https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

ঋষিবর শ্রীমদ্দয়ানন্দের সাহিত্যে নাস্তিকের পরিভাষা

Tuesday, May 14, 2024

💠ঋষিবর শ্রীমদ্দয়ানন্দের সাহিত্যে নাস্তিকের পরিভাষা💠

🔁 ঋষি দয়ানন্দের সাহিত্যে নাস্তিক্য’র পরিভাষা নিম্নরূপ-
নাস্তিক্য অর্থাৎ বেদ ও ঈশ্বরের প্রতি অশ্রদ্ধা।
-স০ প্র০ ৯ম। ২৩০/৩১
🔁 এই দৃষ্টিতে মনুবাক্য ‘নাস্তিকো বেদনিন্দকঃ [মনু০ ২। ১১]’ এর আধারে ঋষিবর নাস্তিক এর নিম্নরূপ সংজ্ঞায়ন প্রস্তুত করেছেন-
১। যে ব্যক্তি বেদ, আপ্ত পুরুষরচিত বেদানুকূল শাস্ত্রসমূহের অবমাননা করে, সেই বেদনিন্দুক নাস্তিক।
-স০ প্র০ ৩য়। ৪৩/২৫)
২। বেদের নিন্দক (অর্থাৎ যে বেদের নিন্দা করে) এবং বেদ মানে না, সে নাস্তিক।
-স০ প্র০ ৩য়। ৬২/১৮
৩। যিনি বেদের নিন্দা করেন তাকে নাস্তিক বলে।
-স০ প্র০ ১০ম। ২৩৫/২৮
এই তিন সংজ্ঞায়নে একটি সাধারণ শব্দ রয়েছে ‘নিন্দা’। নিন্দা শব্দের অর্থ ঋষি করেছেন-
“গুণে দোষারোপ করা এবং দোষে গুণারোপ করাকে ‘নিন্দা’ বলে।”
... অর্থাৎ মিথ্যাভাষণের নাম নিন্দা।
-স০ প্র০ ৪র্থ। ৮২/৩০ 
 
✅ অর্থাৎ, যে ব্যক্তি বেদের নামে কুৎসা রটায় অর্থাৎ বেদবিহিত শুভকর্মকে অশুভ এবং বেদনিন্দিত মন্দকর্মকে শুভ হিসেবে মানে, প্রচার করে এরূপ ব্যক্তিকে এখানে নাস্তিক বলে বোঝানো হয়েছে। কেবল বেদ মানে না বা বেদোক্ত কর্ম করেনা এমন ব্যক্তিদের নাস্তিক হিসেবে সম্বোধন করা হয়নি। অর্থাৎ যারা বেদের কোনকিছুই স্বীকার না করে ব্যর্থ দোষারোপ করছে , তারাই নাস্তিক। অপরপক্ষে, কোন ব্যক্তি বেদকে স্বীকার না করেও বেদোক্ত কর্ম যেমন সত্য বলা, ব্যভিচার না করা ইত্যাদি দৈনন্দিন জীবনে করছেন তবে সে নাস্তিক নয়। 
 
🔁এরপর ঋষি আরো সংজ্ঞায়ন করছেন-
 
৪। যে মনুষ্যগণ তাঁকে (পরমেশ্বরকে) জানেনা, মানেনা, তাঁর ধ্যান করে না তারা নাস্তিক।
- স০ প্র০ ৭ম। ১৪৬/১৫
৫। যেসব গ্রন্থ বেদবিরুদ্ধ, সেসব গ্রন্থকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থিত করাকে নাস্তিক হওয়া বলে জানো।
-স০ প্র০ ১১শ। ২৮৬/২৫
৬। যেসকল ব্যক্তি বেদের নিন্দা অর্থাৎ অপমান করে, [বেদ] ত্যাগ করে, [বেদ] বিরুদ্ধ আচরণ করে তাকে নাস্তিক বলে।
-স০ প্র০ ১১শ। ২৮৬/৩২
৭। যারা বেদ ও ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করে না, বেদের বিরুদ্ধে পোপলীলা প্রচলিত করে, তারাই নাস্তিক।
-স০ প্র০ ১১শ। ৩১২/১০
 
✅এই সংজ্ঞায়ণসমূহ দ্বারা আমরা নিম্নোক্ত অপগুণযুক্ত মানুষকে ঋষি দয়ানন্দের পরিভাষায় ‘নাস্তিক’ বলতে পারি-
 
১. যে ব্যক্তি বেদের নামে কুৎসা রটায় অর্থাৎ বেদবিহিত শুভকর্মকে অশুভ এবং বেদনিন্দিত মন্দকর্মকে শুভ হিসেবে মানে, প্রচার করে এরূপ ব্যক্তি।
২. যে মনুষ্যগণ পরমেশ্বরকে জানেনা, মানেনা, তাঁর ধ্যান করে না।
৩. বেদবিরুদ্ধ গ্রন্থকে প্রমাণ হিসেবে মান্য করা, সর্বসমক্ষে উপস্থিত করা ব্যাক্তি।
৪. যে বেদের নিন্দা অর্থাৎ অপমান করে।
৫. যে বেদ ত্যাগ করে।
৬. যে বেদবিরুদ্ধ আচরণ করে।
৭. যারা বেদ ও ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করে না (যেমন- মদ্যপান করা, মিথ্যাভাষণ করা, ব্যভিচার করা, কাউকে অকারণে হিংসা করা, ইত্যাদি)।
৮. বেদের বিরুদ্ধে পোপলীলা প্রচলিত করে।
ঋষি দয়ানন্দের ভাষ্যমতে এই ৮ অপগুণযুক্ত ব্যক্তি নাস্তিক। এবার আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি নাস্তিক? না আস্তিক? 
 
🔁 নাস্তিকের সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে সবার এ বিষয়টি মনে রাখা আবশ্যক যে, কেউ বেদকে অবিশ্বাস করলেই তাকে নাস্তিক বলা যাবে না। বেদের সাথে তার প্রত্যক্ষ বিরোধিতাও থাকতে হবে, তাকে বেদবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতে হবে, বেদের নামে গুণে দোষারোপ, দোষে গুণারোপের মতো ধূর্ত কর্মে লিপ্ত থাকতে হবে। সেক্ষেত্রেই তাকে নাস্তিক বলা যাবে।
 
কোন ব্যক্তি বেদে বিশ্বাস না রেখে যদি বৈদিক মানদণ্ডে সঠিক কাজ করেন, নৈতিক আচরণ করেন তবে সে ব্যক্তিকে নাস্তিক বলা মূর্খামি। যেমন ঋষি দয়ানন্দ সত্যার্থ প্রকাশের ১৪ সমুল্লাসে উল্লেখ করেছেন- 
 
১। “...কেবল খ্রীষ্টান এবং মুসলমানেরাই খুদার নির্দেশ অনুসারে চলেন? তাহাদের মধ্যে পাপী কি কেহই নাই? তাঁহারা কি অধার্মিক হইলেও মুক্তি পাইবেন? অন্যেরা কি ধার্মিক হইয়াও মুক্তি পাইবেন না? যদি তাহাই হয়, তবে কি ঈশ্বরের অজ্ঞতা ও অন্যায় প্রকাশ পায় না?
যাহারা মুসলমান মত মানে না, তাহাদিগকে কাফের বলা কি “একতরফা ডিক্রী” নহে? যদি পরমেশ্বর তাহাদের কর্ণ এবং অন্তঃকরণ শীলমোহর দ্বারা রুদ্ধ করায়, তাহারা পাপ করে, তাহা হইলে তাহাদের দোষ নাই, দোষ খুদার। সুতরাং তাহাদের সুখ-দুঃখ এবং পাপপুণ্য হইতে পারে না। যাঁহারা স্বাধীনভাবে পাপপুণ্য কিছুই করে না, তাহাদিগকে দণ্ড দিবার কারণ কী?”
- স০ প্র০। ১৪শ। সমীক্ষা- ৫ 
 
২।“... যে মত সহস্র সহস্র কোটি কোটি লোকের ধর্মবিশ্বাসকে মিথ্যা এবং নিজেকেই সত্য বলিয়া ঘোষণা করে, সে মতের ন্যায় মিথ্যা অপর কোন মত হইতে পারে? কোন মত-বিশ্বাসীদের মধ্যে সকলেই ভাল, কিংবা সকলেই মন্দ হইতে পারে না। এইরূপ এক তরফা ডিক্রী দেওয়া নিত্যন্ত মুখোচিত কাৰ্য।... ”
- স০ প্র০। ১৪শ। সমীক্ষা- ৭৫ 
 
৩। “যাহারা কুরাণ, পয়গম্বর, কুরাণের খুদা, সপ্তম আকাশ এবং নমাজ প্রভৃতি বিশ্বাস করে না, তাহাদিগকে কাফির এবং নরকগামী বলা পক্ষপাত ব্যতীত আর কিছুই নহে। ইহা কি কখনও সম্ভব যে, কুরাণ-বিশ্বাসীমাত্রেই ভাল, অন্যমত-মতান্তর বিশ্বাসী মাত্রেই মন্দ?...”
- স০ প্র০। ১৪শ। সমীক্ষা- ১০৪ 
 
✅ পরিশেষে, আর্যসমাজের মান্যতা যেহেতু ঋষি ব্রহ্মা থেকে শুরু হয়ে ঋষি দয়ানন্দে এসে শেষ হয় সুতরাং ঋষি দয়ানন্দের সিদ্ধান্তই আর্যসমাজের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। অতএব, আর্যভাষ্য বা অন্য সাহিত্যেও নাস্তিকের উপরোক্ত পরিভাষাই যথার্থ বলে গৃহীত হবে। অপরাপর যেকোন ব্যক্তিগত স্বকপোলকল্পিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সব আর্ষসিদ্ধান্ত বিরুদ্ধ হিসেবে গণ্য হবে। কেবল ঋষি দয়ানন্দ ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তির মত মান্য করতে আর্যগণ বাধ্য নন। 
 
💠সন্দর্ভ- √১৪শ সমুল্লাসের উধৃতি সাধারণ সংস্করণ অনুযায়ী দেয়া হয়েছে।
 
√সকল পৃষ্ঠাসংখ্যা, বৈদিক পুস্তকালয় প্রকাশিত সত্যার্থ প্রকাশ ৪১তম আবৃত্তি অনুযায়ী দেয়া হয়েছে।
“বেদ, ঈশ্বর এবং বেদোক্ত ধর্মের নিন্দা করা ধূর্তদের কর্ম।” - ঋষি দয়ানন্দ ভগবদ্পাদ্
আর্ষসিদ্ধান্তম্ সদা সর্বত্র বিজয়তে🔥