https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা স্বাধ্যায় [২] - শাস্ত্র না মেনে স্বেচ্ছাচার করা যাবে কি ? শাস্ত্র কী ও কাকে বলে ?

Monday, October 31, 2022

 



প্রশ্নঃ অনেকেই বলে থাকেন ' আত্মায় যা চায় তাই করো ', ' পুরোনো বইতে কী আছে না আছে ঈশ্বর ওসব দেখেন না ', ' তোমার কাজ কেন গ্রন্থ দিয়ে সীমারেখায় আবদ্ধ করা হবে ', ' অমুক ব্যক্তি সিদ্ধপুরুষ, শত কোটি মানুষ মানে তাই শাস্ত্রবিরোধী হলেও তার বক্তব্য সত্য/স্বীকার্য ' ইত্যাদি । আমাদের কাজে বা সনাতন ধর্মে কী তাহলে শাস্ত্রের কোন আবশ্যকতা নেই ? 

উত্তরঃ সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন । সনাতন আর্ষ পরম্পরা বিচ্ছেদ ও বিকৃতিকরণের ফলে অনেকেই আমরা কুসংস্কার, দ্বিচারিতা কিংবা ভ্রান্তিকেই শাস্ত্রের স্বরূপ বলে মনে করি । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কী তাই ? আমাদের সনাতন ধর্মালম্বীদের বিধিবিহিত প্রতিটি সংস্কার ও সিদ্ধান্ত হবে শাস্ত্রের অনুকূলে । হ্যাঁ এটি অবশ্যই সত্য যে অন্যাদি মতবাদের মত সনাতন ধর্ম অনন্তকাল নরকে পোড়ানোর ভীতি প্রদর্শন করে না । কিন্তু তার তাৎপর্য এটিও নয় যে আমাদের আধিভৌতিক ও আধ্যাত্মিক আচার-বিচারে শাস্ত্রকে অবজ্ঞা করে ব্যক্তিমতকেই আমরা প্রাধান্য দেবো । 


  • শাস্ত্র কী ? 
শাস্ত্র- শাস্ত্রং [শিষ্যতেঽনেন শাস্-ষ্ট্রন্] 1 An order, a command, rule, precept.
--2 A sacred precept or rule, scriptural injunction.
--3 A religious or sacred treatise, sacred book, scripture; see comps. below.
--4 Any department of knowledge, science; ইতি গুহ্যতমং শাস্ত্রং Bg. 15. 20; শাস্ত্রেষ্বকুণ্ঠিতা বুদ্ধিঃ R. 1. 19; often at the end of comp. after the word denoting the subject, or applied collectively to the whole body of teaching on that subject; বেদান্তশাস্ত্র, ন্যায়শাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র, অলঙ্কারশাস্ত্র &c.

 
অভ্যঙ্করব্যাকরণকোশঃ
শাস্ত্রscientific treatment of a subject; a system of thoughts giving a scientific treatment of any subject. The word is applied to the rules of Panini and sometimes to an individual rule; cf. শাস্ত্রবাধ or অশাস্ত্রবাধ or বিপ্রতিষেধশাস্ত্র,frequently used by the commentators; cf. ন হি সন্দেহাদলক্ষণং শাস্ত্রামিত্যর্থঃ Nagesa's Par. Sek. on Pari. 1; cf. পদান্তাদিষ্বেব বিকারশাস্ত্রম্ R.Pr.II.2.
 
শব্দকল্পদ্রুমঃ
শাস্ত্রশাস্ত্রং, ক্লী, (শিষ্যতে অনেন । শাস + “সর্ব্ব-ধাতুভ্যষ্ট্রন্ ।” উণা০ ৪ । ১৫৮ । ইতি ষ্ট্রন্ ।) নিদেশঃ । গ্রন্থঃ । ইত্যমরঃ ॥ স চ গ্রন্থঃ অষ্টাদশবিধঃ । তস্য বিবরণং বিদ্যাশব্দে দ্রষ্টব্যম্ ॥
 
বাচস্পত্যম্
শাস্ত্রশাস্ত্র ন০ শিষ্যতেঽনেন শাস
--ষ্ট্রৎ । ১ হিতামুশাসনে গ্রন্থে শাস্ত্রং চ বেদমূলকং সদ্ভিরাদরণীয়ং নান্যৎ যথোক্তং “অতো বেদবিরুর্দ্ধার্থশাস্ত্রোক্তং কর্ম সন্ত্যজেৎ । স্ববুদ্ধি-রচিতৈঃ শাস্ত্রৈ । প্রতার্য্যেহ চ ব্রালিশান্ । বিধ্নন্তি শ্রে-যসো মার্গং লোকনাশায় কেবলম্ । নিন্দন্তি দেবতা বেদাংস্তপো নিন্দন্তি সদ্দ্বিজান্ । তেন তে নিরয়ং যান্তি হ্যসচ্ছাস্ত্রনিষেবণাৎ । শ্রুতিস্মৃতিসদাচারবিহিতং কর্ম শাশ্বতম্ । স্বং স্বং ধর্মং প্রয়ত্নেন শ্রেয়োঽর্থীহ সমা-চরেৎ । স্ববুদ্ধিরচিতৈঃ শাস্ত্রৈর্মোহয়িত্বা জনং নরাঃ । তেন তে নিরয়ং যান্তি যুগানাং সপ্তবিশতিম্” পদ্মপু০ ১৭ অ০ । “পুরাণং ভারতং বেদধর্মশাস্ত্রাণি যানি চ । আয়ুষঃ ক্ষপণায়ৈব ধর্মতশ্চেন্ন চাচরেৎ । পুত্র-দারাদিসংসারঃ পুংসাং সংমূঢচেতসাম্ । বিদুষাং শাস্ত্র-সম্ভারঃ সদ্যোগাভ্যাসবিঘ্নকৃৎ । ইদং জ্ঞেয়মিদং জ্ঞেয়ং যঃ সর্বং জ্ঞাতুমিচ্ছতি । অপি বর্ষশতেনাপি শাস্ত্রান্তং নাধিগচ্ছতি । বিজ্ঞায়াক্ষরতন্মাত্রং জীবিতুঞ্চাপি সঞ্চলন্ । বিহায় শাস্ত্রজালানি পারলৌকিকমাচ-রেৎ । পণ্ডিতোঽপি হি মূর্খোঽসৌ শক্তিয়ুক্তোঽপ্যশ-ক্তিকঃ । যঃ সংসারান্ন চাত্মানং সমুত্তারয়িতুং ক্ষমাঃ” বহ্নিপু০ । তামসশব্দে ৩২৭১ পৃ০ দৃশ্যম্ । “বহুশাস্ত্রালোকনেঽপি সারাদানং ষট্পদবৎ” সাঙ্খ্যপ্র০ সূ০

 

আহার-বিহার-মৈথুন পশুও করে । তবে মানবের মানবত্ব কোথায় ? তার শৃঙ্খলা, মননশীলতা, নৈতিকতা বোধ তৈরী করে শাস্ত্র । কখনোই কেবলমাত্র স্বীয় সিদ্ধান্ত সর্বজনীন নৈতিকতার প্রতিভূ হতে পারে না । উদাহরণস্বরূপ একজনের নিকট যা গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য অন্যজনের নিকট তা নিতান্ত নগণ্য হতেই পারে । এজন্যই রাষ্ট্রের বিচারব্যবস্থায় সংবিধান ও ধারা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে । একইভাবে পরমেশ্বর যেহেতু কালের দ্বারা বিচ্ছিন্ন নয় তাই তার প্রদত্ত জ্ঞান ও বিধানও সর্বজনীন ও সর্বকালীন । অতএব ধর্মীয় সিদ্ধান্তে অবশ্যই আমাদের শাস্ত্র মেনে চলতেই হবে । শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার দৈবাসুরসম্পদবিভাগযোগ অধ্যায়ে ভগবান বলছেন -


যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ ।

ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্ ॥১৬- ২৩॥

অনুবাদঃ যে মানুষ শাস্ত্রবিধি ত্যাগ করে কামনার বশীভূত হয়ে কর্ম করে, সে সিদ্ধিলাভ করে না; পরমগতিও প্রাপ্ত হয় না। 


শাঙ্করভাষ্যম্

যঃ শাস্ত্রবিধিং শাস্ত্রং বেদঃ তস্য বিধিং কর্তব্যাকর্তব্যজ্ঞানকারণং বিধিপ্রতিষেধাখ্যম্ উৎসৃজ্য ত্যক্ত্বা বর্ততে কামকারতঃ কামপ্রয়ুক্তঃ সন্? ন সঃ সিদ্ধিং পুরুষার্থয়োগ্যতাম্ অবাপ্নোতি? ন অপি অস্মিন্ লোকে সুখং ন অপি পরাং প্রকৃষ্টাং গতিং স্বর্গং মোক্ষং বা॥

রামানুজভাষ্যম্

শাস্ত্রং বেদাঃ বিধিঃ অনুশাসনম্ বেদাখ্যং মদনুশাসনম্ উৎসৃজ্য যঃ কামকারতো বর্ততে স্বচ্ছন্দানুগণমার্গেণ বর্ততে? ন স সিদ্ধিম্ অবাপ্নোতি? ন কাম্ অপি আমুষ্মিকীং সিদ্ধিম্ অবাপ্নোতি। ন সুখং ঐহিকম্ অপি কিঞ্চিদ্ অবাপ্নোতি। ন পরাং গতিম্ কুতঃ পরাং গতিং প্রাপ্নোতি ইত্যর্থঃ।

শ্রীধরস্বামিব্যাখ্যা

কামাদিত্যাগশ্চ স্বধর্মাচরণং বিনা ন ভবতীত্যাহ -- য ইতি। শাস্ত্রবিধিং বেদবিহিতং ধর্মমুৎসৃজ্য যঃ কামকারতো যথেচ্ছং বর্ততে স সিদ্ধিং তত্ত্বজ্ঞানং ন প্রাপ্নোতি। নচ সুখমুপশমং নচ পরাং গতিং মুক্তিং প্রাপ্নোতি।



তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ ।

জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কর্তুমিহার্হসি ॥১৬- ২৪॥

অনুবাদঃ সেইজন্য এই কর্তব্য এবং অকর্তব্য নির্ধারণের ব্যাপারে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ হোক। শাস্ত্রোক্ত বিধিনিষেধ জেনে এই সংসারে কর্ম করা উচিৎ।


শাঙ্করভাষ্যম্

তস্মাৎ শাস্ত্রং প্রমাণং জ্ঞানসাধনং তে তব কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ কর্তব্যাকর্তব্যব্যবস্থায়াম্। অতঃ জ্ঞাত্বা বুদ্ধ্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং বিধিঃ বিধানং শাস্ত্রেণ বিধানং শাস্ত্রবিধানম্ কুর্যাৎ? ন কুর্যাৎ ইত্যেবংলক্ষণম্? তেন উক্তং স্বকর্ম যৎ তৎ কর্তুম্ ইহ অর্হসি? ইহ ইতি কর্মাধিকারভূমিপ্রদর্শনার্থম্ ইতি॥ইতি শ্রীমৎপরমহংসপরিব্রাজকাচার্যস্য শ্রীগোবিন্দভগবৎপূজ্যপাদশিষ্যস্য,শ্রীমচ্ছঙ্করভগবতঃ কৃতৌ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাভাষ্যেষোডশোঽধ্যায়ঃ॥

রামানুজভাষ্যম্

তস্মাৎ কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ উপাদেয়ানুপাদেয়ব্যবস্থায়াং শাস্ত্রম্ এব তব প্রমাণম্। ধর্মশাস্ত্রেতিহাসপুরাণাদ্যুপবৃংহিতা বেদা যদ্ এব পুরুষোত্তমাখ্যং পরং তত্ত্বং তৎপ্রীণনরূপং তৎপ্রাপ্ত্যুপায়ভূতং চ কর্ম অববোধয়ন্তি তৎ শাস্ত্রবিধানোক্তং তত্ত্বং কর্ম চ জ্ঞাত্বা যথাবদ্ অন্যূনাতিরিক্তং বিজ্ঞায় কর্তুং ত্বং অর্হসি তদ্ এব উপাদাতুম্ অর্হসি।

শ্রীধরস্বামিব্যাখ্যা

ফলিতমাহ -- তস্মাদিতি। ইদং কার্যমিদমকার্যমিত্যস্যাং ব্যবস্থায়াং তে তব শাস্ত্রং শ্রুতিস্মৃতিপুরাণাদিকমেব প্রমাণম্। অতঃ শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম জ্ঞাত্বা ইহ কর্মাধিকারে বর্তমানো যথাঽধিকারং কর্ম কর্তুমর্হসি।,তন্মূলত্বাৎসত্ত্বশুদ্ধিসম্যগ্জ্ঞানমুক্তীনামিত্যর্থঃ।


শুধু তাই নয় , শ্রদ্ধাত্রয়বিভাগযোগে ভগবান বলেছেন - 


বিধিহীনমসৃষ্টান্নং মন্ত্রহীনমদক্ষিণম্ ।

শ্রদ্ধাবিরহিতং যজ্ঞং তামসং পরিচক্ষতে ॥ 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৭।১৩

অর্থ: শাস্ত্রবিধিহীন, অন্নদানরহিত, মন্ত্রহীন, দক্ষিণারহিত, শ্রদ্ধারহিত যজ্ঞকে তামসিক বলা হয়।


তস্মাদোমিত্যুদাহৃত্য যজ্ঞদানতপঃক্রিয়াঃ ।

প্রবর্তন্তে বিধানোক্তাঃ সততং ব্রহ্মবাদিনাম্ ॥

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১৭।২৪

অর্থ: সেইজন্য বেদমন্ত্র উচ্চারণকারী মানুষেরা সর্বদা “ও৩ম্ ” উচ্চারণ করে শাস্ত্রবিধি অনুসারে যজ্ঞ, দান ও তপস্যা আরম্ভ করেন।


অর্থাৎ সমস্ত ভাষ্যকারগণ এখানে শাস্ত্র বলতে বেদশাস্ত্রকেই বুঝিয়েছেন । প্রসঙ্গতঃ নানা পণ্ডিতন্মন্য ব্যক্তি বলে থাকেন বেদ বলতে চতুর্বেদকে নির্দেশ করা হয়নি, বরং জ্ঞানমাত্রেই এখানে উপলক্ষ্য । তাদের ভ্রমনিবারণের নিমিত্তে এই নিবন্ধটি অধ্যয়নের পরামর্শ প্রদান করা হলো -  https://back2thevedas.blogspot.com/2022/02/blog-post.html

 

অগ্নির্মূর্ধা চক্ষুষী চন্দ্রসূর্য়ৌ দিশঃ শ্রোত্রে বাগ্ বিবৃতাশ্চ বেদাঃ। 

[মুণ্ডক উপনিষদ ২।১।৪] 

= এই পরমাত্মার অগ্নি মস্তক, চন্দ্র এবং সূর্য চক্ষু, দিশা শ্রোত্র, প্রসিদ্ধ ঋগ্বেদাদি তাঁর বাণী। 

 

তস্মাদৃচঃ সাম য়জূংষি দীক্ষা য়জ্ঞাশ্চ সর্বে ত্রুতবো দক্ষিণাশ্চ। 

[মুণ্ডক উপনিষদ ২।১।৬]

= সেই পূর্ণ পরমাত্মা থেকে ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ, উপনয়নাদি সংস্কার এবং সকল অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞরূপ কর্ম, অশ্বমেধাদি সকল যজ্ঞ, শ্রদ্ধাপূর্বক দান এবং মুহূর্তাদি সকল কাল এবং যজ্ঞকর্তা যজমান এবং সকল ইন্দ্রিয়ের গোলক এবং যেখানে চন্দ্রমা পবিত্র বা প্রকাশিত হয়, যেখানে সূর্য প্রকাশিত হয়, এই সমস্ত লোক উৎপন্ন হয়েছে।


 

পিতৃদেব-মনুষ্যাণাং বেদশ্চক্ষুঃ সনাতনম্। 

অশক্যঞ্চাপ্রমেয়ঞ্চ বেদশাস্ত্রমিতি স্থিতিঃ ॥ 

মনুস্মৃতি ১২।৯৪ 

= পিতৃ এবং পালক পিতৃ আদি বিদ্বান এবং অন্যান্য মনুষ্যদের জন্য বেদ সনাতন চক্ষু = পথপ্রদর্শক একে কোনো পুরুষ সৃষ্টি করতে পারে না। এজন্য অপৌরুষেয় তথা অনন্ত সত্য বিদ্যা দ্বারা যুক্ত এই বেদ নিশ্চিতভাবে স্বীকৃত।


চাতুর্বণ্যং ত্রয়ো লোকাশ্চত্বারশ্চাশ্রমাঃ পৃথক্। 

ভূতং ভব্যদ্ভবিষ্যঞ্চ সর্বং বেদাৎ প্রসিদ্ধ্যতি ॥ 

মনুস্মৃতি ১২।৯৭ 

= ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র এই চার বর্ণ এবং এর ব্যবস্থা পৃথিবী, আকাশ এবং দ্যুলোক অর্থাৎ সমস্ত ভূমণ্ডল গ্রহ আদি, ব্রহ্মচর্য, গৃহস্থ, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস এই চারি আশ্রমের পৃথক পৃথক বিধান এবং ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান এবং কালের বিদ্যা সব বেদ দ্বারা প্রসিদ্ধ প্রকাশ এবং জ্ঞান অর্থাৎ এই সব ব্যবস্থা এবং বিদ্যার জ্ঞান বেদ দ্বারাই হয়।


শব্দঃ স্পর্শশ্চ রূপঞ্চ রসো গন্ধশ্চ পঞ্চমঃ। 

বেদাদেব প্রসূয়ন্তে প্রসূতির্গুণকর্মতঃ ॥ 

মনুস্মৃতি ১২।৯৮ 

= শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস এবং পঞ্চম গন্ধ এই উৎপত্তি, গুণ এবং কর্মের জ্ঞানরূপ বেদ দ্বারা প্রসিদ্ধ= বিজ্ঞাত অর্থাৎ এই তত্তশক্তির উৎপত্তিবাসর গুণের জ্ঞান, ইহার উপযোগীর জ্ঞান, ইহার উপযোগীর জ্ঞান এবং উৎপন্ন সমস্ত জড় চেতন সংসারের জ্ঞান বিজ্ঞান বেদ দ্বারা প্রাপ্ত হয়।


  • বেদই একমাত্র সংবিধান 

ধর্মং জিজ্ঞাসমানানাং প্রমাণং পরমং শ্রুতিঃ॥

[মনুস্মৃতি ২।১৩] 

অর্থাৎ যে ধর্মের বিষয়ে জ্ঞান প্রাপ্ত করতে চায় তার জন্য বেদই মূখ্য প্রমাণ।

 য়ঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ। 

ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্॥ [গীতা ১৬।২৩]

 = যে ব্যক্তি শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগ করে স্বেচ্ছাচারে প্রবৃত্ত হয়, সে সিদ্ধি প্রাপ্ত হয় না, সুখ প্রাপ্ত হয় না ও পরম গতি প্রাপ্ত হয় না, 

ব্রহ্মাক্ষরসমুদ্ভবম্ [গীতা ৩।১৫] = বেদ স্বয়ং ঈশ্বর হতে প্রকাশিত। 

“শ্রুতিবিরোধাত্রকুতর্কাপসদস্যাত্মলাভঃ।” [সাংখ্য দর্শন ৬।৩৪] 

= বেদবিরোধী কুতর্কে আসক্তিযুক্ত পুরুষের আত্মতত্ত্ব লাভ হতে পারে না। 

“ন পৌরুষেয়ত্বং তত্কর্তুঃ পুরুষস্যাভাবাৎ।” [সাংখ্য দর্শন ৫।৪৬] 

= বেদের কর্তা কোনো মানব নয়। ️

” নিজশক্ত্যাভিব্যক্তেঃ স্বতঃ প্রমাণ্যম্।” [সাংখ্য দর্শন ৫।৫১]

 = ঈশ্বরের স্বাভাবিক শক্তি বেদরূপে প্রকাশিত বলে বেদ স্বতঃপ্রমাণ। 

 

ব্রহ্মসূত্রে “শাস্ত্রয়োনিত্বাৎ” [ব্রহ্মসূত্র ১।১।৩] তে তথা “অতএব চ নিত্যত্বম্”[ব্রহ্মসূত্র ১।৩।২৯] ইত্যাদি সূত্রের দ্বারা পরমেশ্বরকে ঋগ্বেদাদি রূপ সর্ব জ্ঞানের কর্তা মেনে বেদের নিত্যতা প্রতিপাদন করা হয়েছে। বৈশেষিক দর্শনে মহামুনি কণাদ বলেছেন

  “তদ্বচনাদাম্নায়স্য প্রামাণ্যম্।” [বৈশেষিক দর্শন ১।১।৩]

= বেদ ঈশ্বরোক্ত বলেই তাতে সত্য বিদ্যা ও পক্ষপাত রহিত ধর্মের প্রতিপাদন আছে, অতএব বেদ চতুষ্টয়কে নিত্য হিসেবে স্বীকার করা মনুষ্যমাত্রেরই কর্তব্য, কারণ যখন ঈশ্বর নিত্য, তখন তাঁর নিত্যজ্ঞানস্বরূপ বেদও অবশ্যই নিত্য হবে, এতে সন্দেহ নাই।


  • শাস্ত্রাদির বিরোধে বেদই সর্বোচ্চ প্রমাণ -

য়া বেদবাহ্যাঃ স্মৃতয়ো য়াশ্চ কাশ্চ কুদৃষ্টয়ঃ। 

সর্বাস্তা নিষ্ফলাঃ প্রেত্য তমোনিষ্ঠা হি তাঃ স্মৃতাঃ॥ 

[মনুস্মৃতি ১২।৯৫] 

= বেদবাহ্য অর্থাৎ বেদবিরুদ্ধ যে সব স্মৃতি আছে এবং যে সব শাস্ত্র কুদৃষ্টিমূলক অর্থাৎ অসৎ-তর্কযুক্ত মতবাদসমূহ যে শাস্ত্রে আছে, সেগুলি সব শেষ পর্যন্ত একেবারে নিষ্ফল অর্থাৎ বৃথা বা অকিঞ্চিৎকর বলে প্রতিভাত হয় এবং সেগুলি তমোনিষ্ঠ বলে স্মৃত হয়ে থাকে।


উৎপদ্যন্তে চ্যবন্তে চ য়ান্যতোঽন্যানি কানিচিৎ। 

তান্যর্বাক্কালিকতয়া নিষ্ফলান্যনৃতানি চ॥ 

[মনুস্মৃতি ১২।৯৬] 

= এই বেদ ছাড়া আর যত কিছু শাস্ত্র আছে অর্থাৎ যেগুলি মানব রচিত সেগুলি কালক্রমে উৎপন্ন হয় এবং বিনাশও প্রাপ্ত হয়। সেগুলি সব অর্বাচীনকালীন; এজন্য সেগুলি সব নিষ্ফল ও মিথ্যা।

অতঃ সিদ্ধান্ত - 


  • ১। ধর্মাধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ ও বেদানুকূল গ্রন্থ-বচনসমূক পরতঃ প্রমাণ । বিরোধ দর্শনে বেদ সর্বাগ্রে সর্বোচ্চ সর্বমান্য । 
  • ২। সনাতন ধর্মের প্রতিটি শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত পূর্বোক্ত সূত্র [ ১ ] অনুযায়ী নির্ণীত হবে । শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত যেখানে স্পষ্ট সেখানে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বা কপোলকল্পিত মতামত কখনোউ গ্রহণযোগ্য নয় । 
  • ৩। শাস্ত্র বিরুদ্ধ কর্ম যেই করুক না কেন তা তামসিক, নিষিদ্ধ ও গর্হিত বলে বিবেচিত হবে । 
  • ৪। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মতামত সবার থাকা অতীব স্বাভাবিক । কিন্তু ধর্মীয় সিদ্ধান্ত হিসেবে শাস্ত্রবিরুদ্ধ কোন মতামত গ্রহণীয় নয় ।