https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

জাতিবাদী ও বর্ণবাদী বুদ্ধ

Friday, February 2, 2024


ভারতের মার্ক্সবাদী আম্বেদকরের অনুগামী নবযানী বৌদ্ধদের পাল্লায় পড়ে বাংলাদেশের বৌদ্ধরা তাদের আসল শত্রুদেরকে ভুলে কোনো কারণ ছাড়াই সনাতন বৈদিক ধর্ম ও হিন্দুদের নিয়ে নানারকম মিথ্যাচার করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যা সকলেই লক্ষ্য করছেন।
বৌদ্ধদেরকে হিন্দুরা নিজেদের থেকে কখনোই আলাদা মনে করেনি। পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্মের অনুসারী হয়েও উদার হিন্দুরা অত্যন্ত নবীন এই বৌদ্ধমতকেও একই ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার অংশ বলেই মনে করে। সাধারণ হিন্দুরাত এতটাই সরল ও উদার যে নাস্তিক বুদ্ধকে তারা স্বয়ং ঈশ্বরের অবতার রূপে পর্যন্ত মেনে নিয়েছে। কিন্তু পরিণামে বৌদ্ধরা কী দিয়েছে? সেই সরল হিন্দুদেরকে তারা প্রতিনিয়ত পেছন থেকে ছুরি মেরে গিয়েছে এবং এখনো মারছে। এই নাস্তিক্যবাদী দুর্বল বৌদ্ধমত নিয়ে আমাদের কখনোই কোনো আগ্রহ ছিল না। তবে আজকাল তাদের মাত্রাতিরিক্ত মিথ্যাচার প্রত্যক্ষ করে কয়েকদিন তাদের ধর্মগ্রন্থ সামান্য কিছু অধ্যয়ন করলাম। এবং এই সামান্য অধ্যয়নেই প্রত্যক্ষ করলাম যে থেরবাদী বৌদ্ধদের প্রধাণ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটকে অধিকাংশই বুদ্ধের নানা গালগল্প ও নানা স্ববিরোধী কথায় পরিপূর্ণ। এত খারাপ অবস্থা আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্থগুলোতেও আমি দেখিনি। তার কিছু উদাহারণও আজকে ও পরবর্তীতে আমাদের পেজে দেখতে পাবেন। এবং চিন্তা করলাম যে যাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থেরই এত বেহাল দশা তারা কীভাবে বেদ-গীতার মতো গ্রন্থের উপর ভর করে দাড়ানো হিন্দুদের পেছনে লাগতে আসে! এবং বুঝতে পারলাম এদের নিজেদের ধর্মগ্রন্থ বা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ কোনোটাই অধ্যয়ন নেই। এই বেকারগুলো সারাদিন শুধু ওই নবযানী বৌদ্ধদের ভিডিও মুখস্থ করে আর ফেসবুকে এসে উগলে দেয়। 
 
আপনাদের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি পৃথিবীর সকল হিন্দুর প্রধাণ ধর্মগ্রন্থ যেমন বেদ, মুসলিমদের কোরান, খ্রিষ্টানদের বাইবেল বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে কিন্তু সেভাবে আপনি বলতে পারবেন না। কেননা থেরবাদী বৌদ্ধদের প্রধাণ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক, বজ্রযানী বৌদ্ধদের বৌদ্ধ তন্ত্র, মহাযানী বৌদ্ধদের মহাযান সূত্র, নবযানী বৌদ্ধদের আম্বেদকরের লেখা Buddha and His Dharma ই হলো প্রধাণ ধর্মগ্রন্থ। এভাবে বৌদ্ধদের আরো অসংখ্য সম্প্রদায়ই রয়েছে। চিন্তা করুন কতটা Baseless একটা রিলিজিয়ন যাদের প্রধাণ ধর্মগ্রন্থ পর্যন্ত নির্দিষ্ট নেই তারা সনাতনধর্মকে ধ্বংস করার স্বপ্ন দেখছে। উপরন্তু এই সমস্ত বৌদ্ধদের মধ্যে মহাযানীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ (প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ)। তবে বাংলাদেশের বর্তমান সকল বৌদ্ধরাই হলো থেরবাদী বৌদ্ধ। যদিও বাঙালি বৌদ্ধ বা বড়ুয়ারা পূর্বে মহাযানের অনুসারী ছিল, পরবর্তীতে তারা ১৯ শতকের দিকে থেরাবাদে কনভার্ট হয়। মূলত এই বাঙালি বৌদ্ধ বা বড়ুয়ারাই সনাতনধর্ম নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে বসে নবযানীদের ভিডিও মুখস্থ করে নানারকম অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই আমরা মূলত ওই থেরাবাদী বৌদ্ধদেরই প্রধাণ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক অধ্যয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবং হিন্দুশাস্ত্রসমূহ অধ্যয়নের পর যতটুকু সময় থাকবে আমরা এই ত্রিপিটক অধ্যয়ন করব। ও একে একে আমাদের পেজে এই ত্রিপিটকের আসল স্বরূপ উন্মোচন করে যাব।
 
সে যাই হোক। শুরুতেই অনেক কথা বলে ফেললাম। এখন মূল আলোচনাতে যায়। সনাতনধর্ম জাতিবাদী ধর্ম, ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্ম। বুদ্ধ এসে হিন্দুদের সব জাতপাত ধ্বংস করে দিয়ে গেছে, বুদ্ধ কোনো উঁচু-নীচু জাতি মানত না, বুদ্ধ ছিল সাম্যবাদী ….. ব্লা ব্লা। এগুলো বৌদ্ধ ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নানা মিথ্যাচার। এরকম অগণিত মিথ্যাচার দিয়েই ওই দুর্বল বৌদ্ধমতকে ওরা টিকিয়ে রেখেছে। 
 
প্রথমত বুদ্ধ হিন্দুদের বর্ণবিভাগের বিরোধ করেছেন বা খন্ডন করেছেন এরূপ কোনো প্রমাণ কোথাও মিলে না বা তিনি কোথাও বলেনি যে ব্রাহ্মণ - শূদ্র বলে কিছু হয় না। বরং তিনি অসংখ্য স্থানেই ব্রাহ্মণ, শূদ্র, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের উল্লেখ করছেন এবং এই বর্ণবিভাগকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। হ্যাঁ, কিছু স্থলে প্রমাণ মিলে যে তিনি কর্মানুযায়ীই বর্ণবিভাগ মেনেছেন যেমনটা প্রামাণ্য সকল হিন্দুশাস্ত্রেই মানা হয়েছে। তবে তিনি বর্ণের মধ্যে উঁচু-নীচু ভেদও মেনেছেন, কিন্তু সমাজে ব্রাহ্মণরাই শ্রেষ্ঠ বলে মান্য হলেও তিনি ক্ষত্রিয়দেরই বর্ণের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মেনেছেন হয়ত ক্ষত্রিয়বংশে জন্মগ্রহণের অহংকারে। এর অসংখ্য অসংখ্য প্রমাণ ত্রিপিটকে আছে তবে আজকে শুধু অঙ্গুত্তর নিকায়ের একটি সূত্রে উঠে আসা জাতিবাদী ও বর্ণবাদী বুদ্ধের স্বরূপ সকলের কাছে উন্মোচন করব। 
 
সূত্রপিটক, অঙ্গুত্তর নিকায় ৪, তমোতমসুত্তং এ বুদ্ধ মানবজতিকে চারটি প্রকারে বিভক্ত করেছেন। প্রথম হলো তম তমপরায়ণ অর্থাৎ যারা অন্ধকারে আছে এবং সেই অন্ধকার হতে আরো অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে, তম জ্যোতিঃপরায়ণ অর্থাৎ অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাচ্ছে, জ্যোতি তমপরায়ণ অর্থাৎ আলো থেকে অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে, জ্যোতি জ্যোতিঃপরায়ণ আলো থেকে আলোর দিকে যাচ্ছে। 
 

 
এখন কারা অন্ধকারে আছে এবং আরো অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে? বুদ্ধ বলছেন, যারা নীচু কুল বা জাতিতে জন্মগ্রহণ করেছে। কিন্তু নীচু জাতি কোনগুলো? বুদ্ধ বলছেন, চন্ডালকুল, বেনকুল অর্থাৎ যারা বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে, নিষাদকুল, চর্মকারকুল অর্থাৎ চামার বা মুচি, ঝাড়ুদারকুল, দরিদ্রকুল। মূল পালি সূত্রে “নেসাদকুলে“ শব্দটি আছে বা নিষাদকুলের কথা বলা হচ্ছে, অনুবাদক এখানে ব্যাধ অর্থ নিয়েছেন। কিন্তু আপনারা জানেন যে এইটা নিষাদ শব্দের সামগ্রিক অর্থ নয়। নিষাদ বলতে বিভিন্ন বনচারী জাতি বা যেই আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে তাদেরকেই বোঝানো হয়। এছাড়া মৎস্যজীবী, ব্যাধ এদেরকেও নিষাদ বলা হয়ে থাকে।অর্থাৎ এই জাতিবাদী বুদ্ধ বনে নিবাস করা বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়কেও নীচজাতি বলেছেন। অথছ বাংলাদেশের সরলমনা বেশিরভাগ আদিবাসী সম্প্রদায়ই যেমন চাকমা, মারমা, রাখাইন ইত্যাদি এই জাতিবাদী বুদ্ধের অনুসারী। বিষয়টা খুবই দুঃখের। মিথ্যাচারী ও প্রতারক বৌদ্ধভিক্ষুরা বিভিন্ন পাহাড়ে গিয়ে সরলমনা আদিবাসী গোষ্ঠীদেরকে এই জাতিবাদী ভ্রান্ত বৌদ্ধমতে কনভার্ট করেছে। তাই যেই আদিবাসীরা এই নাস্তিক জাতিবাদী বুদ্ধকে এতদিন অনুসরণ করে এসেছেন তাদের উচিত এখনই এই ভ্রান্ত নাস্তিক্যবাদকে ত্যাগ করা। 
 

 
 

আরো লক্ষণীয় বিষয় বুদ্ধের উল্লেখিত সেই নীচু জাতিদের তালিকায় সর্বশেষ “ দলিদে “ শব্দটি আছে অর্থাৎ এখানে দলিতদের কথা বলছে, অনুবাদক যদিও এর অর্থ দরিদ্র করেছেন। অতএব আম্বেদকরের মতো ওই কথিত দলিত নেতা যারা এই জাতিবাদের রাজনীতি করে তাদের জন্যও এইটা জ্ঞাতব্য যে সনাতনধর্মে কোথাও দলিতদের বা কাউকেই নীচুজাতি বলেনি। সনাতনশাস্ত্রে দলিত বলতে কোনো শব্দই নেই। দলিতদের নীচুজাতি বানিয়েছে তাদের ওই নাস্তিক বুদ্ধ। 
 
উপরন্তু যারা কথিত এইসমস্ত নীচকুলে জন্মগ্রহণ করে তাদের সম্পর্কে বুদ্ধ আরো বলছেন, তারা দুর্বর্ণ, দুর্দর্শনীয়, কদাকার ইত্যাদি। চিন্তা করুন এই ধরণের ঘৃণ্য বর্ণবাদী কথা পৃথিবীর আর কোনো ধর্মগ্রন্থে আছে বলে মনে হয়না। যেখানে সনাতনধর্মে পৃথিবীর প্রতিটা জীবেই আত্মাকে দর্শন করতে শেখায় [যজু ৪০|৬], সমগ্র বিশ্বকে ঈশ্বরে স্থিত এক নীড় সমান বলে [যজু ৩২|৮]। সেখানে বর্ণবাদী বুদ্ধ সেই ধর্মস্থান ভারতে বসে এরূপ ঘৃণ্য বর্ণবাদ প্রচার করে গিয়েছে। বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখের। 
 
উপরন্তু বুদ্ধ জ্যোতি তমঃপরায়ণ, জ্যোতি জ্যোতিঃপরায়ণের বর্ণনা করছেন। জ্যোতি অর্থাৎ যারা আলোর মধ্যে আছেন। কারা আলোর মধ্যে আছে? যারা উঁচু কুল বা জাতিতে জন্ম নেয়। কিন্তু উঁচু জাতি কোনগুলো? ক্ষত্রিয়কুল, ব্রাহ্মণকুল, গৃহপতিকুল, ভোগ-সম্পদ, স্বর্ণ-রৌপ্য প্রভৃতি সম্পন্ন পরিবার। এখানে গৃহপতি বলতে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে বৈশ্যদেরকে বুঝিয়েছে। তাহলে বুদ্ধের মতে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এনারাই হলো উচ্চকুল বা উঁচু জাতি। উপরন্তু এইসমস্ত উঁচু কুলে যারা জন্মগ্রহণ করে তাদের বিষয়ে বুদ্ধ বলছেন, তারা অতি সুশ্রী, সুদর্শন, মনোহর ও উৎকৃষ্ট বর্ণ বা গায়ের রং বিশিষ্ট হয়। তবে এরূপ জ্যোতির মধ্যে নিবাস করেও যারা খারাপ কাজ করে তারা নরকে পতিত হয় অর্থাৎ অন্ধকারের দিকে যায় ও ভালো কাজ করলে স্বর্গ বা আরো আলোর দিকে যায়।
 

 
অঙ্গুত্তর নিকায়ের এই কথাগুলোর মতোই প্রায় অনুরূপ কথা বুদ্ধ সংযুক্ত নিকায়ের কোশল সংযুক্তের ৩য় বর্গের পুগ্গল সুত্তেও বলছেন এবং সেই সুত্তে বুদ্ধ এই চন্ডাল, আদিবাসী, মুচি, দলিত প্রভৃতিকে শুধু নীচুজাতি বানিয়েই ক্ষান্ত হননি, তাদেরকে রক্তমলের সাথে পর্যন্ত তুলনা করেছেন। কী জঘন্য রুচি! 
 
 

 
এবার আসি সেইসকল সাধারণ বৌদ্ধদের কাছে যারা ওইসকল fraud মিথ্যাচারী বৌদ্ধভিক্ষুদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে সনাতনধর্মকে জাতিবাদী ধর্ম বলে মনে করে। প্রথমত সনাতনধর্মই একমাত্র ধর্ম যা শিখিয়েছে “ মনুর্ভব “(ঋক্ ১০|৫৩|৬) অর্থাৎ মানুষ হও, বেদের যেই বিখ্যাত উক্তিতেই আমরা আমাদের পেজের নামটি রেখেছি। যেই ধর্ম সবার আগে মানুষ হতে শিখিয়েছে সেই ধর্ম মানুষের মধ্যে বিভাজন শেখায় এমন দাবি অত্যন্ত হাস্যকর। বেদের বিখ্যাত উক্তি, অজ্যেষ্ঠা অকনিষ্ঠাস… কেউ বড় নয়, কেউ ছোটো নয়, কেউ মধ্যম নয়। সকলেই উন্নতিলাভের নিমিত্ত প্রযত্ন করে যাচ্ছে (ঋক্ ৫|৫৯|৬,৫|৬০|৫)। বেদের বিখ্যাত সংগঠনসুক্ত শিখিয়েছে সকলকে একসঙ্গে চলার, বলেছে সকলের একতার কথা (ঋক্ ১০|১৯১|২-৪)। তাহলে সনাতনধর্মে উঁচু-নীচু ভেদ, বৈষম্য কোথায় পেল তারা? শুধু মানুষ কেন সনাতনধর্মত সকল জীবের মধ্যে সমানতা দেখতে শিখিয়েছে (যজু ৪০|৭), সমস্ত জীবকে বন্ধুর দৃষ্টিতে দেখতে শিখিয়েছে (যজু ৩৬|১৮)। উপরন্তু যেকোনো সমাজ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত হতে হয়। কাউকে জ্ঞান নিয়ে চর্চা করতে হয় যেমন- আচার্য,শিক্ষক,গবেষক, কাউকে বাহুবল দিয়ে সমাজের রক্ষা করতে হয়, সমাজে আইনবিধান করতে হয় যেমন-আর্মি,পুলিশ,শাসক , কাউকে ব্যবসা-কৃষিকাজে কিংবা কাউকে সেবাধর্মী-শ্রমজীবী কাজে নিয়োজিত হতে হয়। বর্ণবিভাজনত এটাই। 
 
পরমেশ্বরই সমাজকে পরিচালনার নিমিত্ত মানুষের মধ্যে এরূপ ভিন্ন গুণ ও কর্ম সৃষ্টি করেছেন। যারা জ্ঞান নিয়ে চর্চা করে তারাই ব্রাহ্মণ, যারা বাহুবল দিয়ে সমাজকে রক্ষা করছে তারা ক্ষত্রিয়, যারা ব্যবসা-কৃষিকাজ করছে তারা বৈশ্য, যারা শ্রম দিয়ে সমাজকে সেবা করছে তারা শূদ্র। সমাজে যদি সকলের মধ্যে ব্রাহ্মণ হওয়ার গুণ থাকত বা সকলেই শূদ্র হত তাহলে কি সমাজ চলত? তাই সমাজকে পরিচালনার নিমিত্তই পৃথক গুণ-কর্মনুসারে ঈশ্বর সমাজে এই পৃথক পৃথক পেশা, কর্ম বা বর্ণ রচনা করেছেন (গীতা ৪|১৩, ঋক্ ৯|১১২|১)। একই কথাইত বুদ্ধও বলছেন, কর্মনুসারেই মানুষ ব্রাহ্মণ ও কর্মনুসারেই বৃষল হয়, জন্মনুসারে নয় (সুত্তনিপাত, বৃষল সূত্র ১৩৬,১৪২)। 
 
তাহলে সনাতনধর্মে জাতিভেদ কোথায়? বেদের কোন মন্ত্রে বলা হয়েছে ব্রাহ্মণ উঁচু জাতি বা শূদ্র নীচু জাতি? হ্যাঁ, অনেক পরবর্তী কালে রচিত বিভিন্ন পুরাণ-গৌণস্মৃতিতে এরূপ জাতিভেদের কিছু উল্লেখ আছে। কিন্তু সনাতনধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ, বেদবিরোধী কোনো বাক্য কীভাবে সনাতনধর্মের বলে গণ্য হবে? ওইসব fraud বৌদ্ধভিক্ষুদের মুরোদ হয় না কেন বেদের একটা মন্ত্রতে অন্তত জাতিভেদ দেখানোর? তবে দুঃখের বিষয় যে, সনাতনধর্মের প্রবর্তিত এই অপূর্ব বর্ণবিভাজন ধীরে ধীরে জাতিভেদে রূপ নিয়েছে সমাজের নীচু মানসিকতার কারণে । 
 
আপনি হিন্দু হন বা মুসলিম বা বৌদ্ধ স্বাভাবিক যে আপনি দেশের প্রধাণমন্ত্রী বা অনেক বিত্তশালী কোনো ব্যবসায়ীকে আর আরেকজন মুচি বা ঝাড়ুদারকে সমান চোখে দেখবেন না। যেমনটা বুদ্ধও দেখেননি। সমাজের সেই নীচু মানসিকতার কারণেই এই বর্ণব্যবস্থা জাতিভেদে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে। ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়রা হয়ে গেছে উচ্চকুল আর মুচি, ঝাড়ুদার প্রভৃতি শূদ্রবর্ণের মানুষরা হয়ে গিয়েছে নীচুকুল, যেমনটা বুদ্ধের বাণীতেও আমরা পাচ্ছি। কিন্তু সেই দোষত সমাজের তথা বুদ্ধের মতো জাতিবাদী-বর্ণবাদী ব্যক্তিদের। এর দায় সনাতনধর্মের উপর চাপানো হবে কেন? সনাতনধর্মকে গালি দেওয়া হবে কেন? সনাতনধর্মকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হবে কেন? যেখানে সনাতনধর্ম বুদ্ধের মতো জাতিবাদীদের বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবেই বলছে, যারা জ্ঞানী তারা ব্রাহ্মণ, চন্ডাল, গো, হস্তী, কুকুর অর্থাৎ সকল জীবেই সমদর্শী হয় (গীতা ৫|১৮)। তাই বৌদ্ধদের প্রতি যৌক্তিক আহ্বান এই জাতিবাদী fraud নাস্তিকের মতকে ত্যাগ করে পুনরায় মানবতা ও সাম্যের সনাতন বৈদিক ধর্মে ফিরে আসুন।