https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা স্বাধ্যায় [৯]- গীতার [১৫.৬ ও ৮.২১ ] অনুযায়ী 'প্রত্যাবর্তন না করা ' বলতে মূলত কি বুঝিয়েছে ?

Wednesday, September 24, 2025

 


▶️প্রশ্ন: শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা স্বাধ্যায় [৯] গীতার [১৫.৬ ও ৮.২১ ] অনুযায়ী 'প্রত্যাবর্তন না করা ' বলতে মূলত কি বুঝিয়েছে❓
✅ উত্তর: গীতার [ ১৫।৬-এ ] [ ৮.১৫ ; ৮.১৬ ও ৮.২১ ] এ বলা হয়েছে , মোক্ষলাভের পর আত্মা আর এই জগতে ফিরে আসে না । কিন্তু এই বক্তব্যকে যদি নিছক আক্ষরিকভাবে ধরা হয় , তাহলে তা শাস্ত্রসম্মত দার্শনিকতার গভীরতাকে অবজ্ঞা করা হবে । শাস্ত্রের সামগ্রিক বর্ণনা অনুযায়ী , মোক্ষ মানে আত্মার চিরকালীন মুক্তি নয় , বরং জন্ম-মৃত্যুর দুঃখচক্র থেকে এক দীর্ঘস্থায়ী , অনন্ততুল্য পরিত্রাণ । মুক্ত আত্মা সাধারণ প্রাণীর মতো আর ফিরে আসে না ; সে পরম ব্রহ্মের সান্নিধ্যে , বন্ধনমুক্ত আনন্দে অবস্থান করে । এই অবস্থান স্থায়ী থাকে পরান্তকাল পর্যন্ত যার সময়কাল প্রায় ৩১১ ট্রিলিয়ন বছর । এই পরিমাণ সময়কে
'সাময়িক' বলা যুক্তিযুক্ত নয় - এটা বাস্তবে প্রায় চিরন্তনের সমতুল্য ।
🍁
‎ন তদ্ভাসয়তে সূর্যো ন শশাঙ্কো ন পাবকঃ।
‎যদ্গত্বা ন নিবর্তন্তে তদ্ধাম পরমং মম॥
‎শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৫.৬
‎অনুবাদ: সেই পদকে না সূর্য, না চন্দ্র, না অগ্নি প্রকাশিত করতে পারে । যে পথ প্রাপ্ত হয়ে শরণাগত ব্যক্তিগণ প্রত্যাবর্তন করেনা, সেই পদ আমার পরম ধাম ।
🍁
মামুপেত্য পুনর্জন্ম দুঃখালয়মশাশ্বতম্।
নান্নুবন্তি মহাত্মানঃ সংসিদ্ধিং পরমাং গতাঃ ॥
আব্রহ্মভুবনাল্লোকাঃ পুনরাবর্তিনোঽর্জুন।
মামুপেত্য তু কৌন্তেয় পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে ॥
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৮.১৫-১৬
অনুবাদ: পরমসিদ্ধি প্রাপ্ত মহাত্মাগণ আমাকে প্রাপ্ত হয়ে দুঃখালয় অনিত্য জগতে পুনর্জন্ম প্রাপ্ত হন না । হে অর্জুন! ব্রহ্মভুবন থেকে সকল লোক পুনরাবর্তনশীল ; কিন্তু হে কৌন্তেয়! আমাকে প্রাপ্ত হলে পুনর্জন্ম হয় না ।
 
গীতার উক্ত বক্তব্য কঠ (২।২।১৫), শ্বেতাশ্বতর (৬।১৪) এবং মুণ্ডক উপনিষদে (২।২।১০) রয়েছে । এই পদ প্রাপ্ত হয়ে শরণাগত ব্যক্তিগণ প্রত্যাবর্তন করেন না । (ছান্দোগ্য: ৮।১৫।১), সেই পদ ঈশ্বরের পরম ধাম । 
 
💢এখন প্রশ্ন উঠতে পারে- "যেহেতু একসময় আবার ফিরে আসতে হয় , তবে মোক্ষই বা কীসের❓"
☑️ ‎উত্তর সহজ: জীবের সাধনা সীমিত , তার ফলও তদনুরূপ সীমিত । চিরন্তন ফল পেতে হলে , কর্মও চিরন্তন হতে হয় , যা সম্ভব নয় । ‎এই মতের খণ্ডন করে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী বলেছেন- "এটি কখনো হতে পারে না । কারণ প্রথমত , জীবের সামর্থ্য ও দেহাদির সাধন পরিমিত । সুতরাং ওই সকলের ফল অনন্ত কীরূপে হতে পারে ? জীবের অসীম সামর্থ্য , কর্ম ও সাধন নেই । এই কারণে জীব অনন্ত সুখ ভোগ করতে পারে না । যাদের সাধন অনিত্য , তাদের ফল নিত্য হতে পারে না । আবার যদি কেউই মুক্তি থেকে প্রত্যাবর্তন না করে , তবে সংসারের উচ্ছেদ ঘটবে অর্থাৎ জীব নিঃশেষ হয়ে যাবে ।" যেমন একজন তৃষ্ণার্ত মানুষকে এক গ্লাস জল দিলে তার তৃষ্ণা মেটে , সে প্রশান্তি পায় । যদি ভবিষ্যতে আবার তৃষ্ণা পেতে পারে এই আশঙ্কায় তাকে চিরদিনের জন্য পুকুরে চুবিয়ে রাখা হয় , সেটা হবে অবিবেচনা , বরং বিপর্যয় । তেমনি জীবের দুঃখনিবৃত্তির জন্য যে পরিমাণ মোক্ষ প্রযোজ্য , ততটুকুই শাস্ত্রানুসারে বরাদ্দ হয় যা অত্যন্ত দীর্ঘ , কিন্তু অযৌক্তিকভাবে অনন্ত নয় । 
 
▶️ প্রশ্ন: যেহেতু গীতাতে সরাসরি বলেছে ' মুক্তি বা মোক্ষ লাভ করলে ফিরে আসতে হবে না ' তাহলে কি সেটা ভুল ❓
✅ উত্তর: না । কেননা ফিরে আসতে হবে না গীতার এই বক্তব্যের মূল তাৎপর্য হলো , যে ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করেছেন , তাঁকে আর [ জন্ম-মৃত্যুর চক্র অর্থাৎ কর্মফলের বন্ধনে ] ফিরে আসতে হয় না । অর্থাৎ, তিনি আর সেই চক্রে আবদ্ধ নন , যেখানে পূর্বকৃত কর্ম অনুযায়ী তাকে বিভিন্ন যোনিতে জন্মগ্রহণ করতে হতো । ‎এই 'না-ফেরার' অবস্থা সেই সময় পর্যন্ত স্থায়ী, যতক্ষণ পর্যন্ত মোক্ষের উদ্দেশ্যসিদ্ধ সময়সীমা পূর্ণ না হয় । যদি তিনি অন্য কোনো সময়ে (যথা প্রকৃত আত্মোপলব্ধির আগেই) দেহ ত্যাগ করতেন , তবে পূর্বসঞ্চিত কর্মের কারণে তাঁকে আবার পুনর্জন্মের পথে ফিরতে হতো । কিন্তু মোক্ষলাভকারী আত্মা সেই পুনরাগমনের প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত । এই 'ফিরে না আসা' আসলে কর্মফলের পুনরাবৃত্তির অবসান । গীতার ভাষা সর্বদা আক্ষরিক নয় । কখনো তা রূপক, কখনো অনুষঙ্গনির্ভর , আবার কখনো দার্শনিক মর্মার্থবাহী । তাই একটি শ্লোকের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে তাকে উপনিষদ , দর্শন ও বেদানুসারে বুঝতে হয় । গীতা কোনো শব্দসৌন্দর্যের ব্যাকরণ নয় , বরং এক ঐতিহাসিক বেদান্তসার । তাই এর অন্তর্নিহিত তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা বুঝে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত এবং সেটা বেদনুকূল নিতে হবে । গীতা মাত্র সামান্য ৭০০ শ্লোক এর গ্রন্থ মাত্র । গীতাকে উপনিষদ এর সার বলা হয় । গীতা ভালো ভাবে বুঝতে হলে আগে এসব শাস্ত্র অধ্যয়ন করতে হবে হুদাই [ শব্দ দেখে সরাসরি বলা হয়েছে এই জাতীয় কথাবার্তা ] মূর্খামি ছাড়া কিছুনা ।
‎অধিকাংশ পণ্ডিত মনে করেন , জীব মুক্তি থেকে প্রত্যাবর্তন করে পুনরায় কখনো জন্ম-মৃত্যুর চক্রে পতিত হয় না । তবে ‎এই বিষয়ে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী সত্যার্থ প্রকাশ গ্রন্থে বেদাদি শাস্ত্রের ঋগ্বেদ: ১।২৪।১-২; মুণ্ডক: ৩।২।৬ ইত্যাদি) প্রমাণ দিয়ে বলেছেন যে, জীব অনন্তকাল অ-প্রত্যাবর্তন হিসাবে থাকে না । ব্রহ্মসূত্রের শেষ সূত্রে স্বামী বিদ্যানন্দ সরস্বতী এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে বলেছেন যে , মুক্তিপ্রাপ্ত আত্মা ফিরে আসে না-এর অর্থ এই যে , এটি সাধারণ মৃত্যুর পর সাধারণ জীবের ন্যায় ফিরে আসে না । 
 
জন্ম-মৃত্যুর চক্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত থাকে । সেই সময় মুক্তাত্মা ব্রহ্মের সঙ্গ উপভোগ করে । বস্তুতঃ মুক্ত পুরুষ পরান্তকাল বা মহাকল্প পর্যন্ত প্রত্যাবর্তন করেন না । এ বিষয়ে সরাসরি বেদ হতে প্রমাণ -
☑️
কস্য নূনং কতমস্যামৃতানাং মনামহে চারু দেবস্য নাম ।
‎কো নো মহ্যা অদিতয়ে পুনর্দাৎ পিতরং চ দৃশেয়ং মাতরং চ ॥
‎(ঋগ্বেদ ১।২৪।১)
‎পদার্থঃ আমরা (কস্য) কিভাবে গুণকর্ম স্বভাব-যুক্ত (কতমস্য) কোন বহু (অমৃতানাম্) উৎপত্তি বিনাশরহিত অনাদি মোক্ষপ্রাপ্ত জীবের (দেবস্য) প্রকাশমান সর্বোত্তম সুখের দানকারি দেবের নিশ্চয়ের সাথে (চারু) সুন্দর (নাম) প্রসিদ্ধ নাম কে (মনামহে) জানিব যিনি (নূনম্) নিশ্চয় করে (কঃ) কোন সুখস্বরূপ দেব (নঃ) মোক্ষকে প্রাপ্ত আমাদের কে (মহৈ) বিশাল কারণরূপ নাশরহিত (অদিতয়ে) পৃথিবীর মধ্যে (পুনঃ) পুনর্জন্ম দান করেন, যাতে আমরা (পিতরম্) পিতা (চ) এবং (মাতরম্) মাতা (চ) এবং স্ত্রি, পুত্র, বন্ধু আদি কে (দৃশেয়ম্) দেখতে পারি ।
 
☑️
অগ্নের্বয়ং প্রথমস্যামৃতানাং মনামহে চারু দেবস্য নাম ।
‎স তো মহ্যা অদিতয়ে পূনর্দাৎপিতরং চ দৃশয়ে মাতরং চ ॥
‎(ঋগ্বেদ ১।২৪।২)
‎পদার্থঃ আমরা যেই (অগ্নে) জ্ঞানস্বরূপ (অমৃতানাম্) বিনাশ ধর্মরহিত পদার্থ বা মোক্ষ প্রাপ্ত জীবের (প্রথমস্য) অনাদি বিস্তৃত অদ্বিতীয় স্বরূপ (দেবস্য) সমস্ত জগতের প্রকাশকারী বা সংসারের সমস্ত পদার্থের দানকারি পরমেশ্বরের (চারু) পবিত্র (নাম) গুণের গান করতে (মনামহে) জানি, (সঃ) তিনিই (নঃ) আমাদের (মহৈ) মহৎ মহৎ গুণসম্পন্ন (অদিতয়ে) পৃথিবীর মধ্যে (পূনঃ) পুনরায় জন্ম (দাত্) দান করেন, যাতে আমরা (পুনঃ) পুনরায় (পিতরম্) পিতা (চ) এবং (মাতরম্) মাতা (চ) এবং স্ত্রী, পুত্র, বন্ধু আদিকে (দৃশ্যেয়ম্) দেখতে পারি ।
 
‎অর্থাৎ আমরা কার নাম পবিত্র বলে জানবো ? অবিনাশী পদার্থসমূহের মধ্যে বিদ্যমান , সদা প্রকাশস্বরূপ কোন দেব আমাদের সকলকে মুক্তির সুখ ভোগ করিয়ে , পুনরায় এই সংসারে জন্মদান করেন এবং মাতা-পিতার দর্শন করান ? আমরা এই স্বপ্রকাশস্বরূপ , অনাদি ও সদামুক্ত পরমাত্মার নাম পবিত্র বলে জানবো , যিনি আমাদের সকলকে মুক্তিতে আনন্দ ভোগ করিয়ে পৃথিবীতে পুনরায় মাতা-পিতার সংযোগে জন্মদান করিয়ে তাঁদের দর্শন করান । সেই পরমাত্মা এভাবে মুক্তির বিধান করেন , তিনি সকলের স্বামী ।
 
উপনিষদে ও বর্ণনা রয়েছে -
☑️
বেদান্তবিজ্ঞানসুনিশ্চিতার্থাঃ সন্ন্যাসয়োগাদ্ য়তয়ঃ শুদ্ধসত্ত্বাঃ । তে ব্রহ্মলোকেষু পরান্তকালে পরামৃতাৎ পরিমুচ্যন্তি সর্বে ॥
‎(মুণ্ডক৩।২।৬)
‎পদার্থঃ (বেদান্তবিজ্ঞানসুনিশ্চিতার্থাঃ) বেদান্তের বিজ্ঞান দ্বারা সংশয় বিপর্যয় রহিত অর্থাৎ নিশ্চয়াত্মক জ্ঞান-প্রাপ্ত (য়তয়ঃ) পরমার্থের জন্য প্রযত্নশীল যোগিগণ, যাঁদের (সন্ন্যাসয়োগাৎ) সন্ন্যাস-যোগ [বৈরাগ্যরূপ যোগ] দ্বারা (শুদ্ধসত্ত্বাঃ) অন্তঃকরণ শুদ্ধ হয়েছে (তে) তাঁরা (সর্বে) সকলে (পরান্তকালে) মহাকল্প পর্যন্ত (ব্রহ্মলোকেষু) মোক্ষাবস্থায় (পরামৃতাৎ) পরম অমৃত জীবন থেকে (পরিমুচ্যন্তি) পুনরায় মুক্ত হন [পুনরায় সংসারে আগমন করেন] ।
সরলার্থঃ বেদান্তের বিজ্ঞান দ্বারা নিশ্চয়াত্মক জ্ঞান-প্রাপ্ত যতিগণ, যাঁদের সন্ন্যাস-যোগ দ্বারা অন্তঃকরণ শুদ্ধ হয়েছে, তাঁরা সকলে পরান্তকাল (মহাকল্প) পর্যন্ত মোক্ষাবস্থায় পরম অমৃতজীবন থেকে পুনরায় মুক্ত হন অর্থাৎ পুনরায় সংসারে আগমন করেন ।
 
‎ব্রহ্মজ্ঞানী পুরুষ সেই পরমাত্মাকে লাভ করে মোক্ষাবস্থায় পরান্তকাল মুক্তির নির্ধারিত সময় মহাকল্পের অন্ত পর্যন্ত অবস্থান করে পুনরায় সংসারে আগমন করেন । "ব্রহ্মৈবলোকঃ ব্রহ্মলোকঃ" অর্থাৎ ব্রহ্মই লোক , এভাবে 'ব্রহ্মলোক' এর অর্থ ব্রহ্মরূপাবস্থা ; অথবা যে অবস্থায় ব্রহ্মই আশ্রয় হন , তার নাম 'ব্রহ্মলোক'। সেই ব্রহ্মের আশ্রয়রূপ অবস্থাবিশেষকে প্রাপ্ত হয়ে পুরুষ পরান্তকাল পর্যন্ত সেই ব্রহ্মানন্দের অনুভব করে সংসারে প্রত্যাবর্তন করেন । 
 
‎'পরান্তকালে' এই সপ্তমী বিভক্তির প্রয়োগ অধিকরণ বা নিমিত্তে যার সমুচিত অর্থ- "ব্রহ্মে পরান্তকাল পর্যন্ত অবস্থান করে ।" বৃহদারণ্যক উপনিষদে এই কালকে 'পরাঃ পরাবতঃ' বলা হয়েছে- "তেষু ব্রহ্মলোকেষু পরাঃ পরাবতো বসন্তি; (বৃহদা০ ৬।২।১৫)” অর্থাৎ মুক্ত জীব ব্রহ্মলোকে (মুক্তিতে) 'পরা পরাবত' বহুকাল পর্যন্ত অবস্থান করেন । তাছাড়া কৈবল্যোপনিষদের চতুর্থ শ্রুতিতেও আমরা মুক্তি থেকে পুনরাবৃত্তির জন্য 'পরান্তকাল' শব্দের প্রয়োগ দেখতে পাই । 
 
🔰‎মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী স্বামীজি পরান্তকালের গণনা এরূপ করেছেন-
"তেতাল্লিশ লক্ষ বিশ হাজার বছরে এক চতুর্যুগী ; দুই হাজার চতুর্যুগীতে এক অহোরাত্র ; এরূপ ত্রিশ অহোরাত্রিতে এক মাস; এরূপ বারো মাসে এক বৎসর এবং এরূপ শত বৎসরে এক 'পরান্তকাল' হয়ে থাকে (সত্যার্থ০, ৯ম সমু০) ।"
অর্থাৎ পরান্তকাল মুক্তিতে আনন্দ ভোগের অবধি ৩১১,০৪০,০০০,০০০,০০০ বর্ষের হয়ে থাকে । গাণিতিক হিসাব অনুসারে ৪৩,২০,০০০ বর্ষের এক চতুর্মুগীর কাল-অবধি হয় । দুই সহস্র চতুর্মুগীর অর্থাৎ ৪৩,২০,০০০ × ২০০০ = ৮৬৪,০০,০০,০০০ বর্ষের ব্রহ্মের এক 'অহোরাত্র' হয়ে থাকে । ৮৬৪,০০,০০,০০০ ৩০ = ২৫৯,২০০,০০০,০০০ বর্ষের এক 'মাস' এবং একে ১২ দ্বারা গুণ করলে ৩,১১০,৪০০,০০০,০০০ বর্ষের ব্রহ্মের এক 'বর্ষ' হয়ে থাকে। তারপর এই সংখ্যাকে ১০০ দ্বারা গুণ করলে ৩১১,০৪০,০০০,০০০,০০০ বর্ষের অবধি আসে । এই সময় ৩৬,০০০ বার সৃষ্টির উৎপত্তি ও প্রলয়। কালের সমান । এই সংখ্যক বর্ষ পর্যন্ত জীব মুক্তি অবস্থায় থেকে ব্রহ্মানন্দ উপভোগ করে ।
 
এই দীর্ঘ সময় মুক্তাত্মা পরম ধামে আনন্দ উপভোগ করেন । পরম ধাম কোথায় ? মুণ্ডক উপনিষদ্ (৩।২।১) বলছে- 'এতৎ পরমং ধাম ব্রহ্ম', অর্থাৎ এই পরম ধাম 'ব্রহ্ম'। মুক্তি কখনোই জন্ম-মৃত্যুর সদৃশ নয় । কারণ , ছত্রিশ হাজারবার সৃষ্টি ও প্রলয়ের আবর্তনের সমান যে বিপুল সময়কাল, সেই দীর্ঘ পরিসরজুড়ে আত্মা দুঃখের সকল বন্ধন থেকে মুক্ত থেকে পরম আনন্দে অবস্থান করে । এই অসীমপ্রায় নিস্তরঙ্গ সুখাবস্থাকে তুচ্ছ ভাবার কোনো অবকাশ নেই ।
 
🌼‎অতঃ গীতায় সব কিছু বিস্তারিতভাবে নেই এটা স্বাভাবিক , কারণ পুরো গ্রন্থে মাত্র ৭০০টি শ্লোক রয়েছে । তাই গীতার মর্ম ও তাৎপর্য পূর্ণভাবে বুঝতে হলে , তার ব্যাখ্যা ও প্রেক্ষাপট অন্যান্য বৈদিক শাস্ত্র , উপনিষদ ও দর্শনের আলোকে গ্রহণ করতে হয় । গীতার বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অনুধাবন করতে হলে , তাকে বৈদিক জ্ঞানতত্ত্বের সামগ্রিক কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত করে বুঝতে হবে নয়তো আংশিক অর্থ থেকে ভুল ধারণার সৃষ্টি হতে পারে । গীতার এরকম শত শত উদহারণ দেওয়া যাবে যে গীতার ভাষা সর্বদা আক্ষরিক নয় । কখনো তা রূপক , কখনো অনুষঙ্গনির্ভর, আবার কখনো দার্শনিক মর্মার্থবাহী । প্রসঙ্গ বিচ্ছিন্নভাবে একটি শব্দ বা বাক্য ধরে দার্শনিক কাঠামো নির্মাণ করলে তা কল্পনার অলঙ্কার হয়ে পড়ে । সুতরাং , গীতার বাণী ও বেদের অন্যান্য শাস্ত্রবাক্যের মধ্যে কোনো স্ববিরোধ নেই বরং একটি গভীর সামঞ্জস্য রয়েছে, যা অন্বয়পূর্বক দর্শনচিন্তার আলোকে অনুধাবন করা প্রয়োজন । মোক্ষ ক্ষণিক নয় , আবার অনন্তও নয় এটি সময়সাপেক্ষ নিত্যসুখের এক অন্তঃসারময় অবস্থা ।
🖋️

বাংলাদেশ অগ্নিবীর
সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক