https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

গৌতমবুদ্ধের ধর্ম কী ছিলো? বুদ্ধের মতে সনাতনধর্ম কতটা প্রাচীন?

Friday, February 2, 2024

 


🔸 গৌতমবুদ্ধ কোন ধর্মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ও বুদ্ধের মতে সনাতনধর্ম কতটা প্রাচীন?
- হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা মুসলিম আমরা সকলেই খুবই ভালোভাবে জানি গৌতমবুদ্ধ হিন্দু ক্ষত্রিয় বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এবং সনাতনধর্ম ভারত তথা সারাবিশ্বেরই প্রাচীনতম ধর্মবিশ্বাস। পরবর্তীকালে ভারতে সনাতন ধর্মদর্শন হতে পৃথক হয়ে জৈন, চার্বাক, বৌদ্ধ, অজীবিক, অজ্ঞান প্রভৃতি দর্শনের উদ্ভব হয়েছে। সনাতনধর্মের মহান পরমতসহিষ্ণুতার কারণেই এইসমস্ত মতবাদ ভারতের বুকে বিকশিত হতে পেরেছে এবং সারা ভারতজুড়েই একসময় বেশ শক্তিশালী প্রভাবও বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে কালের বিবর্তনে আজ এগুলোর কিছু ভারত থেকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত আবার কিছু অত্যন্ত সংখ্যালঘু হয়ে বিদ্যমান আছে। কিন্তু প্রাচীনতম দর্শন হয়েও সনাতনধর্ম আজও ভারত তথা পৃথিবীর বুকে স্বমহিমায় দাড়িয়ে আছে।
তবে আজকাল কিছু অহেতুক হিন্দুবিদ্বেষ পোষণকারী মিথ্যাচারীদের বিভিন্ন হাস্যকর অপপ্রচার বেশ লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তারা প্রচার করছে, সনাতনধর্ম কেবল ৪০০-৫০০ বছরের পুরনো ধর্ম, বুদ্ধ কোনো হিন্দু পরিবারে জন্মায়নি, বুদ্ধের সময়কালে সনাতনধর্মের কোনো অস্তিত্ব ছিল না ইত্যাদি। এইসব মিথ্যাচারীরা মূলত বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বসবাসরত বড়ুয়া থেরবাদী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কিছু অংশ যারা ভারতের আম্বেদকর অনুগামী নবযানী বৌদ্ধদের দ্বারা ব্রেনওয়াশড। 
 
এতটা নির্বোধদের এইসব শিশুশুলভ কথাবার্তার খন্ডন করতে যাওয়া আমরা নিজেদেরই অপমান বলে বোধ করি। তথাপি এই লেখার উদ্দেশ্য সনাতনধর্ম বহির্ভূত নাস্তিক বৌদ্ধমতেও সনাতনধর্মের সুপ্রাচীন পরম্পরার প্রমাণ কতটা সবিস্তারে বর্ণিত তা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা। তাই এই লেখার সমস্ত প্রমাণই আমরা বৌদ্ধশাস্ত্র হতে উপস্থাপন করব ও যথাসম্ভব সেগুলোর ছবি কমেন্টে যুক্ত করার চেষ্টা করব।
প্রথমেই গৌতমবুদ্ধ কোন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেইবিষয়ে আসা যাক। গৌতমবুদ্ধ হিন্দু ক্ষত্রিয়বর্ণে জন্মগ্রহণ করেননি তাহলে তিনি কোন ধর্মে জন্মেছেন? এই প্রশ্ন করা হলে তারা শ্রমণধর্ম বা কখনো কখনো শ্রামণ্যধর্ম নাম দিয়ে নতুন একটা ধর্মের অবতারণা করে থাকে। অর্থাৎ তাদের মস্তিষ্কে নবযানীরা হিন্দুবিদ্বেষ এতটাই ভরে দিয়েছে যে তাদের মান্যতা হলো বুদ্ধ মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, কথিত শ্রমণ ইত্যাদি যেই ধর্মেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন কিন্তু হিন্দু হয়ে জন্মেছেন এইটা তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবে না। তাদের এই নতুন শ্রমণধর্ম নামক প্রোপাগান্ডাও এই লেখায় খন্ডন করা হবে কিন্তু আগে আমরা বুদ্ধ কোন ধর্মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তা আলোচনা করি। দীর্ঘনিকায়, মহাবর্গ, মহাপদানসূত্র, ৪-৬ এ গৌতমবুদ্ধ তাঁর ও পূর্বকালীন কিছু বুদ্ধের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলছেন, 
 
“এখন হতে একনবতি কল্পে ভগবান বিপশ্যি, একত্রিংশ কল্পে ভগবান বিশ্বভূ ও ভগবান শিখী অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন, বর্তমান কল্পে ভগবান ককুসন্ধ, ভগবান কোণাগমন, ভগবান কশ্যপ ও আমি অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ রূপে জগতে আবির্ভূত হয়েছি। বিপশ্যি, বিশ্বভূ ও শিখী তাঁরা জাতিতে ক্ষত্রিয় ছিলেন ও ক্ষত্রিয় হয়ে উৎপন্ন হয়েছিলেন। কাকুসন্ধ, কোণাগমন ও কশ্যপ তাঁরা জাতিতে ব্রাহ্মণ ছিলেন ও ব্রাহ্মণকুলে উৎপন্ন হয়েছিলেন। এক্ষণে আমি জাতিতে ক্ষত্রিয় হয়ে ক্ষত্রিয়কুলে উৎপন্ন হয়েছি। বিপশ্যি, বিশ্বভূ ও শিখী তাঁরা কৌন্ডিণ্য গোত্রীয়। কাকুসন্ধ, কোণাগমন ও কশ্যপ তাঁরা কশ্যপ গোত্রীয়। হে ভিক্ষুগণ! এক্ষণে আমি গৌতম গোত্রীয়। “
 

গৌতমবুদ্ধ কোন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেইবিষয়ে আশা করি আর কোনো প্রমাণ উপস্থাপনের দরকার নেই। গৌতমবুদ্ধ এই সূত্রসহ আরো অসংখ্য স্থানেই তাঁর ক্ষত্রিয়বর্ণে জন্মগ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন। উপরন্তু এই সূত্রে গৌতমবুদ্ধ ও তাঁর পূর্বকালীন বুদ্ধদের গোত্র পর্যন্ত উল্লেখ করে গিয়েছেন। বর্ণব্যবস্থা ও গোত্রব্যবস্থা উভয়ই সনাতনধর্মের অবিচ্ছেদ্য ও অনন্য অংশ। বুদ্ধগণের এই উল্লেখিত গোত্রগুলো এখনো হিন্দুদের মধ্যে বিদ্যমান। শুধু তাই নয় জাতিবাদী সমাজব্যবস্থায় ব্রাহ্মণই শ্রেষ্ঠ বর্ণ বলে মান্য হলেও গৌতমবুদ্ধ ক্ষত্রিয়বর্ণে জন্মগ্রহণের অহংকারে সর্বত্র ক্ষত্রিয়কেই সর্বোৎকৃষ্ট বর্ণ বলে প্রমাণ করতে চেয়েছেন। যেমন দীর্ঘনিকায়ের অম্বট্‌ঠসূত্রে ব্রাহ্মণবর্ণকে চারবর্ণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করা অম্বট নামক ব্রাহ্মণকে গৌতমবুদ্ধ প্রথমে তার বংশপরিচয় নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে তাকে নিরুত্তর করেন ও সবশেষে বুদ্ধ বলেন, 
 
“ নারী কিংবা পুরুষ উভয় দিক হতেই ক্ষত্রিয় শ্রেষ্ঠ, ব্রাহ্মণ হীন।….যখন ক্ষত্রিয় চরম অধঃপতন প্রাপ্ত হয় তখনও ক্ষত্রিয় শ্রেষ্ঠ, ব্রাহ্মণ হীন। “ 
 

এছাড়া জাতকনিদানে গৌতমবুদ্ধ তার জন্ম বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলছেন যে বুদ্ধগণ কদাপি বৈশ্য বা শূদ্র কুলে জন্মগ্রহণ করেন না, বিশ্ববিশ্রুত ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় কুলেই জন্মগ্রহণ করে থাকেন। আর বর্তমান জগতে ক্ষত্রিয়কুলই শ্রেষ্ঠ। তাই তিনি ক্ষত্রিয়কুলেই জন্মগ্রহণ করেছেন। ত্রিপিটক মতে গৌতমবুদ্ধের পূর্বে আরো ২৭ জন বুদ্ধ ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছিলেন। প্রথমেই উল্লেখ করা সূত্রে আপনারা গৌতমবুদ্ধসহ মোট সাতজন বুদ্ধের কথা পড়েছেন। খুদ্দকনিকায়ের বুদ্ধবংশে গৌতমবুদ্ধ এই ব্যতিত আরো ২১ জন বুদ্ধের কথা উল্লেখ করেছেন। বুদ্ধবংশের বর্ণনা থেকেও দেখা যায় এই বাকি ২১ জন বুদ্ধের প্রত্যেকেও ক্ষত্রিয় কিংবা ব্রাহ্মণকুলেই জন্মগ্রহণ করেছে। অর্থাৎ ত্রিপিটকবর্ণিত ২৮ বুদ্ধের কেউই হিন্দু পরিবারের বাইরে জন্মগ্রহণই করেনি। এছাড়া শুদ্ধোদনের আমন্ত্রণে ব্রাহ্মণগণ কর্তৃক শিশু সিদ্ধার্থের নামকরণ ও ভবিষ্যদ্বাণী করার কাহিনীত নির্লজ্জ ফেসবুক ভান্তেগুলো ভালোভাবেই অবগত আছেন। জাতকনিদানের অবিদূর নিদানে বর্ণিত হচ্ছে গৌতমবুদ্ধ ভূমিষ্ঠ হওয়ার পঞ্চমদিনে শুদ্ধোদন ১০৮ জন ত্রিবেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে তার নামকরণের জন্য আমন্ত্রণ করেন। তাঁদের মধ্যে বামদ্বিজ, ধ্বজ, মন্ত্রী, কোন্ডণ্য, লক্ষণ, সুষাম, সুদান্ত, ভোজ এই আটজন ছয় বেদাঙ্গে পারদর্শী প্রসিদ্ধ জ্যোতির্বিদ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে সাতজন ব্রাহ্মণ শিশু গৌতমকে দেখে বলেন যে এইপ্রকার লক্ষণসম্পন্ন কুমার যদি সংসারে অবস্থান করে তাহলে চক্রবর্তী রাজা হবেন আর যদি গৃহত্যাগ করে প্রব্যজ্যা গ্রহণ করেন তাহলে বুদ্ধ হবেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ কোন্ডণ্য শিশু গৌতমের সর্বোত্তম লক্ষণগুলো অবলোকন করে বলেন যে এই কুমার সংসার বন্ধনে আবদ্ধ থাকার কোনো হেতুই তিনি দেখছেন না, ইনি নিশ্চয়ই আসক্তিশূন্য বুদ্ধ হবেন। কাল্পনিক শ্রমণধর্মের অনুসারী হলে শুদ্ধোদন কি তার পুত্রের নামকরণ অনুষ্ঠানে বেদপাঠী ব্রাহ্মণদের আমন্ত্রণ জানাতেন? অতএব এতগুলো প্রমাণ উপস্থাপনের পর অত্যন্ত বেহায়া না হলে ফেসবুক ভান্তেগুলো আর গৌতমবুদ্ধের ধর্ম নিয়ে মিথ্যাচার করবে না। 
 
ত্রিপিটকে কেবল “ব্রাহ্মণ” নামেই কিংবা নির্দিষ্ট কোনো ব্রাহ্মণের নামে অসংখ্য সূত্র, বর্গ, সংযুক্ত ইত্যাদি অংশ বিদ্যমান। সারা ত্রিপিটকেই গৌতমবুদ্ধের সাথে অসংখ্য অসংখ্য ব্রাহ্মণের ধর্মালোচনার ঘটনা বর্ণিত আছে। যেমন উদাহারণ হিসেবে দীর্ঘনিকায়ে সোণদন্ড সূত্রে বর্ণিত হচ্ছে গৌতমবুদ্ধ চম্পা নামক নগরে আগমন করলে সেই নগরের অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণ সোণদন্ডের সাথে তাঁর ধর্মালোচনা হয় এবং সোণদন্ড পরবর্তীতে গৌতমবুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। সোণদন্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে সেই সূত্রে বলা হচ্ছে,
 
 “ মহানুভব সোণদন্ড অধ্যায়ক, মন্ত্রধারক, ত্রিবেদ, নির্ঘণ্ট, বেদনির্দিষ্ট অনুষ্ঠান পদ্ধতিসমূহ, অক্ষর, শব্দতত্ত্ব এবং ইতিহাসরূপ পঞ্চম বেদে পারদর্শী, ব্যাকরণবিদ, পদকর্তা, তর্কবিদ্যা নিপুণ।“ 
 

এখানে বেদ, বেদাঙ্গ, ব্যাকরণশাস্ত্র, পঞ্চমবেদ ইতিহাস অর্থাৎ মহাভারত, দর্শন ইত্যাদি হিন্দুশাস্ত্রের কথা স্পষ্টতই উল্লেখ আছে। এছাড়া সংযুক্তনিকায়, ব্রাহ্মণ সংযুক্তের সুন্দরিক সুত্তে বুদ্ধ বলছেন,
 
” যিঁনি সত্যের দ্বারা দান্ত, দমসমন্বিত, বেদান্তের শেষ সীমায় উপনীত, ব্রহ্মচর্যের পরম ব্রতী তাঁকেই যজ্ঞসম্পাদনকারীর আহ্বান করা বিধেয়।”
 

 
এখানে বেদান্ত বা উপনিষদের স্পষ্ট উল্লেখ আছে। এভাবে ত্রিপিটকের অগণিত স্থানেই বেদসহ অন্যান্য অনেক হিন্দুশাস্ত্রের কথা উল্লেখ আছে। এছাড়া গৌতমবুদ্ধকে যে বেদবিরোধী বলা হয় তাও মিথ্যা। হ্যাঁ, বুদ্ধ বেদকে ঋষিদের দ্বারা রচিত বলে মেনেছেন ও বুদ্ধের দর্শন নিঃসন্দেহে অবৈদিক দর্শন কিন্তু তিনি সরাসরি বেদের অবমাননা করেছেন এরকম কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। বরং এরূপ অনেক প্রমাণ পাওয়া যায় যেখানে বুদ্ধ বেদকে পথনির্দেশক বলে মানছেন যেমন - সুত্তনিপাত ৩২৪, ৩৩১, ৩৩২, ১০৬৪, ১০৬৫ ইত্যাদি। 
 
ত্রিপিটকে সংস্কৃত ভাষারও স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। যেমন বিনয়পিটক, চূলবর্গ, ক্ষুদ্র বিষয় অধ্যায়, ২৮৫ তে বর্ণিত হচ্ছে বুদ্ধের ভিক্ষুসংঘে যমেল ও কেকুটা নামক দুইজন মিষ্টভাষী ও মিষ্টি স্বরবিশিষ্ট ব্রাহ্মণজাতির ভিক্ষু ছিল। তারা লক্ষ করছিল যে বুদ্ধের সংঘে থাকা বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন ভাষাভাষী ভিক্ষুগণ নিজ নিজ ভাষায় বুদ্ধের বাণীগুলোকে দূষিত করছিল। তাই সেই দুইজন ব্রাহ্মণজাতীয় ভিক্ষু চাইল যে তারা ছন্দে আরোপিত সংস্কৃত ভাষায় বুদ্ধের বাণীগুলো পরিবর্তিত করবে। কিন্তু তখন বুদ্ধ কঠোরভাবে সংস্কৃত ভাষায় তার বাণীগুলোকে পরিবর্তন করতে নিষেধ করেন ও একে দুক্কট অপরাধ বলে অভিহিত করেন। তখন যদি বুদ্ধ এর বিরোধ না করতেন তাহলে আজকে ত্রিপিটকও সংস্কৃত ভাষাতেই বিদ্যমান হত। 
 
 

 
 
ত্রিপিটকের অসংখ্য স্থানে যজ্ঞানুষ্ঠানের কথাও স্পষ্টভাবেই বর্ণিত আছে। যেমন দীর্ঘনিকায়, শিলাখন্ডবর্গের কূটদন্ত সূত্রে বর্ণিত হচ্ছে, ব্রাহ্মণ কূটদন্ত এরূপ শুনেছেন যে শ্রমণ গৌতম যজ্ঞের ত্রিবিধ সম্পদ, ষোড়শ উপকরণ বিষয়ে জানেন। কূটদন্ত মহাযজ্ঞ করবেন কিন্তু যজ্ঞের সেইসমস্ত বিষয় তিনি জানেন না। অতঃপর তা অবগত হওয়ার জন্য কূটদন্ত বুদ্ধের কাছে গেলে বুদ্ধ তাকে অনেক পূর্বকালের মহাবিজিত নামক এক সম্রাটের করা মহাযজ্ঞের বৃত্তান্ত বলার মধ্য দিয়ে সেই বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করেন এবং সবশেষে গৌতমবুদ্ধ বলেন যে সেইসময় তিনি সেই মহাযজ্ঞের যাজক পুরোহিত ব্রাহ্মণ ছিলেন। অতএব সনাতন বৈদিক যাগযজ্ঞ কতটা প্রাচীন তা এখান থেকে নিশ্চয়ই বৌদ্ধদের কাছে স্পষ্ট। এছাড়া মধ্যমনিকায়ে বুদ্ধ বলছেন, 
 
“ অগ্নিহোত্র যজ্ঞে মুখ্য, সাবিত্রী ছন্দে প্রধান…., নক্ষত্রের মুখ্য চন্দ্র (শৈলসূত্র, ৪০০)।” 
 
এইটা পড়ে সকলেই বুঝতে পারছেন গৌতমবুদ্ধের বাণীতে অগ্নিহোত্র যজ্ঞ ও পবিত্র গায়ত্রী(সাবিত্রী) মন্ত্রের কথাত উঠে এসেছেই সাথে গীতার শ্লোকও এখানে স্পষ্টতই উদ্ধৃত হয়েছে। গীতা যে ত্রিপিটক রচনার পূর্ব হতেই বিখ্যাত ছিল তার প্রমাণ এইটি। এখন যদি কোনো অতি বুদ্ধিমান ফেসবুক ভান্তে দাবি করে যে গীতা থেকে ত্রিপিটক নয় বরং ত্রিপিটক থেকে গীতা এগুলো নিয়েছে তাহলে সেই ভান্তেকে আমার আহ্বান নক্ষত্রের মুখ্য চন্দ্র এই কথার তাৎপর্য ও সাবিত্রী ছন্দ বা মন্ত্র কী এই প্রশ্নের উত্তর বৌদ্ধ শাস্ত্র হতে উপস্থাপন করুন। দ্বিতীয়ত বৌদ্ধশাস্ত্রে হিন্দুদের অগ্নিহোত্র - যাগযজ্ঞ কিংবা পবিত্রতম গায়ত্রী মন্ত্রের কথা আসবে কেন? এছাড়া সুত্তনিপাত ৪৬০ এ আরো স্পষ্টভাবে তিনপদ চব্বিশ অক্ষর গায়ত্রী বা সাবিত্রী মন্ত্র বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। সাবিত্রী তিন পদ চব্বিশ অক্ষর এর মানেও ফেসবুক ভান্তেদের বুঝিয়ে দিতে অনুরোধ করছি। 
 
উপরন্তু বুদ্ধের সংলাপে বৈদিক ঋষি পরম্পরার প্রাচীনত্বও উঠে এসেছে। যেমন দীর্ঘনিকায়, শিলাখন্ডবর্গের অম্বটসূত্রে বুদ্ধ তাঁর শাক্যবংশের পূর্বপুরুষ রাজা ওক্কাকের দিশি নামক এক দাসীর পুত্র কহ্নায়ণের কথা বর্ণনা করছেন যিনি দাসীপুত্র হয়েও মহর্ষি হয়েছিলেন ও দক্ষিণ জনপদে গিয়ে ব্রহ্মমন্ত্রের অধ্যয়ন করেছিলেন। এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে বর্ণব্যবস্থা প্রাচীনভারতে গুণ-কর্মনুসারেই ছিল, যেমন ছান্দোগ্য উপনিষদে আমরা সত্যকাম জাবালের কথা পায় যিনি একজন পিতৃপরিয়হীন ও পতিতার সন্তান হয়েও ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেছিলেন ও ধীরে ধীরেই এই যোগ্যতাভিত্তিক বর্ণব্যবস্থা বেদবিরুদ্ধ জন্মভিত্তিক ব্যবস্থাতে রূপ নিয়েছে। এছাড়া মধ্যম নিকায়, ব্রাহ্মণবর্গ, বাসিট্ঠ সূত্রে দুইজন ব্রাহ্মণের কথা বর্ণিত হচ্ছে যারা নিজেদের মধ্যে তর্ক করছে এই নিয়ে যে কোনো ব্যক্তি কি ব্রাহ্মণ জন্মনুসারে হয় নাকি কর্মনুসারে? অর্থাৎ বুদ্ধকালীন ভারতেও ব্রাহ্মণদের কিছু অংশে গুণ-কর্মভিত্তিক বর্ণব্যবস্থার প্রতি মান্যতা ছিল। সে যাই হোক বলছিলাম বুদ্ধের সংলাপে প্রাচীন ঋষিপরম্পরার কথা । মধ্যমনিকায়, ব্রাহ্মণবর্গের চন্কী সূত্রে কাপতিক নামক ত্রিবেদজ্ঞ তরুণ ব্রাহ্মণ বুদ্ধের উদ্দেশ্যে বলছেন,
 
 “ ব্রাহ্মণদের প্রাচীন এই মন্ত্রপদ(বেদ) শ্রুতি পরম্পরায় আগত, এর প্রতি ব্রাহ্মণগণ পূর্ণ নিষ্ঠাবান। ব্রাহ্মণদের মতে এইটিই সত্য, অন্যসব মিথ্যা। এই বিষয়ে প্রভু গৌতম কী বলেন? “ 
 
অতঃপর গৌতমবুদ্ধ কাপতিকের উক্ত মতের খণ্ডন করতে গিয়ে একপর্যায়ে বলছেন,
 
 “ অষ্টক, বামক, বামদেব, বিশ্বামিত্র, যমদগ্নি, অঙ্গিরা, ভরদ্বাজ, বশিষ্ঠ, কশ্যপ, ভৃগু প্রভৃতি ব্রাহ্মণদের যেই সকল পূর্বজ ঋষিগণ যাঁরা মন্ত্রের কর্তা, মন্ত্রের প্রবক্তা, এই প্রাচীন মন্ত্রপদ যাঁদের দ্বারা গীত, আধুনিক ব্রাহ্মণরা তারই অনুগান করে, তদনুভাষণ করে, ভাষণের পর পুনর্ভাষণ করে, অধ্যয়নের পর অধ্যয়ন করে। “
 

 বৈদিক দর্শনে মন্ত্রপদ তথা বেদকে অপৌরষেয় (কোনো মনুষ্যকৃত নয়) বলে মানা হয়েছে(গীতা৩|১৫)। কিন্তু বুদ্ধ বেদকে প্রাচীন ঋষিকৃত বলে মেনেছেন। সেইটা তার নিজস্ব মত। এইবিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে এই সূত্রে স্পষ্টতই লক্ষ করা যাচ্ছে যে বুদ্ধের সেই সময়কালে অর্থাৎ ২৫০০ বছর পূর্বের ওই কথোপকথনেও বেদকে প্রাচীন বলে সম্বোধন করা হচ্ছে। উপরন্তু গৌতমবুদ্ধ বিভিন্ন বৈদিক ঋষিদের নাম উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে তাঁদের তৎকালীন ব্রাহ্মণদেরও পূর্বজ ও প্রাচীন বলছেন। অতএব বুদ্ধের বাণীতে বৈদিক তথা ঋষি পরম্পরার প্রাচীনত্ব স্বীকৃত। প্রায় একইরকম বর্ণনা দীর্ঘনিকায়ের অম্বটসূত্রেও বিদ্যমান। সেই সূত্রে ব্রাহ্মণ অম্বটকে বুদ্ধ আরো বলছেন যে ঋষিদের সেই মন্ত্র কেবল অধ্যয়ন করলেই (তাঁদের জীবনাচরণ অনুসরণ না করে) কেউ ঋষি বা ঋষিমার্গের অনুগামী মাত্রও হবে না। সেই প্রাচীন ঋষিগণ কীরূপ ছিলেন তা গৌতমবুদ্ধ বর্ণনা করছেন সুত্তনিপাত চূলবগ্গ, ব্রাহ্মণ ধার্মিক সূত্রে। সেখানেও পূর্বকালীন ঋষিদেরকে প্রাচীন ব্রাহ্মণ বলে সম্বোধন করা হচ্ছে। 
 
এইবার সরাসরি বুদ্ধের মতে সনাতনধর্ম ঠিক কতটা প্রাচীন তা দেখা যাক। ত্রিপিটকে গৌতমবুদ্ধ বলছেন চার সহস্র লক্ষ মহাকল্পেরও অনেক পূর্বে তিনি সুমেধ নামক ব্রাহ্মণ হয়ে জন্মেছিলেন। তিনি ঋক্, সাম, যজু, অথর্ব চার বেদের বিদ্বান ছিলেন (বুদ্ধবংশ, দীপঙ্কর বুদ্ধবংশ, ১-৫)। 
 

 

 
এখানে কল্প শব্দটাও বেশিরভাগ বৌদ্ধের কাছেই অজানা হওয়ার কথা। কেননা এইসমস্ত শব্দ হিন্দুদর্শন হতেই নেওয়া ও বৌদ্ধমতে এগুলোর কোনো ব্যাখ্যা না থাকাই স্বাভাবিক। সনাতনধর্মে জগতকে একটি চক্রের মতো দেখা হয় যা বারবার সৃষ্টি ও ধ্বংস হচ্ছে। প্রতিটা জগত সৃষ্টি ও ধ্বংসের মধ্যবর্তী সময়কে এক কল্প বলে। এবং বুদ্ধ ত্রিপিটকে সনাতন পরম্পরাকে চার সহস্র লক্ষ মহাকল্পেরও অধিক প্রাচীন বলছেন। অতএব সনাতনধর্ম যে সত্যিই সনাতন তথা চিরন্তন, চিরস্থায়ী, নিত্য ধর্ম তা কোনো বৌদ্ধেরই অস্বীকার করার আর কোনো সুযোগ রইল না। 
 
এবার শ্রমণ বা শ্রমণধর্ম-শ্রামণ্যধর্ম নামক তাদের নতুন প্রোপাগান্ডা খন্ডন করা যাক। প্রথমত শ্রমণ শব্দটাইত কোনো পালি শব্দ নয়, এইটা সংস্কৃত শব্দ। পালিতে এইটা “সমণ” হয়ে যাবে। এবং শ্রমণ শব্দের প্রাচীনতম উল্লেখও পাওয়া যায় বৈদিক শাস্ত্রেই (ঋগ্বেদ১০|৯৪|১১, বৃহদারণ্যক ৪|৩|২২, তৈত্তিরীয় আরণ্যক২|৭ ইত্যাদি)। সংস্কৃত এই শ্রমণ শব্দের একদম আক্ষরিক অর্থ যিনি শ্রম করেন। যেমন উক্ত তৈত্তিরীয় আরণ্যকে শ্রমণ শব্দটি ঋষিদের বিশেষণরূপে এসেছে। পরবর্তীতে কঠোর শ্রম বা সাধনায় জীবন অতিবাহিত কারী সন্ন্যাসীদের জন্য শ্রমণ শব্দটি অধিক ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়। আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যে কঠোর জীবনযাপন বৈদিক ভারতে জৈন প্রভৃতি দর্শনের উৎপত্তির অনেক পূর্ব হতেই বিদ্যমান ছিল। পরবর্তীতে উৎপন্ন জৈন-অজীবিক দর্শনেও অত্যন্ত কঠোর সাধনা তথা শ্রমণ জীবনধারাতে উৎসাহিত করা হয়েছে। আরো পরবর্তীতে উৎপন্ন বৌদ্ধমতে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বা ভিক্ষুদের ততটা কঠোর জীবনধারা না থাকলেও তারাও নিজেদের ভিক্ষুদের জন্য শ্রমণ শব্দটির ব্যবহার করে। এবং আধুনিককালে পাশ্চাত্য গবেষকগণ বৈদিক ধর্ম হতে পৃথক কিন্তু শ্রমণ জীবনধারাতে অনুপ্রাণিত করা জৈন, অজীবিক ও বৌদ্ধ এই প্রাচীন ভারতীয় দর্শনগুলোকে একসাথে Sramana Traditions বা শ্রমণ পরম্পরা বলে অভিহিত করেছেন। তাই শ্রমণ পরম্পরা কোনো ঐতিহাসিক একক Religion নয় বরং যেভাবে Abrahamic Religions বলতে ইহুদি, ইসলাম, খ্রিষ্টিয়ানিটি এই তিন রিলিজিয়নকে বোঝানো হয় তেমনি Sramana traditions বলতে বৌদ্ধ, জৈন, অজীবিক এই তিন ভারতীয় দর্শনকে বোঝানো হয়েছে। বৌদ্ধদের অপপ্রচারগুলো এতটাই হাস্যকর যে তারা আধুনিককালে ব্যবহৃত এই “শ্রমণ পরম্পরা” term টিকে ঐতিহাসিক একক ধর্ম বলে দাবি করার চেষ্টা করছে। অথচ ইতিহাস থেকে দেখা যায় বৌদ্ধ, জৈন, অজীবিক এই তিনটি দর্শন একে অন্যের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী ও খন্ডনকারী ছিল। তারা একজোট হয়ে কখনো একক কোনো রিলিজিয়ন তৈরি করেছিল এরূপ কোনো প্রমাণ কোনোভাবেই পাওয়া যায় না। উপরন্তু ত্রিপিটকের আলোচনাগুলো লক্ষ করলে দেখা যায় যে তাতে শ্রমণ শব্দটির উল্লেখ যতবার পাওয়া যায় তার সাথে প্রায় সর্বত্রই ব্রাহ্মণ শব্দটি যুক্ত থাকে। যেমন,
 
”তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাবান, দাতা, উদার, শ্রমণ-ব্রাহ্মণদের প্রতি অবারিতদ্বার(দীর্ঘ, কূটদন্ত সূত্র, অথ্থপরিখারা ৯)”, “ শীলবান ধার্মিক শ্রমণ ও ব্রাহ্মণগণ যা অপরিপক্ব তার পরিপক্বতা সাধনে প্রয়াসী হন না, তাঁরা জ্ঞানী। তাঁদের আয়ু যতই বৃদ্ধি পায় ততই তা অধিকতর পুণ্যপ্রসূ হয়, বহুজনের হিত ও সুখসাধক হয়। (দীর্ঘনিকায়, পাযাসি সুত্তন্ত, ১৩) “, “ অতীতে যে শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণ যা প্রিয়ধর্মী, মধুরধর্মী তাকে অনিত্য, দুঃখময়, অনাত্ম বলে দেখেছেন তাঁরা তৃষ্ণা পরিত্যাগ করেছেন আর যেই শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণ একে নিত্য, সুখময়, আত্মারূপে দেখেছেন তাঁরা তৃষ্ণাকে বর্ধিত করেছেন। (সুংযুক্ত নিকায়, সম্মস সূত্র) “, “ কোনো স্বামী যদি প্রাণিহত্যা করে,……শ্রমণ-ব্রাহ্মণগণের তিরস্কারকারী হয় এবং তাঁর স্ত্রীও যদি অনুরূপ হয় তাহলে তাকে অসুরের সাথে অসুরীর মিলন বলে।(অঙ্গুত্তর ৪,২য় পঞ্চাশক,পুণ্যফল বর্গ পঠমসংবাসসুত্তং), “যেই ধনাঢ্য ব্যক্তি শ্রদ্ধাবান ও অনুদ্বিগ্নচিত্ত হয়ে দান করে, শ্রমণ-ব্রাহ্মণ কিংবা অন্যান্য যাচকদিগকে দাড়িয়ে অভিবাদন করে…… সেই ব্যক্তি জ্যোতিজ্যোতিপরায়ণ হয়ে ত্রিদিবগত হয়।(সুংযুক্ত, ৩য় বর্গ, পুগ্গল সুত্ত)”, “অপর সকল পৃথক শ্রমণ - ব্রাহ্মণগণকেও জিজ্ঞেস করে দেখ এই সংসারে সত্য, সংযম, ত্যাগ, ক্ষান্তি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর কোনো ধর্ম আছে কিনা।(সুত্তনিপাত ১৯১)” 
 
 
শ্রমণ-ব্রাহ্মণ নিয়ে ত্রিপিটকে এরূপ অগণিত বর্ণনা আছে যা লক্ষ করলে কিছু বিষয় খুবই পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রথমত বুদ্ধকালীন ভারতে বা বুদ্ধের দৃষ্টিতে শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ উভয়ই সমানভাবে সম্মানীয় ছিল ও তারা যে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী দুইটি আলাদা রিলিজিয়ন প্রভৃতি বৌদ্ধদের নানা মিথ্যাচার সহজেই খন্ডন হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত বর্ণনাগুলো হতে প্রতীত হয় যে তৎকালীন সময়ে সকল প্রকার সন্ন্যাসী - তপস্বীদের জন্যই শ্রমণ শব্দটির ব্যবহার হত। তৃতীয়ত বুদ্ধকালীন ভারতে শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ উভয়ই বিভিন্ন আধ্যাত্মিক মার্গের অনুগামী ও প্রচারক, কেবল তাদের জীবনধারা ভিন্ন, সহজ ভাষায় একজন কঠোর জীবনধারা ও আরেকজন স্বাভাবিক ধর্মবিহিত জীবনধারা অবলম্বন করছে। উপরন্তু বুদ্ধ শ্রমণের সংজ্ঞা দিতে গিয়েও পর্যন্ত একইসাথে ব্রাহ্মণের সংজ্ঞা দিচ্ছেন। যেমন দীর্ঘনিকায়, মহাসীহনাদ ৩৯৭ এ বলছেন,
 
 “ শীল, চিত্ত, প্রজ্ঞা সম্পদের যদি অভাব হয়ে তাহলে সে শ্রামণ্য হতেত দূরেই, ব্রাহ্মণ্য হতেও দূরে। হে কশ্যপ! যখন শত্রুতাহীন, দ্বেষহীন, মৈত্রীচিত্ত ভাবনা করেন……তখনই তিনি শ্রমণ বা ব্রাহ্মণ বলে অভিহিত হন। “ অথচ ত্রিপিটকের অগণিত স্থানে ব্রাহ্মণ শব্দটির আলাদা করে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিদ্যমান আছে। যেমন খুদ্দকনিকায়ের উদানে হুংহুঙ্ক সূত্রে বুদ্ধ বলছেন, “ ব্রাহ্মণ যিনি নিষ্পাপ, মান-ক্রোধহীন, বিরাগী, সংযতচিত্ত, নির্বাণগত, বিদ্বেষ-মোহ ত্যাগী….. ধর্মত তাকে ব্রাহ্মণ বলা যায়। “ 
 
ব্রাহ্মণের এরূপ সংজ্ঞা হিন্দুশাস্ত্রেও অসংখ্য স্থানে বিদ্যমান ও এই ব্রাহ্মণ বলতে নিঃসন্দেহে বর্তমানকালের নামের শেষে চক্রবর্তী - ব্যানার্জী লাগানো বামুনদের বোঝাচ্ছেনা। এখানে স্পষ্ট যে হিন্দু বা বৌদ্ধ উভয় মতে গুণ ও কর্মনুসারেই ব্রাহ্মণত্ব তথা বর্ণব্যবস্থা বর্ণিত হয়েছে। এভাবে ব্রাহ্মণের স্বরূপ ত্রিপিটকের অগণিত স্থান যেমন, (উদান, ব্রাহ্মণসূত্র),(সুংযুক্ত, ব্রাহ্মণ সংযুক্ত, অগ্নিকসুত্ত),(মধ্যম, ব্রাহ্মণবর্গ, বাসিট্ঠ সূত্র), (ধম্মপদ, ব্রাহ্মণবগ্গ, ৯,১৪,২৫,৪০) ইত্যাদিতে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে। অতএব ব্রাহ্মণ শব্দটি ত্রিপিটকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা স্পষ্ট তথা সমগ্র ত্রিপিটকে ব্রাহ্মণ শব্দের উল্লেখ যতবার আছে শ্রমণ(সমণ) শব্দটির উল্লেখ সেই তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। তাই মিথ্যাচারী বৌদ্ধদের শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ শব্দ নিয়ে সকলপ্রকার মিথ্যাচার যেকেউ সামান্য পরিমাণ ত্রিপিটক পড়লেও সহজেই বুঝতে পারবে। 
 
সারা ত্রিপিটক জুড়েই এরূপ সনাতনধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ের এতবার উল্লেখ পাওয়া যায় যে মিথ্যাচারী বৌদ্ধরা সেগুলোকে যদি ত্রিপিটক থেকে বাদ দেওয়াও শুরু করে তাহলে ত্রিপিটক নামক কোনোকিছুর অস্তিত্বই থাকবে না পৃথিবীতে। এই লেখায় তার অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশই তুলে ধরা হয়েছে, এই একই টপিকে আরো অসংখ্য পর্ব লেখা সম্ভব।