https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

ভাগবত কতটুকু প্রামাণ্য গ্রন্থ

Saturday, October 8, 2016
পৌরাণিকরা যেন শাস্ত্র বলতে ভাগবতকেই বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকে। নিমাই (চৈতন্যদেবের) মতে এটা না কি লীলা রসের সমুদ্র।  তাই পৌরাণিকরা যেন ভাগবত থেকে সেই লীলা রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেই রসে বিশুদ্ধতার পরিমান কতটুকু তারা কখনো বিশ্লেষন করেই দেখে নি। তাদের ব্যাপারটা এরূপ যে - নিমাই  যেহেতু একথা বলেছেন আর বিশ্লেষন করার কি দরকার। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের  বিবেক, বুদ্ধি দিয়েছেন বিচার করার জন্য।



অর্থাৎ কোন বিষয় গ্রহন করার পূর্বে অবশ্যই তা বিচার পূর্বক গ্রহন করা উচিত। তো আসুন বিচার করা যাক এই ভাগবতের প্রামাণিকতা কতটুকু। ভাগবত রচনা করা হয় মহাভারতের বহু বৎসর পরে।  কারন কুরুপান্ডবের যুদ্ধের পর মহারাজ যুধিষ্ঠির ৩৬ বছর ৮মাস ২৫ দিন রাজত্ব করেছিলেন। তারপর রাজা পরীক্ষিত ৬০ বছর রাজত্ব করেন। এই ভাগবত পরীক্ষিত মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিবস পূর্বে শ্রবন করেন।  অর্থাৎ ভাগবত মহাভারত যুদ্ধের প্রায় ৯৬ বছর পর কথিত হয়।  ভাগবতের মূল বর্ণনা শুরু হয় পরীক্ষিতের  মৃত্যুশাপের মধ্য দিয়ে। ঘটনাটি এরূপ যে, একদিন রাজা পরীক্ষিত মৃগয়া করতে গিয়ে  অত্যন্ত তৃষ্ণার্থ হয়ে পড়েন। পাশে শমীক মুনির আশ্রমে তিনি জলের সন্ধানে গেলেন। কিন্তু মুনি তখন ধ্যানমগ্ন ছিলো তাই তাকে কেউ সম্বোধন করে নি। এই ক্রোধে তিনি শমীক মুনির গলায় মৃত সর্প পেচিয়ে দিয়ে প্রস্থান করেন। শমীক মুনির পূত্র ঋষি শৃঙ্গি এই ঘটনার বিবরন শুনে অত্যন্ত ক্রোধিত হয়ে পড়েন যে,তার পিতাকে ঘোর অপমান করা হয়েছে। তাই তিনি রাজা পরীক্ষিতকে শাপ প্রদান করেন - যে তিনি সপ্তদিবসে তক্ষক নাগের দংশনে মৃত্যুবরণ করবেন। এদিকে রাজা পরীক্ষীতও তার কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে থাকেন।  এবং যখন তিনি ঋষি শৃঙ্গির শাপের কথা শোনেন তখন তিনি  বিষয় ত্যাগ করে আমরণ গঙ্গার তীরে অনশন ব্রতের জন্য গমন করেন (ভাঃ ১।১৯।৭)। সেখানে অনেক ঋষিগন  আসেন এবং শুকদেবও উপস্থিত হন। তখন পরীক্ষিতের পাপ মোচনের জন্য শুকদেব ভাগবত কথা বলতে আরম্ভ করেন। এভাবে ৬ষ্ঠ দিবস অতিবাহিত হবার পর ৭ম দিবসে  তক্ষক নাগ এক ব্রাহ্মনের ছদ্মবেশে পরীক্ষিতের  সামনে উপস্থিত হয়ে তাকে দংশন করেন (ভাঃ ১২।৬।১২)।
.
এই হলো সংক্ষেপিত ভাগবত মতে রাজা পরীক্ষিতের মৃত্যুরহস্য। এখন বিচারনীয় এই যে, এই ঘটনার সত্যতা কতটুকু। আমরা মহাভারত আদিপর্ব থেকে জানতে পারি যে,  পরীক্ষিত যখন তার মৃত্যু সংবাদ শোনেন তখন তিনি ভাগবত কথা শোনা তোদূরের কথা তিনি গঙ্গার ধারেও যান নি। তিনি তখন মন্ত্রিদের সাথে পরামর্শ করে তার নিজের সুরক্ষার জন্য এক  স্তম্ভের উপর  একটি প্রাসাদ নির্মান করেন-
.
সমন্ত্র্য মন্ত্রিভিশ্চৈব স তথা মন্ত্রতত্ত্বববিত।
প্রাসাদং কারয়ামস একস্তম্বভং সুরক্ষিতম।।
(আদিপর্বঃ অধ্যায় ৪২,শ্লোক ২৯)
.
মন্ত্র তত্ত্বের জ্ঞাতা মহারাজন মন্ত্রিদের সাথে পরামর্শ করে এক উচু প্রাসাদ নির্মাণ করেন। যার একটি মাত্র স্তম্ভ ছিলো এবং চারিদিক থেকে সুরক্ষিত ছিলো।
.
শুধু তাই নয়,তিনি তার সুরক্ষার জন্য ঔষধি এবং মন্ত্রসিদ্ধ বৈদ্যদের নিযুক্ত করলেন -
.
রয়াং চ দিদধে তত্র ভিষজশ্চিষধানি চ।
ব্রাহ্মণান মন্ত্রসিদ্ধাংশ্চ সর্বতো বৈ ন্যয়োজয়ত।।
(আদি পর্ব,অঃ ৪২,শ্লোক ২৯)
.
রাজা এখানে রক্ষার জন্য আবশ্যক বন্দোবস্ত করলেন। তিনি সবপ্রকারের ঔষধি জোটালেন এবং বৈদ্য তথা মন্ত্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণকে সব প্রকারে নিযুক্ত করলেন।
.
অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, রাজা পরীক্ষিত কখনো গঙ্গার ধারে ভাগবত শুনতে যান নি।  অথচ ধূর্ত ভাগবতাকার পরীক্ষিতকে গঙ্গায় টেনে নিয়ে গেলেন ভাগবত শোনাতে। অনেকে আবার বড় গলা করে বলবে যে, ভাগবত তো ব্যাসদেব লিখেছে অতএব ভূল কিছুই নেই।  তো আমি বলবো ব্যাসদেব কি ভাগবত লেখার সময় অতিরিক্ত মাত্রায় মদ্য সেবন করেছিলেন যে এত বড় ভূল তিনি করলেন? তার মতো বেদজ্ঞ বিদ্বান কি এরূপ ভূল করতে পারেন?   অতএব ভাগবত  যে কোন স্বার্থান্বেষী ধূর্তবাজদের লেখা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
.
এরপর আসি পরীক্ষিতের মৃত্যুবর্ণনায়।  পরীক্ষিত যখন সেই প্রাসাদ থেকে রাজ্য শাসন করতে লাগলেন। তখন তক্ষক সেই প্রাসাদে ঢোকার একটা উপাই বের করলেন। তখন তিনি নাগদের তপস্বী সেজে ফল মূল নিয়ে  রাজার কাছে যাবার জন্য আদেশ করলেন। আর সেই ফলে তক্ষক কীট হয়ে বসে রইলেন।
.
বিধানাং সম্প্রযুক্তো বৈ ঋষিক্যয়েন তেনতু।
যস্মিন্নেব ফলে নাগস্তমেবাভক্ষযেত স্বয়ম।।
(আদি পর্ব, অঃ ৪৩, শ্লোক ৩০)
.
বিধাতার বিধান  এবং মহর্ষির বচন দ্বারা প্রেরিত হয়ে রাজার ওই ফল স্বয়ং খেলেন। যাহার উপর তক্ষক নাগ বসেছিলো।
পরীক্ষিত সেই কীট কে দেখতে পেয়ে হাতে নিয়ে  মন্ত্রিদের এই প্রকার বললেন - এখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে এই জন্য আমার সর্পের বিষের কোন ভয় নেই।  মুনি বাক্য সত্য হোক, এই জন্য এই কীট তক্ষক নাগ ধারন করে আমাকে দংশন করুক। এই বলে তিনি সেই কীট কে ঘাড়ে রেখে হাসতে লাগলেন। এর পর সেই কীট তক্ষক নাগ হয়ে পরীক্ষিতকে দংশন করলেন।
(আদিপর্ব, অঃ ৪৩, শ্লোক ৩২-৩৬)
.
এ বিবরনেও  ভাগবতাকারের ছল চাতুরী ধরা পড়লো।  যিনি কিনা বর্ণনা করেছিলেন তক্ষক ব্রাহ্মণ বেশ ধারন করেছিলেন। কিন্তু মহাভারত থেকে  আমরা জানতে পারলাম তক্ষক  ছোট্ট কীটের রূপ ধারন করেছিলেন। ভাগবতকার শুধু মিথ্যার পর মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নিয়েছেন ভাগবতকারের ছল চাতুরীর  এখানেই  শেষ নয়।  যে ভাগবতকার শুকদেব কে দিয়ে পরীক্ষীত কে ভাগবত শুনিয়েছিলেন  সেই শুকদেবের মহাপ্রয়ান অনেক আগেই হয়েছিলো ।  মহাভারত শান্তিপর্বে ৩৩৩ এবং ৩৩৪ অধ্যায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে।  যখন পিতামহ ভীষ্মের নিকট যুধিষ্ঠির মোক্ষধর্ম উপদেশ চান। তখন ভীষ্ম শুকদেবের জন্ম ও মরনবৃত্তান্ত যুধিষ্ঠির কে শ্রবন করান। অর্থাৎ সেই বৃত্তান্ত অনুযায়ী শুকদেবের দেহত্যাগ যুধিষ্ঠিরেরও আগে হয়েছিলো।
.
অন্তর্হিতঃ প্রভাবং দর্শায়িত শুকস্তদ।
গুনান শত্যজা শব্দাদীন পদভাগমৎ পরম।।
(শান্তিপর্বঃ অঃ ৩৩৩, শ্লোক ২৬)
.
এই প্রকার নিজ প্রভাব দেখিয়ে শুকদেব অন্তর্ধান হয়ে গেলেন। এবং শব্দ আদি গুন পরিত্যাগ করে পরমপদ প্রাপ্ত হলেন।
.
এই প্রকার নিজ পূত্রের দেহত্যাগ দেখে ব্যসদেব অতন্ত্য শোকে ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। তখন মহর্ষি পুজিত ভগবান পিনাকপানি, দেবতা ও গন্ধর্বগনে পরিবেষ্টিত হয়ে পূত্র শোকার্ত ব্যাসদেবের নিকট আগমনপূর্বক শান্তনা পূর্বক তাহাকে বললেন, পূর্বে তুমি আমার নিকট অগ্নি,বায়ু,জল ও আকাশের ন্যায় পূত্র প্রার্থনা করেছিলে। আমিও তোমার প্রার্থনা পূরন করেছিলাম। এখন সেই পূত্র পরম দেবদূর্লভ গতি প্রাপ্ত হয়েছে। অতএব তুমি কেন অনুতাপ করছো? সাগর পর্বত সমুদায় যতদিন এই ভূমন্ডল থাকবে তুমি এবং তোমার পূত্রের অক্ষয় কীর্তি ততদিন থাকবে।
(শান্তিপর্ব,অঃ ৩৩৩, শ্লোক ৩৫-৩৭)
.
মহাভারতের এই শ্লোকগুলো দ্বারা স্পষ্ট যে,  শুকদেব মহারাজ যুধিষ্ঠিরের অনেক আগেই পরলোকগত হয়েছেন।অতএব যুধিষ্ঠিরের এই শুকদেবের জন্ম এবং মৃত্যু বৃত্তান্ত শুনিবার প্রায় একশত বছর পর সেই শুকদেব কি করে পরীক্ষিত কে ভাগবত শুনাতে পারে?  যে কি না পরীক্ষিত এমন কি যুধিষ্ঠিরের পূর্বেই দেহত্যাগ করেছেন। ভাগবতকার আর কত মিথ্যার আশ্রয় নেবে কে জানে। শুধু  মিথ্যার পর মিথ্যা গল্প বানিয়ে গ্রন্থের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করলেন।আর গ্রন্থের মর্যদা বৃদ্ধির জন্য ভাগবতে ব্যসদেবের নাম জুড়ে দিলেন। কিন্তু ব্যসদেবের মতো বিদ্বান ব্যক্তি এরকম ভূল তথ্য সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনা করতে পারে কি না সেটা পাঠকবৃন্দ বিচার করবেন।

  1. যুক্তিপূর্ণ বিশ্লেষণ। সাধু! সাধু!! দণ্ডবৎ।

    ReplyDelete
  2. শুধু মহাভারত নয় দেবী ভাগবতে ও এটার প্রমাণ আছে যে মহারাজ পরীক্ষিৎ অভিশাপ পাবার পর উঁচু মহলের ভিতর ছিলেন

    ReplyDelete