https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

নিরুক্ত ঋগ্বেদের মন্ত্র হারানো বা প্রক্ষেপের দাবি করে কি ?

Saturday, August 31, 2024


💠‘সম্মিলিত হবির’ মন্ত্র কি বেদ থেকে হারিয়ে গেছে ও ‘সহস্তুতির মন্ত্র’ কি বেদে প্রক্ষেপ করা হয়েছে? দুর্জনদের ভ্রান্তি নিবারণ।💠


আমাদের নজরে এসেছে, কতিপয় স্বাধ্যায়হীন অমরেশ্বর ও লক্ষ্মণ স্বরূপ এর নিরুক্ত ভাষ্য এবং অনুবাদ থেকে আংশিক উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছে নিরুক্তে (৭।৮) নাকি বলা আছে —


(১) নিরুক্ত অনুযায়ী, “বেদে” অগ্নি ও পূষা এবং অগ্নি ও বিষ্ণুর সম্মিলিত হবি প্রদানের কথা আছে । অথচ বর্তমানে বেদে এমনটা পাওয়া যায় না। তাই এই মন্ত্র বেদ থেকে হারিয়ে গেছে। 


(২) অগ্নি ও পূষার সহস্তুতির কথা বেদে নেই কিন্তু বর্তমানে বেদে এমন সহস্তুতির কথা পাওয়া যায় । যথা: ঋগ্বেদ ১০ ১৭।৩ । সুতরাং, বেদ প্রক্ষিপ্ত! 


(১) নিরুক্ত অনুযায়ী, “বেদে” অগ্নি ও পূষা এবং অগ্নি ও বিষ্ণুর সম্মিলিত হবি প্রদানের কথা আছে । অথচ বর্তমানে বেদে এমনটা পাওয়া যায় না। তাই এই মন্ত্র বেদ থেকে হারিয়ে গেছে। 


(২) অগ্নি ও পূষার সহস্তুতির কথা বেদে নেই কিন্তু বর্তমানে বেদে এমন সহস্তুতির কথা পাওয়া যায় । যথা: ঋগ্বেদ ১০।১৭।৩ । সুতরাং, বেদ প্রক্ষিপ্ত! 


আমরা ধারাবাহিকভাবে তাদের এই অযৌক্তিক দাবি দুটি খণ্ডন করছি। যেহেতু তারা নিরুক্তের রেফারেন্স উল্লেখের ক্ষেত্রে পৌরাণিক সন্ধানসূত্রকেই নিরপেক্ষ মেনেছে তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা পৌরাণিক সূত্র থেকেই অধিক প্রমাণ দেবো পাশাপাশি আর্ষ প্রমাণসমূহও উল্লেখ করবো।

 


🔷 প্রথম দাবির খণ্ডন: 


১— দুর্জনেরা অমরেশ্বর ঠাকুরের নিরুক্তের আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে ৭।৮।৫ এর অমরকৃত ভাষ্যে লেখা আছে- 


“আগ্নাবৈষ্ণবং চ হবিঃ ( অগ্নি ও বিষ্ণুকে সম্মিলিতভাবে প্রদত্ত হবির কথাও আছে) ; তু (কিন্তু) দশতয়ীষু ( দশ মণ্ডলাত্মক ঋগ্বেদের ❝শাখাসমূহে❞)

সংস্তবিকী ঋক্ ন বিদ্যতে (অগ্নি ও বিষ্ণু সহস্তুত হইয়াছেন, ইদৃশ ঋক্ নাই)

 

🔍সমীক্ষা: অপপ্রচারকারীরা অমরেশ্বরের নিরুক্ত ব্যবহার করলেও সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে যে, অমরেশ্বর তার ভাষ্যে বলেছেন, অগ্নি ও বিষ্ণুর সম্মিলিত হবি প্রদানের মন্ত্র থাকার কথা শাখাসমূহের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে। যদিও দশতয়ী শব্দটি দশমণ্ডলাত্মক ঋগ্বেদকে নির্দেশ করে কিন্তু এখানে “দশতয়ীষু” বহুবচন হিসেবে থাকার কারণে এখানে এই শব্দটি  দ্বারা কেবলমাত্র মূল ঋগ্বেদ সংহিতাকে বোঝাচ্ছে না বরং বিবিধ শাখাদিকেও নির্দেশ করছে। এপ্রসঙ্গে অমরেশ্বর লিখেছেন — 

❝দশতয়ীষু— দশমণ্ডলাবয়ব ঋক্ সংহিতার নাম দশতয়ী ; বহুবচনের দ্বারা শাখাসমূহের বোধ হইতেছে❞

 



এর পরবর্তী সূত্রে অগ্নি ও পূষার হবিঃ বিষয়ক মন্ত্রের সন্ধানও “দশতয়ীষুকেই” তথা শাখাসমূহকেই নির্দেশ করবে! যদিও অগ্নি ও পূষার হবি ও সহস্তুতির মন্ত্রের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তিনি অনুবাদে “বেদ” শব্দ ব্যবহার করেছেন! কিন্তু মূলশব্দ বহুবচনাত্মক “দশতয়ীষু” যা তিনি স্বয়ং একই সূত্রের পূর্বের বাক্যের ভাষ্যেই স্বীকার করেছেন । হতে পারে অমরেশ্বর বিবিধ শাখাকেও বেদ মানতেন বলেই পরের অংশে দশতয়ীষু অর্থ করেছেন বেদ এবং আলাদাভাবে আর শাখার কথা লেখার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি। 

আর কেবলমাত্র অর্থ পুঁজি করে মূল সংস্কৃত শব্দকে পাত্তা না দিয়ে অপপ্রচারকারীরা শাখা বাদ দিয়ে প্রমাণ চাইছে কেবলমাত্র মূল সংহিতা থেকে ওসকল মন্ত্রের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির। তো ভুল কার? অমরেশ্বর নাকি তাদের সেটা আগে তারা বিচার করুক। আর যদি ভুল অমরেশ্বরের হয়ে থাকে তাহলে সেই ভুলে ভরা গ্রন্থ তারা কেন অবলম্বন করে  অমরেশ্বরের উক্তির বিপরীত প্রমাণ চাইছে? যেখানে অমরেশ্বর নিজেই বিষয়টিকে শাখাদির সাথেও সম্পর্কিত বলেছেন। 


২— দুর্জনদের ভাবপিতা অমরেশ্বর ঠাকুর কখনোই একথা বলেননি যে “«ঋগ্বেদে» অগ্নি ও বিষ্ণুর হবি প্রদানের মন্ত্র আছে!”


মূলত দুর্গাচার্যের টীকা ফুটনোটে দিলেও সুস্পষ্টভাবে সম্পূর্ণটা অমরেশ্বর উল্লেখ করেননি বলেই এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে আর বিভ্রান্তির মধ্যেই যাদের বসবাস তারা সেই সুযোগটুকু লুফে নিয়েছে। কারণ অমরেশ্বর এক্ষেত্রে যার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন সেই দুর্গাচার্যের মতে এস্থলে বলা হয়েছে, —“অগ্নি ও বিষ্ণুর” সম্মিলিত হবি প্রদানের সহস্তুতিমূলক কোনো ঋক্ ঋগ্বেদে এবং ঋগ্বেদীয় শাখাদিতে নেই । “

নিরুক্তের প্রাচীন টীকাকার দুর্গাচার্য (৭।৮) এসম্পর্কে এই কথা লিখেছেন- 


❝ ঋগ্বেদঃ, তস্য «শাখাঃ দশতস্যঃ»। 

=> ঋগ্বেদ এবং তার শাখাসমূহ 


তাসু একাপি হবিষ্যবিনিয়ুক্তা শস্ত্রমধ্যপাতিনী ঋক্ অগ্নাবিষ্ণোঃ সংস্তবিকী নাস্তি ❞

=> তার মধ্যে একটিতেও অগ্নি ও বিষ্ণুর প্রতি সহস্তুতিমূলক হবিষ্য বিনিয়োগের শস্ত্রমধ্যপাতিনী ঋক্ নেই।

 

যেখানে নিরুক্তকারের অভিপ্রায় অনুসারে প্রাচীন দুর্গাচার্যের টীকায় পরিষ্কারভাবে বলাই আছে যে, ঋগ্বেদে ও তার শাখাসমূহে অগ্নি ও বিষ্ণুর হবি প্রদানের ঋক্ নেই অর্থাৎ এমন সম্মিলিত হবি প্রদানমূলক সহস্তুতি ঋগ্বেদ ও তস্য শাখা ভিন্ন অন্য শাখাদিতে আছে । মূলত অমরেশ্বরও এটিই বলতে চেয়েছেন, সম্পূর্ণ পদার্থ (সংস্কৃত পদ উল্লেখ ব্যতীত) নিম্নরূপঃ 


❝অগ্নি ও বিষ্ণুকে সম্মিলিত হবি প্রদানের কথাও আছে কিন্তু দশমণ্ডলাত্মক ঋগ্বেদের শাখাসমূহে অগ্নি ও বিষ্ণু সহস্তুত হইয়াছেন ঈদৃশ ঋক্ নাই।❞

 


🔍লক্ষ্যণীয়, একাবারের জন্যও অমরেশ্বর ঠাকুর তার অনুবাদে বলেননি -

১) সম্মিলিত হবি প্রদানের কথা “ঋগ্বেদে” আছে। 

(২) সম্মিলিত হবি প্রদানের কথা “ঋগ্বেদীয় শাখাসমূহে” আছে। 


👉অমরেশ্বর ঠাকুর কেবল বলেছেন, ‘অগ্নি ও বিষ্ণুকে সম্মিলিত হবি প্রদানের মন্ত্র আছে।’ এখন প্রশ্ন ওঠে এই সম্মিলিত হবি প্রদানের মন্ত্র কোথায় আছে? এর উত্তরও অমরেশ্বর তাঁর কৃত নিরুক্তভাষ্যে দিয়েছেন। যজুর্বেদীয় শাখাসমূহে এই সম্মিলিত হবি প্রদানের “কথা” আছে। যথা: 

“অগ্নাবিষ্ণু সজোষসেমাঃ………” [ মৈত্রায়ণী সংহিতা - ৪।১০।১, ৪।১১।২, ১।৪‌।১৪, ২।১।৭, ২।৩।৫; তৈত্তিরীয় সংহিতা - ৪।৭।১]

 


৩— একই কথা অগ্নি ও পূষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাদের সম্মিলিত হবি প্রদানের কথা আছে কিন্তু সেটা ঋগ্বেদ ও তস্য শাখাদিতে নেই। 


অমরেশ্বর ঠাকুর অবশ্য পদার্থে অনুবাদ সরলবাক্যে লেখার সময় লিখেছেন —❝অগ্নি ও পূষার সম্মিলিত হবির কথা “বেদে” আছে কিন্তু কেবল ঋগ্বেদ নহে কোনো বেদেই তাঁহাদের সহস্তুতির কথা নাই।❞


📝“বেদে আছে” এই কথাটার ব্যবহার ভুল। কারণ দশতয়ীষু দ্বারা শাখাসমূহকে বোঝাচ্ছে যা অমরেশ্বর পূর্বের সূত্রেই স্বীকার করে নিয়েছেন। আর পূর্বের সূত্রে যেখানে তিনি দুর্গার টীকার আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানেই এটি স্পষ্ট যে এমন সম্মিলিত হবি প্রদানের মন্ত্র (অগ্নি ও বিষ্ণুর ক্ষেত্রে) ঋগ্বেদ এবং তস্য শাখাদিতে নেই বরং অন্য শাখাদিতে রয়েছে। আর পরবর্তী অগ্নি ও পূষা সম্পর্কিত সূত্রটি পূর্ববর্তী সূত্র সংশ্লিষ্ট হওয়ায় এর বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য হয় যে, অগ্নি ও পূষার সম্মিলিত হবি প্রদানের মন্ত্র রয়েছে ঋগ্বেদ ও তস্য শাখা ভিন্ন অন্য শাখাদিতে। 


📖এক্ষেত্রে এই সূত্র অমরেশ্বর যে স্কন্ধ স্বামীর টীকা ফুটনোটে যুক্ত করেছেন। স্কন্দস্বামীর টীকায় বলা আছে —

“অন্ন্যস্মিন্নপি বেদে” অর্থাৎ বেদভিন্ন অন্যত্র হবিপ্রদানের মন্ত্র রয়েছে।  


পূর্বোক্ত অগ্নি ও বিষ্ণুর হবি প্রদান বিষয়েও দুর্গাচার্যের ন্যায় স্কন্দস্বামীর নিরুক্তভাষ্যেও একই কথা বলা হয়েছে যে এমন সম্মিলিত হবি প্রদানের মন্ত্র বেদভিন্ন অন্যত্র শাখাদিতে বিদ্যমান (স্ক.স্বা. ৭।৮- যে সংস্করণ থেকে এটি নেয়া হচ্ছে তা দুর্জনদের আরেক ভরসার স্থল লক্ষ্মণ স্বরূপ সম্পাদিত স্কন্দস্বামী ও মহেশ্বরের নিরুক্তভাষ্য) যথা: 


❝যাসাং তা দশতয়্যঃ ঋগ্বেদস্য শাখাস্তাসু বিদ্যতে তু শব্দ বোধারণার্থে তাস্বেব অন্যত্র বেদে স্যাদপি ।… উদাহরণম্ ‘অগ্নাবিষ্ণু সজোষসেমা বর্ধন্তু বা গিরঃ।’

দ্যুম্নৈর্বাজে ভিরা গতম্।। ❞

 [ মৈত্রায়ণী সংহিতা - ৪।১০।১, ৪।১১।২, ১।৪‌।১৪, ২।১।৭, ২।৩।৫; তৈত্তিরীয় সংহিতা - ৪।৭।১]

 



অর্থাৎ, প্রাচীন ভাষ্যকারণের মতে এটা স্পষ্ট- যাস্কাচার্য এখানে দশতয়ী ও তস্য শাখা ভিন্ন অন্য শাখাদিতেই অগ্নি-বিষ্ণু এবং অগ্নি-পূষার সম্মিলিত হবিঃ প্রদানের মন্ত্র থাকার ইঙ্গিত এবং সহস্তুতি না থাকার কথা বলেছেন। সুতরাং ভাষ্যকার ও আচার্যগণের বক্তব্য বিকৃত এবং আংশিক উপস্থাপন করে সেই মিথ্যাচারের ভিত্তিতে জোর গলায় প্রমাণ চাওয়া অতিমূর্খ অপেক্ষা মহামূর্খ ধূরন্ধরদের বুদ্ধির বিকাশজনিত অভাবের নিদর্শন বলেই ধরে নেয়া হলো। 


৪— প্রাচীন আচার্যদের মত দেখার পর এবার আমরা যদি অমরেশ্বর ছাড়াও অন্যান্য পৌরাণিক পণ্ডিতদের নিরুক্ত লক্ষ্য করি তাহলে সেখানেও একই কথা পাই। 


📖🔹পৌরাণিক পণ্ডিত উমাশঙ্করজীর নিরুক্তভাষ্য যদি দেখি সেখানে ৭।৮ এ লেখা রয়েছে —

❝ অগ্নি অঔর বিষ্ণু কো সংযুক্ত হবি দেতে হ্যৈঁ, কিন্তু [সংযুক্ত] স্তুতি কে ঋচা [ঋগ্বেদ কে] দশ ভাগো মেঁ কহীঁ নহীঁ। ইসি প্রকার অগ্নি অঔর পূষা কো সংযুক্ত হবি দেতে হ্যৈঁ, কিন্তু বৈসী স্তুতি নহীঁ হ্যৈঁ।❞

অর্থাৎ,

❝অগ্নি ও বিষ্ণুর সংযুক্ত হবি দেওয়া হয় কিন্তু [সংযুক্ত] স্তুতির ঋচা [ঋগ্বেদের] দশ মণ্ডলে নেই । একইভাবে অগ্নি ও পূষার সংযুক্ত হবি দেওয়া হয়, কিন্তু সেরকম স্তুতি নেই। ❞



 


📖🔹অনুরূপ কথা নিরুক্ত পঞ্চাধ্যয়ীতে (৭।৮) পৌরাণিক পণ্ডিত চাজ্জুরাম শাস্ত্রীজিও বলেছেন— 

❝অগ্নি কে সাথ বিষ্ণু দেবতা কো ভী হবি দী জাতি হ্যৈঁ। কিন্তু সারে ঋগ্বেদ মেঁ দোনো দেবতাওঁ কী সমান স্তুতি কে ঋচা নহী মিলতী।  ইসী প্রকার অগ্নি অঔর পূষা কী হবি তো সমানরূপ সে দী গঈ হ্যৈঁ কিন্তু সমান স্তবন ইনকা কিসী মন্ত্র মে নহীঁ হ্যৈঁ। কিন্তু অগ্নি অঔর পূষা কা পৃথক পৃথক স্তবন হ্যৈঁ।❞ 


অর্থাৎ,

❝অগ্নির সাথে বিষ্ণু দেবতাকেও হবি দেওয়া হয়। কিন্তু সমগ্র ঋগ্বেদে দুই দেবতার সমান স্তুতির ঋচা পাওয়া যায় না। একইভাবে অগ্নি আর পূষার হবি তো সমানরূপে দেওয়া হয় কিন্তু সমান স্তবন একটি মন্ত্রেও নেই। অগ্নি এবং পূষার পৃথক পৃথক স্তবন রয়েছে।❞

 

📖🔹 পৌরাণিক পণ্ডিত সত্যব্রত সামশ্রমীজির নিরুক্তভাষ্যেও একই কথা লেখা আছে।

 

📖🔹 পৌরাণিক পণ্ডিত বিনায়ক গণেশ আপ্তে’জীর নিরুক্তটীকাতেও (৭।৮) এ অগ্নি-বিষ্ণু, অগ্নি-পূষার সম্মিলিত হবি ঋগ্বেদকে নয় বরং শাখাকে উপলক্ষ্য করে এবং সমানভাবযুক্ত সংস্তব না থাকা ঋগ্বেদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে ।




📖🔹 পৌরাণিক পণ্ডিত শিবদত্ত শর্মা’জীর ব্যাখ্যাকৃত নিরুক্তেও একই কথা বলা হয়েছে। 

 


📖🔹 পৌরাণিক পণ্ডিত সীতারাম শাস্ত্রী’জীর ব্যাখ্যাযুক্ত নিরুক্তভাষ্যও অনুরূপ কথা বিদ্যমান। 


👉একই কথাগুলো আমরা আর্ষভাষ্যেও পাই।


📜 পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ শাস্ত্রী’জীর নিরুক্তবৃত্তিতে লেখা আছে (পদ উল্লেখ ব্যতীত পদার্থ)—

❝…অগ্নি অঔর বিষ্ণু দোনোঁ কী এক হবি কা বিধান পায়া জাতা হ্যৈঁ। পরন্তু দশ মণ্ডলবালী ঋগ্বেদ মেঁ ইসকে বিষ্ণু কে সাথ স্তুতিবালী ঋচা নহীঁ হ্যৈঁ। 

ইসকী অতিরিক্ত অগ্নি অঔর পূষণ্ দোনো কী এক সাথ হবি দী জাতি হ্যৈঁ, কিন্তু সাথ-সাথ স্তুতি কিসী মন্ত্র মে নহীঁ।❞


📜 চন্দ্রমুনি'জীর নিরুক্তভাষ্যে লেখা আছে — 

❝অগ্নি অঔর বিষ্ণু ইন দোনোঁ দেবতাওঁ কো সম্মিলিত হবি তো দী জাতি হ্যৈঁ পরন্তু সমানভাব সে সংস্তব করনে বালী এক ভী ঋচা ঋগ্বেদ মে নহীঁ।❞

 

📜 ব্রহ্মমুনিজীর নিরুক্তসম্মর্ষে লেখা আছে —

❝ অগ্নেবিষ্ণোশ্চ সম্মিলিতং হবির্বিদ্যতে, যথা- “অগ্নাবিষ্ণু সজোষসেমাঃ বর্ধন্তু …” (মৈ০ সং০ ৪।১০।১) পরন্তু সংস্তবিফ্রো স্তুতিবিষয়িকা কা চিদ্দ্গ্ দশতয়ীষু - দশাবয়বা মণ্ডলনি দশতয়া মন্ত্রাঃ স্রিয়াং দশতস্য সপ্তভ্যাং ঋক্ষু তচ্চাখাসু চ ন বিদ্যতে। ❞


📌এথেকে স্পষ্ট—

ক) “দুই দেবতাকে সম্মিলিত হবি দেওয়া হয়” বটে কিন্তু এমন নির্দেশ অমুক বেদ সংহিতায় দেওয়া আছে, অমুক তার মন্ত্র - এমন কোনো সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই । বরং প্রাচীন আচার্যদের অভিমত অগ্নি-বিষ্ণু এবং অগ্নি-পূষার সম্মিলিত হবি দেওয়ার কথা শাখাদিকে লক্ষ্য করেই বলা। 

খ) অগ্নি-বিষ্ণুকে এবং অগ্নি-পূষার সম্মিলিত হবি দেওয়া হলেও সেরকম কোনো সমানভাবযুক্ত সহস্তুতির ঋচা ঋগ্বেদে নেই।  অন্যত্র থাকলেও থাকতে পারে। 


এটা থেকে আরেকটা জিনিস বোঝা যায় যে, যাস্কের সময় শাখা অবলম্বন করে (শাখার ঐ মন্ত্র আমরা পূর্বেও দেখিয়েছি) যজ্ঞে অগ্নি ও বিষ্ণুর সম্মিলিত সহস্তুতিপূর্বক হবিঃ দেওয়া হতো। কিন্তু যাস্ক যজ্ঞে  বেদমন্ত্রের বিনিয়োগকেই আদর্শ মানতেন। তাই তিনি বলেছেন - “সংযুক্ত হবিঃ দেওয়া হয় বটে , কিন্তু সেরকম কোনো সংস্তব ঋগ্বেদে নেই। “ 

 


৫— পৌরাণিক পণ্ডিত সীতারাম শাস্ত্রীজি তার নিরুক্তভাষ্য (৭।৮) অগ্নির সাথে অন্য দেবতাদের সংস্তবিকী ও হবিষ্য বিনিয়োগের ঋচার পার্থক্য ব্যাখ্যাতে বলেছেন - 

❝ সংস্তব সে প্রয়োজন এসী ঋচাসে হ্যৈঁ, জিস মেঁ কিসী দুসরে দেবতা কে সাথ অগ্নি কী স্তুতি হো জব কি- বহ ঋচা হবিঃ মে বিনিয়োগ না কীগই হো। যদি হবিঃ মে বিনিয়ুক্ত হো বহ সাথ-স্তুতি (সংস্তব) বালী ভী ক্য়োঁ নহীঁ , হবিঃ কী হী সমঝী জায়েগী।❞


অর্থাৎ সংস্তবক ঋচাতে হবিষ্য বিনিয়োগের কোনো লক্ষণ না থাকলেও তা যদি যজ্ঞে হবি প্রদানের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হয় তখন সেটি আর সংস্তবক নয় বরং হবিষ্য বিনিয়োগের ঋচা হিসেবে গণ্য হবে। পৌরাণিক পণ্ডিত প্রবরের মতানুযায়ী এটা স্পষ্ট যে , 

সহস্তুতিমূলক ঋচা আর সম্মিলিত হবি প্রদানের ঋচার পার্থক্য সম্পূর্ণ আপেক্ষিক। কারণ সংস্তবক তথা সহস্তুতিমূলক ঋচাও যজ্ঞে বিনিয়োগ করলে তা আর সহস্তুতিমূলক থাকে না বরং তখন তা হবি প্রদানমূলক ঋচা হিসেবে আখ্যায়িত হয় । অর্থাৎ, সংস্তবিকী এবং হবি প্রদানের ঋচার স্বতন্ত্র পার্থক্যসূচক ধর্ম ততোক্ষণ পর্যন্তই থাকে যতোক্ষণ না তার বিনিয়োগ যজ্ঞে করা হচ্ছে।


এই পৌরাণিক মান্যতার সাথে আর্ষপণ্ডিতদের কৃত নিরুক্ত ব্যাখ্যারও সমর্থন পাওয়া যায়। যেহেতু অগ্নি ও পূষার বিভক্তরূপে করা তথা অসম সংস্তবকও (সমানভাবযুক্ত সহস্তুতি নয় ) যজ্ঞে সম্মিলিত হবি প্রদানে বিনিয়োগ করা যায় এবং তখন তা হবিঃ বিনিয়োগের মন্ত্র বলেই আখ্যায়িত হয় বিধায়, 

📜পণ্ডিত ভগবদত্তজী এবং চন্দ্রমুনি'জীর নিরুক্তে বলা হয়েছে, "ঋগ্বেদে অগ্নি-পূষার হবিঃ থাকলেও" সংস্তব (সমানভাবযুক্ত স্তুতি) নেই।

ঋগ্বেদে (১০।১৭।৩) অগ্নি-পূষার যে বিভক্তরূপে তথা অসম সংস্তব রয়েছে সেটিকেই সম্মিলিত হবিঃ প্রদানে বিনিয়োগ করা যায় বিধায় তারা একথা লিখেছেন। 

 




📜আচার্য সুদর্শনদদেবজীও যজুর্বেদ (১।১৫) ভাষ্য ভাস্করের ভাষ্যসারে স্পষ্টভাবে বলেছেন, - যেসকল বেদমন্ত্র যজ্ঞে হবিঃ প্রদানের নিমিত্তে বিনিয়োগ করা হয় সেগুলোকে “হবিষ্কৃত্ বাক্” বলা হয়।

 

⚠️কিন্তু আমরা দেখছি যে, দুর্জনেরা পৌরাণিকদের কৃত ভাষ্য ও অনুবাদ থেকে নিরুক্তসূত্র উল্লেখ করলেও নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী, এক্ষেত্রে পৌরাণিক মান্যতার বিপরীতে গিয়ে মন্ত্রের অনুবাদমাত্র দেখে নির্ধারণ করছে যে, অমুক মন্ত্র সহস্তুতিমূলক কারণ সেখানে হবি প্রদানের কথা নেই তো অমুক মন্ত্র হবি প্রদানের কারণ সেখানে সহস্তুতি নেই! 

যেহেতু দুর্জনেরা প্রথম থেকেই পৌরাণিক মান্যতার রেফারেন্স ব্যবহার করছে তাহলে তারা কেন পৌরাণিক মান্যতার বিপরীতে গিয়ে মন্ত্রের অর্থ অনুসারে তার হবি প্রদানমূলক বা সহস্তুতিমূলক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ার কথা বলছে? তাদের এহেন দ্বিমুখী আচরণের অর্থ কী এবং উদ্দেশ্যই বা কী? 


 📎সম্মিলিত হবিঃ প্রদানের ক্ষেত্রে পৌরাণিক মান্যতা অনুসারে, “হবিঃ প্রদান করছি” এমন উল্লেখ মন্ত্রে থাকতে হবে এহেন বাহুল্যতা নেই। আর্ষসিদ্ধান্তানুসারেও এমন কথা থাকতে হবে এর প্রমাণ নেই যা আমরা একটু আগেই দেখিয়েছি। তাই সম্মিলিত হবিঃ প্রদানের ক্ষেত্রে মন্ত্রে অগ্নি ও বিষ্ণুর কিংবা অগ্নি ও পূষার নাম পৃথকভাবে উল্লেখ থাকতে হবে কিংবা “হবি প্রদান করছি” এমন কথা থাকতে হবে- দুর্জনদের দেওয়া এমন শর্তও আর থাকে না। আর অগ্নির কর্মই হলো অন্য দেবের জন্য বা অন্য দেবতার হয়ে হবিঃ বহন করে নিয়ে যাওয়া। তাই আলাদাভাবে বারংবার হবির কথা উল্লেখ করার বাহুল্যতা নিষ্প্রয়োজনীয়। যথা: 

“অথাস্য কর্ম বহনং চ হবিষামবহনং চ দেবতানাম্”

[নিরু—৭।৮] 

 

 

📎তাই যজ্ঞাগ্নিতে কেবলমাত্র পূষা কিংবা কেবলমাত্র বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে হবি দেওয়া হলেও তার ভাগ অগ্নি ও বিষ্ণু কিংবা অগ্নি ও পূষা উভয়ই প্রাপ্ত করে বিধায় এক্ষেত্রে সম্মিলিত হবির জন্য পৃথক পৃথক নাম উল্লেখযুক্ত মন্ত্রের বিনিয়োগ করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতাও থাকে না। তাছাড়া শ্রুতি অনুসারেও, অগ্নি,মিত্র, বরুণ আদি গুণ-কর্মভেদে উপাধিভেদ মাত্র থাকলেও সত্তা একই [ ঋগ০ ১।১৬৪।৪৬]

 


📌সারসিদ্ধান্ত: 

যদিও প্রাচীন আচার্যদের মতানুসারে ঋগ্বেদে এবং ঋগ্বেদীয় শাখাদিতে অগ্নি-বিষ্ণু ও অগ্নি-পূষার সম্মিলিত হবি প্রদানের মন্ত্র নেই। কিন্তু সমানভাবযুক্ত সংস্তব নয় তথা বিভক্তরূপে থাকা সংস্তবযুক্ত মন্ত্রগুলোকেই যজ্ঞে বিনিয়োগের মাধ্যমে “সম্মিলিত হবি প্রদানসূচক” মন্ত্ররূপে গ্রহণ করা যায় এবং দুর্জনদের দেখানো নিরুক্তসূত্রের ভাষ্য পৌরাণিক উৎস হতে গৃহীত হেতু সেক্ষেত্রে অর্থের প্রধান্য থাকে না বিধায় সহস্তুতিতে অগ্নি-বিষ্ণু, অগ্নি-পূষার পৃথক উল্লেখ অথবা হবি প্রদান করছি বা স্তুতি করছি - এমন উল্লেখ থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। পাশাপাশি তারা পৌরাণিক সূত্র হলে উল্লেখ করবে আবার আর্ষসিদ্ধান্ত মোতাবেক অর্থানুসারে বিনিয়োগ চাইবে এমন দ্বিমুখী নীতি গ্রহণযোগ্য নয়। যদি তারা সম্পূর্ণ পৌরাণিক সূত্রকে মেনে প্রমাণ উপস্থাপন করতে চায় তাহলে অনুবাদ আর দেবতার নাম উল্লেখ দেখে সহস্তুতি আর হবিষ্য মন্ত্র নির্ণয়ের আশা ছাড়তে হবে। আর যদি তারা আর্ষসিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রমাণ উপস্থাপন করতে চায় তাহলেও তাদের জন্য দুশ্চিন্তার অপেক্ষা রয়েছে। কারণ আর্ষ পণ্ডিতগণও দুর্গাচার্যের বক্তব্যকেই গ্রহণ করেছেন যা তাদের ঋগ্বেদে সম্মিলিত হবি প্রদানের মন্ত্র থাকার এবং তা দেখতে চাওয়ার আবদারকে ধূলিসাৎ করে (২নং এ দুর্গাটীকা ও ৪ নং এ নিরুক্তসম্মর্ষের প্রমাণ দ্রঃ) ।


৬— যাস্কাচার্য প্রায় সকল ক্ষেত্রেই বেদের মন্ত্র প্রমাণ দর্শিয়েছেন। যদি যাস্কের অভিপ্রায় এই হতো যে “ঋগ্বেদে এমন সম্মিলিত হবি প্রদানের মন্ত্র রয়েছে” এটা বোঝানো তাহলে তিনি সেই ঋক্ মন্ত্র উল্লেখ করে দিতেন কিংবা উল্লেখ না করলেও সেটা হারিয়ে গেছে একথা স্পষ্টই লিখে দিতে পারতেন। কিন্তু যাস্কাচার্য এধরনের কথা লেখেননি। এথেকে স্পষ্ট যে, 


ক) মহর্ষি যাস্ক কখনোই এটা বলেননি  “ শাখাব্যতীত কেবলমাত্র ঋগ্বেদ সংহিতায়” অগ্নি-বিষ্ণুর, অগ্নি-পূষার সম্মিলিত হবি প্রদানের মন্ত্র আছে। 

খ) ঋগ্বেদে এমন মন্ত্র ছিল কিন্তু এখন আর পাওয়া যায় না। 


সুতরাং যে মন্ত্রের কোনো নিত্য স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্ব কখনোই বেদে ছিল না এবং তা নিরুক্তকার কর্তৃক দাবিও করা হয়নি । তাই এমন ঋগ্ মন্ত্রের হারিয়ে যাওয়ার আক্ষেপ করাও বৃথা। 


🔷দ্বিতীয় দাবি - “অগ্নি ও পূষার সহস্তুতির কথা বেদে নেই কিন্তু বর্তমানে বেদে এমন সহস্তুতির কথা পাওয়া যায় । যথা: ঋগ্বেদ ১০।১৭।৩ । সুতরাং, বেদ প্রক্ষিপ্ত!”

এর খণ্ডন: 

এই বিষয়ে আমরা একটি কথাই বলবো। তাদের প্রিয় অমরেশ্বর থেকে শুরু করে প্রাচীন নিরুক্ত ভাষ্যকারদের টীকা আদিতেও স্পষ্টই বলা আছে বেদের যেখানে সেখানে অগ্নি ও পূষার নাম এসেছে সেখানে তা সমতুল্য বা সমানভাবরূপে আসেনি বিধায় তা সহস্তুতিমূলক নয়। কেবলমাত্র অগ্নি ও পূষার নাম একত্রে একটি স্তুতিমূলক মন্ত্রে থাকলেই সেটা সহস্তুতিমূলক হয়ে যাবে তাদের এই ভ্রান্ত ধারণার জবাব আমরা পূর্বোক্ত খণ্ডনের ৫নং এ দেখিয়েছি। সুতরাং, বেদের কোথাও অগ্নি-পূষার স্তুতি দেখামাত্রই সেটিকে সমানভাবযুক্ত সহস্তুতি বলে চালিয়ে দেয়া অর্থহীন। যথা: 


১— তাদের প্রিয় অমরেশ্বর দিয়েই শুরু করা যাক্। ‘অগ্নি-পূষার সহস্তুতি বেদে নেই’ (৭।৮।৬) একথা বলার পরই বলা হয়েছে, 

❝তত্রৈতাং বিভক্তস্তুতিমৃচমুদাহরস্তি❞

পদার্থ (সংস্কৃত পদ উল্লেখ ব্যতীত): “সংস্তব বিষয়ে এই বিভক্তভাবে স্তুতি হইয়াছে যাহাতে এরূপ একটি ঋক্ নিরুক্তকারগণ উদ্ধৃত করেন।”

আর এরপরই ১০।১৭।৩ মন্ত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে অগ্নি-পূষা সমানভাবে সহস্তুত হয়নি বরং বিভক্তভাবে তথা পরস্পর হতে পৃথক বা ভিন্ন স্তুতি করা হয়েছে।

 


কিন্তু অনুবাদসর্বস্ব জ্ঞানধারী দুর্জনেরা কেবলমাত্র অগ্নি ও পূষার নাম উল্লেখ দেখে এটিকেই সহস্তুতিমূলক মন্ত্র হিসেবে ধরে নিয়েছে ! আর প্রচার করে বেড়াচ্ছে ঋগ্বেদে অগ্নি-পূষার সহস্তুতি রয়েছে!

নিরুক্তকার যদি জানতেন বর্তমানে তাঁর রচনার এমন বিপরীত আর উদ্ভট ব্যাখ্যা দুঃসাহসপূর্বক জ্ঞানশূন্য অনধিকারীরা করবে তাহলে হয়তো তিনি নিরুক্ত রচনাই করতেন না।


২—  প্রথম খণ্ডনে আমরা যেসকল রেফারেন্স উল্লেখ করেছিলাম - দুর্গাটীকা, স্কন্দভাষ্য, সত্যব্রত সামশ্রমী, পণ্ডিত উমাশঙ্কর, পণ্ডিত চাজ্জুরাম শাস্ত্রীর নিরুক্ত পঞ্চাধ্যয়ী, পণ্ডিত গণেশ আপ্তের নিরুক্তটীকা, নিরুক্তসম্মর্ষ গ্রন্থ, পণ্ডিত সীতারাম শাস্ত্রীর নিরুক্ত অনুবাদ, পণ্ডিত শিবদত্ত শর্মার নিরুক্তব্যাখ্যা, লক্ষ্মণ স্বরূপের সম্পাদিত দুর্গাটীকা ও স্কন্ধভাষ্য, চন্দ্রমুনি'জীর নিরুক্ত ভাষ্য, পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ শাস্ত্রী'জীর নিরুক্তবৃত্তি— সকল জায়গাতেই বলা আছে ঋগ০ ১০।১৭।৩ এ সমানভাবে সহস্তুতি আসেনি বরং উক্ত মন্ত্রে পরস্পর হতে পৃথক বা ভিন্ন স্তুতি করা হয়েছে। 

তাই কেবলমাত্র অগ্নি-পূষার নামমাত্র উল্লেখ আর ভিন্ন প্রকার স্তুতি দেখে সেটিকে সহস্তুতি বলে চালিয়ে দিয়ে তথা নিরুক্তাকারের মতবিরুদ্ধ অর্থ ও ব্যাখ্যা করে বেদে প্রক্ষেপের অভিযোগ আনা বিদ্বানদের নিকট তাদের জ্ঞানশূন্যতা আর মূর্খতার নিদর্শন বলেই গণ্য হবে। 


✅ মূলত সম্মিলিত হবি প্রদান বা সমানভাবরূপে সংস্তব তথা সহস্তুতিকে লক্ষ্য করে নিরুক্তকার মন্ত্রের শ্রেণিবিভাজন করেননি যেটা দুর্জনরা দেখাতে চেয়েছে। বরং মন্ত্রের প্রকরণ অনুসারে, তা সংস্তব বা সহস্তুতি, বিভক্তরূপে স্তুতি এবং সম্মিলিত হবিঃ প্রদানের মন্ত্ররূপে বিবিধ প্রয়োজনানুসারে বিনিয়োগ করার কথাই বলেছেন। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ এই শ্রেণিকরণ আপেক্ষিক এবং ক্ষেত্রবিশেষের উপর নির্ভর করছে মাত্র। অতএব অপপ্রচারকারীদের অপপ্রচারের পৌরাণিক উৎসস্থলের অসংখ্য প্রমাণ এবং আর্ষসিদ্ধান্তানুকাল প্রমাণও উপস্থাপনপূর্বক নিরপেক্ষ পর্যালোচনার দ্বারা এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হওয়া যায়, নিরুক্তে কোথাও ঋগ্বেদে প্রক্ষেপের কথা বা মন্ত্র হারিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ নিরুক্তকার কখনোই বলেননি। বরং তা দিকজ্ঞানশূণ্য অজ্ঞদের কষ্টকল্পনা মাত্র। 


বাংলাদেশ অগ্নিবীর

সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক।