https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

রামায়ণ মীমাংসাঃ শম্বুক হত্যার সত্যতা

Sunday, April 9, 2017
মর্যাদাপুরুষোত্তম  শ্রী রামচন্দ্র জী মহারাজ এর জীবন পবিত্র এবং আমাদের জীবনের আদর্শ মান্য করা হয়। কিছু বিধর্মী এবং নাস্তিক দ্বারা শ্রী রামচন্দ্র জী মহারাজের উপর শব্মুক নামক এক শূদ্রের হত্যা হওয়ার আক্ষেপ করা হয়েছে।
এখানে আমরা তর্ক দ্বারা শম্বুক বধের কথা কে পরীক্ষা করে নির্ধারণ করবো সত্য কি? 

সর্বপ্রথম শম্বুক এর কথা বাল্মিকী রামায়ণ উত্তর কাণ্ডের ৭৩-৭৬ সর্গে  পাওয়া যায়।
শম্বুক বধের কথা এই প্রকার -
একদিন এক ব্রাহ্মণের পূত্র মারা যায়।  সেই ব্রাহ্মণ তার পূত্রের শব কে নিয়ে রাজদ্বারে এসে বিলাপ করতে লাগলেন। তার আরোপ ছিলো যে বালকের অকাল মৃত্যুর কারণ রাজার কোন দুষ্কর্ম।  ঋষি মুনি দের পরিষদ ইহার উপর বিচার করে নির্ণয় করে যে,  রাজ্য মধ্যে কোথাও কোন অনধিকারী তপ করছে। রামচন্দ্র জী এই বিষয়ের বিচার করার জন্য মন্ত্রিকে খোজ করতে  বললেন। নারদ জী সেই সভায় বললেন রাজন! দ্বাপরেও শূদ্রের তপ হওয়া মহান অধর্ম। নিশ্চয় আপনার রাজ্যের সীমানায় কোন ক্ষুদ্র বুদ্ধিসম্পন্ন শুদ্র তপস্যা করছে।  তার কারণেই বালকের মৃত্যু হয়েছে। অতঃ পর আপনি রাজ্য মধ্যে খোজ করুন এবং যেখানে কোন দুষ্ট কর্ম দেখা যায় সেখানে তাকে থামানোর জন্য প্রযত্ন করবেন। ইহা শুনে রামচন্দ্র জী বিমানে সওয়ার হয়ে শম্বুক এর খোঁজে বের হলেন এবং দক্ষিণ দিশায় শৌবল পর্বতের উত্তর ভাগে এক সরোবরের পাশে তপস্যা রত এক তপস্বী মিললো। যে কি না পা উপরে উল্টো ঝুলিয়ে তপস্যা করছিলো।
তাহাকে  দেখে শ্রী রঘুনাথ উগ্র তপকারী সেই তপস্বীর কাছে যেয়ে বললেন - উত্তম তপ পালনকারী তাপস! তুমি ধন্য হও। তপস্যা দ্বারা সুদৃঢ পরাক্রমী পুরুষ!  তুমি কোন জাতি থেকে উৎপন্ন হয়েছো?   আমি দশরথ কুমার রাম তোমার পরিচয় জানার জন্য জিজ্ঞাসা করছি। তুমি কি বস্তু পাওয়ার জন্য তপ করছো?  তপস্যা দ্বার্ সন্তুষ্ট হয়ে ইষ্টদেব দ্বারা তুমি কোন বর পেতে চাচ্ছো?  স্বর্গ বা অন্য কিছু?  কোন সেই পদার্থ যা পাবার জন্য তুমি এরূপ কঠোর তপস্যা করছো যা দ্বিতীয় জনের জন্য দূর্লভ?
তাপস! যে বস্তুর জন্য তুমি তপস্যা করছো তাহা আমি শুনতে চাই। ইহার পশ্চাতে তুমি বলো যে, তুমি ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয়?  তৃতীয় বর্ণের বৈশ্য বা শূদ্র?
শ্রীরামের এই বচন শুনে নীচ মস্তক করে তপস্বী বললো - হে শ্রী রাম! আমি মিথ্যা বলবো না।  দেব লোক পাবার জন্যই আমি তপস্যা করছি।  আমাকে শূদ্র জানবে।  আমার নাম শম্বুক।
ইহার পশ্চাৎ রামচন্দ্র জী তার চমৎকার তলোয়ার বের করে শম্বুকের শিরচ্ছেদ করলেন।

শম্বুক বধের কথা তর্ক দ্বারা পরীক্ষা -
এই কথা কে পড়ে মনে এই প্রশ্ন উঠে যে,  সত্যিই কি শূদ্রের জন্য তপস্যা ধর্ম শাস্ত্রে বর্জিত?  রামচন্দ্র জী মহারাজ কি শূদ্রে ভেদভাব করতেন?
এই প্রশ্নের উত্তর বেদ,  রামায়ন, মহাভারত এবং উপনিষদে অন্ত্যন্ত প্রেরণা দায়ক রূপে দেওয়া রয়েছে
বেদে শুদ্রের বিষয়ে বর্ণনা
১। তপসে শূদ্রম - যজুর্বেদ ৩০।৫
অর্থাৎ বহু পরিশ্রমী,  কঠিন কার্য কারী, অর্থাৎ তপ কারী পুরুষের নাম শূদ্র।
২। বারিবস্কৃতায়ৌষধিনাম পতয়ে নমো - যজুর্বেদ ১৬।১৯
অর্থাৎ বারিবস্কৃতায় অর্থাৎ সেবা কারী ভৃত্যের (নম) সৎকার করো
৩। রুচং শূদ্রেষু - যজুর্বেদ ১৮।৪৮
অর্থাৎ বিদ্বান লোক ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্রে এক সমান প্রীতি করবে।
এই প্রকার অনেক প্রমাণ শূদ্রের তপ করা,  সৎকার করা বেদের মধ্যে পাওয়া যায়।

বাল্মীকি রামায়ণে শূদ্রের উপসনা দ্বারা মহান হওয়ার প্রমাণ -
মুনি বাল্মীকি জী বলেছেন যে এই রামায়ণ পড়ে এবং স্বাধ্যায় দ্বারা ব্রাহ্মণ বড় সুবক্তা ঋষি হবে,  ক্ষত্রিয় ভূপতি হবে। বৈশ্য উত্তম লাভ প্রাপ্ত করবে এবং শূদ্র মহান হবে। রামায়ণে চার বর্ণের সমান অধিকার দেখা যায়।
(বাল কান্ড, প্রথম সর্গ ৯৯)

উপনিষদে শুদ্রের উপাসনা দ্বারা মহান হওয়ার প্রমাণ -
এই শূদ্র বর্ণ পুষণ অর্থাৎ পোষনণকারী এবং সাক্ষাৎ পৃথিবীর সমান।  কারণ এই পৃথিবী সবার  ভরণ পোষণ করে ওইরূপ শূদ্রও সবার ভরণ পোষণ করে।
(বৃহদারণ্যক উপনিষদ ১।৪।১৩)
ব্যক্তি গুন দ্বারা শুদ্র অথবা ব্রাহ্মণ হয় নাকি জন্ম দ্বারা -
সত্যকাম জাবাল যখন গৌতম মুনির কাছে শিক্ষার্থী হয়ে পৌছলেন তখন মুনি তার গোত্র জিজ্ঞাসা করলেন -তখন জাবাল বললেন আমি জানি না। আমি আমার মাতাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন যে যুবাবস্থায় আমি অনেক ব্যক্তির সেবা করেছিলাম। সেই সময় তোমার জন্ম। এইজন্য আমি জানি না তোমার গোত্র কি। তাহর পর মুনি বললেন - যে ব্রাহ্মণ নয় সে এইরূপ সত্য কথা কিভাবে বলতে পারে।

মহাভারতে যক্ষ যুধিষ্ঠির সংবাদ ৩১৩।১০৮-১০৯ এ যুধিষ্ঠিরের অনুসারে কুল দ্বারা দ্বিজ কেউ হয় না কেবল আচরণ দ্বারাই হতে পারে।

আপস্তম্ব ধর্ম সুত্র ২।৫।১১।১০-১১ - যেই প্রকার ধর্ম আচরন দ্বারা নিকৃষ্ট বর্ণ নিজ থেকে উত্তম বর্ণ কে প্রাপ্ত হয়।  সেই প্রকার অধর্ম আচরণ দ্বারা উত্তম বর্ণবান মনুষ্য নিজ থেকে নীচ বর্ণ প্রাপ্ত করে।

ব্রাহ্মণ ও শূদ্র হতে পারে এবং শূদ্রও ব্রাহ্মণ হতে পারে। এই প্রকার ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যও নিজ নিজ বর্ণ পরিবর্তন করতে পারে। (মনু ১০।৬৫)

চার বেদের বিদ্বান,  কিন্তু চরিত্রহীন ব্রাহ্মণ শূদ্র থেকে নিকৃষ্ট,  অগ্নিহোত্রকারী জিতেন্দ্রীয়কেই ব্রাহ্মণ বলা হয়।  মহাভারত বনপর্ব ৩১৩/ ১১১

ব্রাহ্মণ,  ক্ষত্রিয়,  বৈশ্য এবং শূদ্র সবাই তপস্যার দ্বারা স্বর্গ প্রাপ্ত করে।  মহাভারত অনুগীতা পর্ব ৯১/৩৭

সত্য,  দান, ক্ষমা, তপ দয়া যাহার মধ্যে রয়েছে তিনি ব্রাহ্মণ এবং যাহার মধ্যে এগুলো নেই তিনি শুদ্র। বন পর্ব ১৮০/ ২১-২৬

শ্রী রামচন্দ্র জী মহারাজের চরিত্র-
বাল্মীকি রামায়ণেশ্রীরাম চন্দ্র জী মহারাজ দ্বারা বনবাস কালে  শবরী কর্তৃক আতিথ্য গ্রহণ করেন  (অরণ্যকাণ্ড ৭৪।৭)। সাধারণ মানুষ তাকে অত্যন্ত নিম্ন জাতির স্ত্রী বলে মানতো।র  শবরীর বিষয়ে বাল্মীকি মুনি লেখেন যে ,  শবরী সিদ্ধ জনের মধ্যে সম্মানিত তপস্বিনী ছিলেন (অরণ্যকাণ্ড ৭৪।১০)
 অর্থাৎ ইহা দ্বারা সিদ্ধ যে রামচন্দ্র কোন জাতি ভেদ করতেন না।

নারদ মুনি বাল্মীকি রামায়ণ (বাল কান্ডে) বলেছন - রাম শ্রেষ্ঠ,  সবার সাথে সমান ব্যবহার কারী এবং সদা প্রিয় দৃষ্টি সম্পন্ন।

এখন পাঠকগণ বিচার করুন শ্রীরাম জী কিভাবে তপস্যায় মগ্ন কোন শূদ্র কুলে উৎপন্ন শম্বুক কে হত্যা করতে পারে? 

যখন বেদ,  রামায়ন,  মহাভারত,  উপনিষদ সব ধর্ম শাস্ত্র শুদ্র কে তপস্যা কারী,  বিদ্যা গ্রহন এবং আচরন দ্বারা ব্রাহ্মণ হওয়ার সন্দেশ দিয়েছে।  তো এই বেদ বিরোধী কথন তর্ক শাস্ত্রে  অসত্য সিদ্ধ হয়। নারদ মুনির কথনের দ্বারা দ্বাপর যুগে শুদ্রের তপ করা বর্জিত অসত্য কথন মাত্র।

শ্রীরাম জীর পুষ্পক বিমান নিয়ে শম্বুক এর খোজ করা এক অসত্য কথন।  কারন পুষ্পক বিমান তো শ্রীরাম জী অযোধ্যা আসার পর তার আসল মালিক কুবের কে ফেরত দিয়েছিলো (যুদ্ধ কান্ড ১২৭।৬১)

যেই প্রকার কোন কর্ম করার দ্বারা কর্মকারী ব্যক্তি সেই কর্মের ফল প্রাপ্ত হয়।   অর্থাৎ যে ব্যক্তি যেমন কর্ম করবে সে তারই ফল ভোগ করবে। নিজ কর্মের ফল অপর কারোর উপর বর্তায় না।  তাই শম্বুকের তপ করার কারণে  ব্রাহ্মণ পুত্রের দেহান্ত অসত্য বচন।

সত্য এই যে,  মধ্যকালে যখন বেদ বিদ্যার লোপ হয়ে যায়।  তখন সেই কালে ব্রাহ্মন ব্যক্তি নিজ গুন দ্বারা নয় নিজ জন্ম দ্বারাই নিজেকে ব্রাহ্মণ ভাবতো।  সেই কালে শুদ্রকে নীচ মানা হতো  এবং নারীকেও নরকের দ্বারা মানা হতো।  এবং সেই কালেই মনুস্মৃতিতে বেদ বিরোধী জাতিবাদের পোষণ কারী শ্লোক সংযুক্ত করা হয়। এমনি কি বাল্মীকি রামায়নেও অশুদ্ধ পাঠ যুক্ত করা হয়েছে যার নাম উত্তর কান্ড।

এই প্রকার অসত্যের প্রচার দ্বারা কেবল অবৈদিক বিচারধারার বৃদ্ধি দেখা যায়। এই প্রকার শ্রীরাম জীকে জাতি বিরোধী বলে কিছু অজ্ঞানী লোক নিজের স্বার্থ কে সিদ্ধির জন্য হিন্দু জাতির বড় সংখ্যা কে বিধর্মী অথবা নাস্তিক বানাতো সফল হন।
এইজন্য সত্যের গ্রহন এবং অসত্যেরর ত্যাগ দ্বারা সর্বদা তৎপর থেকে শ্রীরাম জী মহারাজের প্রতি যে অন্যায়কারী বিষ বমন করা হয়েছে তার প্রতিকার করা উচিৎ।  তবেই তো রাম রাজ্য সার্থক হবে।

  1. হাহাহা, আধা সত্য, প্রত্যেকটি কথার খণ্ডন করা যায়।

    ReplyDelete
  2. আপনার অনেক সাধুবাদ প্রাপ্য রামের উপর শম্বুক হত্যার দুর্নাম মুছে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টার জন্য। এখন একটা কথা এখানে আপনিও স্বীকার করে নিয়েছেন যে যদি, আবারও বলছি যদি, রাম শম্বুক-কে রামায়নে বর্ণিত কারণের জন্য হত্যা করে থাকেন তবে তা রামের যে চরিত্র আঁকা রয়েছে তার সঙ্গে মিল খায় না। এখন প্রশ্ন, রামের শম্বুক হত্যার বিবরণ রয়েছে original বল্মীকি রামায়নে। এটা যে আরোপিত তার কোন যুক্তিসঙ্গত প্রমান কেউ এখনও দিতে পারেনি, আপনিও নন। আপনার মত সবাই শুধু পরোক্ষ ভাবে যুক্তি দেন রামের মত লোক এই কাজ করতেই পারেননা। এটা কোন যুক্তি নয়। এটা ভাবের ঘরে চুরি, আর অন্ধ ভক্তি। রামের তো এই একটা হীন কাজ নয়, আরো আছে। বিনা দোষে সীতার বনবাস বা অগ্নিপরীক্ষা তার মধ্যে পরে। নারীশক্তি, নারীর সম্মান, সবই তো আমাদের সভ্যতায় স্বীকৃত। প্রজাদের চোখে hero হওয়ার জন্য তাঁর এত অবমাননা!!! এগুলিও কি আরোপিত। সেরকম কোন প্রমাণ নেই। একটা প্রশ্ন আরও আছে। শুদ্রের জপ-তপের অধিকার বেদ ও শাস্ত্র দ্বারা স্বীকৃত, যা আপনিও অনেক উদাহরণ দিয়ে বলেছেন। রাম যদি এসব জেনেও এই হত্যা করেন, সেই অপরাধের নির্মমতা শতগুণ বেড়ে যায়, তাই নয় কি? আর যদি না জেনে করেন, তবে রামকে একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে মেনে নেওয়া যায় কি? রামরাজ্য কথাটা লঘু হয়ে যায় না কি? ভেবে দেখবেন। রামকে আমিও শ্রদ্ধা করি, তবে ভগবান হিসেবে নয়। একজন উঁচুদরের মানুষ হিসেবে। বেশীর ভাগই গুণ, সঙ্গে কিছু দোষ blended।

    ReplyDelete
    Replies
    1. রামের চরিত্রে যদি সত্যই ত্রুটি থাকতো তবে মহর্ষি বাল্মীকি অযোধ্যা কাণ্ডের ১ম সর্গের ৯-২৮ নং শ্লোক লিখতেন না, আর অধিকাংশ গবেষকের মতে উত্তরকাণ্ডই প্রক্ষিপ্ত

      Delete
  3. এত তো সমানাধিকার এর যুক্তি দিলেন।বলুন দেখি একলব্য কে ছিলেন??তার আঙুল কাটার যুক্তি দিন দেখি

    ReplyDelete
    Replies
    1. তাঁর অঙ্গুলি কর্তন দ্রোণাচার্যের অপরাধ ছিল কিন্তু তিনি বিবশ ছিলেন ,এ বিষয়ে নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ি রচিত "মহাভারতের ৬ প্রবীণ " গ্রন্থের দ্রোণ অধ্যায় পড়তে অনুরোধ করছি

      Delete
  4. তাহলে বালি বধ এর বিষয়টা কি হবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. বলিবধ, রামায়ণ ও মহাভারতের কোথাও উল্লেখ নেই, এগুলো পরবর্তীতে মধ্যযুগে রচিত পৌরাণিক গল্প।

      Delete
  5. নিরাকার বাদী বৈদিক রা কবে থেকে রাম ভক্ত হনুমান হয়ে গেল ।

    ReplyDelete