https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

বেদ সর্বযুগ এবং সর্ব মনুষ্য জাতির জন্য

Tuesday, April 25, 2017

সনাতন  আইনশাস্ত্র মতে বেদ  নিত্য এবং অবশ্যপাঠ্য। কয়েকশতক আগেও বেদ শব্দটি ছিল প্রতিটি সনাতনিদের  প্রাত্যাহিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত।কিন্তু সময়ের বিবর্তনে,অজ্ঞান তার করালগ্রাসে, ঔপনিবেশিকদের চক্রান্তে, তথাকথিত ধর্মপ্রচারক তথা ধর্মব্যবসায়ীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে আমরা আজ মহান বেদ এর পথ থেকে বিভ্রান্ত।
ফলস্ব রুপ আমরা আজ জাতি হিসেবে এক ক্রান্তিলগ্নে দাড়িয়ে।জ্ঞানের অভাবে নিত্যনৈমিত্তিক হিসাবে অন্য ধর্মালম্বীদের কাছে অপমানের স্বীকার তো বটেই,নিজেদের প্রতিদিনকার জীবনযাপনেও অজ্ঞতার গ্লানিবয়ে নিয়ে চলেছি নিরন্তর।তাই আজকে কয়েকটি অপপ্রচার ও ভুল ধারনা নিয়ে কথা বলব।

১। এই কলিযুগে বেদ সাধারন মানুষের পক্ষে বেদ পরা সম্ভব নয় অথবা বেদ পরার পবিত্রতা মানুষের নেই এরকম একটা কথা অনেকেই প্রচার করে থাকেন।তারা আরও বলেন যে বেদবিহিত কর্মসমুহ কলিযুগের মানুষের পক্ষে মানা সম্ভব নয়।আসলেই কি তাই? আসুন দেখি বেদ কি বলেছে-

অংতি সন্তং ন জহাত্যন্তি সন্তং ন পশ্যতি।
দেবস্য পশ্য কাব্যং ন মমার ন জীর্যতি।
(অথর্ববেদ ১০.৮.৩২)

সরলার্থঃ মনুষ্য সমীপবর্ত্তী পরমাত্মাাকে দেখেও না, তাহাকে ছাড়িতেও পারে  না। পরমাত্মাার কাব্যকের দেখ, তাহা মরেও না, জীর্ণও হয় না।

অর্থাৎ বেদ  সকল যুগ ও কালের জন্য প্রযোজ্য।এর বাণী কখনো অপ্রাসঙ্গিক হয়না,অচল হয়না।বেদ মন্ত্র কলিযুগে নিষ্ক্রিয়-এ ধরনের প্রলাপ তাই অনর্থক।সর্বযুগে ই সমানভাবে প্রযোজ্য ও তা সর্বদা আধুনিক।
এখন  মনিষীরা বেদ সমন্ধ্যে  কি বলেছেন একটু শুনি-

"বেদ হচ্ছে সকল সত্য জ্ঞানের উৎস। মহাকর্ষ শক্তি যেমন তা আবিস্কারের আগেও বিদ্যমান ছিল তেমনি মানবজাতি যদি এটা ভুলেও যায় তারপরও এটা অপরিবর্তিতভাবে বিদ্যমান থাকবে।ঠিক তেমনি বেদ"
(স্বামী বিবেকানন্দ,Comp lete work,vol 1,paper on Hinduism)

> Maharishi Dayanand Saraswati যিনি কিনা প্রথম বেদের সম্পূর্ন সঠিক আধ্যাত্মিক অনুবাদ এর জন্য বিখ্যাত  এবং অপরাজেয় বিতার্কিক তিনি বলেছিলেন-

"বেদ হল একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যা সকল যুগের জন্য একেবারে সুবিধাজনকভাবে প্রযোজ্য।"

যেখানে বেদ বলছে এটা সব যুগের জন্য প্রযোজ্য সেখানে কতিপয় জ্ঞানপাপীর এহেন আচরন সন্দেহজনক। এবার আমরা আসি বাস্তবিক যুক্তি প্রয়োগে।ঈশ্বর হলেন ত্রিকালজ্ঞ অর্থাত্ যিনি অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যত্ সব জানেন।তাহলে তার পক্ষে কেন সম্ভব হবেনা এমন কোন গ্রন্থ প্রেরন করা যা সর্বযুগের মানুষের জন্য প্রযোজ্য?

তাছাড়া এসব অবান্তর যুক্তি যারা পেশ করেন তারা নিজেরা কি কখনও বেদ পড়েছেন তাদের কথার সত্যতা যাচাই এর জন্য? তাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি,পারলে বেদের এমন কোন নিয়ম দেখান যা বর্তমান যুগের জন্য প্রযোজ্য নয়।বরং এটা কলি যুগে আরও বেশি প্রয়োজন কারন বেদের কর্মকান্ড প্রতিদিনের নিত্যকর্মাদি, বিজ্ঞান,আইন, অর্থনীতি, রাজনীতি ব্যখ্যা করেছে যা সত্য যুগের তুলনায় কলি যুগেই বেশী দরকার।

তারা আরেকটি প্রশ্ন করেন বেদের বৃহত্ কলেবর নিয়ে যেটা সম্পূর্ন ভিত্তিহীন।কারন বৈদিক যুগেও এমন খুব কম লোকই ছিলেন যারা সব কটা বেদ জানতেন।কেউ বা একটা,কেউ বা দুটা,কেউ তিনটা,কেউবা চারটাই জানতেন যাদের যথাক্রমে একবেদী,দ্বিবেদী,ত্রিবেদী ও চতুর্বেদী বলা হত।তবে ত্রিবেদী ও চতুর্বেদী ছিল হাতে গোনা। একবেদী রা ই ছিল সর্ব্বোচ্চ।আর তাছাড়া কেউ ই আপনাকে বেদ মুখস্ত করতে বলছেনা। আর এ ধরনের প্রচারকারীদের মধ্যে অনেকেই বলেন শ্রীমদভাগবত পড়ার কথা!!!এখন আপনারা ই বলুন,যেখানে যজুর্বেদ এর মন্ত্রসংখ্যা ২০০০ সেখানে এর বদলে এর কয়েকগুন বড় একটাপুরান কলেবরের দোহাই দিয়ে পরতে বলাটা কতটুকু যৌক্তিক? ঈশ্বর ই জানেন।

এখন আসি পবিত্রতার বিষয়ে। অনেকেই বলেন বেদপাঠ করার মত পবিত্রতা কলিযুগের মানুষের নেই এবং নারী তথা শুদ্রদের বেদাধিকার নেই।  তাহলে একটা বিষয় চিন্তা করুন- বেদের মতো পবিত্র গ্রন্থ যদি পাঠ করার মতো পবিত্রতা না থাকে তাহলে তাদের  হরিনাম যা সবচেয়ে পবিত্র তা নেয়ার পবিত্রতা থাকবে কি করে? সবচেয়ে খারাপ,অপবিত্র লোকটিও নিজেকে বেদপাঠ এর মাধ্যমে জ্ঞানালোকে পরিপুর্ন করতে পারে। আর বেদ পাঠে অধিকার সবার সমান । বেদ পাঠে  কোন মনুষ্যের মধ্যে ভেদাভেদ করা হয় নি।  তাই  তো পবিত্র বেদ ঘোষনা করছে -

যথেমাং বাচং কল্যানীমাবদানিজনেভ্যঃ।ব্রহ্ম রাজান্যাভ্যাং শূদ্রায়চার্যায় চ স্বায় চারণায়।প্রিয়ো দেবানংদক্ষিণায়ৈ দাতুরিহ ভুয়াসময়ং মে কামংসমৃধ্যতামুপ মাদো নমতু।।
(যজুর্বেদ ২৬।২)

সরলার্থঃ পরমেশ্বর সব মনুেষ্যর প্রতিউপদেশ দিতেছেন ব্রহ্মণ,ক্ষত্রিয়,শুদ্র,বৈশ্য,স্বীয় স্ত্রীর ও সেবকাদি এবংঅন্যান্য সকল মনুষ্যকেই যেমন আমি এই মঙ্গলদায়িনী বেদবানীর উপদেশ দান করিয়াছি, তোমরাও সেইরুপ করো।

গত কয়েকশবছর এ,যখন বেদজ্ঞান এর অভাব কে কাজে লাগিয়ে স্বার্থান্বেষী ধর্মব্যবসায়ী ও তথাকথিত ব্রাহ্মন পরিচয় ধারী যারা কিনা দস্যু থেকেও অধম তারা তৈরী করেছিল অস্পৃশ্যতা নামক জঘন্য প্রথা।একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া তো দুরের কথা,অনেকেই একে অপরকে নিজেদের বানানো ছোট জাত বিবেচনা করে ছুঁতও না।অথচ পবিত্র বেদ বলেছে-

সমানী প্রপা সহ বোরন্নভাগঃ সমানে যোক্তো সহ বো যুনজমি।
সমঞ্চোহগ্নিং যপর্যতারা নাভি মিবাভিতঃ।।
(অথর্ববেদ ৩.৩০.৬)

সরলার্থঃ তোমাদের পান একসঙ্গে হউক, ভোজনও একসঙ্গে হউক।  তোমাদিগকে এক সঙ্গে একই প্রেমবন্ধনে যুক্ত করিয়াছি। সকলে মিলিয়া পরমাত্মাকে পূজা করো।  রথচক্রের কেন্দ্রের চারিদিকে যেমন অর থাকে তোমরা সেইভাবে থাকো।

ঋগবেদের শেষ মন্ত্রে মানব জাতির প্রতি ঈশ্বরের আদেশ -

সমানী বঃ আকুতি সমানা হৃদয়ানি বঃ।
সমানমস্তু বো মনো য়থা বঃ সুসহাসতি।।
(ঋগবেদ ১০।১৯১।৪)

সরলার্থঃ  হে মানুষ! তোমাদের সকলের লক্ষ্য এক হোক, তোমাদের অভিপ্রায় এক হোক, তোমাদের মন এক হোক। এই ভাবে ভাবিত হয়ে তোমাদের সকলের শক্তি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হোক।

পরমেশ্বর আমাদের বেদ বাণীর  দান করেছে সমগ্রবিশ্বের জন্য,সমগ্র মানব জাতির কল্যানেরজন্য, বিশেষ কোন জাতি বা ধর্মের জন্য নয়। বেদ সবার অধিকার রয়ছে তাইআপনাদের কাছে আমার অনুরোধ,আপনারাসত্যের পথে ধাবিত হউন।বেদ অধ্যায়ন করুনসমাজের কুসংস্কার ও কপিতয় নাম ধারীব্রাহ্মনের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করুন।সবাই বেদ অধ্যায়ন করুন।

ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি

  1. আমি ‍‌‌ঋ‍কবেদ এ পড়েছি যে -স্ত্রীলোক ও শূদ্র জাতীর মানুষদের এই বেদ পড়ার অধিকার দেওয়া হ‌ইনি।

    ReplyDelete
  2. আমি ‍‌‌ঋ‍কবেদ এ পড়েছি যে -স্ত্রীলোক ও শূদ্র জাতীর মানুষদের এই বেদ পড়ার অধিকার দেওয়া হ‌ইনি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. রেফারেন্স বলুন।আর নারী নিয়ে অনেক লিখা আছে ব্লগে। আর ঋগবেদেই নারী মন্ত্রদ্রষ্টা আছেন অনেক তাহলে অধিকার দেওয়া হবেই না কেমনে?

      Delete