https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদার্থ কর্তাদের নিজস্ব সম্প্রদায় এবং ঐতিহাসিক পদ খণ্ডন

Wednesday, December 6, 2023

 


যাস্কাচার্য নিরুক্তের নির্মাণ স্বররচিত নিঘণ্টুর ব্যাখ্যার জন্য করেছেন ।  নিরুক্ত ( ৭/২২) " বৈশ্বানর " বিষয়ে নিজ আচার্যের মত প্রদর্শিত করতে গিয়ে যাস্ক বলেছেন - তৎকৌ বৈশ্বানর : মধ্যম ইত্যাচার্যা "। কিন্তু স্বয়ং যাস্কের মত এর সম্পূর্ণ বিপরীত তথা বৈশ্বানর পৃথিবী স্থানীয় অগ্নির নাম। নিঘন্টু ( ৫/১) তে পৃথিবী স্থানীয় দেবতা পঠিত হয়।
নিরুক্ত (৭/১৩) এতে কিছু আচার্যের সম্বন্ধে লিখেছেন দেবতার নামের মধ্যে তার বিশেষণকেও সংগ্রহ করে দেওয়া হয়। কিন্তু যাস্ক সেই বিশেষণ বাচক নামকে সংগ্রহ করেন নি। তিনি উল্লেখ করেন — 
 
" যত্তু সংবিজ্ঞানভুতং স্যাত প্রধানস্তুতি:, তৎসমাম্নে "
যেসব এরূপ সংজ্ঞাবাচক নাম আছে যার প্রধান রূপে স্তুতি করা হয়েছে, আমি সেইসবের সংগ্রহ করে থাকি। 
 
নিঘণ্টুতে সংগ্রহ এমন হয়েছে এরূপ মূখ্য নামের, কোন বিশেষণ বাচক নামের পরিগণন উক্ত সংগ্রহে করা হয় নি।
এসব প্রমাণ দ্বারা স্পষ্ট হয় যে নিঘন্টুও সেই প্রকার যাস্কের রচনা যেরূপ নিরুক্ত। কিন্তু উক্ত গ্রন্থ যাস্ক আচার্য পরম্পরা মাধ্যমে পেয়েছেন। এর অন্তিম সংস্করণ যাস্ক দ্বারা করা হয়েছে। এই সম্পাদনের পাত্র নিঘণ্টু এবং নিরুক্ত উভয়।
 
কিন্তু নিঘন্টু পঠিত শব্দের নির্বচন করতে গিয়ে আচার্য প্রকরণবসত অন্য সব বিষয়েও আলোকপাত করেছেন। বেদ পাঠ করতে সে সময়ে কতটুকু রূচি তথা উৎসাহ ছিল তা এই কথাতেই স্পষ্ট হয় যে সেই সময় বেদের অর্থ করার জন্য অনেক সম্প্রদায় ছিলেন। যদিও তাদের মধ্যে অনেক বিষয়ের মধ্যে মতভেদও ছিল। 
 
যাস্ক সেই সব মতভেদ কে স্থান অনুযায়ী নির্দেশ করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ : নিরুক্তের মতানুসারে সব " নাম " আখ্যান দ্বারা নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ব্যাকরণ দ্বারা প্রমাণিত নয়। ( নিরুক্ত ১/১১ ) এর সম্মতিতে কিছু " নাম " এমনো আছে যার রচনা আখ্যানের মধ্যে পড়ে না তথা স্বতন্ত্র। এই মতভেদের অতিরিক্ত নিরুক্ত থেকে ব্যাকরণের অসহমতি এক মন্ত্রের অর্থের মধ্যেও দেখানো হয়েছে। " চত্বারি বাকপরিমিতা পদানি " ( ঋ০ ১/১৬৪/৪৫) তে " চত্বারি পদানি " অর্থ যেখানে নিরুক্তে ঋক যজু সাম এবং ব্যবহারিক ভাষা করা হয়। সেখানে ব্যাকরণে নাম, আখ্যাত, উপসর্গ এবং নিপাত করে থাকেন । 
 
" আর্ষ " মত অনুযায়ী এই পদ ওঙ্কার তিন মহাব্যাহতি ( ও ৩ ম্) বোঝায় । যাজ্ঞিক পক্ষের অনুসারে এই পদ মন্ত্র, কল্প, ব্রাহ্মণ তথা ব্যবহারিক ভাষা হয়। আত্ম - প্রবাদ সম্প্রদায়ের মতে পশু, বাদ্য, মৃগ, আত্মা ( মনুষ্যের) বচন বুঝায়। আরো কিছু আচার্যের মতানুসারে — 
যেসবের সম্পর্ক কোন বিশেষ সম্প্রদায় বিশেষের সাথে দেখা যায় না তা - সাপ, পাখি, এবং ছোট ছোট পশুদের ব্যবহারিক উচ্চারিত শব্দ। ( নিরুক্ত ৯/১৩) এর অতিরিক্ত একটি মত ব্রাহ্মণ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে যা যাস্কের বহু পূর্ব থেকে প্রচলিত ছিল। এখানে তার উল্লেখ করার প্রয়োজনিয়তা তথা আবশ্যকতা নেই বলে মনে করছি।
 
আরো একটি মন্ত্র অর্থ সম্বন্ধে নিরুক্তের পরিব্রাজক গণ মতবিরোধ দেখিয়েছেন। " বহুপ্রজা নির্ঋতিমাবিবেশ " ( ঋ০ ১/১৬৪/৩২) এর অভিপ্রায় পরিব্রাজকগণের মতানুসারে অধিক সন্তান জন্মানো দুঃখের আরম্ভক হয়ে থাকে এবং নিরুক্তের মতে " নিঋতি " এর অর্থ পৃথিবী হয় যার মধ্যে " বহুপ্রজা " বাদল " আবিবেশ " প্রবিষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ এই বাক্য দ্বারা উনার বিচার অনুসারে বর্ষকর্ম = বৃষ্টি = বিবক্ষিত হয়। ( নিরুক্ত: ২/১) 
 
বাণীদের মধ্যে ভেদের বিষয়ে অনেক পক্ষের উল্লেখ করতে গিয়ে উপরে যাজ্ঞিক সম্প্রদায়ের মত উদ্ধৃত করা হয়েছে। উক্ত পক্ষের আরো কিছু বিচার নিরুক্তে প্রদর্শিত করা হয়েছে। যথা —
 
" একদা প্রনিধা " ( ঋ০ ৮/৭৭/৪) তে ' সরাংশি ত্রিংশত ' এর অভিপ্রায় যাজ্ঞিকের মতানুসারে ' ত্রিংকশত উকথ - পাত্রাণি '। যেখানে নিরুক্তকার এখানে ' ত্রিংশত অপরপক্ষস্য অহোরাত্রা ; ত্রিংশত পূর্বপক্ষস্য " মানেন। ( নিরুক্ত : ৫/১০) 
 
যে মন্ত্রের দেবতা দেখানো হয় নি, যাজ্ঞিক সেই মন্ত্রের দেবতা যজ্ঞ অথবা যজ্ঞাঙ্গ এর দেবতা মানেন, তথা তার অভাবে প্রজাপতিকে। নিরুক্তের মতে সেই মন্ত্র " নারাশংস " হয়। ( নিরুক্ত : ৭/৪) 
 
নারাশংসের অর্থ হচ্ছে — 
 
" যেন নরা: প্রশস্যন্তে স নারাশংসো মন্ত্র " ( নিরুক্ত : ৯/৯) 
যে মন্ত্র দ্বারা পুরুষের স্তুতি করা হয় সেই মন্ত্রকে নারাশংস বলা হয়। 
 
(৩) " অনুপতি " এবং " রাকা " যাজ্ঞিকের মতে পৌর্ণমাসিয়াঁ হয় এবং নিরুক্তের মতে দেবপত্নি ( নিরুক্ত : ১১ / ২৯)
(৪) যদিও " সিনীবালী " এবং " কুহু " যাজ্ঞিকের মতে অমাবস্যা এবং নিরুক্তের পক্ষানুযায়ী দেবপত্নি ( নিরুক্ত : ১১/৩১)
(৫) যাজ্ঞিকের দৃষ্টিতে " গৌ ধর্মধুক " হয়। যেখানে নিরুক্তের অনুসারে মাধ্যমিক বাক্ অর্থাৎ বিদ্যুৎ স্ফোটন মেনে থাকেন। ( নিরুক্ত : ১১/৩৮)
(৬) এরূপ অবস্থা " ধেনু " শব্দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ( নিরুক্ত : ১১/৪০)
যাজ্ঞিকদের মধ্যে একটি অতিরিক্ত বিচার 
(৭) পূর্ব যাজ্ঞিকদের মধ্যে প্রদর্শিত করা হয়েছে। যাস্কের বিচারে বৈশ্বানর পার্থিব অগ্নির একপ্রকার নাম। উক্ত বিচার ধারায় যাস্ক তাঁর নিজ আচার্যদের মতে অসহমত। পূর্বযাজ্ঞিক পক্ষান্তর বৈশ্বানর অর্থে আদিত্য। ( নিরুক্ত : ৭/২২) এবং যাস্কের আচার্যের মতে মধ্যম দেবতা তথা বায়ু বা ইন্দ্র। ( নিরুক্ত : ৭/২২ দ্রষ্টব্য) 
 
তিনি উপরের নির্দেশ অনুযায়ী ৭ ( সাতটি ) সম্প্রদায়ের উল্লেখ করেছেন। যথা - (১) নিরুক্ত ল(২) ব্যাকরণ (৩) আর্ষ (৪) যাজ্ঞিক (৫) আত্ম - প্রবাদ (৬) পরিব্রাজক (৭) পূর্ব যাজ্ঞিক। 
 
এর মধ্যে কিছু মাত্র সম্প্রদায় নিরুক্তের সাথে কম-বেশ বিরোধীতা করে। নিরুক্তে সেই সব সম্প্রদায়ের যেখানে যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে সেই সবগুলোকে মাত্র সংকেত করে দেওয়া হয়েছে। যদিও নিরুক্তে উক্ত ৭ সম্প্রদায়ের অপেক্ষা অধিক বিচার (৮) আখ্যান সময় তথা (৯) ঐতিহাসিক দ্বারা করা মন্ত্রের অর্থের উপর বিচার করা হয়েছে। উক্ত দুই পক্ষকে মিলিয়ে মন্ত্রার্থকর্তাদের সর্বমোট ৯ ( নয়) সম্প্রদায় তথা পক্ষ হয়। 
 
" আখ্যান সময় " নিয়ে পৃথক আলোচনা করার আবশ্যকতা আছে। এবিষয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত জানা যাবে। এবং ঐতিহাসিক পক্ষ নিরুক্ত পক্ষের সাথে প্রায় সব নিরুক্তের মধ্যে গভির আলোচনার বস্তু। এই সম্বন্ধে সব স্থলে পরবর্তীতে বিশেষ ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।
 
নিরুক্ত এর সাথে মিল আছে এমন এক পক্ষ ( ১০) নিদান। এই পক্ষের উল্লেখ নিরুক্তে দুইবার পাওয়া যায় যথা — নিরুক্ত (৬/১০), যেখানে ' স্যাল ' শব্দের ব্যুৎপত্তি নিদান মতানুসারে " আসত্র সংযোগেন "। দ্বিতীয় পাওয়া যায় নিরুক্ত (৭/১২) । যেখানে সাম শব্দের নির্বচন " ঋচাং সমং মেনে নিদানা "। এবিষয়ে আরো বলেন। যদি এই পক্ষ নিরুক্ত পক্ষের ভিন্ন তথা বিপরীত হয় ত বেদার্থ কর্তার সংখ্যা নয় এর জায়গায় দশ হয়ে যাবে ।
 
যাস্ক তার নিজ পক্ষ তথা বিপক্ষ অনেক আচার্যের ব্যক্তিগত মত উদ্ধৃত করেছেন । এর মধ্যে কিছু কিছু আচার্য নিরুক্তে প্রতিত হয় । যথা - আগ্রায়ণ, ঔপমন্যব, ঔর্ণবাভ, ক্রৌষ্টুকি, গালব, চর্মশিরা, তৈঢীকি, শতবলাক্ষ, শাকপুণি, শাকপুণি পুত্র - স্থৌলাষ্ঠীবি। কিছু এরকম শব্দ আছে যা শাকপুণি অগ্নি অর্থ গ্রহণ করেছেন। কাত্থক্য তা যজ্ঞ তথা যজ্ঞের উপকরণ অর্থে গ্রহণ করেছেন। যাস্ক আরো দুটি শব্দের অর্থ দাব্যাপৃথিবী তথা অহোরাত্র করেছেন । পড়ন্ত কাত্থক্য তা শস্য এবং সমা ( অন্ন এবং বর্ষ) মানেন।
এতে এটা অনেকটাই উপলব্ধ করা যায় যে সম্ভবত কাত্থক্য যাজ্ঞিক ধারার লোক ছিলেন। এছাড়াও ঔদুম্বরায়ণ, গার্গ্য, বার্ষ্যায়ণি তথা পদকার শাকল্যের মন্ত্রকেও যথাস্থানে উদ্ধৃত করা হয়েছে। শাকটায়ন, গার্গ্য তথা শাকল্য ব্যাকরণ সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। 
 
এই সব সম্প্রদায় সাধারণত বেদ মন্ত্রের শৈলীর বিভিন্ন অর্থ প্রতিস্থাপন করেন। নিরুক্তে আরেকটি পক্ষ কৌৎসের বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি সাধারণত বেদ মন্ত্রের কোন অর্থ স্বীকার করেন না (নিরুক্ত : ১/২৩)। তার মতকে খণ্ডন করতে গিয়ে যাস্ক বলেন — 
 
" স্থাণুরয়ং ভারহার কিলাভুদধীত্য বেদং ন বিজ্ঞানাতি যোऽর্থম "( নিরুক্ত : ১/১৮)
এই হল স্থাণু, এই হল ভারহার। যারা বেদ পড়েও কিন্তু তার অর্থ সম্পর্কে সঠিক ভাবে অবগত নন। 
 
এতে প্রতীত হয় যে কৌৎস বেদের বিরোধ নয় বরং বেদের অর্থ করার বিরোধী । তিনি বেদ মন্ত্র পাঠ মাত্রই পুণ্য এরূপ ধারণা রাখতেন। তার মতে " বেদ পড়েও বেদ মন্ত্রের অর্থ না জানা " - যাস্কের উক্ত শব্দের অর্থের ভিন্ন অর্থ স্থাপন করা কোন যুক্তির মধ্যে পড়ে না। 
কৌৎস তার মতের উপক্রম এবলেই উপস্থাপন করেছেন যে যদি নিরুক্তের উদ্দেশ্য বেদের অর্থের সঠিক জ্ঞান প্রদান করা, তাহলে নিরুক্তের নির্মাণ অনর্থক ( নিরুক্ত : ১/১৩)। এতে এটাও প্রমাণ হয় যে কৌৎস বেদ মন্ত্রের অর্থ স্থাপন করার বিপক্ষে ছিলেন, পুরো বেদের বিরোধী কদাপি ছিলেন না ।