প্রশ্ন : বৈদিক সনাতন ধর্মে প্রধান শাস্ত্র কি ?
সমাধান : বেদ
প্রশ্ন : বেদ কি স্বতঃপ্রমাণ ?
সমাধান :
নিজশক্ত্যভিব্যক্তেঃ স্বতঃ প্রামাণ্যম্।।
সাংখ্য দর্শন ৫/৫১
পদার্থঃ
(নিজ শক্ত্যভিয়ক্তেঃ) নিজের শক্তিকে অভিব্যক্ত [প্রকাশ] থেকে বেদ (স্বতঃ) স্বতঃ প্রমাণ (প্রামাণ্যম্ঃ) নিজে-নিজেই সিদ্ধ হয়।
ভাষ্যঃ
ঈশ্বরের স্বাভাবিক শক্তি বেদরূপে প্রকাশিত বলিয়া বেদ স্বতঃ প্রমাণ। ঈশ্বর জ্ঞানস্বরূপ বলিয়া তিনিই বেদরূপে প্রকাশিত। ব্রহ্মই বেদ। এই কারণে বেদ স্বতঃ প্রমাণ অর্থাৎ উহার প্রমাণের জন্য কোন প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। সূর্য যেমন সমস্ত পদার্থেকে প্রকাশ করিয়া স্বয়ং প্রকাশিত হইয়া আছে তদ্রুপ বেদ জ্ঞানস্বরূপ বলিয়া স্বতঃ প্রকাশমান এবং সমস্ত বিদ্যার কারণ ও ভান্ডার।
অতএব চ নিত্যত্বম্।।
বেদান্ত দর্শন ১/৩/২৯
পদার্থঃ
(অতঃ) এই থেকে (এব) শুধুমাত্র (নিত্যত্বম্) নিত্যতা হয়।
ভাষ্যঃ
নিত্যতার অর্থ যাহা অখন্ডনীয়তা, সব সত্যত্তানুমানাদি, প্রমাণ শব্দ [বেদ] কে সহায়ক হয় এবং সে খন্ডিত হয় না।
ন পৌরুষেয়ত্বং তৎকর্ত্তুঃ পুরুষস্যাভিবাৎ।।৪৬
সাংখ্য দর্শন ৫/৪৬
অনুবাদঃ
বেদের কর্তা কোন মনুষ্য নহে। বেদ ঈশ্বরীয় অভ্রান্ত জ্ঞান। জীবের অভ্রান্ত নহে বলিয়া জীবে বেদ প্রনয়ণ শক্তির অভাবই দেখিতে পাওয়া যায়।
তদ্বচনাদাম্নায়স্য প্রামাণ্যম্।৩
বৈশেষিক দর্শন ১/১/৩
অনুবাদঃ বেদ ঈশ্বর বাক্য, অতএব তাহা প্রমাণ।
(অথবা) বেদ ধর্ম-প্রতিপাদক, এই কারণেই তাহার প্রামাণ্য।।৩।।
প্রশ্ন : এটা তো ষড়দর্শনের কথা । বেদে কোথাও আছে যে চতুর্বেদ ঈশ্বর থেকে সৃষ্ট ?
সমাধান : অবশ্যই ।
তস্মাৎ যজ্ঞাত্ সর্বহুত ঋচঃ সামানি জজ্ঞিরে।
ছন্দাংসি জজ্ঞিরে তস্মাৎ যজুস্তস্মাদজায়ত।।
(ঋঃ ১০।৯০।৯, যজুঃ ৩১।৭, অথর্বঃ ১৯।৬।১৩)
অর্থাৎ সেই পূজনীয় পরমেশ্বর হতে ঋগবেদ, সামবেদ উৎপন্ন হয়েছে এবং অথর্ববেদ ও যজুর্বেদ তাহা হতে উৎপন্ন হয়েছে।
প্রশ্ন : বেদ যদি প্রধান ধর্মগ্রন্থ হয় তবে স্মৃতি, মহাভারত, রামায়ণ, "পুরাণ " এবং বিভিন্ন মহাপুরুষদের বাণীর মান্যতার কি প্রয়োজন ?
সমাধান : বেদ মূল কিন্তু এগুলোর প্রায়োগিক দৃষ্টান্ত রূপে আমরা স্মৃতি ও অন্যান্য মহাপুরুষদের বাণী ও রচিত শাস্ত্র অধ্যয়ন করি
বেদঃ স্মৃতিঃ সদাচারঃ স্বস্য চ প্রিয়মাত্মনঃ।
এতচ্চতুৰ্ব্বিধং প্রাহুঃ সাক্ষাদ্ধৰ্ম্মস্য লক্ষণম্ ॥ ২.১২
=>>বেদ, স্মৃতি, শিষ্টাচার ও আত্মতুষ্টি এই চারিটি ধৰ্ম্মের লক্ষণ বলিয়া মন্বাদি-শাস্ত্ৰকৰ্ত্তারা নির্দ্দিষ্ট করিয়াছেন।
প্রশ্ন : "বেদোহখিলো ধর্মমূলং" বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ২/৬
অর্থাৎ বেদ সমগ্র ধর্মের মূল। তারমানে এটাই বুঝাচ্ছে, যে বেদের উপদেশ
অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে হবে?????
সমাধান : না। আপনি তো অজ্ঞদের মতো কথা
বলছেন! দেখুন ওর পরের শ্লোকে
মনুমহারাজ কি বলছে!
সর্বং তু সমবেক্ষ্যেদং নিখিলং জ্ঞানচক্ষুষা।
শ্রুতি প্রামণ্যতো বিদ্বান্ স্বধর্মে নিবিশেত।।
মনুস্মৃতি ২/৮
=>> বিদ্বান ব্যক্তিরা সমস্ত বিষয়ে জ্ঞানরূপ চক্ষুর দ্বারা ভালোভাবে বিচারপূর্বক নিরূপন করে বেদ-এর প্রামাণ্য স্বীকার করে নিজ ধর্মে নিবিষ্ট হবেন।
আর পরমেশ্বরের বেদবাণী দেখুন কি বলে
মুধানমস্য সংসীব্যাথর্বা হৃদয় চ য়ত্।
মস্তিষ্কাদৃর্ধ্বঃ প্রৈরয়প্তবমানোহদি শীর্ষতঃ।।
অথর্ববেদ ১০/২/২৬
=> হৃদয় (বিশ্বাস) ও মস্তিস্ক (বুদ্ধি-যুক্তি) কে সংযুক্ত করেই কর্মকে বিশুদ্ধরুপে সম্পাদন করতে হবে।
অব্যসশ্চ ব্যচসশ্চ বিলং বিষ্যামি মায়য়া।
তাভ্যামুদ্দধৃত্য য় বেদমথ কর্ম্মাণি কৃণ্মহে।।
অথর্ববেদ ১৯/৬৮/১
=>সর্বব্যপক পরমাত্মা ও অব্যপক জীবাত্মার রহস্য বেদকে বুদ্ধি ও যুক্তি দ্বারা উদঘাটন পূর্বক গ্রহন করে কর্ম করা উচিত।
অর্থাৎ বেদই পৃথিবীর একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যা নিজের বাণীকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতে বলেনি। বলেছে যুক্তি, বুদ্ধি দিয়ে যাচাই বাছাই করে গ্রহণ করতে।
সত্যং বদ। ধর্মং চর। স্বাধ্যায়ান্মা প্রমদঃ
সত্যান্ন প্রমদিতব্যম্। ধর্মান্ন প্রমদিতব্যম্।
কুশলান্ন প্রমদিতব্যম্। ভূত্যৈ ন প্রমদিতব্যম্।
স্বাধ্যায় প্রবচনাভ্যাং ন প্রমদিব্যম্।।
তৈত্তিরীয়োপনিষদ ১.১১.১
অনুবাদঃ
নিজের বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী সর্বদা সত্যকথা বলো। শাস্ত্রের (বেদ) নির্দেশ মেনে ধর্মের আচারণ করো। "বেদ" অধ্যয়নে কখনও অবহেলা করো না। সত্য থেকে কখনো বিচ্যুত হয়ো না। শাস্ত্রে (বেদ) যে কর্তব্যকর্মের কথা বলা হয়েছে, তা সম্পাদনে অবহেলা করো না। আত্মরক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করো এবং উন্নতিসাধনে যত্নবান হয়ো।
প্রশ্ন : স্মৃতি ও অন্যান্য শাস্ত্র, মহাভারত, রামায়ণাদিতে নারী শূদ্রদের প্রতি নানা বিরোধী বক্তব্য ও অনেক অবৈজ্ঞানিক তথ্য পাওয়া যায় এ বিষয়ে ওগুলো কি মান্য ?
সমাধান : মোটেই না বেদ বিরুদ্ধ যে কোন শাস্ত্রের যে কোন বাণী নির্বিবাদে পরিত্যাজ্য যার অনুমতি স্বয়ং স্মৃতি দিচ্ছে পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে- মনুস্মৃতি এবং বেদ
চাতুর্বর্ণ্য ত্রয়ো লোকাঃ চত্বারশ্চাশ্রমাঃ পৃথক্।
ভূতং ভব্যং ভবিষ্যচ্চ সর্বং বেদাৎপ্রসিদধ্যতি।।
বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি১২/১৫ - প্রক্ষিপ্ত ১২/৯৭
পদার্থঃ (চাতুর্বর্ণ্য) চারবর্ণ (ত্রয়ঃ, লোকাঃ) তিন লোক (পৃথক) আলাদা (চেত্বার, আশ্রমাঃ) চার আশ্রম (চ) আর (ভূতং, ভব্যং, ভবিষ্যং) ভূত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ তিন কাল (সর্বং) এর সব (বেদাৎ) বেদ থেকে (প্রসিধ্যতি) জানা যায়।
বিভূর্তি সর্বভূতানি বেদশাস্ত্রং সনাতনম্।
তস্মাদেতত্পরং মন্যে য়জ্জন্তোরস্য সাধনম্।।
বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ১২/১৮ - প্রক্ষিপ্ত ১২/৯৯
পদার্থঃ (সনাতনং,বেদশাস্ত্রং) সনাতন বেদশাস্ত্র (সর্বভূতানি, বিভূর্তি) সমস্ত জীবের সর্বদা ধারণ পোষণ করা উচিৎ (তস্মাৎ) এইজন্য আমি (অস্য, জন্তোঃ) এই প্রাণিবর্গের (এতৎ) এই শাস্ত্রের (পরং, সাধনং, মন্যে) পরম সাধনা করতে হয়।
মনুস্মৃতি ও প্রক্ষিপ্ত
মনু স্মৃতি হলো একটি প্রক্ষিপ্ত গ্রন্থ এবং
মনুস্মৃতি যে প্রক্ষিপ্ত তার নির্ধারণ করব কি করে ?
সিদ্ধান্ত- মনুসংহিতা হলো বেদের ই সিদ্ধান্ত । তাই
মনুস্মৃতিতে যদি এমন কিছু পাওয়া যায়, যা বেদের কথার সাথে সাংঘর্ষিক, তবে বুঝতে হবে এই অংশ অবশ্যই প্রক্ষিপ্ত ।
এটি মনুসংহিতার উপর একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ, যেখানে গবেষণালব্দ্ধ প্রমাণের দ্বারা
মনুসংহিতার প্রক্ষিপ্ত কে চিহ্নিত করা আছে ।।
এখানে বেদের সাথে সামঞ্জস্যতা বিচার করে
মনুসংহিতার প্রক্ষিপ্ত শ্লোক গুলি নির্ণয় করা হয়েছে এবং বর্তমানে ভারতে প্রক্ষিপ্ত মনুসংহিতার
তুলনায় এই বিশুদ্ধ মনুসংহিতা বা অপ্রক্ষিপ্ত মনুসংহিতা বেশি প্রচলিত। এবার দেখে
নেওয়া যাক বিতর্কিত মনু সংহিতার তথ্যগুলো বিশুদ্ধ
মনুসংহিতার সাপেক্ষে প্রক্ষিপ্ত না অপ্রক্ষিপ্ত।
1.মনুসংহিতা ৯/১৮ নারীরা ধর্মজ্ঞ নয়, এরা মন্ত্রহীন এবং মিথ্যার ন্যায় অশুভ, এই শাস্ত্রীয় নিয়ম।
=>> বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে
অনুপস্থিত, এই শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।
2.মনুসংহিতা ৫/১৫৪ স্বামী দুশ্চরিত্র, কামুক বা নির্গুণ হলেও তিনি সাধ্বী স্ত্রী কর্তৃক সর্বদা দেবতার ন্যায় সেব্য।
=>> বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে
অনুপস্থিত, সুতরাং শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।
3.মনু সংহিতা ৫/১৫৫ স্ত্রীদের জন্য স্বামী ছাড়া পৃথক যজ্ঞ নেই, স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনো ব্রত বা উপবাস নেই, শুধু স্বামীর সেবার মাধ্যমেই নারী স্বর্গে যাবে।
=>> বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে
অনুপস্থিত, সুতরাং শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।
4.মনু সংহিতা ৫/১৫৭ স্ত্রী সারা জীবন ফলমূল খেয়ে দেহ ক্ষয় করবেন কিন্তু অন্য পুরুষের নামোচ্চারণ করবেন না।
=>> বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে
অনুপস্থিত, সুতরাং শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।
5.মনু সংহিতা ২/৬৬ যে সকল নারী একদা বৈদিক মন্ত্র-শ্লোক পর্যন্ত
রচনা করেছিলেন, তাদের উত্তরসূরীদের জন্য ধর্মগ্রন্থ পাঠ
সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত - অমন্ত্রক।
=>> বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে
অনুপস্থিত, সুতরাং শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।
6.মনু সংহিতা ১১/৩৭ কন্যা, যুবতী, রোগাদি পীড়িত ব্যক্তির হোম নিষিদ্ধ এবং করলে নরকে পতিত হয়।
=>> বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে
অনুপস্থিত, সুতরাং শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।
7.মনু
সংহিতা ৫/১৫৬ সাধ্বী নারী কখনো জীবিত অথবা মৃত স্বামীর অপ্রিয়
কিছু করবেন না।
=>> বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।
8.মনু সংহিতা ৯/২২ নারীর কোনো গুণ নেই, নদী যেমন সমুদ্রের সাথে মিশে লবনাক্ত (সমুদ্রের গুণপ্রাপ্ত) হয়, তেমনই নারী বিয়ের পর স্বামীর গুণযুক্ত হন।
=>> বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত। ।
9.মনু
সংহিতা ৯/২ স্ত্রীলোকদের স্বামীসহ প্রভৃতি ব্যক্তিগণ
দিনরাত পরাধীন রাখবেন, নিজের বশে রাখবেন।
=>>বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।
10.মনু
সংহিতা ৯/৩ স্ত্রীলোককে পিতা কুমারী জীবনে, স্বামী যৌবনে ও পুত্র বার্ধক্য রক্ষা করে, (কখনও) স্ত্রীলোক স্বাধীনতার যোগ্য নয়।
=>>বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাংশ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।
11.মনু সংহিতা ২/২১৩ নারীর স্বভাবই হলো পুরুষদের দূষিত করা।
=>>বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।
12.মনু সংহিতা ৯/১৪ যৌবনকালে নারী রূপ বিচার করে না, রূপবান বা কুরূপ পুরুষ মাত্রেই তার সঙ্গে সম্ভোগ করে।
=>>বিশুদ্ধ মনুসংহিতাতে অনুপস্থিত, সুতরাং শ্লোক টি প্রক্ষিপ্ত।
বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত
মনুসংহিতার উক্ত অংশগুলি এই জন্য প্রক্ষিপ্ত
কারণ বেদের সাথে এর সামঞ্জস্যতা নেই এবং এগুলি মনুর সাথেই পরস্পর বিরোধী। মনু তার সংহিতা তে নারী কল্যাণের বহু উপায়
উল্লেখ করে গেছেন , মনুসংহিতাতে মনু নারী কল্যাণের বহু উপায় যে করে
গেছেন , তা পাঠকগণ বিশুদ্ধ মনুসংহিতা পড়লেই বুঝবেন
পাঠকগণ , বিশুদ্ধ মনুসংহিতার এক-তৃতীয়াংশ জুড়েই নারীকল্যাণ এর কথা বলা আছে , যেহেতু নিবন্ধ এর বিষয় নয় , তাই ঐসকল শ্লোক গুলি দেওয়া হলো না ।।
মনুস্মৃতি কি প্রক্ষিপ্ত ? গবেষণালব্দ্ধ প্রমাণ দেখুন http://aryamantavya.in/kya-manu-smriti-men-prakshep-hein/
ক্কচিদ্ গ্রন্থান্ প্রক্ষিপন্তি, ক্কচিদন্তরিতনাপি।
কুর্য়ুঃ ক্কচিচ্চ বত্যাসং, প্রমাদা ত্ত্বচিদন্যথা।।
অনুৎসন্না অপি গ্রন্থাঃ, ব্যাকুলা ইতি সৰ্বশঃ।।
অর্থাৎ—সভ্যতা সংস্কৃতির ধ্বংসকারী ধূর্তগণ কোথাও কোথাও প্রক্ষেপ গ্রন্থে ভেজাল, কখনও কখনও পরিবর্তন ঘটিয়ে গ্রন্থে পাঠান্তর করে দেয় এবং ধূৰ্ত্ততাবশতঃ গ্রন্থকে ভিন্নরূপ প্রদান করে। এই প্রকার ঘটনার জন্য যে সকল সৎগ্রন্থ নষ্ট হয়নি সেই সকল গ্রন্থের প্রতি উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়।
এই বক্তব্য কোনও আর্য সমাজের বিদ্বানের নয়, এ তত শ্ৰী মাধ্বাচার্য আনন্দতীর্থ মহাশয়ের বেদনা। যে কোন নিরপেক্ষ সত্যাগ্রহী বিদ্বান এই প্রকার প্রক্ষেপ কাণ্ডকে অস্বীকার করতে পারে না।
মহাভারতেও যদি কোন অসত ও কুবাক্য পাওয়া যায় তা পরিত্যাগ করাই শ্রেয়Rethinking the Mahabharata: A Reader's Guide to the Education of the Dharma King
প্রশ্ন : আমি বেদ পাঠ করলাম কিন্তু কিছু বুঝলাম না তাতে কি আমার কোন পূণ্য হবে ?
সমাধান : বেদ কোন আজগুবি "কিতাব" নয় বেদ পড়ে জীবনে কাজে লাগানোর মধ্যেই বেদ পাঠের সার্থকতা দেখুন যে বেদ পড়ে কিন্তু ব্রহ্মকে জানেনা তার সম্পর্কে বেদ কি বলে
স্থাণুরয়ং ভারহারঃ কিলাভূদধীত্য বেদং ন বিজানাতিয়োহর্থম্।
য়োহর্থজ্ঞইত্যকলং ভদ্রমশ্নুতে নাকমেতি জ্ঞানবিধূতপাপ্মা।।
নিরুক্ত নৈগম কাণ্ড ১/১৮
অর্থাৎ- যে বেদ পড়ে তাহার অর্থ বোঝে না সে মালবাহী পশুর সমান হয়। কিন্তু যে বেদের অর্থ বুঝতে পারে, সে সমস্ত সুখ আর কল্যাণ প্রাপ্ত হয়। সে ওই পবিত্র জ্ঞানের দ্বারা পাপকে নষ্ট করে পরমানন্দ রূপে মোক্ষ প্রাপ্ত করে নেয়।
য়ো বেদে চ শাস্ত্রে চ, গ্রন্থধারণতপ্তরঃ।
ন চ গ্রন্থার্থতত্বজ্ঞঃ, তস্য তদধারণংবৃথা।।
ভারং স বহতে তস্য, গ্রন্থস্যার্থ ন বেক্তি য়ঃ।
য়স্তু গ্রন্থার্থতত্বজ্ঞো, নাস্য গ্রন্থাগমোবৃথা।।
মহাঃভারত শান্তিপর্ব অঃ ৩০৫/১৩-১৪
অর্থাৎ- যে বেদ শাস্ত্রকে কেবল পড়ে কিন্তু তাহার অর্থ আর তত্বকে বুঝতে পারেনা। তাহারা ওই প্রকার ঐ-ঐ গ্রন্থকে ধারণ করে বা কেবল বোঝা হয় আর নিষ্ফল হয়ে যায়। অতঃ বেদাদি শাস্ত্রের অর্থ আর তত্ব সহিত বুঝে যাবতীয় প্রযত্ন করতে হবে।
লিঙ্গোপদেশশ্চ তদর্থত্বাত্।
মিমাংসা দর্শন ১/২/৫১
অর্থাৎ- বেদ মন্ত্রের ভেতরে পরমাত্মার লক্ষণ বলা হয়েছে, অতঃ বেদ মন্ত্রের অর্থ হবার কারণ এবং অর্থ সহিত পঠন-পাঠন করার যোগ্য হতে হয়।
ঊহঃ।
মিমাংসা দর্শন ১/২/৫২
অর্থাৎ- তর্ক থেকে সিদ্ধ করে বেদের পঠন-পাঠন অর্থ সহিত হওয়া উচিৎ।
দূষিতোহপি চরেদ্ ধর্মং যত্র তত্রাশ্রমে রতঃ।
সমঃ সর্বেষু ভূতেষু ন লিঙ্গং ধর্মকারণম্।।
মনুস্মৃতি ৬/৬৬
অনুবাদঃ
মানুষ যে কোন আশ্রমে বাস করুক, সে আশ্রমের উপযুক্ত বেশ সম্পন্ন না হউন, ঐ আশ্রমের সকল প্রাণীকে পরব্রহ্মের ছায়া সমদর্শী হইয়া ধর্মের অনুষ্ঠান করিবেন, কেবল দণ্ডকমণ্ডলু প্রভৃতি ধারণ করিলেই ধর্ম করা হয় না। ধর্মের অনুষ্ঠানই প্রধান।
ফলং কতকবৃক্ষস্য যদ্যপ্যম্বুপ্রসাদকম্।
ন নামগ্রহণাদেব তস্য বারি প্রসীদতি।।
মনুস্মৃতি ৬/৬৭
অনুবাদঃ
কতক-বৃক্ষের ফল অর্থাৎ নির্মলী ফল কলূষিত জলে ফেলে দিলে তার দ্বারা জল স্বচ্ছ ও শুদ্ধ হয়ে যায় বটে, কিন্তু তাই বলে সেই ফলের নাম [ কতক-ফল-কতক-ফল এইরকম নাম] উচ্চারণ করলেই যে জল স্বচ্ছ ও নির্দোষ হয়ে যায় না [ফলটিকে পিষ্ঠ করে জলে ফেলে দিতে হয়]; সেই প্রকার কেবল ধার্মিক মানুষ দণ্ড-কমণ্ডলু প্রভৃতি চিহ্ন ধারণ করলেই ধর্ম অর্জন করা যায় না, বিহিত কর্মের অনুষ্ঠান করলেই ধর্মার্জন করা যায়।
প্রশ্ন : সনাতন ধর্মে গুরুদের তো দারুণ প্রভাব ? তা গুরু বাক্য নিয়ে কি মত ?
সমাধান :
য়ো নো অগ্নে অররিবা অঘায়ুররাতীবা মর্চয়তী দ্বয়েন।
মন্ত্রো গুরূঃ পুনরস্ত্ত সো অস্মা অনুমৃক্ষীষ্ট তন্বং দুরূক্তৈঃ।।
ঋগ্বেদ ১/১৪৭/৪
অনুবাদঃ
হে মনুষ্য! যে প্রকাশ স্বরূপ অগ্নির মত (অররিবা) দুর্গুণ আদিকে ভস্ম করে নষ্ট করে থাকে তথা (অঘায়ু) পাপাদি দুষ্কংমের (অরাতী) দুরীভূত করে এবং এমনভাবে প্রকট করে যাহাতে সাধনার মধ্যে দুই প্রকার অবগুণের ধারা (অনু) একের পরে আর একটার (তন্বং) শরীরের মধ্যে (দুঃ) নানান প্রকার রোগ শোক সন্তাপাদির (উক্তৈঃ) প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যাহার একমাত্র নিরা-করণের জন্য (অস্মা) আমাদের কল্যাণার্থে (পুণঃ অস্ত্ত) বারবার প্রত্যেক বেদ মন্ত্রকেই গুরু বলে পথ প্রদর্শক হিসাবে গ্রহণ করা সকলের কর্তব্য।
ভাবার্থঃ
পরমগুরু হিসাবে সর্বদা বেদ শাস্ত্রে পরমেশ্বরকেই বলা হয়েছে। সমস্ত মন্ত্র সমূহের একমাত্র পরম গুরু হিসাবে পরমেশ্বরের প্রদত্ত মন্ত্রকেই সর্বদা গুরু মন্ত্রই বলা হয়েছে।
সুতরাং ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত জ্ঞানের বিপরীতে যে কোন ধর্ম ও মানবতা বিরুদ্ধ বাণী পরিত্যাগ করাই শ্রেয়
প্রশ্ন : তাহলে সনাতন ধর্মের যে কোন মহাপুরুষ, "অবতার " ,রামায়ণ, মহাভারত, চাণক্য নীতি , কৌটিল্য অর্থ শাস্ত্র, পুরাণ, স্মৃতি - এগুলো নারী, শূদ্র বা রীতি নিয়ে যে কোন ভুল নিয়ম বা বেদ বিরুদ্ধ কথা একেবারে ঘ্যাচাং করে বাতিল ....এটাই শেষ কথা ?
সমাধান : অবশ্যই
প্রশ্ন : সেমেটিক মতবাদগুলোতে কি মূল ধর্ম পুস্তক এর পাশে আরো কিছু চাই ?
সমাধান : হ্যাঁ । তাদের হাদিসের মত মানুষের বাণী ছায় কারণ তাতেই পুরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে ।
প্রশ্ন : তা কি মান্তেই হবে ? যদি তাতে ভুল থাকে তাও ?
সমাধান : হ্যাঁ । প্রমাণ হিসেবে এই বইটি পড়ুন ।
Download Link: হাদিস কেন মানতে হবে
তারা হাদিসাদি মানতে বাধ্য । এবং সহীহ হলে বাতিলের উপায় নেই । কারণ তাদের মতে এগুলোও তাদের সৃষ্টিকর্তা থেকেই প্রেরিত
প্রশ্ন : এতে সমস্যা কি ?
সমাধান : পড়ুন এই পোস্টে http://back2thevedas.blogspot.com/2018/07/blog-post_4.html
আপনারা যেমন বিশুদ্ধ মনুসংহিতা মান্য করেন তেমনি আমরাও হাদিস মান্য করি । ঋষিদের ছাড়া যেমন বিরুদ্ধভাবে বেদ বুঝা সম্ভব নয় তেমনি কোরআন বিশুদ্ধ ভাবে বুঝার জন্য সে ধর্মের নবীর বুঝানো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে আর তা হচ্ছে হাদিস
ReplyDeleteবিরুদ্ধভাবে ** বিশুদ্ধভাবে
Delete