পৌরাণিকঃ পুরাণ বেদের সমান মর্যাদাপূর্ণ কেননা ছান্দোগ্যপনিষদ্ ৭।১।২ এ পুরাণ কে পঞ্চম বেদ বলা হয়েছে।
নিরীক্ষকঃ পুরাণ এবং বেদের ভাষা ও শ্রৌতসাহিত্য সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান না
থাকার কারণে এরূপ নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিচ্ছেন। এখানে পুরাণ শব্দ এবং
পুরাণের সাথে বেদ শব্দ দেখেই পুরাণকে বেদের ন্যায় ঈশ্বর প্রদত্ত মনে
করছেন।
"তাভ্যঃ পঞ্চবেদান্নিেমিয়ত। সর্পবেদং পিশাচবেদমসুরবেদমিতিহাসবেদং পুরাণবেদমিতি", অর্থাৎ তাহা থেকে সর্পবেদ, পিশাচবেদ, অসুরবেদ, ইতিহাসবেদ এবং পুরাণবেদ নির্মিত হয়েছে। এখানে ইতিহাস এবং পুরাণকেও বেদ নামে বর্ণনা করা হয়েছে।
ভরতকৃত নাট্যশাস্ত্রে লেখা রয়েছে -
সঙ্কল্প্য বগবানেবং সর্ববেদাননুস্মরন্। নাট্যবেদং ততশচক্রে চতুর্বেদাঙ্গসম্ভবম্।।
জগ্রাহ পাঠ্যমৃগ্বেদাৎসামেভ্যো গীতমেব চ। যজুর্বেদাদভিনয়ান রসানাথর্বণাদপি।।
(নাট্যশাস্ত্র ১।১৭-১৮)
অর্থাৎ চার বেদ থেকে সংকলন করে ভগবান ব্রহ্মাজী নাট্যবেদ তৈরী করেছেন। ঋগবেদ থেকে পাঠ নিয়ে, সামবেদ থেকে গীত নিয়ে, যজুর্বেদ থেকে অভিনয় নিয়ে এবং অথর্ববেদের রস গ্রহন করে।
এখানে স্পষ্ট যে নাট্যশাস্ত্রকে নাট্যবেদ বলা হয়। যেমন চরক এবং সুশ্রুত সংহিতা কে আয়ুর্বেদ নারদ সংহিতা কে গান্ধর্ববেদ এবং ধনুর্বেদ ইত্যাদি প্রভূত শাস্ত্র বেদ নামে প্রসিদ্ধ। এসব শাস্ত্রে বেদ শব্দ উপাচার রূপে এসেছে অর্থাৎ গৌণ বৃত্তিতে। কারণ জ্ঞানের সাধন হওয়ার কারণে গৌণ বৃত্তিতে এগুলোকে বেদ বলা হয়েছে।
পরন্তু ছান্দ্যোপনিষদে উক্ত খণ্ডে পুরাণকে পঞ্চম বেদ বলা হয় নি বরং চারবেদ তথা পঞ্চমত পুরাণ, ইতিহাসকে বেদের জানার বিষয় রূপে বর্ণনা রয়েছে। এখানে নারদ সিরিয়ালি ক্রম বলছেন যে তিনি কী কী পড়েছেন । যথাঃ
স হোবাচ ঋগ্বেদং ভগবোঽধ্যেমি যজুর্বেদঁ সামবেদমাথর্বণং চতুর্থমিতিহাসপুরাণং পঞ্চমং বেদানাং বেদং পিত্র্যঁ রাশিং দৈবং নিধিং বাকোবাক্যমেকায়নং দেববিদ্যাং ব্রহ্মবিদ্যাং ভূতবিদ্যাং ক্ষত্রবিদ্যাং নক্ষত্রবিদ্যাঁ সর্পদেবজনবিদ্যামেতদ্ভগবোঽধ্যেমি ॥
(ছান্দ্যোগ্য ৭।১।২)
(সঃ হ উবাচ) প্রসিদ্ধ নারদ বললেন (ভগবঃ) হে ভগবান! (ঋগবেদং) ঋগ্বেদ (যজুর্বেদং) যজুর্বেদ (সামবেদ) সামবেদ (চতুর্থ) চতুর্থ (অথর্বণং) অথর্ববেদ (অধ্যেমি) আমি অবগত আছি । (পঞ্চমং) পঞ্চমত (ইতিহাস) ইতিহাস (পুরাণং) পুরাণ (বেদানাং) বেদের (বেদ) জানার বিষয় [ অর্থাৎ বেদের মুখ্য বিষয়] (পিত্র্য) শশ্রুষা বিষয় (রাশি) গণিত (দৈবং) উৎপাত বিজ্ঞান (নিধি) অর্থশাস্ত্র (বাকোবাক্যম) তর্কশাস্ত্র (একায়নম্) নীতিশাস্ত্র (দেববিদ্যাম্) নিরুক্ত (ব্রহ্মবিদ্যাম্) ঈশ্বর প্রাপ্তি বিজ্ঞান (ভূতবিদ্যাম) প্রাণীশাস্ত্র (ক্ষাত্রবিদ্যাম্) ধনুর্বিদ্যা (নক্ষত্রবিদ্যা) জ্যোতিষ (সর্পবিদ্যাম্) বিষাক্ত জন্তুর বিদ্যা (দেবজনবিদ্যাম) নৃত্যগীত বাদ্যশাস্ত্র (এতত ভগবঃ অধ্যেমিদ) এই সব হে ভগবন! আমি অবগত আছি।
এখানে পুরাণং পঞ্চমং বেদানাং বেদ - এখানে "বেদানাং বেদ" আলাদা । পুর্বের সাথে এর সম্পর্ক নেই । এখানে 'বেদানাং বেদ' বলতে ব্যাকরণকে বুঝানো হয়েছে যা সব ভাষ্যকার মানেন ।
তফাত এটাই যে মূলে 'পঞ্চমং" থাকাতে অনেকেই আগ বাড়িইয়ে সেটাকে পঞ্চম বেদ বানিয়েছেন । মিশন পদার্থে ভুল করলেও অনুবাদে স্থান হিসেবেই দিয়েছে । এর সাথে পরে ব্যাকরণ বোধক 'বেদানাং বেদ' পদের কোন সম্পর্কই নেই । যে এটাকে বেদ হিসেবে ভাবে সে সংস্কৃত শাস্ত্র কিছুই জানেনা ।
পৌরাণিকগণ যদি উক্ত শ্লোকে পুরাণকে (প্রচলিত ১৮ পুরাণ নয়) পঞ্চম বেদ রূপেই
গ্রহণ করতে চান তবে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কারণ উপরে আমরা অনেক প্রকার
বেদের বর্ণনা দেখিয়েছি। তাই কোন শাস্ত্রে বেদ শব্দ প্রযুক্ত হলে এমন
আশ্চর্য হবার কিছুই নেই যে, সেটা ঈশ্বরকৃত বলে সিদ্ধ হতে পারে।
0 মন্তব্য(গুলি)