে লাভ -

১। নিজস্ব পাণ্ডিত্য প্রদর্শন করে সাম্প্রদায়িক তুষ্টিকরণের মাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়া ও মানুষকে বেদের নামে ভ্রান্ত করা ।
২। বিধর্মীদের এটা বলার সুযোগ করে দেওয়া যে অন্য শাখাতেও নানা মন্ত্র ছিলো । সেগুলো যেহেতু নেই তারমানে বেদ হারিয়ে গিয়েছে বা সনাতনীদের বেদ বিকৃত ।

আসুন, আমরা জানি - পড়ি , নিজে সচেতন হই এবং অন্যদেরও সচেতন করি ।

ও৩ম্

© বাংলাদেশ অগ্নিবীর