সমগ্র ধরনীতে যেমন প্রতিটি বস্তু বা কর্মের পরিপূরক অপর কোন বস্তু বা কর্ম রয়েছে, তেমনি স্বামী ও স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। কেউ কারো দাস বা কেউ কারো অধিপতি নয়। সমাজে যে সকল কুসংস্কার প্রত্যহ আমরা দেখতে পাই, যেগুলো ধর্ম বলিয়া আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়, বাস্তবিক অর্থে এগুলো দৃশ্যমান নয়। আমাদের সমাজে স্বামী ও স্ত্রী র মাঝে যে শ্রেষ্ঠত্বের মানসিকতা লক্ষ্য করা যায় এরও কোন অস্তিত্ব বেদে দৃশ্যতম নয়। বরঞ্চ, স্বামী এবং স্ত্রীকে সমান ও পরিপূরক বলা হয়েছে।
স্বামীর নাম মুখে আনা পাপ, স্বামীই ঈশ্বর এ ধরনের মানসিকতা আমাদের নিজেদের তৈরি। সম্মান উভয়েরই থাকতে হবে উভয়ের প্রতি। সেক্ষেত্রে কেউ শ্রেষ্ঠ নয়। দুজনেই সমান। এ মর্মেই স্ত্রীকে স্বামীর অর্ধাঙ্গী অথবা সহধর্মীনি বলা হয়েছে।
বেদ বলেছে-
অমোহমস্মতি সা ত্বং সামাহম স্ম্যৃক্ত্বংদ্যৌরহং পৃথিবী ত্বম্।
তাহিব সং ভবাব প্রজামা জনয়াবহ্নৈ।।
(অথর্ব্ব বেদ ১৪।২।৭১)
- হে স্বামিন্! আমি যেরূপ জ্ঞানী, তুমিও সেইরূপ জ্ঞানী। আমি সাম মন্ত্র, তুমি ঋগেদ্ব মন্ত্র। আমি দ্যুলোক, তুমি পৃথ্বীলোক। আমরা উভয়ে এই ভাবে মিলিয়া সন্তানোৎপাদন করিব।
উত ত্বা শশীয়সী পুংসো ভবতি বস্যসী।
অদেবত্রাদরাধসঃ।।
(ঋগ্বেদ ৫।৬১।৬)
- এ বিষয় সুবিদিত যে বহু পতিব্রতা স্ত্রী শুভকর্ম বর্জ্জিত ও ঈশ্বরোপাসনা রহিত পুরুষ হইতে অধিকতর প্রশংসা ভাজন।
সম্রাজ্ঞ্যেধি শ্বশুরেশু সম্রাজ্ঞ্যুত দেবৃষু।
ননান্দুঃ সম্রাজ্ঞ্যেধি সম্রাজ্ঞ্যুত শ্বশ্র্বাঃ।।
(অথর্ব্ব বেদ ১৪।১।৪৪)
- শ্বশুরদের মধ্যে এবং দেবরদের মধ্যে, ননদ ও শ্বাশুরিদের সঙ্গে মিলিয়া সম্রাজ্ঞী হইয়া থাক।
সুমঙ্গলী রিয়ং বধূরিমাং সমতে পশ্যত।
সৌভাগ্য মধৌ দত্ত্বা দৌর্ভাগ্যৈর্বিপরেতন।।
(অথর্ব্ব বেদ ১৪।২।২৮)
- এই বধু মঙ্গলময়ী, সকলে মিলিয়া ইহাকে দেখ, ইহাকে সৌভাগ্য দান করিয়া দৌর্ভাগ্য বিদুরিত কর।
ইহৈব স্তং মা বি যৌষ্টং বিশ্বমায়ুর্বশ্নুতম্।
ক্রীড়ান্তৌ পুত্রৈনর্প্তৃভিমোর্দমানৌ স্বস্তকৌ।।
(১৪।২।২২)
- হে দম্পতি! তোমরা উভয়ে একসঙ্গে থাকো, পৃথক হইওনা। নিজের গৃহে পুত্র ও পৌত্রদের সঙ্গে খেলিয়া আনন্দ করিয়া পূর্ণ আয়ু ভোগ কর।
স্যোনাদ্যোনেরধি বুধ্যমানৌ হসামুদৌ মহসা মোদমানৌ।
সুগূ সুপুত্রৌ সুগৃহৌ তরথেঃ জীবাবুষসো বিভাতীঃ।।
(অথর্ব্ব বেদ ১৪।২।৪৩)
- হে দম্পতি! শান্তি পূর্ণ গৃহে জ্ঞান লাভ করিয়া, হাস্য ও অনন্দ কর। সচ্চরিত্র পুত্র লাভ কর এবং শান্তিতে জীবন অতিবাহিত কর।
0 মন্তব্য(গুলি)