প্রশ্ন- যে যে ভাবেই উপাসনা করে প্রকৃত পক্ষে সে এক ঈশ্বরকেই তথা এক স্রষ্টারই উপাসনা করে। আর্যরা এটা মানে কিনা?
উত্তর- হ্যাঁ, অবশ্যই মানি, কেন মানবে না আর্যরা? এখানেই তো বৈদিক সনাতন ধর্ম সবার থেকে শ্রেষ্ট, কারণ বৈদিক সনাতন ধর্ম পরমত সহিষ্ণু। কিন্তু, এতে
অনেক কিন্তু আছে! সেটা জানলে ও প্রকৃত সত্য মানলে মানুষ আর তার মন মত যে যে ভাবে উপাসনা করতো না, ফলে নিত্য নতুন সম্প্রদায়েরও সৃষ্টি হতো না এবং মানুষে মানুষে ভেদাভেদও থাকতো না। আর তা না জানার ও মানার কারণে আজ পৃথিবীর বুকে আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, যবন, জৈন, বৈষ্ণব, শাক্ত, ইহুদি ইত্যাদি নানা সম্প্রদায়ের লোক দেখতে পাচ্ছি। ফলে প্রত্যেকটি সম্প্রদায় একে অন্যের পেছনে লেগে দিনকে দিন পৃথিবীটাকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলছে। গীতা ও বেদের কোথাও মানুষের মন মত যে যে ভাবে উপাসনা বা পূজা করার কথা নির্দেষ নেই। বরংচ এটা বলা আছে যে মানুষ তার নিজের মত করে বানিয়ে বানিয়ে করে। গীতা, বেদে আছে এক পদ্ধতি ও রীতিতে এক প্রভুর উপাসনা বা পূজার কথা। আমি বিস্তারিত বর্ণনা করছি, দেখুন-
"যিনি যে ভাবে উপাসনা করে আমি তাদের সেভাবে ফলদান করি। হে পার্থ! মনুষ্যগণ সকল প্রকারে আমারই পথ অনুসরণ করে।"
(গীতা ৪।১১)
"যিনি যে ভাবে উপাসনা করে আমি তাদের সেভাবে ফলদান করি। হে পার্থ! মনুষ্যগণ সকল প্রকারে আমারই পথ অনুসরণ করে।"
(গীতা ৪।১১)
এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে সকল সম্প্রদায়ের(হিন্দু, মুসলিম, ইহুদি, খ্রীষ্টান...সকলেই) লোকই ঘুরে ফিরে এক প্রভুরই উপাসনা করছে। কিন্তু যে যে ভাবে করার কারণে কি হচ্ছে অর্থাৎ ফলটা কি তাও একবার দেখুন-
"কর্মসমূহের ফল কামনা করেই এই জগতে মানুষ নানা দেবতার উপাসনা করে। কারণ নরলোকে কর্মের ফল তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়।"
(গীতা ৪।১২)
"কর্মসমূহের ফল কামনা করেই এই জগতে মানুষ নানা দেবতার উপাসনা করে। কারণ নরলোকে কর্মের ফল তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়।"
(গীতা ৪।১২)
সেই কর্মসমূহের ফলটা কি তাতো বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখতেই পাচ্ছেন, এক এক জাতি এক এক জাতিকে ধ্বংসের জন্য অথবা শান্তির জন্য বিভিন্ন দেব দেবী, পীর আউলিয়ার পূজা করছে বিভিন্ন ভাবে। এর ফলে অর্থাৎ প্রকৃত সত্য না জানার ও মানার কারণে তাদের কি গতি হচ্ছে তাও দেখুন-
"...যেহেতু তারা আমাকে তত্ত্বের সঙ্গে অর্থাৎ আমাকে ভালো করে জানেন না, সেই হেতু তারা আবার সংসারে ফিরে আসে।"
(গীতা ৯।২৪)
"...যেহেতু তারা আমাকে তত্ত্বের সঙ্গে অর্থাৎ আমাকে ভালো করে জানেন না, সেই হেতু তারা আবার সংসারে ফিরে আসে।"
(গীতা ৯।২৪)
আর ঈশ্বর নির্দেশ দিয়েছেন যে-
"... যা কিছু কর, যা ভোজন কর, যে সকল যজ্ঞ কর, যা কিছু দান কর সেই সকল আমাকে অর্পন কর।"
(গীতা ৯।২৭)
"... অতএব এই অনিত্য অসুখকর মনুষ্যলোক প্রাপ্ত হয়ে আমার ভজনা কর।"
(গীতা ৯।৩৩)
"তুমি আমা মনা হও, আমাকে ভালোবাস, আমাকে পূজা কর। আমাকে প্রণাম কর, আমিই একমাত্র আশ্রয় জেনে শরণাগত হও...।"
(গীতা ৯।৩৪)
"... যা কিছু কর, যা ভোজন কর, যে সকল যজ্ঞ কর, যা কিছু দান কর সেই সকল আমাকে অর্পন কর।"
(গীতা ৯।২৭)
"... অতএব এই অনিত্য অসুখকর মনুষ্যলোক প্রাপ্ত হয়ে আমার ভজনা কর।"
(গীতা ৯।৩৩)
"তুমি আমা মনা হও, আমাকে ভালোবাস, আমাকে পূজা কর। আমাকে প্রণাম কর, আমিই একমাত্র আশ্রয় জেনে শরণাগত হও...।"
(গীতা ৯।৩৪)
বেদেও বলা হয়েছে শুধুমাত্র এক পরমেশ্বরেরই উপাসনা করার কথা এবং তা পূর্বের জ্ঞানী ঋষিগণ যেভাবে করেছে সেই ভাবে, যে যে ভাবে করার কথা নয়। দেখুন-
"সংগচ্ছধবং সংবদংধ্ব সংবো মনাংসি জানতাম্।
দেবাভাগং যথাপূর্ব্বে সংজানানা উপাসতে।।"
( ঋগবেদ ১০।১৯১।২)
অনুবাদ- হে মনুস্য! তোমরা একসঙ্গে চল, এক সঙ্গে মিলিয়া আলোচনা কর, তোমাদের মন উত্তম সংস্কার যুক্ত হউক। পূর্বকালীন জ্ঞানী পুরুষেরা যেরূপ কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করেছে অর্থাৎ উপাসনা করেছে, তোমরাও সেরূপ কর।
"সংগচ্ছধবং সংবদংধ্ব সংবো মনাংসি জানতাম্।
দেবাভাগং যথাপূর্ব্বে সংজানানা উপাসতে।।"
( ঋগবেদ ১০।১৯১।২)
অনুবাদ- হে মনুস্য! তোমরা একসঙ্গে চল, এক সঙ্গে মিলিয়া আলোচনা কর, তোমাদের মন উত্তম সংস্কার যুক্ত হউক। পূর্বকালীন জ্ঞানী পুরুষেরা যেরূপ কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করেছে অর্থাৎ উপাসনা করেছে, তোমরাও সেরূপ কর।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা কি বুঝলাম?
বুঝলাম যে, যে যে ভাবেই উপাসনা করে তারা প্রকৃত পক্ষে এক ঈশ্বরেরই উপাসনা করছে, কিন্তু যে যে ভাবে করার কথা ঈশ্বরের নির্দেশ নয়, এটা মানুষের নিজেদের তৈরি করা বিধান। ঈশ্বরের আদেশ হল সরাসরি ওনারই উপাসনা করা। যে যে ভাবে ভজনা করা নয়।
বুঝলাম যে, যে যে ভাবেই উপাসনা করে তারা প্রকৃত পক্ষে এক ঈশ্বরেরই উপাসনা করছে, কিন্তু যে যে ভাবে করার কথা ঈশ্বরের নির্দেশ নয়, এটা মানুষের নিজেদের তৈরি করা বিধান। ঈশ্বরের আদেশ হল সরাসরি ওনারই উপাসনা করা। যে যে ভাবে ভজনা করা নয়।
দাদা, গিতার ভাষ্য অনুযায়ী শ্রী কৃষ্ণই কি বেদের পরমাত্মা/পরমেশ্বর? যদি তাই হয় তবে বেদের পরমেশ্বর নিরাকার হয় কিভাবে? যদি তা না হয় তবে গিতায় কৃষ্ণ কেন বলল মনুষ্য সর্বপ্রকারে আমারই পথের অনুসরণ করে?
ReplyDelete