ও৩ম্ তৎ সৎ
নমস্তে ।
বর্তমান সম্পর্কে বেদ ও প্রতিমাপূজা সম্পর্কে একটি অনাবশ্যক দ্বন্দ তৈরি হয়েছে । ভূতপূর্ব সময় থেকেই বেদে যে প্রতিমাদিপূজা নেই তা স্বীকৃত । কিন্তু আধুনিককালে সম্প্রদায়গত স্বার্থে ও যেহেতু সনাতনীরা মূল বৈদিক ধারা গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে পারছেন তাই সব মতবাদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তাদের সিদ্ধান্তগুলোকে বেদের নামে প্রতিষ্ঠা করার জন্য৷ বেদে সাকারবাদ অন্বেষনের পুরাতন কৌশলই । বেদে ব্রহ্ম সাকার নয় এটিই সর্বজন বিদিত।কিছু পৌরাণিক বেদে জোরপূর্বক কুভাষ্য থেকে ঈশ্বর সাকার দেখানোর চেষ্টা করেন। মজার ব্যাপার হলো সেখানে অধিকাংশস্থলেই দেবতাদেরই সাকার প্রমাণ হয় কেননা সায়ণভাষ্য অনুযায়ী দেবতা ও ব্রহ্ম তো এক নয় । আর অদ্বৈতবাদী সায়ণের ভাষ্য দ্বারা বেদে সাকারবাদ খোঁজ করা বাতুলতা । কেননা অদ্বৈতবাদীরাও মানে ব্রহ্ম নির্গুণ নিরাকার । সগুণ বা সাকার এসব দ্বৈতভাবে সাময়িক সত্য হলেও পারমার্থিক সত্য নয় । পাশাপাশি পৌরাণিক কোন বেদভাষ্য সম্পূর্ণ সঠিক তাতেও আসতে রাজিনা । কেননা না আছে তেমন মানদণ্ড না আছে তা প্রমাণের ক্ষমতা । বেদের ভুল অনুবাদ, উপনিষদের যথাযথ ব্যাখ্যা না করে খণ্ডিতাংশ প্রচার করে । পুরাণের বেলাতেও যদিও তাদের মধ্যেই মতভেদ বিদ্যমান যখন বিপদে পড়ে তখন রূপক বা ঐ অংশ মানি না বলে । রামায়ণ - মহাভারত পড়ার জীবনে এদের উদ্দেশ্য কেবল 'সাকার আর মূর্তিপূজা' অন্বেষণ করা । বিলুপ্ত সহস্রাধিক শাখার বিপরীতে কিছু শাখার অতিরিক্ত বা পরিশিষ্ট দিয়ে প্রতিমাপূজা প্রমাণ করতে চাওয়ারা বিধর্মীদের কাছে এই অস্ত্র তুলে দিচ্ছে যে শাখাও যেহেতু বেদ তাই ৯০% যেসব শাখা হারিয়ে গিয়েছে তাই বেদও হারিয়ে গিয়েছে। যদিও বিধর্মী ও পৌরাণিক উভয়েই বেদের প্রচার হ্রাস ও খণ্ডিতাংশ দ্বারা স্বার্থসিদ্ধি করতে পারলেই খুশি হয় । বেদ - উপনিষদের যত জায়গায় তারা সাকারবাদ বা মূর্তিপূজা দেখাতে চায় তার সব খণ্ডন পাবেন এখানে -https://back2thevedas.blogspot.com/2023/12/blog-post_27.html?m=1
এখন আমরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য নানা 'বিখ্যাত' গবেষকদের মতামত সম্পর্কে জানবো যে বেদে প্রতিমাপূজা আছে নাকি নেই । বলা বাহুল্য এসবই 'দুর্জনসন্তোষ' ন্যায় অনুযায়ী নেওয়া । শাস্ত্র প্রমাণই মূল । এসব প্রমাণ প্রদর্শন কেবল সুনির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর জন্য ।
১. রমেশ চন্দ্র দত্তঃ ইনি ঋগ্বেদের বাংলা অনুবাদক । সায়ণভাষ্যানুযায়ী তিনি বেদের বাংলা অনুবাদ করেছেন। অধিকাংশ স্থলে এখনো এই অনুবাদ অনুযায়ীই চলা হয় পৌরাণিকরাও বাংলায় এটি অনুসরণ করেন । তার বই Ancient India-তে তিনি লিখেছেন যে বৈদিক যুগ এবং বেদে মূর্তিপূজা হতোনা ।
বইটির পৃষ্ঠা ৩২ - তিনি লিখেছেন, বেদে কোথাও কোন মূর্তির উল্লেখ নেই এবং প্রারম্ভিক হিন্দুরা পৌত্তলিক ছিলো না ।
বইটির পৃষ্ঠা ৬০ - তিনি লিখেছেন, বৈদিক যুগে কোন মূর্তি পুজা হতো না ।
The History of Ancient India গ্রন্থের ভূমিকার xxxiii পৃষ্ঠাতেই একই কথা বলেছেন ।
২. ড. হংস নারায়ণ ভট্টাচার্যঃ হিন্দুদের দেবদেবী - উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ৩৩ পৃষ্ঠায় বলেছেন বৈদিক যুগে মূর্তি গড়ে পুজা হতো এই বক্তব্য নিছক কল্পনাভিত্তিক । বলা বাহুল্য ড. অবিনাশচন্দ্র দাস ও Dr. Bollenson এর মত এতেই খণ্ডিত হয় ।
৩. Horace Hayman Wilson তথা H. H. Wilson ঋগ্বেদ ও বিষ্ণু পুরাণ ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন । রামকৃষ্ণ মিশন অব কালচারাল ইন্সটিটিউট বহুস্থলে অনুবাদে উইলসনের অনুবাদের সাহায্য নিয়েছেন । তিনি তার ঋগ্বেদের ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকার ২২ নং পৃষ্ঠায় বলেছেন, বেদে কোথাও কোন মন্দিরের উল্লেখ নেই যেখানে প্রকাশ্যে উপাসনা হতো ।
উইলসন তার বিষ্ণু পুরাণের ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকার ৩ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, বেদে অধিকাংশ স্থলে গৃহস্থালী যজ্ঞের উল্লেখ পাওয়া যায় , কোন মন্দিরের উল্লেখ নেই.. এক কথায় বলতে গেলে বৈদিক ধর্ম মূর্তিপূজক ছিলো না ।
৪. স্বামী বিবেকানন্দঃ স্বামী বিবেকানন্দের নিঃসন্দেহে প্রতীকোপাসক ছিলেন ও এরপক্ষে নানা বক্তব্য ও যুক্তিও দিয়েছেন । যদিও তার নানা বক্তব্য নানা স্থানে নানা রকম তারপরেও দেখা যায় বেদে প্রতিমাপুজা আছে তা তিনি স্বীকার করেননি ।তার মতে, 'বেদে মূর্তিপূজার উল্লেখ নাই। স্রষ্টা এবং সখারূপে ঈশ্বরের অভাববোধের প্রতিক্রিয়া হইতেই শ্রেষ্ঠ আচার্যগণের মূর্তিকে ঈশ্বর কল্পনা করিয়া লওয়া হইয়াছে।' - স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা, দ্বিতীয় খণ্ড, জ্ঞান যোগ কথা
৫. দুর্গাদাস লাহিড়ী ঋগ্বেদের মর্ম্মানুসারী ব্যাখ্যার ভূমিকায় লিখেছেন বৈদিক দেবতাদের উপাসনার পদ্ধতি ২ প্রকার - স্তোত্র পাঠ ও ঘৃতাদি আহুতি প্রদান - পৃষ্ঠা ৬০। এতেও প্রমাণিত হয় মূর্তিপূজা হতো না ।
৭. ড. দুর্গাদাস বসু সরস্বতী তার 'হিন্দুধর্মের সারতত্ত্ব' বইয়ের ১০০পৃষ্ঠাতেও বলেছেন ব্রহ্মের কোন প্রতিমা হয় না ।
৮. Sir Monier Monier-Williams তার Indian Wisdom বইতে ২২৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন মনুর যুগেও মূর্তিপূজা ছিলো কিনা তা খুবই সন্দেহজনক ।
৯. Mountstuart Elphinstone এর The history of India বইয়ের ৭৩ পৃষ্ঠাতে দেখি তিনি বৈদিক যুগে কোন প্রতিমা বা তার উপাসনার মন্দির অস্বীকার করেছেন ।
১০.
0 মন্তব্য(গুলি)