https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদে পশুবলি ও অশ্বের মুক্তি প্রসঙ্গ : ঋগ্বেদ ১.১৬২.২০-২২, যজুর্বেদ ২৩.১৬

Saturday, October 25, 2025

✅বেদে পশুবলি ও অশ্বের মুক্তি প্রসঙ্গ : ঋগ্বেদ ১.১৬২.২০-২২, যজুর্বেদ ২৩.১৬
 
বেদে পশুবলি আছে কিনা এই বিষয়ে আর্য ও পৌরাণিক-স্মার্ত মতে পরিপূর্ণ বিরোধ রয়েছে। স্মার্তরা বেদে পশুবলি প্রমাণে যততত্র থেকে অরূপসমৃদ্ধ বিনিয়োগযুক্ত মধ্যকালীন ভাষ্যকারদের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। কিন্তু তারা ঐ মন্ত্রানুবাদের ২-১টি বাক্যাংশকে নিজের স্বপক্ষে উল্লেখ করলেও মন্ত্রের বাকি অংশ আদৌ কোনো সদর্থ বা যুক্তি বহন করে কিনা তা অজ্ঞতাবশতই হোক বা স্বার্থবশত কখনো প্রকাশ বা আলোচনা করেন না। উদাহরণ- 
 
মা ত্বা তপৎপ্রিয় আত্মাপিয়ন্তং মা স্বধিতিস্তন্ব আ তিষ্ঠিপত্তে ।
মা তে গৃধ্নুরবিশস্তাতিহায় ছিদ্রা গাত্রাণ্যসিনা মিথূ কঃ ॥২০॥
ন বা উ এতন্ম্রিয়সে ন রিষ্যসি দেবাঁ ইদেষি পথিভিঃ সুগেভিঃ ।
হরী তে যুঞ্জা পৃষতী অভূতামুপাস্থাদ্বাজী ধুরি রাসভস্য ॥২১॥
সুগব্যং নো বাজী স্বশ্ব্যং পুংসঃ পুত্রাঁ উত বিশ্বাপুষং রয়িম্ ।
অনাগাস্ত্বং নো অদিতিঃ কৃণোতু ক্ষত্রং নো অশ্বো বনতাং হবিষ্মান্ ॥২২॥
ঋগ্বেদ ১.১৬২.২০-২২
⛔সায়ণভাষ্যানুসারী অনুবাদ:
📍২০. হে অশ্ব! তুমি যখন দেবতাগণের নিকট গমন কর, তখন তোমার প্রিয় দেহ যেন তোমাকে ক্লেশ না দেয়, খড়্গ তোমার অঙ্গে যেন অধিক ক্ষণ না থাকে। [সায়ণ: কেবলমাংসগ্রহণেপ্সুঃ "অবিশস্তা বিশসনে অকুশলঃ শমিতা "অতিহায় ন্যূনাতিরেকভাবেন তত্তদঙ্গমতিক্রম্য মধ্যে “মিথু মিথ্যা ব্যর্থম্ “অসিনা “ছিদ্রা ছিদ্রাণি তির্যক্ছিন্নানি “মা “কঃ মা কার্ষীৎ]= মাংসলোলুপ ও অনভিজ্ঞ ছেদক অস্ত্ৰদ্বারা ভিন্নভিন্ন অঙ্গগুলি অতিক্রম করিয়া তোমার গাত্র যেন বৃথা ছিন্ন না করে।
🎙️সমীক্ষা: এর মাধ্যমে অশ্বের রান্না ও খড়্গ দিয়ে অশ্বকে কাটার অনুমোদন রয়েছে। মৃত অশ্ব কি শুনতে পায়? এটি তো কোনো প্রকারে সাধারণ পদ কিংবা জড়ের প্রতি অলংকার নয়। আর অশ্বকে শ্বাসরোধ করে বধের পর কাটার সময় 'দুঃখ না পাক' বলার মতো পরিহাস কি বেদমন্ত্রের প্রকৃত অর্থ? 
 
📍২১. হে অশ্ব! তুমি মরিতেছ না; [সায়ণ: ব্যর্থহিংসায়াঃ অভাবাৎ । ননু প্রত্যক্ষ্যতো মৃতিঃ অবয়বনাশশ্চ দৃশ্যতে কথমেবমুচ্যতে ইতি] = অথবা লোকে তোমার হিংসা করিতেছে না; তুমি উত্তম পথে দেবতাগণের নিকট গমন করিতেছ। [সায়ণ: “হরী এতন্নামানৌ ইন্দ্রস্যাশ্বৌ তে তব “যুঞ্জা রথে যুক্তৌ "অভূতাং ভবিষ্যতঃ । আশংসারূপত্বাৎ ভূতার্থনির্দেশঃ]= ইন্দ্রের হরিনামক অশ্বদ্বয়, এবং মরুৎগণের পৃষতীনামক বাহনদ্বয়, তোমার রথে যোজিত হইবে; [সায়ণ: রাসভস্য ভানোঃ ধুরি বর্ত্মনি যুক্তো বাজী অশ্বঃ উপস্থাস্যতি দেবস্বং গচ্ছতস্তব গমনায় ইন্দ্রাদয়ঃ স্বস্ববাহনানি প্রেষয়ন্তীত্যর্থঃ । যদ্বা । তত্তদ্দেবভাবমাপন্নং ত্বাং তানি তানি বাহনানি বহন্তি]= অশ্বিদ্বয়ের বাহন রাসভের পরিবর্তে কোন দ্রুতগতি অশ্ব তোমার রথে সংযুক্ত হইবে।
🎙️সমীক্ষা: সায়ণের মতে যেহেতু অশ্ব দেবত্ব লাভ করছে অতএব তা হিংসা নয়। এভাবে যদি অশ্ব দেবত্ব লাভ করে তবে কর্মের কী মাহাত্ম্য ? বিদ্যাই দেবত্ব লাভের ভিত্তি। সেখানে অশ্বকে বলি দিলে যদি দেবত্ব লাভ করে তবে মনুষ্যযোনি প্রাপ্তির জন্য মানবের কী আবশ্যকতা ? পাশাপাশি বলা হচ্ছে অশ্বকে দেবতাদের বাহনরা রথে বহন করে নিয়ে যাবে। দেবযান মার্গ বিদ্যার মাধ্যমেই অর্জিত হয় বলে ব্রহ্মসূত্র (৩.১.১৭) ও ছান্দোগ্যপনিষদে (৫.১০.১-৩) বর্ণনা করে। অশ্ব কী বিদ্যা লাভ করেছে বা শাস্ত্রীয় কর্ম করেছে ? অতঃ এই বিনিয়োগ ও মন্ত্রার্থ বেদার্থজ্ঞানের বিরুদ্ধ। 
 
📍২২. এই অশ্ব, আমাদিগকে গো ও অশ্ববিশিষ্ট জগৎপোষক ধন প্রদান করুক, আমাদিগকে পুরুষ অপত্য প্রদান করুক। [সায়ণ: অনাগাস্ত্বং কৃণোতু সর্বতো নিষ্পাপত্বং করোতু । উক্তানাং ফলানাং ন্যূনাতিরেকজনিতপাপক্ষয়াভাবে অসম্ভবাৎ অপাপত্বং প্রার্থ্যতে]= তেজস্বী অশ্ব আমাদিগকে পাপ হইতে বিরত করুক। হবির্ভূত অশ্ব আমাদিগকে শারীরিক বল প্রদান করুক।
🎙️সমীক্ষা: মৃতক অশ্ব কী ফল প্রদান করবে? পাশাপাশি অশ্ব কীভাবে সন্তান প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত? বলা হচ্ছে, অশ্ব যেন আমাদের নিষ্পাপ করে - নিষ্পাপ করার অধিকার পশুবধরূপে আদৌ সম্ভব? 
 
🔰উক্ত মন্ত্রসমূহের সঠিক অনুবাদ নিম্নরূপ - 
 
🔹২০.হে পণ্ডিত! তোমার প্রিয় আত্মাকে যেন মরণশীল প্রকৃতির লোকেরা কষ্ট না দেয়। যেন বিদ্যুৎ, বজ্রের মতো, তোমার শরীরে প্রতিষ্ঠিত না হয়। যেন কামবশে তারা তোমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আঘাত না করে, এবং যেন পরস্পর বিদ্ধ না হয়, দেহে কোনো ছিদ্র না রেখে।
🔹২১. হে জ্ঞানী! যদি সেই শক্তি, যা তোমার মন ও আত্মাকে সংযুক্ত করে, ধারণ ও আকর্ষণের গুণে পরিপূর্ণ হয়, যদি তার সেচনশক্তি জলের মতো হয়, যদি উভয়েই নিকটে থাকে এবং বাক্যগ্রাহণে ত্বরিত হয়—তবে এই চৈতন্যরূপ অবস্থাকে অর্জন করার পর তুমি নিশ্চয়ই মর না, কেউ তোমাকে হত্যা করতে পারে না। তুমি সেই পথেই পৌঁছাও যেখানে গুণবান ও দেবতুল্য সত্তাগণ আনন্দে বিচরণ করেন।
🔹২২. যেমন দ্রুতগামীটি আমাদের শ্রেষ্ঠ গাভীগণের মধ্যে পাওয়া যায়, তেমনি সে আমাদের শ্রেষ্ঠ অশ্বগণের মধ্যেও বিদ্যমান থাকুক। আমাদের বীর সন্তানদেরও পুষ্টি ও ঐশ্বর্যে শক্তিমান করো। সেই অবিভক্ত, একতান রূপ আমাদের চিন্তা ও অবস্থাকে পাপমুক্ত করুক। যে অগ্নি হোম ও নিবেদনসংক্রান্ত এবং বিস্তারের স্বভাবযুক্ত, সে আমাদের সেবায় নিয়োজিত হোক, এবং আমরাও তাকে সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারি—এই হোক আমাদের কামনা।
 
▪️মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষ্যাবলম্বনে অনুবাদ ড. কৃষ্ণকান্ত বৈদিক শাস্ত্রী। 
 
▪️আরেকটি মন্ত্র নিম্নরূপ -
ন বা উ এতন্ম্রিয়সে ন রিষ্যসি দেবাঁ ইদেষি পথিভিঃ সুগেভিঃ ।
যত্রাসতে সুকৃতো যত্র তে যয়ুস্তত্র ত্বা দেবঃ সবিতা দধাতু ॥
যজুর্বেদ ২৩.১৬
⛔ মহীধর-উবট ভাষ্যানুযায়ী অনুবাদ: হে অশ্ব! এই যে তুমি আমাদের দ্বারা কর্তিত হ'তে যাচ্ছ, তবে তোমার মরণ হবে না ও তুমিও বিনষ্ট হবে না। বলি পরবর্তী তুমি সুগম দেবযান পথে দেবতাদের নিকটে গমন করবে। যে স্থানে পুণ্যবানগণ নিবাস করেন এবং যে স্থানে তাঁরা গমন করেন, সেই পুণ্যবানদের জ্যোতির্ময় লোকে তোমাকে সবিতাদেব স্থাপন করুক।
🔰সঠিক অর্থ: হে জ্ঞান ও যজ্ঞপরায়ণ মানব, তুমি সত্যের সোজা ও ন্যায়পথে অগ্রসর হয়ে ঋষি-মুনিদের সঙ্গে মিলিত হও। তুমি কখনো মরবে না, তোমার মূল্য কখনো হ্রাস পাবে না। যেখানে ধর্মকর্মে স্থিত মহাপুরুষগণ বাস করেন, যেখানে তারা চিরস্থায়ী শান্তি ও আনন্দ লাভ করেন—সেই স্থানে তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করুন জীবন ও জ্ঞানালোক অধিপতি পরমাত্মদেব।
🎙️সমীক্ষা: এখানেও পূর্বোক্ত প্রশ্ন প্রযোজ্য। উল্লেখ্য, উক্ত ভাষ্যানুযায়ীই অশ্বমেধ যজ্ঞে রাজার স্ত্রী মৃত অশ্বের লিঙ্গ ধরে নিজের যোনীতে ঢোকাবেন এবং যৌনসঙ্গম করবেন। এরপর ঋত্বিক ও কুমারী, রাজরক্ষিতা, বেশ্যা অশ্লীল হাস্যপরিহাস করবেন।
 
..আহমজানি গর্ভধমা ত্বমজাসি গর্ভধম্ ॥
তাঽউভৌ চতুরঃ পদঃ সম্প্রসারয়াব স্বর্গে লোকে প্রোর্ণুবাথাং বৃষা বাজী রেতোধা রেতো দধাতু ॥
উৎসক্থ্যাঽঅব গুদং ধেহি সমঞ্জিং চারয়া বৃষন্ । য স্ত্রীণাং জীবভোজনঃ ॥
যজুর্বেদ ২৩.১৯-২১
⛔ মহীধর-উবট ভাষ্যানুযায়ী অনুবাদ:
১৯.[মহিষী অশ্বের পার্শ্বে শায়তা হয়ে]হে অশ্ব! গর্ভধারক তোমার তেজ আমি? আকর্ষণ করে আপন যোনিতে ধারণ করছি। তুমি সেই গর্ভধারক আপন তেজকে আকর্ষণ পূর্বক আমার যোনিতে নিষেক করো৷
২০. হে অশ্ব! আগত হও। আমি ও তুমি উভয়ে আপন চারটি পদ বিস্তৃত করব। হে অশ্ব ও মহিষী! তোমরা দুজনে এই স্বর্গীয় যজ্ঞভূমিতে নিজেদের আচ্ছাদিত করে নাও। (মহিষী কর্তৃক অশ্বের লিঙ্গটি ধরে আপন যোনিতে প্রবিষ্ট করণীয়) বীর্যবান্ অশ্ব, বীর্যকে ধারণশীল, আমাতে আপন বীর্য স্থাপন করুক৷।
২১. (যজমান কর্তৃক অশ্বকে কহনীয়)–হে সেচক অশ্ব! উত্থিত হয়ে জঙ্ঘাশালিনী এই মহিষীর যোনিতে আপন লিঙ্গ রক্ষা করো–তাকে (লিঙ্গকে) অগ্র পশ্চাৎ চালিত করো। এই লিঙ্গই স্ত্রীগণের জীবন ও ভোজন স্বরূপ৷৷
 
☢️আশ্চর্যজনক হলো, বাদী অশ্ব তথা পশুর বলিদান ও সদ্‌গতি প্রসঙ্গে যে ব্যাখ্যানুবাদ দিলেন ঠিক তার পরে করা এই ব্যাখ্যাগুলো তিনি মানেন কি ? যদি বিনিয়োগের প্রশ্ন আসে তবে উক্ত মন্ত্রের পূর্বাপর অরূপসমৃদ্ধ বিনিয়োগে এই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাহলে যদি অশ্লীলভাগে নিজের বিবেক কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ অস্বীকার করা হয় তবে পশুবধে কেন নয় ? 
 
▪️পাশাপাশি যজুর্বেদ ২৩.১৮-তে 'গণানাং ত্বা' মন্ত্র গণপতি বা গণেশপূজনে ব্যবহার হয় তখন যদি এখানে অশ্ব বা বলির প্রসঙ্গ উপেক্ষিত হতে পারে তবে পশুবলির বিরোধীতাকারীদের অশাস্ত্রীয় বলার কারণ কী ?
আর এমনও তো নয় যে অশ্বের মাংস সনাতন সমাজে অত্যন্ত প্রচলিত পরম্পরা। আর যারা এভাবে পশুমাংস লোলুপতার জন্য অশ্ব-গো কোনো প্রাণীই ত্যাগ করেন না তাদের সাথে তর্ক করাও বৃথা। সুধীগণ সাত্ত্বিকতার দিকে ধাবিত হবেন পরমাত্মার নিকট এই প্রার্থনা করি। পাশাপাশি এই মন্ত্রানুবাদ উদ্ধৃত করে সনাতন সমাজকে বিভ্রান্ত করার অসৎ উদ্দেশ্যের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করা আশু কর্তব্য।

© বাংলাদেশ অগ্নিবীর