https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

পুরাণের ৩৩ কোটি দেবতা ৩৩ প্রকার নয় বরং ৩৩ কোটিই

Sunday, February 16, 2025

 
✅ পুরাণের ৩৩ কোটি দেবতা ৩৩ প্রকার নয় বরং ৩৩ কোটিই

▪️ সম্প্রতি পৌরাণিক মতালম্বীদের মধ্যে পুরাণ কথিত ৩৩ কোটি [Crore] দেবদেবীকে বৈদিক ৩৩ টি দেবতার সাথে সম্পৃক্ত করে ভ্রান্তিময় প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে। তারা বিস্মৃত হয়েছেন পুরাণে ৩৩ কোটি বলতে ৩৩০ মিলিয়নকেই বোঝায়। বেদে ৩৩টি যে দেবতা হলো - “অষ্টৌ বসব একাদশ রুদ্রা দ্বাদশদিত্যাস্ত একত্রিংশদিন্দ্রশ্চৈব প্রজাপতিশ্চ ত্রয়ত্রিংশাবিতি” [বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৩।৯।২] অর্থাৎ অষ্ট বসু, একাদশ রুদ্র, দ্বাদশ আদিত্য এই কয়জন মিলে একত্রিশ এবং ইন্দ্র ও প্রজাপতি মিলে তেত্রিশ দেব।

★ অষ্ট বসুঃ [অগ্নিশ্চ পৃথিবী চ বায়ুশ্চান্তরিক্ষং চাদিত্যশ্চ দ্যৌশ্চ চন্দ্রমাশ্চ নক্ষত্রাণি চৈতে বসব; বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৩।৯।৩।] অর্থাৎ অগ্নি, পৃথিবী, বায়ু, অন্তরিক্ষ, আদিত্য, দ্যুলোক, চন্দ্র, নক্ষত্রপুঞ্জ এই অষ্ট বসু। কারণ মহাবিশ্বের সকল পদার্থ এদের মধ্যেই নিহিত আছে। সেই জন্য এদের নাম বসু।
★ একাদশ রুদ্রঃ [দশেমে পুরুষে প্রাণা আত্মৈকাদশস্তে; বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৩।৯।৪] অর্থাৎ পঞ্চ প্রাণ এবং পঞ্চ উপপ্রাণ এই দশ এবং জীবাত্মা মিলে একাদশ রুদ্র। এই এগারো দেহান্তকালে রোদন করায়, বলে এদের রুদ্র বলা হয়। এগুলো হচ্ছে - পঞ্চ প্রাণ: প্রাণ, উদান, সমান, ব্যান, অপান। উপ প্রাণ: নাগ, কুর্ম, কৃকল, দেব, ধনঞ্জয় এবং জীবাত্মা।
★ দ্বাদশ আদিত্যঃ [দ্বাদশ বৈ মাসাঃ; বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৩।৯।৫] সম্বৎসরে যে বারো মাস আছে, তারাই আদিত্য। কারণ এই সমস্তকে আদান করে যান। যেহেতু এই সমস্তকে আদান করে যান, অতএব তারা আদিত্য। দ্বাদশ আদিত্য হচ্ছে - চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্রপদ, আশ্বিন, কার্তিক, মার্গশীর্ষ, পৌষ, মাঘ এবং ফাল্গুন।
★ ইন্দ্রঃ [স্তনয়িত্নুরেবেন্দ্রো; বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৩।৯।৬] অর্থাৎ বিদ্যুৎ হচ্ছে ইন্দ্র। কারণ তা ঐশ্বর্যের সাধন। বিদ্যুৎ হতে গতি শক্তি, আলোক প্রকাশ, সমৃদ্ধি এবং সুখের সাধন প্রাপ্তি হয়।
★ প্রজাপতিঃ [য়জ্ঞঃ প্রজাপতিরিতি; বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৩।৯।৬] যজ্ঞ হচ্ছে প্রজাপতি। কারণ এর দ্বারা বর্ষা হয়, প্রাণিদের সুখ মেলে। গীতা ৩।১৪ মধ্যে বলা হয়েছে - প্রাণী অন্ন থেকে, অন্ন বৃষ্টি থেকে এবং বৃষ্টি যজ্ঞ দ্বারা উৎপন্ন হয়। এই প্রকারে যজ্ঞ প্রাণীদের জীবন ও সুখের আধার।


▪️ পুরাণে ৩৩ কোটি দেবতার উল্লেখ আমরা নানা স্থানে পাই। যেমন,

দেবাকোট্যস্ত্রয়স্ত্রিংশদ্গণাঃ কোট্যযুতদ্বয়ম্ ।
নবকোট্যস্তু চামুণ্ডা ভৈরব্যঃ কোটিসংমিতাঃ ॥
স্কন্দপুরাণ কাশীখণ্ড ৬২.৯৯৩৩
= কোটি দেবতা, ২০ কোটি শিবগণ, ৯ কোটি চামুণ্ডা, ১ কোটি ভৈরবী ও ৮ কোটি স্কন্দ অনুচর যারা কিনা ষড়ানন ও ময়ূরবাহন তারা এলেন।

অন্যদিকে,
সরূপাসূত ভূতস্য ভার্যা রুদ্রাংশ্চ কোটিশঃ।
রৈবতোঽজো ভবো ভীমো বাম উগ্রো বৃষাকপিঃ।
অজৈকপাদহির্বুধ্ন্যো বহুরূপো মহানিতি।
ভাগবত ৬.৬.১৭-১৮ অনুযায়ী, দক্ষনন্দিনী সরূপা থেকে কোটি কোটি রুদ্রগণের উৎপত্তির উল্লেখ আছে। যাদের মধ্যে ১১জনকে প্রধান বলা হয়েছে।

যদিও স্কন্দপুরাণ আবন্ত্যখণ্ডের চতুরাশীতি লিঙ্গ মাহাত্ম্য ৫২.১২ অনুযায়ী ‘পূর্বং দেবগণাশ্চৈব ত্রয়স্ত্রিংশচ্চ দেবতাঃ’ প্রথমে ৩৩ দেবতার উৎপন্নের কথা লেখা হয়েছে তবে প্রাগুক্ত অনুচ্ছেদ বহুদেবতাবাদের চূড়ান্ত রূপকেই দেখায়। স্কন্দপুরাণের প্রভাসখণ্ডের প্রভাসক্ষেত্রমাহাত্ম্য ২১.১১-১২ ‘আপো ধ্রুবশ্চ সোমশ্চ ধরশ্চৈবানলোঽনিলঃ/ প্রত্যূষশ্চ প্রভাসশ্চ বসবোষ্টৌ প্রকীর্তিতাঃ’ ও স্কন্দপুরাণের নাগরখণ্ডের তীর্থমাহাত্ম্যের ১৪৫.৪০-৪১ ‘ততোঽষ্টৌ বসবস্তত্র দ্বাদশার্কাস্তথৈব চ/একাদশাপরে রুদ্রা নাসত্যৌ দ্বৌ চ সুন্দরৌ’ ৩৩ দেবতার যে সূচি প্রদান করে তা বৃহদারণ্যকোক্ত সূচি থেকে ভিন্ন।

সেখানে ৮ বসু হলো ধর, ধ্রুব, সোম, মখ, অনিল, অনল, প্রত্যুষ, প্রভাস; ১১ রুদ্র বৃষধ্বজ, শর্ব্ব, মৃগব্যাধ, অজৈকপাৎ, অহির্ব্রধ্ন, পিনাকী, দহন, ঈশ্বর, কপালী, বৃষাকপি, রুদ্র, ক্র্যম্বক; ১২ আদিত্য হলো বরুণ সূর্য, ভানু, তপন, ইন্দ্র, অর্যমা ধাতা, ভগ্‌, গভন্তি, ধর্মরাজ, স্বর্ণয়েতা, দিবাকর, মিত্র, বাসুদেব। ইন্দ্র ও প্রজাপতিকে বাদ দিয়ে অশ্বিনীকুমারদ্বয়কে ২টি দেবতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অগ্নিপুরাণ ২৬৮-৬৯, ২১৯; পদ্মপুরাণ সৃষ্টিখণ্ড অধ্যায় ৫-৬; শিবপুরাণ রুদ্রসংহিতার যুদ্ধখণ্ডে অধ্যায় ৩৩.৬-৩৫ আলাদা আলাদা দেবতা তালিকা প্রদান করে।

মহাভারতের অনুশাসন পর্বের ১৫০ অধ্যায়, শান্তিপর্বের ৩৪০ অধ্যায় শল্যপর্বের ৪৫ অধ্যায়েও একই তালিকা আছে যা পুরাণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ কিন্তু শতপথ ব্রাহ্মণ তথা বৃহদারণ্যক উপনিষদ থেকে ভিন্ন। মহাভারতের বনপর্ব ২১৩.১৯ স্পষ্টভাবে ৩৩ কোটি বা ৩৩০ মিলিয়ন দেবতাকেই স্বীকার করে।

স্বামী রামসুখদাস [সাধকসঞ্জীবনী টিকা ১১.৬] ৩৩টি দেবতাকে স্বীকার করেই তাদের বাকি দেবতাদের মধ্যে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করেছেন, শ্রীল প্রভুপাদ চৈতন্যচরিতামৃতের মধ্যলীলা ২০.৩২৪ এর প্রবচনেও [661223CC.NY - December 23, 1966] 'Koti means ten millions' বলে কোটি অর্থ প্রকারকে একপ্রকার নস্যাৎ করেছেন।

অনেকেই বলতে পারেন, শতপথ ব্রাহ্মণ ১২.৬.১.৩৭ ‘ত্রয়স্ত্রিংশদ্বৈ দেবাঃ প্রজাপতিশ্চতুস্ত্রিংশঃ’ অনুযায়ী প্রজাপতিকে ৩৪ তম দেবতা বলা হয়েছে। তারা ভুলে যান এখানে প্রজাপতি অর্থ স্রষ্টা। পুরাণে বিভিন্নতা থাকলেও স্কন্দপুরাণের আবন্ত্যখণ্ডের চতুরাশীতিলিঙ্গমাহাত্ম্য ৩৪.১ 'চতুস্ত্রিংশত্তমং বিদ্ধি দেবং বৈ কন্থডেশ্বরম্' কথিত কন্থডেশ্বরম্ মূলত: শৈব ইষ্টকেই নির্দেশ করে । তিনিই সকল দেবের দেব বা মহাদেব বলে খ্যাত হয়েছেন বেদেই - সোর্য॒মা স বরু॑ণঃ॒ স রু॒দ্রঃ স ম॑হাদে॒বঃ ~ অথর্ববেদ ১৩.৪.৪। তৈত্তিরীয় আরণ্যকে তথা তৈত্তিরীয় উপনিষদে পিতামাতাকেও দেব বলা হয়েছে, তবে তারা কী এই ৩৩ প্রকারের বাইরে ? প্রকৃতপক্ষে রুদ্রে যে জীবাত্মার উল্লেখ পাওয়া যায় সেটিই মূলত দেব হিসেবে মাতা-পিতা-আচার্য-অতিথি হিসেবে বিধৃত। ‘একাদশ রুদ্রা দ্বাদশাদিত্যা ইমে এব দ্যাবাপৃথিবী ত্রয়স্ত্রিংশ্যৌ ত্রয়স্ত্রিংশদ্বৈ দেবাঃ প্রজাপতিশ্চতুস্ত্রিংশস্তদেনং’ শতপথ ব্রাহ্মণ ৪.৫.৭.২ দ্যুলোক ও পৃথিবীকে ৩২-৩৩ উল্লেখ করে, দেব না । মূলেই শুরুতে বলা হয়েছে 'চতুস্ত্রিংশদ্ব্যাহৃতয়ো ভবন্তি প্রায়শ্চিত্তয়ো নামৈষ বৈ প্রজাপতির্য এষ যজ্ঞস্তায়তে যস্মাদিমাঃ প্রজাঃ প্রজাতা এতম্বেবাপ্যেতর্হ্যনু প্রজায়ন্তে' অর্থাৎ এখানে দেবতা নয় বরং প্রায়শ্চিত্তির আলোচনা চলছে, ৩৩ ব্যাহৃতির কথা বিদ্যমান। ‘চতুস্ত্রিংশতা পুরুধা বি চষ্টে সরূপেণ জ্যোতিষা বিব্রতেন’ ঋগ্বেদ ১০.৫৫.৩ ৩৪ প্রকার বিকার বা বিভিন্নতা নির্দেশ করে যেখানে বষট‌কার ও বিরাট উল্লেখিত। এখানে জাগতিক সৃষ্টিরচনাতে বিদ্যমান উপাদানের উল্লেখ রয়েছে। সাদৃশ্য মাত্রেই একই বিষয়ের আলোচনাই হয়েছে এটা কীভাবে আগেই ঠিক করে নেওয়া যায় ? তাই এধরনের পূর্বাগ্রহযুক্ত সমালোচনা পরিত্যাজ্য।

নিরুক্তে দেব শব্দের অনেক অর্থ রয়েছে। ‘দেবো দানদ্বা দীপনাদ্বাদ্যোতনাদ্বা দ্যুস্থানো ভবতীতি বা। য়ো দেবঃ সা দেবতা।’ নিরুক্ত ৭।১৫ অর্থাৎ দেবের লক্ষণ হচ্ছে দান। সবার হিতার্থে যে দান করে, সে দেব। দেবের গুণ হচ্ছে দীপন অর্থাৎ প্রকাশ করা। সূর্য,চন্দ্র, অগ্নি প্রকাশ করে বলে তাদের দেব বলা হয়। দেবের কর্ম হচ্ছে দ্যোতন অর্থাৎ সত্যোপদেশ করা। অর্থাৎ যে মানুষ সত্য মানেন, সত্য বলেন এবং সত্য উপদেশ দান করেন, তিনি দেব। দেবের বিশেষত্ব হচ্ছে দ্যুস্থান অর্থাৎ ওপরে স্থিতি লাভ। ব্রহ্মাণ্ডের ওপর স্থিতি লাভ করার জন্য সূর্যকে, সমাজের ওপর স্থিতি লাভ করার জন্য বিদ্বানকে এবং রাষ্ট্রের ওপর স্থিতি লাভ করার জন্য রাজাকে দেব বলে।


কিন্তু অধুনা পুরাণকালে এই ধারণা ছিলো না, যেমন মহাভারতে ১.১.৪১ স্পষ্টভাবেই
'ত্রয়স্ত্রিংশৎসহস্রাণি ত্রয়স্ত্রিংশচ্ছতানি চ।
ত্রয়স্ত্রিংশচ্চ দেবনাং সৃষ্টিঃ সঙ্ক্ষেপলক্ষণা॥'
অর্থাৎ ৩৩ হাজার, ৩৩শত, ৩৩ অর্থাৎ মোট ৩৬৩৩৩ দেবতার সৃষ্টির উল্লেখ করে।

লিঙ্গপুরাণ ২.৫৬.১০-১৩ ও বিষ্ণুপুরাণ ২.১২.১৭ অনুযায়ী,
ত্রয়স্ত্রিংশৎসহস্রাণি ত্রয়স্ত্রিংশচ্ছতানি চ।
ত্রয়স্ত্রিংশৎ তথা দেবাঃ পিবন্তি ক্ষণদাকরম্‌॥
অর্থাৎ, ত্রয়স্ত্রিংশৎ সহস্র, ত্রয়স্ত্রিংশৎ শত ও ত্রয়স্ত্রিংশৎ সংখ্যক দেবগণ চন্দ্রস্থিত সুধা পান করেন।

প্রসঙ্গতঃ অনেকেই বলবেন, বেদে ৩৩৩৯ দেব যে উল্লেখ পাওয়া যায় তা কি ভ্রান্তি নয় ? যারা এটি বলেন তারা মূলতঃ অজ্ঞ, কেননা বৃহদারণ্যক ৩.৯.২ স্পষ্টভাবেই বলেছে যে এই সংখ্যা অর্থাৎ ৩০৩ হোক বা ৩০০৯ হোক সবই ৩৩ এর মহিমাসূচক, অর্থাৎ যেভাবে শাস্ত্রে সহস্র শব্দ অসংখ্য বা প্রচুর বোঝাতে ব্যবহার করা হয় তেমনি ৩৩ এর বাহুল্যও মূলতঃ ৩৩ এর নানা প্রকাশ বা ক্ষমতার সূচক । পুরাণের মতো স্বতন্ত্র শরীরধারী দেবতার প্রসঙ্গ এখানে মোটেও প্রযোজ্য নয়।

প্রমাণ হিসেবে স্কন্দপুরাণ নাগরখণ্ডের তীর্থমাহাত্ম্য ২৭৩.৭ 'ত্রয়স্ত্রিংশৎপ্রমাণতঃ কোটয়ঃ' = ৩৩ কোটি দেবতার আবির্ভাব-তিরোভাব উল্লেখ করে। পাশাপাশি স্কন্দপুরাণের মাহেশ্বরখণ্ডের কুমারিকাখণ্ড ৪৭.৪৮ 'ত্রয়স্ত্রিংশদ্ভিঃ কোটীভির্দেবীভিঃ পূজিতা চ' = ৩৩ কোটি দেবীর উল্লেখও করে। ৩৩ মানে যে পুরাণকার মোটেও প্রকার বুঝেননি তার স্পষ্ট প্রমাণ স্কন্দপুরাণের মাহেশ্বরখণ্ডের কুমারিকাখণ্ড ২৫.৯৩ যাতে ৩৩ কোটি ৩৬ হাজার ৩৩ দেবতার কথা আছে।
বায়ুপুরাণের ১০১তম অধ্যায়ে ৯২-৯৭ শ্লোকে একটি সংখ্যা গণনা পদ্ধতি আছে। তার সাহায্যে যদি আমরা স্কন্দপুরাণের নাগরখণ্ডের তীর্থ মাহাত্ম্যের ১৪২.২০-২৬ শ্লোকে গণের সংখ্যা বিশ্লেষণ করি তবে ৩,০৮,০০,০৭,২৮,৫৫,৩১,৯০০। পাশাপাশি ৩৩ কোটি দেবতার উল্লেখ তো আছেই।
সরিতাং পতয়স্ত্রিংশচ্ছঙ্কবঃ সপ্তসপ্ততিঃ ॥
মহাসরোজষষ্টিশ্চ নিখর্বাণাং চ বিংশতিঃ ॥২০॥
অর্বুদায়ুতসংয়ুক্তাঃ কোট্যো নবতিপঞ্চ চ ॥
লক্ষাশ্চ পঞ্চপঞ্চাশৎসহস্রাঃ পঞ্চবিংশতিঃ॥
শতানি নবষষ্টিশ্চ গণাশ্চান্যেঽত্র সংস্থিতাঃ॥২১॥
ত্রয়স্ত্রিংশৎস্মৃতাঃ কোটয়ো দেবানাং যাঃ স্থিতা দিবি ॥
তাঃ সর্বাস্তত্র চাগত্য তস্য চক্রুশ্চ মঙ্গলম্ ॥ ২৬ ॥

বৈদিক তেত্রিশ প্রকার দেব এর মধ্যে কেবল জীবাত্মা চেতন। ইহা অন্যের উপযোগ করে অথবা স্বয়ং অন্য জীবাত্মার উপযোগে আসে। যেমন গাভী দুধ দিয়ে, ভেড়া ঊণ [লোম] দিয়ে, ষাঁড় হাল চাষের উপযোগে আসে। তেমনি সৈনিক, বৈদ্য আদিও উপযোগে আসে। জীবাত্মার অতিরিক্ত শেষ বত্রিশ দেব জড় এবং উপযোগের দেব বলা হয়। মাতা, পিতা,আচার্য, অতিথি এবং পতি-পত্নী দ্বারা সংসারের ব্যবহার সিদ্ধ হয়। এ জন্য এই পাঁচ কে ব্যবহারের দেব বলা হয়। তৈত্তিরীয় উপনিষদেও আমরা এইরূপ দেবতাদেরই দেখতে পাই এবং তাদের পূজনের কথা পাই। “মাতৃদেবো ভব, পিতৃদেবো ভব, আচার্য়দেবো ভব, অতিথিদেবো ভব।” তৈত্তিরীয় উপনিষদ ১।১১।২। তবে দেব হবেন তিনিই, যাঁর মধ্যে উত্তম গুণাবলী তথা বিভিন্ন দৈবী সম্পদ [গীতা ১৬।১-৩] রয়েছে। পিতামাতা, আচার্য, পতি-পত্নী প্রত্যেকে আদর্শ আচরণ না করলে তারা দেব হিসেবে আখ্যার যোগ্য হবেন না।

ওপরে যে তেত্রিশ প্রকার দেবের বর্ণনা করা হলো, এদের থেকে সুখ যেমন লাভ হয় তেমনই দুঃখ লাভ হতে পারে। অগ্নি দেব, কিন্তু অনেক সময় সবকিছু জ্বালিয়ে দেয়; অতিথি দেব কিন্তু পরবর্তীতে শত্রু ও হতে পারে। রাজা দেব, কিন্তু দুরাচারী হয়ে দুঃখদায়ী হতে পারে। এই কারণে তা সদুপযোগ এবং সৎকারের মর্যাদা দ্বারা বদ্ধ। সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী এর সদুপযোগ করা মর্যাদা। মাতা, পিতা আচার্য এবং অতিথির সেবা করা ধর্ম। পূর্বজ মহাপুরুষের বেদানুকূল পথ অনুসরণ, সংবিধান পালন এবং দেশের রক্ষা করা মানুষের কর্তব্য। কিন্তু এরা কোনো উপাস্য দেব নয়। এরা পূজনীয়, পূজা যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন ও উপযোগকে বোঝায়। পরমাত্মাসহ সকলেই পূজনীয়, কিন্তু সর্বোচ্চ পূজনীয় এবং মোক্ষের নিমিত্তে একমাত্র উপাস্য দেব কেবল পরমাত্মা, কারণ পরমাত্মাই সবার ইষ্ট দেব। এই সৃষ্টির সব কাল এবং পরিস্থিতির মধ্যে পূর্ণতম দেব এক এবং সেই পরমাত্মা। সেই জন্য পবিত্র বেদ আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন -

মা চিদন্যদ্বি শংসত সখায়ো মা রিষণ্যত। ইন্দ্রমিৎস্তোতা বৃষণং সচা সুতে মুহুরুক্থা চ শংসত॥ [অথর্ববেদ ২০।৮৫।১]
= হে মিত্র! পরমাত্মা ভিন্ন অন্য কারো উপাসনা কোরো না এবং দুঃখী হয়ো না। এই উৎপন্ন জগতের সাথে মিলে সেই শক্তিশালী শত্রুর নাশকারী প্রভুর স্তুতি করো এবং বারবার উক্ত স্তোত্রের উচ্চারণ করো।
অর্থাৎ আমাদের শুধু সেই এক পরমাত্মারই উপাসনা করা উচিৎ।

শিক্ষা ও শাস্ত্রার্থ বিভাগ
© বাংলাদেশ অগ্নিবীর