কোনো তত্ত্ব বিভিন্ন দৃষ্টিকোণের মাধ্যমে অর্থদর্শনের বিবিধ শৈলী পরমাত্মা প্রদত্ত বেদার্থ দর্শনকারী পরম্পরার ঋষি-মুনি-মহর্ষিগণ দ্বারা স্বীকৃত । সৃষ্টির শুরু থেকেই বেদ মন্ত্রের অর্থ বিবিধ প্রক্রিয়ায় দর্শানো তথা ব্যাখ্যার প্রণালি বহমান । বৈদিক শব্দ অত্যন্ত ব্যাপক অর্থের নির্দেশ করে তথা মন্ত্রের বিষয়বস্তু বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ অভিব্যক্তি দর্শিয়ে থাকে । উদাহরণার্থ, ইন্দ্র বিরাট্ ব্রহ্মাণ্ডে পরমেশ্বর, শরীরে জীবাত্মা, প্রাণ অথবা মন, প্রকৃতিতে সূর্য, বায়ু অথবা বিদ্যুৎ, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাজা অথবা সেনাপতি, যজ্ঞে যজমান অথবা যজ্ঞাগ্নি । [1] এরূপভাবে বৈদিক অন্য দেবতার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । বেদ স্বয়ং বর্ণনা করেছেন মনুষ্যের শরীর ব্রহ্মাণ্ডেরই ক্ষুদ্ররূপ, ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত দেবতা এই মনুষ্য দেহতেই অবস্থিত - “ সর্বা হ্যস্মিন্ দেবতা গাবো গোষ্ঠ ইব শ্রিতাঃ ” । [2]
অতঃ বেদমন্ত্র যেমনভাবে বাহ্য জগৎ পক্ষেও ঘটে থাকে, তদ্রূপ শরীরপরক পক্ষেও ঘটিত হয় ।
বেদার্থের আধিভৌতিক প্রক্রিয়ার অভিপ্রায় হলো বেদমন্ত্রের প্রাণী পরক বা ভূত অথবা সমাজশাস্ত্রোপযোগী এবং রাষ্ট্রপরক ব্যাখ্যা দর্শানো । বেদের প্রকট হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের নিমিত্তে, মানবজাতি এক সামাজিক প্রাণী । অতঃ মানবজাতির সাথে সম্বন্ধিত পরিবার, শিক্ষাসংস্থান, সমাজ, রাষ্ট্র আদির অভ্যুদয়ের বিবিধ উপায়ের বর্ণনও বেদ-এ বর্ণিত স্বাভাবিক । বস্তুতঃ বেদেই শিক্ষা, বিবাহ, পারিবারিক সাংমনস্য, রাজপ্রজাধর্ম, শত্রুবিজয়, কৃষি, বাণিজ্য, পশুপালন আদির বিস্তৃত বর্ণন তথা উপদেশ-আদেশ বিদ্যমান, যা বিবিধ ভাষ্যকার যত্র-তত্র দর্শিয়েছেন । বেদমন্ত্রে এই বিষয়সমূহের এহেন ব্যাখ্যা করা বেদার্থের অধিভূত বা আধিভৌতিক প্রক্রিয়ার অন্তর্গত । এই আধিভৌতিক প্রক্রিয়া অনুসারে বৈদিক ইন্দ্র, অগ্নি আদি দেবকে রাজা, সেনাপতি, বৈদ্য, গৃহপতি, আচার্য আদি-রূপে ব্যাখ্যাত করা যায় ।
যদ্যপি নিরুক্ত শাস্ত্রে উক্ত প্রক্রিয়ার নামতঃ উল্লেখ অনুপলব্ধ, তথাপি বিবিধ প্রকরণে এহেন ব্যাখ্যা দর্শানো হয়েছে যে, এই অধিভূত প্রক্রিয়ায় সেই ব্যাখ্যা সমূহ পরিগণিত হয় । নিরুক্তের দায়ভাগ-প্রকরণে (৩.১.২-৬) এ প্রক্রিয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়।
যথা-
“ শাসদ্ বহ্নির্দুহিতুর্নপ্ত্যং গাদ্ বিদ্বাঁ ঋতস্য দীধির্তি সপর্য়ন্ ।
পিতা যত্র দুহিতুঃ সেকমৃঞ্জন্ সং শগ্ম্যেন মনসা দধন্বে ॥ ”
[ ঋগ্বেদ. ৩।৩১।১ ]
এই মন্ত্রের পূর্বার্দ্ধে নিরুক্তকার 'পুত্রের সমান পুত্রীও দায়ভাগের অধিকারিণী হয়ে থাকে', এই পক্ষকে প্রমাণস্বরূপ উদ্ধৃত করেছেন, তথা নিম্ন ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন--
“ প্রশাস্তি বোঢা সন্তানকর্মণে দুহিতুঃ পুত্রভাবম্... নপ্তারম্ উপাগমদ্ দৌহিত্রং পৌত্রমিতি । বিদ্বান্ প্রজননয়জ্ঞস্য রেতসো বা অঙ্গাদঙ্গাৎ সম্ভূতস্য হৃদয়াদধিজাতস্য মাতরি প্রত্যৃতস্য বিধানং পূজয়ন্ । অবিশেষণ মিথুনা পুত্রা দায়াদা ইতি । ”
অর্থাৎ বিবাহিত পুরুষ সন্তানকর্মের জন্য পুত্রীকে পুত্র-বৎ ঘোষিত করে এবং এরূপভাবে স্বীয় দৌহিত্রকে পৌত্রের ন্যায় গ্রহণ করে । যুক্তি এই দেওয়া হয় যে, পুত্র হোক অথবা পুত্রী, প্রজননযজ্ঞ উভয়ের প্রতিই সমান । পরন্তু বিপক্ষীর এই মত যে, মন্ত্রের উত্তরার্দ্ধ লক্ষ্য করলে স্পষ্ট যে, উক্ত বিধান অভ্রাতৃকা কন্যার সম্বন্ধে, অর্থাৎ যে কন্যা ভ্রাতাবিহীন সেই কন্যাকে পুত্রবৎ গ্রহণ করার শাস্ত্রীয় বিধান রয়েছে ।
প্রস্তুত মন্ত্রের দেবতা ইন্দ্র । অতঃ বহ্নি শব্দ ইন্দ্রের জন্য প্রযুক্ত, এই শৈলীতে উক্ত মন্ত্রের অধিদৈবত অর্থও দর্শানো যায় । পরন্তু উক্ত স্থলের দায়ভাগ-বিচারের মন্ত্রটির অর্থ নিরুক্তকার অধিভূত প্রক্রিয়া অনুসারেই দর্শিয়েছেন ।
শতপথ ব্রাহ্মণ শাস্ত্রে উদ্দালক আরুণির একটি প্রশ্নের উত্তর মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য পঞ্চ দৃষ্টিতে (অধিদৈবত, অধিলোক, অধিদেব, অধিযজ্ঞ, অধিভূত) দিয়েছেন, যার মধ্যে অধিভূত প্রক্রিয়াও একটি দৃষ্টি । উক্ত স্থলে এতটুকুই বর্ণনা বিদ্যমান -
“ য়ঃ সর্বেষু ভূতেষু তিষ্ঠন্, সর্বেভ্যোঽন্তরো, য়ং সর্বাণি ভূতানি ন বিদুর্যস্য সর্বাণি ভূতানি শরীরং, য়ঃ সর্বাণি ভূতান্যন্তরো য়ময়তি স ত আত্মাঽন্তর্য়াম্যমৃত ইত্যু এবাধিভূতম্ । ”
[ শতপথ ব্রাহ্মণ. ১৪।৬।৭।২০ ]
উক্ত বর্ণন দ্বারা স্পষ্ট যে, কোনো তত্ত্বকে অন্য দৃষ্টির সাথে অধিভূত দৃষ্টিতেও ব্যাখ্যা করার পরম্পরা শতপথ ব্রাহ্মণের সময়েও বিদ্যমান ছিলো । 'ভূতানি' পদ দ্বারা এ স্থলে প্রাণিবর্গই অভিপ্রেত হয়েছে, যদ্যপি ভূত শব্দের অর্থ উৎপন্ন সমস্ত জড়-চেতন পদার্থও নির্দেশ করা হয়ে থাকে । যদি এ স্থলে 'ভূতানি' পদ দ্বারা সমস্ত জড়-চেতন পদার্থ গ্রহণ করা হতো, তবে অগ্নি, বায়ু, আদিত্য আদি দেব, সমস্ত লোক, বেদ আদির পৃথক্ চর্চা অনাবশ্যক ছিলো, কেননা উৎপন্ন জড়-চেতন পদার্থসমূহে এই প্রকরণগুলোও গণনা করা হতো । অতএব শাস্ত্রের বিবিধ স্থলে এহেন প্রাণিপরক প্রক্রিয়াকে অধিভূত বা আধিভৌতিক প্রক্রিয়া নামে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে । অধিভূত প্রক্রিয়ায় তৎসদৃশ অর্থই পরিগণিত হবে যা, কোনো দেহধারী প্রাণী, বিশেষতঃ মনুষ্যবর্গ তথা পরিবার, সংঘ, সমাজ, রাষ্ট্র আদিতে সম্বন্ধ রাখে ।
তৈত্তিরীয় আরণ্যক এবং তৈত্তিরীয় উপনিষদে “অথাতঃ সংহিতায়া উপনিষদং ব্যাখ্যাস্যামঃ ” এই প্রকরণে অধিলোক, অধিজ্যৌতিষ, অধিবিদ্য, অধিপ্রজ্ঞ তথা অধ্যাত্ম পঞ্চবিধ ব্যাখ্যা দর্শানো হয়েছে, এখানে অধিবিদ্য তথা অধিপ্রজ্ঞ ব্যাখ্যা অধিভূত ব্যাখ্যার অন্তর্গত -
“ আচার্যঃ পূর্বরূপম্ অন্তেবাসী উত্তররূপম্, বিদ্যা সন্ধিঃ, প্রবচনং সন্ধানম্, ইত্যধিবিদ্যম্।
অথাধিপ্রজম্ – মাতা পূর্বরূপং, পিতা উত্তররূপং প্রজা সন্ধিঃ প্রজননং সন্ধানম্॥ [তৈত্তিরীয় আ. ৭।৩, তৈ.উ.শিক্ষাবল্লী.৩]
বেদ মন্ত্রের অধিভূত ব্যাখ্যায় বৈদিক দেবগণের স্বরূপ সামাজিকভাবে কীরূপ, তা স্বয়ং বেদেই ব্যাখ্যাত হয়েছে । উদাহরণার্থ বেদ-এ 'অগ্নি'-কে রাজা, নৃপতি, বিশ্পতি, শত্রুসেনামোহক, পুরোহিত, গৃহপতি, পিতা, ভিষক্ আদি শব্দে নির্দেশিত হয়েছে ।
যথা—
(ক) বৈশ্বানর ত্বমস্মাসু ধেহি বসূনি রাজন্ত্স্পৃহয়ায়্যাণি । [ ঋগ্বেদ. ৬।৭।৩ ]
(খ) ত্বং ভগো নৃপতে বস্ব ঈশিষে ।
[ ঋগ্বেদ. ২।১৬ ]
(গ) বিশ্বাসাং ত্বা বিশাং পতিং হবামহে ।
[ ঋগ্বেদ. ১।১২৬।৮ ]
(ঘ) স সেনাং মোহয়তু পরেষাম্ ।
[ ঋগ্বেদ. ৩।১।১ ]
(ঙ) অগ্নিমীল়ে পুরোহিতম্ ।
[ ঋগ্বেদ. ১।১।১ ]
(চ) বিশ্বাসাং গৃহপতির্বিশামসি ত্বমগ্নে মানুষীণাম্ ।
[ ঋগ্বেদ. ৬.৪৮.৮ ]
(ছ) অগ্নিং মন্যে পিতরম্ ।
[ ঋগ্বেদ. ১০.৭.৩ ]
(জ) ত্বং ভিষগ্ ভেষজস্যাসি কর্তা ।
[ অথর্ববেদ. ৫।২৯।১ ]
● ইন্দ্র মনুষ্যের সম্রাট্, রাজাধিরাজ, স্বরাজ্যের আরাধক, আর্যকে ভূমি প্রদাতা, জ্যেষ্ঠ শত্রুহন্তা আদি শব্দে বেদ মন্ত্রে ব্যাখ্যাত হয়েছে –
(ক) প্র সম্রাজং চর্ষণীনাম্ ।
[ ঋগ্বেদ. ৮।১৬।১ ]
(খ) ইন্দ্রো জয়াতি ন পরাজয়াতা অধিরাজো রাজসু রাজয়াতৈ ।
[ অথর্ববেদ. ৬।৯৮।১ ]
(গ) অর্চন্ননু স্বরাজ্যম্ ।
[ ঋগ্বেদ. ১।৮০।১-১৬ ]
(ঘ) অহং ভূমিমদদামার্য়ায় ।
[ ঋগ্বেদ. ৪।২৬।২ ]
(ঙ) বিশ্বাসাং তরুতা পৃতনানাং জ্যেষ্ঠো য়ো বৃত্রহা গৃণে ।
[ ঋগ্বেদ. ৮।৭০।১ ]
● রুদ্র ভিষগ্রাজ, স্থিরধন্বা এবং তীব্রগামী ধনুকধারী সেনাপতি আদি শব্দে বেদ মন্ত্রে ব্যাখ্যাত হয়েছে –
(ক) ভিষক্তমং ত্বা ভিষজাং শৃণোমি ।
[ ঋগ্বেদ. ২।৩৩।৪ ]
(খ) ইমা রুদ্রায় স্থিরধন্বনে গিরঃ ক্ষিপ্রেষবে দেবায় স্বধাব্নে ।
[ ঋগ্বেদ. ৭.৪৬.১ ]
● মরুৎ-কে মহান বীর সৈনিক বলা হয়েছে, তার নিকট রিপু-দলকে পরাস্ত করার জন্য সুদৃঢ় হাতিয়ার রয়েছে এবং যার সৈন্য-বল প্রশংসার যোগ্য –
“ স্থিরা বঃ সন্ত্বায়ুধা পরাণুদে বীল়ূ উত প্রতিষ্কভে ।
য়ুষ্মাকমস্তু তবিষী পনীয়সী মা মর্ত্যস্য মায়িনঃ ॥ ”
[ ঋগ্বেদ. ১।৩৯।২ ]
এরূপভাবে বৈদিক দেবের অধিভূত ব্যাখ্যা বেদ-এ বর্ণন হয়েছে । অবৈদিক সায়ণ প্রভৃতি পৌরাণিক ভাষ্যকারগণের ভাষ্যে উক্ত প্রক্রিয়ার কোনোরূপ ছিটেফোঁটাও অনুপস্থিত । তথাপি কোনো কোনো ভাষ্যে কিঞ্চিৎ নির্দেশ উপস্থিত, যথা – অথর্ববেদ. ৪।৮।৩ নং " মহৎ তদ্ বৃষ্ণো অসুরস্য নামা বিশ্বরূপো অমৃতানি তস্থৌ " মন্ত্রের 'বৃষ্ণো' পদের স্থলে 'বিষ্ণোঃ ' পাঠ মেনে অবৈদিক সায়ণ বিষ্ণু শব্দের অর্থ "রাজকীয় তেজ দ্বারা দশ দিশাতে ব্যাপ্ত রাজা" ব্যাখ্যা করেছে । [3]
ব্রাহ্মণ বাঙ্ময়েও যজ্ঞবিধি ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বিবিধ প্রকরণে বৈদিক দেবগণের মানবীয়রূপ নির্দেশ করা হয়েছে।
যথা– ব্রাহ্মণ অগ্নি, পুরুষ অগ্নি, যজমান অগ্নি, যজমান ইন্দ্র, ক্ষত্রিয় ইন্দ্র, সেনা ইন্দ্রের প্রিয় জায়া, পুরোহিত আদিত্য, ব্রাহ্মণ আদিত্য, বিদ্বান্গণ গ্রাবা, ক্ষত্রিয় রাজা যম, প্রজাগণ পিতর আদি ।
● অগ্নির্বৈ ব্রাহ্মণঃ [ কাঠক. ৬।৬ ]
● পুরুষ এবাগ্নির্বৈশ্বানরঃ
[ জৈমিনীয় ব্রা. ১।৪৫ ]
● পুরুষো বাগ্নিঃ
[ শতপথ ব্রা. ১৪।৯।১।১৫ ]
● য়জমানোঽগ্নিঃ
[ শতপথ ব্রা. ৬।৩।২১ ]
● ইন্দ্রো বৈ য়জমানঃ
[ শতপথ ব্রা. ২।১।২।১১ ]
● ক্ষত্রং বা ইন্দ্রঃ
[ শতপথ ব্রা. ৫।৩।৫।৩৩ ]
● সেনা বা ইন্দ্রস্য প্রিয়া জায়া
[ ঐতরেয় ব্রা. ৩।২২ ]
● আদিত্যো বাব পুরোহিতঃ
[ ঐতরেয় ব্রা. ৮।২৭ ]
● এতে খলু বাদিত্যা য়দ্ ব্রাহ্মণাঃ
[ তৈত্তিরীয় ব্রা. ১।৯।৮ ]
● বিদ্বাংসো হি গ্রাবাণঃ
[ শতপথ ব্রা. ৩।৯।৩।৪ ]
● ক্ষত্রং বৈ য়মো বিশঃ পিতরঃ
[ শতপথ ব্রা. ৭।১।১।৪ ]
এরূপ ভাবে মন্ত্রের অতি প্রাচীন বিনিয়োগ পদ্ধতি দ্বারাও বৈদিক দেবগণের মানবীয় রূপ নির্ণয় করা যায় ।
যথা –
ঋগ্বেদীয় এবং অথর্ববেদীয় সোম-সূর্যা-সূক্তের মন্ত্রসমূহ বিবাহ-বিধিতে বিনিয়োগ হওয়ায় সোম বর তথা সূর্যা বধূ, অতএব নিম্নোক্ত মন্ত্র দ্বারা বধূকে রথে আহরণ করানো হয় । [4]
“ সুকিংশুকং বহতুং বিশ্বরূপং হিরণ্যবর্ণং সুবৃতং সুচক্রম্ ।
আরোহ সূর্যে অমৃতস্য লোকং স্যোনং পতিভ্যো বহতুং কৃণু ত্বম্ ॥
রুক্মপ্রস্তরণং বহ্যং বিশ্বা রূপাণি বিভ্রতম্ । আরোহৎ সূর্যা সাবিত্রী বৃহতে সৌভগায় কম্॥”
[ অথর্ববেদ. ১৪।১।৬১ ; ১৪।২।৩০ ]
অথর্ববেদ. ২।১৩।২ “ বৃহস্পতিঃ প্রায়চ্ছদ্ বাস এতৎ সোমায় রাজ্ঞে পরিধাতবা উ ” এই মন্ত্রের মাধ্যমে পুরোহিত দ্বারা রাজাকে বস্ত্র [5] ধারণ করানোর বর্ণনাকে নির্দেশ করছে যে, এই মন্ত্রের অধিভূত ব্যাখ্যায় পুরোহিত বৃহস্পতি তথা রাজা সোম অর্থে প্রয়োগ হবে ।
অধিভূত প্রক্রিয়াকে পল্লবিত, পুষ্পিত এবং ফলিত ভাবে দর্শিয়েছেন বর্তমান যুগের মহা মনীষী ভাষ্যকার, সর্ব শাস্ত্রের অদ্বিতীয় বিদ্বান্ পরমহংস পরিব্রাজকাচার্য শ্রীমৎ মহর্ষি স্বামী দয়ানন্দ জী সরস্বতী । এই আধিভৌতিক প্রক্রিয়া বেদ ভাষ্যে তিনি ব্যাবহারিক প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করেছেন ।
– 'অলমতিবিস্তরেণ বিদ্বদ্বর্য়েষু'
● সন্দর্ভ
1. য় ইন্দতি পরমৈশ্বর্যবান্ ভবতি স ইন্দ্রঃ পরমেশ্বরঃ, ইন্দ্রস্য ইন্দ্রিয়স্বামিনো জীবস্য, দয়ানন্দ ভাষ্য, যজু. ১৯।৩ ; ইন্দ্রঃ পরমেশ্বরঃ, সায়ণ. ঋগ্ ভাষ্য. ১০।৯২।৮, ১০।৯৮।৪ ।
প্রাণ এব ইন্দ্রঃ, শতপথ. ১২।৯।১।১৪ । মন এবেন্দ্রঃ, শতপথ. ১০।৪।১।৬ । অথ য়ঃ স ইন্দ্রোঽসৌ স আদিত্যঃ, শতপথ. ৮।৫।৩।২ । অয়ং বা ইন্দ্রো য়োঽয়ং বাতঃ পবতে, শতপথ. ১৪।২।২।৬ । য়ো বৈ বায়ুঃ স ইন্দ্রো য় ইন্দ্রঃ স বায়ুঃ, শতপথ. ৪।১।৩।১৯ । ইন্দ্রাৎ বিদ্যুতঃ, দয়ানন্দ ভাষ্য. ঋগ্. ৫।৩০।৫ । ত্বমিন্দ্রাধিরাজঃ অথর্ববেদ. ৬।৯৮।২ । ইন্দ্র শত্রূণাং বিদারয়িতঃ ( সেনাপতে ) দয়ানন্দ ভাষ্য. ঋগ্. ১।৮৪।৪ । ইন্দ্রো য়জমানঃ, কাঠক. ৭।১০, ৩৭।৮ । এষ এবেন্দ্রঃ য়দাহবনীয়ঃ শতপথ. ২।৩।২।২
2. অথর্ববেদ. ১১।৮।২৯-৩২ ; তুলনা- ঐতরেয় উপ. ২।৪ ; ছান্দোগ্য উপ. ৮।১।৩
3. বিষ্ণোঃ অভিষেকজনিতরাজতেজসা দশদিগন্তান্ ব্যাপ্নুবতঃ । সায়ণ
4. সুকিংশুকং রুক্মপ্রস্তরণমিতি য়ানমারোহয়তি । [ কৌশিক সূত্র. ৭৭।১ ]
5. পরিধত্তেতি দ্বাভ্যাং রাজ্ঞো বস্ত্রমভিমন্ত্র্য প্রয়চ্ছেদ্ । [ অ. প. ৪।১।১ ]
0 মন্তব্য(গুলি)