ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু ও বিদুরের জন্মের ইতিহাস
▪️সারসংক্ষেপ:
বিচিত্রবীর্যের সাথে অম্বিকা ও অম্বালিকার বিবাহ হয়। বিয়ের ৭ বছর পর বিচিত্রবীর্য যক্ষ্মারোগে মারা যান৷ তখন ভীষ্ম সত্যবতীকে বললেন, মাতা, বিচিত্রবীর্যের পত্নীদের গর্ভে সন্তান উৎপাদনের জন্য আপনি কোনও গুণবান ব্রাহ্মণকে অর্থ দিয়ে নিয়োগ করুন। সত্যবতী হাস্য ক’রে লজ্জিতভাবে
নিজের পূর্ব ইতিহাস জানালেন এবং পরিশেষে বললেন, "কন্যাবস্থায় আমার যে পুত্র হয়েছিল তাঁর নাম দ্বৈপায়ন, তিনি মহাযোগী মহর্ষি, চতুর্বেদ শিষ্যদের মধ্যে বিস্তারিত প্রচার ক’রে ব্যাস উপাধি পেয়েছেন; তিনি কৃষ্ণবর্ণ সেজন্য তাঁর অন্য নাম কৃষ্ণ। আমার এই পুত্র জন্মগ্রহণ ক’রেই পিতা পরাশরের সঙ্গে চ’লে যান এবং যাবার সময় আমাকে বলেছিলেন যে, প্রয়োজন হ’লে আমি ডাকলেই তিনি আসবেন। ভীষ্ম, তুমি আর আমি অনুরোধ করলে কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন তাঁর ভ্রাতৃবধূদের গর্ভে পুত্র উৎপাদন করবেন।"ভীষ্ম এই প্রস্তাবের সমর্থন করলে সত্যবতী ব্যাসকে স্মরণ করলেন। ক্ষণকালমধ্যে ব্যাস আবির্ভুত হলেন, সত্যবতী তাঁকে আলিঙ্গন এবং স্তনদুগ্ধে সিক্ত ক’রে অশ্রুমোচন করতে লাগলেন। মাতাকে অভিবাদন করে ব্যাস বললেন, জাপনার অভিলাষ পূরণ করতে এসেছি, কি করতে হবে আদেশ করুন। সত্যবতী তাঁর প্রার্থনা জানালে ব্যাস বললেন, কেবল ধর্ম পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার অভীষ্ট কার্য করব। আমার নির্দেশ অনুসারে দুই রাজ্ঞী এক বৎসর ব্রতপালন ক’রে শুদ্ধ হ’ন, তবে তাঁরা আমার কাছে আসতে পারবেন। সত্যবতী বললেন, অরাজক রাজ্যে বৃষ্টি হয় না, দেবতা প্রসন্ন হন না, অতএব যাতে রানীরা সদ্য গর্ভবতী হন তার ব্যবস্থা কর, সন্তান হলে ভীষ্ম তাদের পালন করবেন। ব্যাস বললেন, যদি এখনই পউত্র উৎপাদন করতে হয় তবে রানীরা যেন আমার কুৎসিত রূপ গন্ধ আর বেশ সহ্য করেন।
সভ্যবতী অনেক প্রবোধ দিয়ে তাঁর পুত্রবধূ অম্বিকাকে কোনও প্রকারে সম্মত ক’রে শয়নগৃহে পাঠালেন। অম্বিকা উত্তম শয্যায় শুয়ে ভীষ্ম এবং অন্যান্য কুরুবংশীয় বীরগণকে চিন্তা করতে লাগলেন। অনন্তর সেই দীপালোকিত গৃহে ব্যাস প্রবেশ করলেন। তাঁর কৃষ্ণ বর্ণ, দীপ্ত নয়ন ও পিঙ্গল জটা-শ্মশ্রু দেখে অম্বিকা ভয়ে চক্ষু নিমীলিত ক’রে রইলেন। ব্যাস বাইরে এলে সত্যবতী প্রশ্ন করলেন, এর গর্ভে গুণবান রাজপুত্র হবে তো? ব্যাস উত্তর দিলেন, এই পুত্র শতহস্তিতুল্য বলবান, বিদ্বান, বুদ্ধিমান এবং শতপুত্রের পিতা হবে, কিন্তু মাতার দোষে অন্ধ হবে। সত্যবতী বললেন, অন্ধ ব্যক্তি কুরুকুলের রাজা হবার যোগ্য নয়, তুমি আর একটি পুত্র দাও। সত্যবতীর অনুরোধে তাঁর দ্বিতীয় পুত্রবধূ অম্বালিকা শয়নগৃহে এলেন কিন্তু ব্যাসের মূর্তি দেখে তিনি ভয়ে পাণ্ডুবর্ণ হয়ে গেলেন। সত্যবতীকে ব্যাস বললেন, এই পুত্র বিক্রমশালী খ্যাতিমান এবং পঞ্চপুত্রের পিতা হবে, কিন্তু মাতার দোষে গাণ্ডুবর্ণ হবে।
যথাকালে অম্বিকা একটি অন্ধ পুত্র এবং অম্বালিকা পাণ্ডুবর্ণ পুত্র প্রসব করলেন, তাঁদের নাম ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডু। অম্বিকা পুনর্বার ঋতুমতী হ’লে সত্যবতী তাঁকে আর একবার ব্যাসের কাছে যেতে বললেন, কিন্তু মহর্ষির রূপ আর গন্ধ মনে ক’রে অম্বিকা নিজে গেলেন না, অপ্সরার ন্যায় রূপবতী এক দাসীকে পাঠালেন। দাসীর অভ্যর্থনা ও পরিচর্যায় তুষ্ট হয়ে ব্যাস বললেন, কল্যাণী, তুমি আর দাসী হ’য়ে থাকবে না, তোমার গর্ভস্থ পুত্র ধর্মাত্মা ও পরম বুদ্ধিমান হবে। এই দাসীর গর্ভে বিদুর জন্মগ্রহণ করেন।
▪️ সন্তান জন্মদানের জন্য বেদব্যাসকে সত্যবতীর আহ্বান
সত্যবতী দ্বৈপায়নকে স্মরণ করিলেন। ভগবান্ ব্যাস, জননী স্মরণ করিয়াছেন জানিয়া তৎক্ষণাৎ অবিদিতরূপে [স্বয়ং উদ্বুদ্ধ হইয়া] আবির্ভূত হইলেন। সত্যবতী বহু দিবসের পর পুত্রমুখ নিরীক্ষণ করিয়া যথাবিধি সম্মান ও বাহুযুগল দ্বারা আলিঙ্গনপূর্ব্বক স্নেহনিঃসৃত স্তনদুগ্ধ দ্বারা তাঁহাকে অভিষিক্ত করিলেন এবং অবিরল-বিগলিত আনন্দসলিলে তদীয় হৃদয় প্লাবিত হইতে লাগিল। মহর্ষি ব্যাসও দুঃখিত জননীকে নয়নজলে অভিষিক্ত করিয়া প্রণিপাতপুরঃসর নিবেদন করিলেন, ”ভগবতি! আপনার অভিপ্রেত কার্য্য-সাধনের নিমিত্ত আমি আসিয়াছি; এক্ষণে অনুমতি করুন, কি প্রিয়কার্য্য অনুষ্ঠান করিতে হইবে। তদনন্তর পুরোহিত আসিয়া মন্ত্রোচ্চারণপূর্ব্বক মহর্ষির যথাবিধি সপর্য্যা [সেবা−পরিচর্য্যা] সমাধান করিলেন। ব্যাসদেব পূজিত হইয়া প্রীতমনে আসনে উপবেশন করিলে সত্যবতী তদীয় কুশলবার্ত্তা জিজ্ঞাসা করিয়া কহিলেন, ” বৎস! পুত্র, পিতামাতা উভয়েরই সাধারণ ধন; পুত্রের প্রতি পিতার যেরূপ প্রভুত্ব, মাতারও তদপেক্ষা ন্যন নহে। তুমি আমার জ্যেষ্ঠ পুত্র , বিচিত্রবীর্য্য কনিষ্ঠ। ভীষ্ম যেমন পিতৃসম্বন্ধে বিচিত্রবীর্য্যের ভ্রাতা, তুমিও তদ্রূপ মাতৃসম্বন্ধে তাঁহার ভ্রাতা। সত্যসন্ধ ভীষ্ম প্রতিজ্ঞা করিয়াছেন, তিনি দারপরিগ্রহ ও রাজ্যশাসন করিবেন না; অতএব হে অনঘ! ভীষ্ম এবং আমি তোমাকে কোন বিষয়ে নিয়োগ করিতেছি; যদি তুমি ভ্রাতার প্রতি অনুকূল ও পৃথিবীর সমস্ত প্রাণিগণের প্রতি দয়াবান্ হইয়া আমাদিগের বংশরক্ষার্থ সেই নিয়োগবাক্য রক্ষা কর, তাহা হইলে অতীব প্রীত হই। রূপযৌবনবতী তোমার ভ্রাতৃ-জায়ারা সাতিশয় পুত্রার্থিনী হইয়াছেন, তুমি তাঁহাদিগের গর্ভে অনুরূপ পুত্র উৎপাদন করিয়া তাঁহাদিগের মনোরথ সিদ্ধ কর।” ব্যাসদেব কহিলেন, ”হে প্রাজ্ঞে! তুমি বিশেষরূপে সর্ব্বপ্রকার ধর্ম্ম পরিজ্ঞাত আছ এবং ধর্ম্মের প্রতি তোমার প্রগাঢ় ভক্তি ও একান্ত অনুরাগ আছে, এই নিমিত্ত তোমার অভিলষিত কার্য্য ধর্ম্মমূলক বিবেচনা করিয়া আমি তদনুষ্ঠানে সম্মত হইলাম। আমি নিশ্চয় বলিতেছি, ভ্রাতার ক্ষেত্রে মিত্রাবরুণ [সূর্য ও বরুণ]-সদৃশ পুত্র উৎপাদন করিব। সম্প্রতি দেবীরা সংবৎসরকাল নিয়মাবর্ত্তী হইয়া আমার নির্দ্দিষ্ট ব্রতোপাসনা করুন। তাহা হইলে তাঁহারা পবিত্র হইতে পারিবেন। ব্রতবিবর্জ্জিতা অপবিত্রা রমণী কদাপি আমাকে স্পর্শ করিতে পারিবে না ।”
সত্যবতী কহিলেন, ” বৎস! যাহাতে দেবীরা অচিরকালমধ্যে গর্ভবতী হয়েন, এরূপ অনুষ্ঠান কর; কারণ জনপদ অরাজক হইলে প্রজামণ্ডলী অনাথ ও উৎসব হইবে, সুতরাং তাহার সঙ্গে সঙ্গেই ধর্ম্ম্য [ধর্ম্মসম্মত] ক্রিয়াকলাপ বিনষ্ট হইবে। তাহা হইলে যজ্ঞাংশভাগী দেবগণের পরিতৃপ্তি ও পৃথিবীতে পর্য্যাপ্ত পরিমাণে বারিবর্ষণ কিরূপে সম্ভাবিত হইবে? ফলতঃ অরাজক রাজ্যের ভারগ্রহণ করা কাহারও সাধ্য নহে; অতএব হে পুত্র! তুমি অবিলম্বে ইহাদের গর্ভাধান কর । অনন্তর ভীষ্ম তাহার রক্ষণবেক্ষণ করিবেন।” ব্যাসদেব কহিলেন, যদি আপনার পুত্রবধূরা পরম ব্রতস্বরূপ আমার বিরূপতা সহ্য করিতে পারেন, তাহা হইলে আমি অকালিক [অল্পসময়ের মধ্যে] পুত্র প্রদান করিব । যদি কৌসল্যা [বিচিত্র্যবীর্য্যের পত্নী অম্বিকার নামান্তর] আমার বিকটমূর্ত্তি, ভয়ানক বেশ ও অসহ্য গন্ধ সহ্য করিতে পারেন, তাহা হইলে তিনি অদ্যই গর্ভবতী হইবেন।” ভগবান ব্যাস সত্যবতীকে এই প্রকার আদেশ দিয়া এবং কৌশল্যা শুচি বস্ত্র পরিধান ও রমণীয় বেশভূষা সমাধানপূর্বক শয়নাগারে আমার প্রতিক্ষা করুন, ”এই আজ্ঞা করিয়া অন্তর্হিত হইলেন ।
সূত্র: মহাভারত (কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত) ১. আদিপর্ব (কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত) ১০৫. কুরুবংশরক্ষার্থ ব্যাসের আহ্বান
▪️ ধৃতরাষ্ট্রের জন্ম
বৈশম্পায়ন কহিলেন, তদনন্তর সত্যবতী ঋতুস্নাতা পুত্রবধূকে যথাকালে শয্যায় শয়ন করাইয়া মৃদুস্বরে কহিতে লাগিলেন, ”বৎস ! তোমার এক দেবর আছেন, অদ্য নিশীথসময়ে তিনি তোমার নিকট আগমন করিবেন; অতএব তুমি অপ্রমত্তা হইয়া দেবরের আগমনকাল প্রতিক্ষা কর।”
কৌসল্যে দেবরস্তেঽস্তি সোঽদ্য ত্বাঽনুপ্রবেক্ষ্যতি।
অপ্রমত্তা প্রতীক্ষৈনং নিশীথে হ্যাগমিষ্যতি॥
অম্বিকা শ্বশ্রূর নিদেশবর্ত্তিনী হইয়া পরমরমনীয় শয্যায় শয়ন করিয়া ভীষ্ম ও অন্যান্য কৌরবদিগকে চিন্তা করিতে লাগিলেন। এই সময়ে ভগবান্ ব্যাস পূর্ব্বকৃত সত্যপ্রতিপালনার্থ প্রথমতঃ অম্বিকার শয়নাগারে প্রবেশ করিলেন।
ততঃ সুপ্তজনপ্রায়েঽর্ধরাত্রে ভগবানৃষিঃ।
দীপ্যমানেষু দীপেষু শরণং প্রবিবেশ হ॥
তদীয় বাসভবন প্রদীপ্ত দীপ শিখায় আলোকময় ছিল। অম্বিকা সেই কৃষ্ণবর্ণ মহর্ষির উজ্জ্বল নয়নযুগল, পিঙ্গলবর্ণ জটাভার, বিশাল শ্মশ্রু প্রভৃতি অতি ভয়ঙ্কর আকার নিরীক্ষণে ভীত ও বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া নেত্রদ্বয় নিমীলিত করিলেন। ব্যাসদেব মাতার সন্তোষার্থে তাঁহার সহবাস করিলেন। অম্বিকা ভয়ক্রমে দেবরের প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে পারিলেন না।
সম্ভূব তয়া সার্ধং মাতুঃ প্রিয়চিকীর্ষয়া।
ভয়াৎকাশিসুতা তং তু নাশক্নোদভিবীক্ষিতুম্॥
অনন্তর দ্বৈপায়নের বহির্গমনসময়ে তাঁহার মাতা জিজ্ঞাসা করিলেন, ”কেমন ইনি গুণবান্ পুত্র প্রসব করিবেন? অতীন্দ্রিয়জ্ঞানসম্পন্ন ভগবান্ ব্যাস মাতৃবাক্য শ্রবণ করিয়া কহিলেন, ”ইনি অলৌকিক ধীরশক্তিসম্পন্ন, অযুতনাগেন্দ্র সদৃশ বলবান্, সুবিদ্বান্, মহাবীর্য্য, মহাভাগ পুত্র প্রসব করিবেন এবং সেই মহাত্মার একশত পুত্র হইবে; কিন্তু তিনি স্বয়ং মাতৃদোষে জন্মান্ধ হইবেন।” সত্যবতী পুত্রের কথা শ্রবণ করিয়া কহিলেন, হে তপোধন! অন্ধ নৃপতি কুরুবংশের অননুরূপ; অতএব আর একটি পুত্র প্রদান কর, যাঁহার দ্বারা বংশরক্ষা ও রাজ্যের মঙ্গল হইতে পারে।” ব্যাসদেব ‘তথাস্তু’ বলিয়া স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন। অনন্তর অন্বিকা যথাকালে এক অন্ধ পুত্র প্রসব করিলেন।
▪️পাণ্ডুর জন্ম
সত্যবতী পুত্রবধূর নিকট সমস্ত বৃত্তান্ত অবগত করিয়া পূনর্ব্বার ব্যাসদেবকে আহ্বান করিলেন। তিনি পূর্বের ন্যায় অতি ভয়ঙ্কর মূর্ত্তি ধারণপূর্বক আবির্ভূত হইয়া জননীর নিয়োগক্রমে অম্বালিকার নিকট আগমন করিলেন। রাজমহিষী দ্বৈপায়নের সেই অদৃষ্টপূর্ব ভীষণমূর্ত্তি সন্দর্শনে ভীতা ও পাণ্ডুবর্ণা হইলেন।
বিবর্ণা পাণ্ডুসঙ্কাশা সমপদ্যত ভারত।
তাং ভীতাং পাণ্ডুসঙ্কাশাং বিষণ্ণাং প্রেক্ষ্য ভারত॥
সত্যবতী-পুত্র অম্বালিকাকে বিষণ্ণা ও বিবর্ণা দেখিয়া কহিলেন, ”ভদ্রে! তুমি আমার বিরূপত্ব সন্দর্শনে পাণ্ডু বর্ণ হইয়াছ, অতএব তোমার পুত্রও পাণ্ডুবর্ণ হইবে এবং তাহাত নাম পাণ্ডু হইবে।”
তস্মাদেষ সুতস্তে বৈ পাণ্ডুরেব ভবিষ্যতি।
নাম চাস্যৈতদেবেহ ভবিষ্যতি শুভাননে॥
মহর্ষি এই কথা বলিয়া বহির্গমন করিতেছেন, ইত্যবসরে সত্যবতী পুত্রবৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করিলে ব্যাসদেব কহিলেন, ”পুত্রটি পাণ্ডুবর্ণ হইবে এবং তাহার নাম পাণ্ডু হইবে।” ইহা শ্রবণ করিয়া সত্যবতী পুনর্ব্বার অপর সর্ব্বাঙ্গসুন্দর পুত্র প্রার্থনা করিলেন। মহর্ষি ‘তথাস্তু ‘ বলিয়া মাতাকে আশ্বাস-প্রদানপূর্ব্বক স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন। অম্বালিকা যথাকালে পরমসুন্দর পাণ্ডুবর্ণ এক পুত্র প্রসব করিলেন। সেই পাণ্ডুর যুধিষ্ঠিরাদি পাঁচ পুত্র জন্মে।
সূত্র: মহাভারত (কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত) ১. আদিপর্ব (কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত) ১০৬. ধৃতরাষ্ট্রের জন্ম। পাণ্ডুর জন্ম। বিদুরের জন্ম।
▪️ বিদুরের জন্ম
অনন্তর জ্যেষ্ঠা বধূর পুনর্ব্বার ঋতুকালে উপস্থিত হইলে দ্বৈপায়নের সহযোগ করিবার নিমিত্ত সত্যবতী তাঁহাকে আদেশ করিলেন; কিন্তু অম্বিকা ঋষির মূর্ত্তি ও উগ্র গন্ধ চিন্তা করিয়া অত্যন্ত ভীত হইয়া শ্বশ্রূর আজ্ঞায় সম্মত হইলেন না। অনন্তর তিনি অপ্সরোপমা এক দাসীকে স্বীয় অলঙ্কার দ্বারা বিভূষিত করিয়া ঋষির নিকট প্রেরণ করিলেন।
নাকরোদ্বচনং দেব্যা ভয়াৎসুরসুতোপমা।
ততঃস্বৈর্ভূষণৈর্দাসীং ভূষয়িত্বাঽপ্সরোপমাম্॥
দাসী ঋষির নিকটগমন ও তাঁহাকে অভিবাদনপূর্ব্বক তদায় আজ্ঞা প্রাপ্ত হইয়া পরমভক্তি সহকারে তাঁহার শুশ্রূষা করিতে লাগিলেন।
কামোপভোগেন রহস্তস্যাং তুষ্টিমগাদৃষিঃ।
তয়া সহোষিতো রাজন্মহর্ষিঃ সংশিতব্রতঃ॥
মহর্ষি তাঁহার সহযোগে পরম-প্রীত হইয়া গাত্রোত্থানপূর্ব্বক কহিলেন, ”হে শুভে! তুমি দাসত্বশৃঙ্খল হইতে মুক্ত হইবে এবং তোমার গর্ভজাত পুত্র অসাধারণ বুদ্ধিমান্ ও পরম-ধার্ম্মিক হইবে।” সেই দাসীগর্ভসম্ভূত দ্বৈপায়নাত্মজ বিদুর নামর বিখ্যাত হইলেন। তিনি ধৃতরাষ্ট্র ও মহাত্মা পাণ্ডুর ভ্রাতা।
উত্তিষ্ঠন্নব্রবীদেনামভুজিষ্যা ভবিষ্যসি।
অয়ং চ তে শুভে গর্ভঃ শ্রেয়ানুদরমাগতঃ।
ধর্মাত্মা ভবিতা লোকে সর্ববুদ্ধিমতাং বরঃ॥
স জজ্ঞে বিদুরো নাম কৃষ্ণদ্বৈপায়নাত্মজঃ।
ধৃতরাষ্ট্রস্য বৈ ভ্রাতা পাণ্ডোশ্চৈব মহাত্মনঃ॥
মহর্ষি দ্বৈপায়ন স্বীয় প্রলম্ভ [প্রবঞ্চনা ছলনাপূর্ব্বক অন্যের স্থানে নিয়োগ] ও শূদ্রার পুত্রজন্ম-বৃত্তান্ত সত্যবতীকে নিবেদন করিয়া ধর্ম্মের নিকট অঋণী হইয়া তৎক্ষণাৎ অন্তর্হিত হইলেন।
এতে বিচিত্রবীর্যস্য ক্ষেত্রে দ্বৈপায়নাদপি।
জজ্ঞিরে দেবগর্ভাভাঃ কুরুবংশবিবর্ধনাঃ॥
= এইরূপে দ্বৈপায়নের ঔরসে ও বিচিত্রবীর্য্যের ক্ষেত্রে ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু এবং বিদুরের জন্ম হয় ।
সূত্র: মহাভারত (কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত) ১. আদিপর্ব (কালীপ্রসন্ন সিংহ অনূদিত) ১০৬. ধৃতরাষ্ট্রের জন্ম। পাণ্ডুর জন্ম। বিদুরের জন্ম।
🖋️
বাংলাদেশ অগ্নিবীর
0 মন্তব্য(গুলি)