https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

দান স্তুতি সূক্ত

Wednesday, May 20, 2020



           ।।অথ ঋগ্বেদীয় দান-স্তুতি সূক্ত।। 

          ।।ঋগ্বেদ ১০ম মণ্ডল ১১৭তম সূক্ত।।
     
।।ধনান্নদান প্রশংসা দেবতা।। ভিক্ষু ঋষি।।

ন বা উ দেবাঃ ক্ষুধমিদ্বধং দদুরুতাশিতমুপ গচ্ছন্তি মৃত্যবঃ। 
উতো রয়িঃ পৃণতো নোপ দস্যত্যুতাপৃণন্মর্ডিতারং ন বিন্দতে।।১।।

- মৃত্যুর অনেক প্রকার কারণের মধ্যে ক্ষুধাও একটি। অর্থাৎ ক্ষুধা মৃত্যুরূপ। তবুও বিদ্বান ব্যক্তি শুধুমাত্র ক্ষুধা নিবারণের জন্য অন্নের অপ্রাপ্তিকেই মৃত্যু মনে করেন না। 

তাঁর মতে ভরপেট ভোজন করলেও মানুষকে মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হয়। 
অভাবী ব্যক্তিকে তৃপ্ত করার জন্য দান করলে ধন কমে যায় না।  বরং অন্যকে দান না করলে মানুষ পরমাত্মা তথা অন্যের কাছ থেকে সুখ লাভ করতে পারে না।।১।।

য আধ্রায় চকমানায় পিত্বোऽন্নফিতায়োপজগ্মুষে। 
স্থিরং মনঃ কৃণুতে সেবতে পুরোতো চিত্স মর্ডিতারং ন বিন্দতে।।২।।

- যে স্বয়ং অন্ন ধনশালী হয়েও ভরণপোষণ করার যোগ্য নির্বলকে, অন্ন যাচনাকারী বুভুক্ষু ব্যক্তিকে, পীড়িত দুঃখী জনকে বা সম্মুখে আগত অতিথিকে দেখেও নিজের মন কঠিন করে রাখে এবং তাদের খাদ্য দান না করে প্রথমে নিজেই খাদ্য গ্রহণ করে, সেও কখনও পরমাত্মা তথা অন্যের কাছ থেকে দয়া লাভ করতে পারে না।।২।।

স ইদ্ভোজো য়ো গৃহবে দদাত্যন্নকামায় চরতে কৃশায়। 
অরমস্মৈ ভবতি য়ামহূতা উতাপরীষু কৃণুতে সখায়ম্।।৩।।

- যিনি অন্ন প্রার্থনাকারী ভিক্ষুককে বা কৃশ, ক্ষুধার্থ, নির্বলকে অন্ন এবং অন্ন গ্রহণের জন্য উত্তম পাত্রে অন্নাদি দান করেন, তাঁর যজ্ঞফল পূর্ণভাবে প্রাপ্ত হয়। তিনিই প্রশংসাযোগ্য এবং শত্রুদের মধ্যেও তিনি মিত্রে পরিণত হয়ে যান।।৩।।

ন স সখা য়ো ন দদাতি সখ্যে সচাভুবে সচমানায় পিত্বঃ। 
অপাস্মাতপ্রেয়ান্ন তদোকো অস্তি পৃণন্তমন্যমরণং চিদিচ্ছেৎ।।৪।।

- যে সঙ্গে অবস্থানকারী, সেবাকারী বা মিত্রকে অন্ন প্রদান করে না – সে কখনই কারও সখা বা মিত্র হতে পারে না। সে মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠতে পারে না। এমন মানুষের কাছ থেকে সকলে দূরে সরে যায়। অপরদিকে অন্নদানকারী ব্যক্তি শত্রু বা পরজন হলেও মানুষ তাঁরই নিকট গমন করে।।৪।।

পৃণীয়াদিন্নধমানায় তব্যান্দ্রাঘীয়াংসমনু পশ্যেত পন্থাম্৷  
ও হি বর্তন্তে রথ্যেব চক্রান্যমন্যমুপ তিষ্টন্ত রায়ঃ।।৫।।

- ধনাদি সমৃদ্ধ ব্যক্তির নিকট আগত যাচককে অবশ্যই ধন ও অন্ন দান করা উচিত। সকল ব্যক্তিরই আসন্ন দীর্ঘ পথের দিকে লক্ষ্য করা দরকার। কারণ ধন সম্পত্তি ঘূর্ণায়মান রথের চাকার মতো; কখনও আসে আবার কখনও চলে যায়। অর্থাৎ ধন সম্পত্তি চিরকাল কারও থাকে না।।৫।।

মোঘমন্নং বিন্দতে অপ্রচেতাঃ সত্যং ব্রবীমি বথ ইতস তস্য৷ 
নার্যমণং পুষ্যতি নো সখায়ং কেবলাঘো ভবতি কেবলাদী।।৬।।

- উদার চিত্তরহিত, অদূরদর্শী, ক্ষুদ্রজ্ঞানী ব্যক্তির ধন উপার্জন ও অন্নাদি ভোজন সবই ব্যর্থ হয়। আমি সত্য বলছি যে,  ঐসব ধন বৈভব তার জন্য মৃত্যুস্বরূপ। যে ব্যক্তি অন্নাদি দ্বারা বিদ্বান ব্যক্তি অথবা তার আত্মীয় স্বজনকে পালন পোষণ করে না, প্রকৃতপক্ষে সেই একলা ভোজনকারী ব্যক্তি শুধু পাপই ভোজন করে অর্থাৎ সে পাপী হয়৷।৬।।

কৃষন্নিতফাল আশিতং কৃণোতি য়ন্নধ্বানবপ বৃঙ্কে চরিত্রৈঃ। 
বদন্ব্রাহ্মাবদতো বনীয়ানপৃণন্নাপিরপৃণন্তমভি ষ্যাৎ।।৭।।

- যিনি লাঙল দ্বারা ভূমি কর্ষণ করে যথাযোগ্য শস্যাদি অন্ন উৎপাদন করেন এবং নিজের পথে নিজ পায়ে গমন করে বহু দূর পথ অতিক্রম করেন অর্থাৎ আত্মাবলম্বী হন, তিনি সংকট মুক্ত হয়ে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যান। উপদেশ দানকারী বেদজ্ঞ বিদ্বান ব্যক্তি উপদেশ প্রদান না কারী ব্যক্তির চেয়ে অধিক সম্মানীয়। দানকারী ব্যক্তি দানবিহীন ব্যক্তির চেয়ে বহু গুণ অধিক শ্রেষ্ঠ।।৭।।

একপাদ্ভূয়ো দ্বিপদো বি চক্রমে দ্বিপাত্রিপাদমভ্যেতি পশ্চাৎ। 
চতুষ্যাদেতি দ্বিপদামভিস্বরে সংপশ্যনপঙ্কীরূপতিষ্টমানঃ।।৮।।

- একভাগ ধনাদি সমৃদ্ধ ব্যক্তি তার ধন উপযোগ করে দ্বিগুণ ধন সমৃদ্ধ ব্যক্তি হতে অধিক বিক্রম লাভ করে। দুই ভাগ ধন সমৃদ্ধ ব্যক্তি তার ধনাদি উপযোগ করে তিনগুণ ধনধারী মানুষকে পিছে ফেলে এগিয়ে যায়৷ উপযোগবিহীন চারভাগ ধন সমৃদ্ধ ব্যক্তি দুই ভাগ ধন উপযোগকারী ব্যক্তির পদাঙ্ককে অনুসরণ করে এবং তার উপদেশ অনুসরণ করে চলে। 
অর্থাৎ কারও যদি ধন তুলনামূলক কমও থাকে কিন্তু সে যদি সেই ধন উপযোগ করে বৃদ্ধি করে, তবে অধিক ধনী মানুষও তাকে অনুসরণ করে।।৮।।

সমৌ চিদ্ধাস্তৌ ন সমং বিবিষ্টঃ সংমাতরা চিন্ন সমং দুহাতে। 
যময়োশ্চিন্ন সমা বীর্যাণি জ্ঞাতী চিতসন্তৌ ন সমং পৃণীতঃ।।৯।।

- দুই হাত এক সমান হলেও তারা এক সমান কার্য করে না। এক সমান দুই জন মাতাও সমান দুগ্ধ প্রদান করেন না। একই সাথে উৎপন্ন দুই যমজ পুত্রেরও বল-সামর্থও একই সমান হয় না। তেমনি দুইজন পরস্পর আত্মীয় বা একই বংশজাত হলেও দুইজন সমান অন্ন-ধন দাতা হয় না।।৯।।

              ।।ইতি ঋগ্বেদীয় দান-স্তুতি সূক্ত।।

ভাষ্যকার– স্বামী ব্রহ্মমুনি বিদ্যামার্তণ্ড ও পণ্ডিত জয়দেব বিদ্যালঙ্কার। 
অনুবাদক– প্রিয়রত্ন ব্রহ্মচারী। 

© বাংলাদেশ অগ্নিবীর।