https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

মূল যজুর্বেদে কি ব্রাহ্মণের মিশ্রণ রয়েছে ?

Saturday, July 27, 2024

 


♦️মূল যজুর্বেদে কি ব্রাহ্মণের মিশ্রণ রয়েছে?♦️
[“বৈদিক সম্পত্তি” গ্রন্থে উদ্ধৃত আক্ষেপের জবাব]
যা বর্তমানে শুক্ল যজুর্বেদ নামে পরিচিত তাই মূল যজুর্বেদ এবং এতে ব্রাহ্মণ ভাগের কোনোরূপ মিশ্রণ নেই।
[ এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত প্রমাণাদিপূর্ণ লেখনী:
🔹যজু শাখার শুক্ল-কৃষ্ণ ভেদ এবং তার নিরীক্ষণ
🔹 বেদের শাখা বিষয়ে সত্যব্রত সামশ্রমীজির ভ্রান্তি খণ্ডন [শেষাংশ দ্রষ্টব্য]
কিন্তু পণ্ডিত রঘুনন্দন শর্মা তাঁর রচিত “বৈদিক সম্পত্তি” গ্রন্থে [পৃষ্ঠা ক্রমাঙ্ক - ৪৫২, দ্বিতীয় সংস্করণ] মহর্ষি কাত্যায়নের নামে অধূনা প্রচলিত কাত্যায়ন সর্বানুক্রমণী হতে [যাতে মধ্যন্দিনি ও কাণ্ব উভয় সংহিতানুসারে দু’প্রকারের পাঠ বিদ্যমান] তিনটি সূত্র উল্লেখপূর্বক “যজুর্বেদে ব্রাহ্মণের মিশ্রণ রয়েছে” — এই মত পুষ্ট করতে চেয়েছেন। ///যদিও এই মত তার নিজের নয় বরং পৌরাণিক পণ্ডিত হরিপ্রসাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই রঘুনন্দনজী এসব লিখেছেন এমনকি তার বইয়ে হরিপ্রসাদের বেদসর্বস্ব গ্রন্থের পৃষ্ঠা ক্রমাঙ্কও উল্লেখ করেছেন। ///
📜যজুর্বেদে ব্রাহ্মণ ভাগ সংমিশ্রণের দাবি প্রমাণে কথিত কাত্যায়ন সর্বানুক্রমণী হতে যেসকল সূত্র দর্শানো হয়েছে —
১। “দেবা যজ্ঞং ব্রাহ্মণাণুবাকো বিশতিরনুষ্টভঃ সোমম্পৎ।”
=> যজুর্বেদের ১৯তম অধ্যায় এর ১২তম মন্ত্র থেকে ৩১তম মন্ত্র পর্যন্ত মোট ১০টি মন্ত্র অনুষ্টুপ ছন্দ ব্রাহ্মণ।
২। “অশ্বস্তুপরো ব্রাহ্মণাধ্যায়ঃ, শাবং দদ্ভিস্ত্বচান্তশ্চ।”
=> যজুর্বেদের সম্পূর্ণ ২৪তম অধ্যায় এবং ২৫তম অধ্যায়ের প্রারম্ভে “শাদং দদ্ভিঃ” থেকে নিয়ে “ত্বচা” পর্যন্ত ৯টি কণ্ডিকা ব্রাহ্মণ।
৩। “ব্রহ্মণে ব্রাহ্মণং দ্বৈ কণ্ডিকে, তপসে অনুবাকশ্চ ব্রাহ্মণম্।”
=> যজুর্বেদের ৩০তম অধ্যায়ের “ব্রহ্মণে ব্রাহ্মণম্” ৫-৬ এই দুই কণ্ডিকা এবং উক্ত অধ্যায়ের ৭ম কণ্ডিকার “তপসে” থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত
সর্বমোট ১৮ টি কণ্ডিকা হলো ব্রাহ্মণ।
🔍প্রকৃতপক্ষে, যে যজুঃসর্বানুক্রমণীর উপর ভিত্তি করে এই দাবি করা হচ্ছে সেই কথিত কাত্যায়ন সর্বানুক্রমণী অর্বাচীন এবং অপ্রামাণিক। এর অর্বাচীনতার প্রমাণসমূহ নিম্নে ধারাবাহিকভাবে বর্ণন করা হলো:
{১} যজুর্বেদের ভাষ্যকার উবট নিজের ভাষ্যের প্রারম্ভে লিখেছেন —
❝গুরুতস্তকর্তশ্চৈব তথা শাতপথশ্রুতেঃ‌।
ঋষীৎ বক্ষ্যামি মন্ত্রাণাং দেবতা ছান্দসং চ যৎ॥❞
অর্থাৎ, উবট যজুর্বেদের মন্ত্রসমূহের ঋষি,দেবতা এবং ছন্দ গুরুপোদেশ, তর্ক এবং শতপথ ব্রাহ্মণ অনুসারে করবেন বলে প্রতিজ্ঞা নিচ্ছেন। যদি উবটের সময়ে এই কাত্যায়ন সর্বানুক্রমণী বিদ্যমান থাকতো তাহলে তিনি ঋষি,দেবতা ও ছন্দ নির্ণয়ে অন্য গ্রন্থ ও বিষয়াদির আশ্রয় নিতেন না। এতে স্পষ্ট হয় যে, উবটের ভাষ্য রচনাকালীন সময়েও এই সর্বানুক্রমণীর অস্তিত্ব ছিল না।
{২} কাশী থেকে প্রকাশিত “শিক্ষা-সংগ্রহ” তে পৃষ্ঠাঙ্ক ৩৬-৪২ পর্যন্ত যে “বশিষ্ঠ শিক্ষা” রয়েছে সেখানে যজুর্বেদের প্রতি অধ্যায়ভিত্তিক ঋক ও যজু প্রকারের মন্ত্রসমূহের গণনা রয়েছে। প্রারম্ভে লেখা রয়েছে —
❝অথ শিক্ষাং প্রবক্ষ্যামি বসিষ্ঠস্য মতং যথা।
সর্বানুক্রমমুদ্ঘৃত্য ঋগ্ যজুষোস্তু লক্ষণম্॥❞
অর্থাৎ, সর্বানুক্রম অনুসারে যজুর্বেদে ঋক্ এবং যজু প্রকারের মন্ত্রসমূহের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ঋষি বশিষ্ঠ যে সর্বানুক্রমকে ভিত্তি ধরে এবিষয়ক আলোচনা করেছেন তার সাথে বর্তমানে কথিত কাত্যায়ণ সর্বানুক্রমণীর কোনো মিল নেই। এ থেকে স্পষ্ট যেসময় “বশিষ্ঠ শিক্ষা” রচিত হয়েছিল সেসময় কাত্যায়নের নামে প্রচলিত অর্বাচীন সর্বানুক্রমণী নয় বরং অন্য কোনো প্রাচীন সর্বানুক্রমণী ছিল।
{৩} বর্তমান সর্বানুক্রমণীতে ব্যাকরণজনিত ত্রুটি বিদ্যমান যা স্বভাবতই প্রাচীন আর্ষ রচনাশৈলীর বৈশিষ্ট্য নয়। সর্বানুক্রমণীর শেষ পঞ্চম অধ্যায়ে লেখা রয়েছে — “আদ্য তু সপ্তবর্গ পাদবিশেষাৎ সংজ্ঞাবিশেষঃ, তাননুক্রামন্ত এবোবাহরিণ্যাম॥”
এখানে গ্রন্থাকার ভবিষ্যৎকাল “উবাহরিণ্যাম” উল্লেখ করেছেন যা সর্বথা অযৌক্তিক কারণ গ্রন্থাকার এর আগের অধ্যায়েই ঋষি,দেবতা,ছন্দের উল্লেখ করে ফেলেছেন। সুতরাং, এস্থলে “উবাহৃতম” পাঠ হওয়া উচিত, “উবাহরিণ্যাম” নয়। এই অধ্যায়টির সাথে ঋক্ সর্বানুক্রমণীর তুলনা করার পর দেখা গেছে, ঋক্ সর্বানুক্রমণীর প্রারম্ভিকভাগের থেকে পুরোটাই হুবুহু প্রতিলিপনকৃত। কারণ ঋক্ সর্বানুক্রমণীর প্রারম্ভতে “উবাহরিণ্যাম” পাঠ রয়েছে এই হেতু যে এরপর থেকে ছন্দ-দেবতা-ঋষির বর্ণনা করা হবে। আর এজন্যই ভবিষ্যৎকালের ব্যবহার করা হয়েছে। যজুঃ সর্বানুক্রমণী তথা কাত্যায়ন সর্বানুক্রমণীর রচিয়তা এই স্থূল বিষয়টিও উপলব্ধি করতে পারেননি। অতএব এটা স্পষ্ট যে, কাত্যায়নের নামে প্রচলিত এই গ্রন্থ অপ্রামাণিক এবং অর্বাচীন।
✅ সুতরাং, এই গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে যজুর্বেদে ব্রাহ্মণের মিশ্রণ রয়েছে এমন দাবিও ভিত্তিহীন।
📚 এবার, ব্রাহ্মণ সংমিশ্রণের উপর আরো গভীরভাবে বিচার করার পূর্বে আমরা প্রথমে ঋগ্, যজু এবং সামের উপর বিচার করবো। ///কারণ কিছু ব্যক্তির মতে, এই তিনটি শব্দ দিয়ে কেবল এবং কেবলমাত্র তিনটি বেদকেই বোঝায়। মন্ত্রশৈলী তথা প্রকারকে বোঝায় না। অথচ ষড্গুরুশিষ্যপ্রণীত সর্বানুক্রমণী বৃত্তির ভূমিকা অংশে বলা হয়েছে —
“বিনিয়োক্তরূপশ্চ ত্রিবিধঃ সম্প্রদর্শ্যতে। ঋগ যজুঃ সাম রূপেণ মন্ত্রোবেদচতুষ্টয়।।”
অর্থাৎ, চারবেদে ঋগ্-যজু-সাম এই তিন প্রকারের মন্ত্র বিদ্যমান।
নিরুক্তেও (১৩।৭) শৈলীবিচারে চারবেদের মন্ত্রকে ঋগ,যজু ও সাম এই তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যথা—
❝ঋগ্ভি: শংসন্তি, যজুর্ভিযজন্তি, সামভিঃ স্তুবন্তিঃ॥❞////
জৈমিনী মীমাংসার দ্বিতীয় অধ্যায়েও ঋক্,যজুঃ,সাম এবং নিগদ [বিশেষ শ্রেণির যজুঃ] বলতে মুখ্যত ত্রিবিধ তথা চতুর্বিধ মন্ত্রের প্রকারকে বোঝানো হয়েছে। যথা—
❝তেষাম্ ঋগ্ যত্রার্থবশেত পাদব্যবস্থা❞॥৩৫॥
=> যেখানে প্রয়োজনবশত পাল=চরণ এর ব্যবস্থা বিদ্যমান সেই প্রকারের মন্ত্রকে ঋক্ বলা হয়।
❝গীতেষু সামাখ্যা❞॥৩৬॥
=> গানাত্মক মন্ত্রসমূহকে সাম বলা হয়।
❝শেষে যজুঃ শব্দঃ❞॥৩৭॥
=> উপর্যুক্ত দুই শ্রেণি হতে ভিন্ন রূপযুক্ত মন্ত্রসমূহ হলো যজুঃ।
অর্থাৎ, জৈমিনীর মীমাংসা থেকেও স্পষ্ট যে ঋগ্ যজু ও সামের সংজ্ঞা মন্ত্রের, ব্রাহ্মণের নয়।
////এই বিষয়টি নিচের প্রমাণ থেকেই আরো স্পষ্ট হবে। কেননা কাত্যায়ন সর্বানুক্রমণী থেকে যে সূত্র দেখিয়ে যজুর্বেদের যে যে অংশকে ব্রাহ্মণ বলে দাবি করা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে সেই সেই অংশে ঋগ্ এবং যজু শৈলীর তথা দুই প্রকারের “মন্ত্র” রয়েছে বলে বশিষ্ঠ ঋষি মত দিয়েছেন (নিচের দ্বিতীয় প্রমাণে তা দর্শানো হবে) । এতে যেমন যজুর্বেদে ব্রাহ্মণের মিশ্রণ রয়েছে এমন অপদাবি খণ্ডিত হয় তেমনি একইসাথে «মীমাংসায় বর্ণিত “ঋগ-যজু-সাম” তিন প্রকারের মন্ত্র নয় বরং কেবল তিনটি বেদকে বোঝায়»—দুর্জনদের এই দাবিও স্বতঃ খণ্ডিত হয়।//// প্রমাণসমূহ নিম্নরূপঃ
১) মীমাংসার ভাষ্যকার শবরস্বামী (বিক্র০ ১ম শতাব্দী) ‘তচ্চোদকেষু মন্ত্রাখ্যা’ [মী০ ২।১।৩১] সূত্রের ব্যাখ্যায় লিখেছেন — ❝প্রায়কমিদং লক্ষণম্, অনমিঘায় অপি কেচিৎ মন্ত্রা ইত্যপুচ্যন্তে। যথা বসন্তায় কপিঞ্জলিনালভতে।❞
অর্থাৎ, সূত্রাকারের মন্ত্র প্রায়িক হয়। যে শব্দসমূহ যাজ্ঞিক ক্রিয়াকর্ম ব্যক্ত করে না সেগুলোও মন্ত্র পদবাচ্য যেমন “বসন্তায় কপিঞ্জলিনালভতে”। পাঠক! যা ব্রাহ্মণ নয় বরং মন্ত্রপদবাচ্য বলে শবরস্বামী উল্লেখ করলেন তা যজুর্বেদের ২৪তম অধ্যায়ের সেই ২০তম কণ্ডিকার অংশ আর এই সম্পূর্ণ অধ্যায়কেই অর্বাচীন সর্বানুক্রমণীতে ব্রাহ্মণ বলা হয়েছে। মীমাংসাশাস্ত্র হলো কর্মকাণ্ডের সর্বসম্মত প্রামাণিক গ্রন্থ। এর ভাষ্যকারদের দ্বারা সেই অধ্যায়ের একদেশকে মন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এই কথাই প্রমাণ করে যে যজুর্বেদোক্ত সমগ্র ২৪তম অধ্যায় যেখানে “বসন্তায় কপিঞ্জলিনালভতে”এর সাথে সংশ্লিষ্ট দ্রব্য-দেবতা বিধায়ক শব্দসমূহ রয়েছে তা সবই মন্ত্রাত্মক।
২— প্রাচীন ও প্রকৃত সর্বানুক্রম অনুসারে রচিত বশিষ্ঠ শিক্ষার -
(ক) ৪২ পৃষ্ঠায় যজুর্বেদের ১৯তম অধ্যায়ের ১২তম থেকে ৩১তম পর্যন্ত ২০টি কণ্ডিকাকে অনুষ্টুপ ছন্দযুক্ত ঋচা বলা হয়েছে; ব্রাহ্মণ নয়। যথা—
❝একোনবিংশোধ্যায়ে স্বাদ্বীং ত্বা যজুরিত্যেকা, পরীতত ইতি চতস্রো, ব্রহ্মক্ষত্রমিতি দ্বে, নানা হীত্যেকা, যা ব্যাঘ্রমিতি আধ্যয়ায়ান্তশ্চতুরশীতিঃ পিতৃভ্য ইত্যুদ্ধন্য তত্রৈদং হবিরিতি ত্র্যবসনা মহাপঙক্তিঃ রেতো মূত্রমিতি দ্বে ত্র্যবসানে অণ্বয়করী, একোনবিংশো ঋচশ্চতুর্ণবতির্যজুংষি ত্রিশৎ।❞
অর্থাৎ, ১৯তম অধ্যায়ের “স্বাদ্বীং ত্বা” তথা প্রথম কণ্ডিকা হলো যজুঃ। “পরীতো” শব্দযুক্ত দ্বিতীয় কণ্ডিকায় ঋচা সংখ্যা চারটি, [তৃতীয় কণ্ডিকাতে ঋচা সংখ্যা ২টি], “ব্রহ্ম ক্ষত্রম” শব্দযুক্ত পঞ্চম কণ্ডিকাতে ঋচা সংখ্যা দুইটি। “নানা” শব্দযুক্ত সপ্তম কণ্ডিকাতে ঋক্ সংখ্যা একটি। [অষ্টম ও নবম কণ্ডিকা যজু] । “যা ব্যাঘ্রং” শব্দযুক্ত দশম কণ্ডিকা থেকে উক্ত অধ্যায়ের শেষ পর্যন্ত ঋগ্ সংখ্যা চুরাশি টি। “পিতৃভ্য” শব্দযুক্ত ৩৬তম ও ৩৭তম কণ্ডিকা হলো যজুঃ। “ইদং হবিঃ” শব্দযুক্ত ৪৮ তম কণ্ডিকার তিন অবসানের মহাপঙক্তি ছন্দযুক্ত ঋচা বিদ্যমান। একই সংখ্যক অবসানের ঋচা “রেতো মূত্রম” শব্দযুক্ত ৭৬তম ও ৭৭তম কণ্ডিকায় রয়েছে। এভাবে ১৯তম অধ্যায়ে সর্বমোট ৯৪ টি ঋগ্ এবং ৩০টি যজুঃ (একই কণ্ডিকায় একাধিক ঋগ্ ও যজুঃ বিদ্যমান) রয়েছে।
✅ অতএব এটা স্পষ্ট যে, অর্বাচীন সর্বানুক্রমণীতে যজুর্বেদের যে ১৯তম অধ্যায়ের যে অংশকে ব্রাহ্মণ বলা হচ্ছে তা ব্রাহ্মণ নয় বরং মূল বেদেরই অংশ যা ঋগ্ ও যজুঃ মন্ত্রবিশিষ্ট।
(খ) যজুর্বেদের ২৪তম অধ্যায় এবং ২৫তম অধ্যায়ের ৯টি কণ্ডিকার বিষয়ে বশিষ্ঠ শিক্ষায় (৪২পৃঃ) লেখা আছে —
❝চতুর্বিংশততিতমোধ্যায়ে অশ্বস্তূপর ইত্যারভ্য ত্বচেত্যয়ন্ত সর্বাণি যজুংষি❞
এই পাঠে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, বশিষ্ঠ শিক্ষা অনুসারে যজুর্বেদের সম্পূর্ণ ২৪তম অধ্যায় এবং ২৫তম অধ্যায়ের ৯টি কণ্ডিকা হলো যজুঃ তথা গদ্যাত্মক শৈলীর মন্ত্র, ব্রাহ্মণ নয়।
(গ) যজুর্বেদের ৩০তম অধ্যায়ের ৫ম কণ্ডিকা থেকে উক্ত অধ্যায়ের শেষ পর্যন্ত সকল কণ্ডিকার বিষয়ে বশিষ্ঠ শিক্ষার ৪৩তম পৃষ্ঠায় লিখিত রয়েছে যে —
❝ত্রিংশত্তমোধ্যায়ে দেব সবিতরিতি তিস্রঃ [ঋচঃ] পরাণি সর্বাণ্যধ্যায়ান্তানি সপ্তসপ্তত্যুত্তরশতং যজুংষি।❞
অর্থাৎ, ত্রিশতম অধ্যায়ের শুরুতে কেবল তিনটি ঋক্ রয়েছে আর বাদবাকি সমগ্র অধ্যায় যজুঃ । অর্থাৎ এই অধ্যায়ের কোনোকিছুই ব্রাহ্মণ নয়।
📃/// পুনশ্চ, অনেকে এই আক্ষেপ তুলতে পারে যে, যে যজুর্বেদের উক্ত অধ্যায়ের যে তিনটি মন্ত্রকে ঋগ্ বলা হচ্ছে তা হয়তো ঋগ্বেদে আছে! আর এজন্যই এরকম মন্ত্রকে ঋগ্ বলা হচ্ছে। বাস্তবে এই তিনটি মন্ত্র ঋগ্বেদে তো নেই কেবলমাত্র যজুর্বেদেই পূর্ণাঙ্গভাবে বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং, এতে আবারও স্পষ্ট হলো যে চারবেদে ঋগ্-যজু-সাম মন্ত্রের প্রকারভেদ তার পদ্য-গদ্য-গীতাত্মক শৈলীর উপর নির্ভর করে, বেদের উপর নয়। এই ত্রিবিধ তথা নিগদ সহ চতুর্বিধ শৈলীর মন্ত্র পুরো চারবেদেই ব্যাপ্ত হয়ে আছে। তাই এগুলোকে ব্রাহ্মণ বলে নির্দেশ করা সর্বথা অযৌক্তিক। ///
📝 ঋগ্ যজুঃ পরিশিষ্টকারের মতানুসারেও যজুর্বেদে ঋগ্ এবং যজুঃ রূপী দু’প্রকারের মন্ত্র বিদ্যামান। কাণ্বসংহিতার ভাষ্যকার আনন্দবোধও “ব্রহ্মণে ব্রাহ্মণম্’ [কাণ্ব স০ অ০ ৩৪] প্রকরণকে মন্ত্রই মেনেছেন। উবটও ১৯তম অধ্যায়ের ১২-২১ ক্রম পর্যন্ত তথাকথিত ব্রাহ্মণভাগকে অনুষ্টুপ ছন্দযুক্ত মন্ত্র বলেছেন।
৩— দ্বিবেদঙ্গ বৃহদারণ্যকের একজন প্রাচীন ভাষ্যকার। তিনি লিখেছেন —
❝শুক্লানি শুদ্ধানি, যদ্বা ব্রাহ্মণেন মিশ্রিতমন্ত্রকানি কৃষ্ণানি।❞
=> অর্থাৎ ব্রাহ্মণ দ্বারা মিশ্রিত হওয়ায় তৈত্তিরীয় আদি সংহিতাকে কৃষ্ণ বলা হয়। আর যে যজুর্বেদ শুক্ল নামে পরিচিত তা শুদ্ধ এবং মূল।
📌 অতএব, এই বিবেচনার দ্বারা উত্তমরূপে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয় যে, যজুর্বেদের যে ভাগকে বর্তমান সর্বানুক্রমণীর আধারে [প০ হরিপ্রসাদজীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে] প০ রঘুনন্দন শর্মা ব্রাহ্মণভাগের প্রক্ষেপ বলে দাবি করছেন বস্তুত তা ব্রাহ্মণ নয়। শবর স্বামীর ন্যায় প্রামাণিক মীমাংসক এবং বশিষ্ঠ শিক্ষা অনুসারে তা মূলত পদ্য ও গদ্যরূপী ঋক্ এবং যজুঃ সংজ্ঞা বিশিষ্ট মন্ত্র।
—বিদুষাং বশংবদঃ