https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ব্রাহ্মসমাজ সমালোচনা

Monday, May 22, 2023

 


সত্যার্থ প্রকাশের ১১শ সমুল্লাসে রামমোহন রায় প্রবর্তিত ব্রাহ্মসমাজ ও আত্মারাম পাণ্ডুরাঙ নির্মিত প্রার্থনা সমাজ বিষয়ে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর সুস্পষ্ট মতামত পরিলক্ষিত হয় । একজন আদর্শ সমালোচকের দৃষ্টিতে তিনি ভালো ও মন্দ উভয় দিকেরই আলোচনা করেছেন । প্রশ্নোত্তর শৈলীতে আমরা দেখতে পাই - 
 
প্রশ্ন - ব্রাহ্মসমাজ এবং প্রার্থনা সমাজ ভাল কিনা ?
উত্তর - কোনও কোনও বিষয়ে ভাল, আবার বহু বিষয়ে মন্দ। 
 
প্রশ্ন - ব্রাহ্মসমাজ এবং প্রার্থনা সমাজ সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, কারণ ইহাদের নিয়ম অতি উত্তম।
উত্তর - নিয়ম সর্বাংশে উত্তম নহে; কেননা বেদবিদ্যাহীন ব্যক্তিদের কল্পনা সর্বথা সত্য কীরূপে হইতে পারে? ব্রাহ্ম সমাজ এবং প্রার্থনা সমাজ অল্পসংখ্যক লোককে খৃষ্টান মতের কবল হইতে রক্ষা করিয়াছে, পাষাণাদি মূর্ত্তির পূজাও কতক পরিমাণে দূর করিয়াছে এবং তাহাদিগকে অন্যান্য জাল গ্রন্থের কবল হইতে কিয়ৎ পরিমাণে রক্ষা করিয়াছে। এসকল ভাল কথা। কিন্তু —
 
(১) ইহাদের মধ্যে স্বদেশ-ভক্তি নিতান্ত অল্প। ইহারা খৃষ্টান আচার বহুপরিমাণে গ্রহণ করিয়াছেন; পান ভোজন এবং বিবাহাদির নিয়মও পরিবর্তন করিয়াছেন।
 
(২) স্বদেশের প্রশংসা অথবা পূর্বপুরুষদের গৌরব করা তো দূরে থাকুক, তৎস্থলে শতমুখে নিন্দা করিয়া থাকেন। তাঁহাদের বক্তৃতার ইংরেজ প্রভৃতি খৃষ্টানদের পেট ভরিয়া প্রশংসা করিয়া থাকেন কিন্তু ব্রহ্মাদি মহর্ষিদের নামটুকুও মুখে আনেন না। প্রত্যুত তাঁহারা এমনও বলিয়া থাকেন যে, এই সংসারে আজ পর্য্যন্ত ইংরেজ ব্যতীত অপর কেহ বিদ্বান্ হয় নাই; আর্য্যাবর্ত্তবাসিগণ চিরকাল মূর্খ ছিলেন এবং তাঁহাদের কখনও উন্নতি হয় নাই।
 
(৩) ব্রাহ্মগণ বেদাদির প্রশংসা করা ত দূরে থাকুক, নিন্দা করিতেও পরাঙ্মুখ হন না। ব্রাহ্মসমাজের উদ্দেশ্যে রচিত পুস্তকে সাধুদের গণনায় ‘ঈশা’, ‘মুসা’, ‘মহম্মদ', 'নানক’, এবং ‘চৈতন্য’ লিখিত আছে। কোন ঋষি-মহর্ষির নামও নাই। ইহা হইতে জানা যায় যে, ইহারা যাঁহাদের নাম লিখিয়াছেন, ইহারা তাঁহাদেরই মতানুযায়ী। একবার ভাবিয়া দেখুন উক্ত সমাজের সভ্যগণ যদিও আর্য্যাবর্ত্তে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, এদেশেরই অন্ন-জল গ্রহণ করিয়াছেন ও করিতেছেন, তথাপি মাতাপিতা, পিতামহের পন্থা পরিত্যাগ করিয়া বিদেশীয় মতের দিকে অধিক আকৃষ্ট হইয়া থাকেন। ব্রাহ্ম সমাজী ও প্রার্থনা সমাজীরা এতদ্দেশীয় সংস্কৃত বিদ্যায় অনভিজ্ঞ হইয়াও নিজেদের বিদ্বান বলিয়া প্রকাশ করেন, ইংরাজী ভাষা পড়িয়া পাণ্ডিত্যাভিমানী হইয়া রাতারাতি একটা মত প্রচারে প্রবৃত্ত হওয়া মানব সমাজের স্থায়ী ও বৃদ্ধিকর কার্য্য করা কীভাবে সম্ভব হইতে পারে ?
 
(৪) ইংরেজ, যবন এবং অন্ত্যজ প্রভৃতির সহিতও ইঁহারা পানভোজন সম্পর্কে কোন ভেদাভেদ রাখেন না। ইঁহারা সম্ভবতঃ ইহাই বুঝিয়াছেন যে, সকলের সহিত পানভোজন করিলেই এবং জাতিভেদ ভাঙ্গিয়া দিলেই তাঁহাদের এবং তাঁহাদের দেশের উন্নতি হইবে। কিন্তু ও সকল কার্য্য দ্বারা উন্নতি তো হয়ই না, বরং বিপরীত বিকারই ঘটিয়া থাকে।

  • 💯 আর্যসমাজ ও ব্রাহ্মসমাহের মধ্যে অত্যন্ত সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে । যথাক্রমে - 
 
● ব্রাহ্মসমাজ একটি সংস্কারবাদী আন্দোলন বিশেষ করে সমাজসংস্কার আন্দোলন, নতুনত্ব গঠনে প্রয়াস করে। কিন্তু তাদের মানদণ্ড অনেকটাই পাশ্চাত্যদের সাথে মিল রেখে করা ।
আর্য সমাজ হলো সনাতন ধর্মের পুনর্জাগরণ এর আন্দোলন, বৈদিক সভ্যতায় মনোনিবেশ করে (Back To The Vedas)।
● ব্রাহ্মসমাজ অন্যান্য ধর্ম যেমন যেমন ইসলাম, খ্রিস্টধর্মকে সনাতন ধর্মের সমান বলে বিবেচনা করে মূলত তারা সর্বধর্ম সমন্বয়-ঐক্যতাই বিশ্বাসী।
আর আর্য সমাজ কেবল সনাতন ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের অধিকারী, সত্য সনাতন কে স্বতন্ত্রভাবে প্রচার করে।
● ব্রাহ্মসমাজ পশ্চিমা সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে এর অনেক পদ্ধতিবাদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আর আর্য সমাজ কেবল ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃতিকেই প্রাধান্য দেয় এবং প্রচার করে।
★মূলত ব্রাহ্মসমাজ সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তনের জন্য বাইরে/পশ্চিমের দিজে তাকিয়ে ছিলেন। সমাজসংস্কার এর জন্য নতুনত্ব বয়ে আনতে চেয়েছেন।
কিন্তু আর্যসমাজ ভিন্ন। আর্য সমাজ প্রমাণ করতে চেষ্টা করে আধুনিকতা কেবল বৈদিক সভ্যতার সংস্কৃতির মধ্যে বিদ্যমান এবং তা ফিরিয়ে আনার প্রয়াস করেন। আর্যসমাজ বিশ্বাস করে বৈদিক সংস্কৃতি পশ্চিমা সংস্কৃতির তুলনায় প্রকৃতপক্ষে উচ্চতর। সমস্যাটি হলো বর্ণ ও কুসংস্কারের মতো আদিম ধারণা নিয়ে।
 
© বাংলাদেশ অগ্নিবীর