ইদানীং কিছু অবৈদিক, স্বাধ্যায়হীন, গীতাকে হতাহতকারী মানুষ দাবি করছেন যে,
চলুন সেই সকল অবিবেকী মানুষের ভ্রান্তিনাশ করা যাক । দেখে নেওয়া যাক , ঋগ্বেদের বিষ্ণু কী আসলেই একদেশী সাকার দেবতা ?
ॐ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ ।
দিবীব চক্ষুরাততম্ ॥
ঋগ্বেদ ১/২২/২০॥
পদার্থঃ (সূরয়ঃ) ধার্মিক বুদ্ধিমান পুরুষার্থী বিদ্বান মানব, (দিবি) সূর্য আদির প্রকাশে (আততম্) বিস্তৃত (চক্ষুরিব) নেত্রের সমান (বিষ্ণোঃ) ব্যাপক আনন্দস্বরূপ পরমেশ্বরের বিস্তৃত (পরমম্) উত্তম হতে উত্তম (পদম্) চাওয়ার এবং জানার যোগ্য উক্ত বা বক্ষমান পদ আছে, (তত্) তাকে (সদা) সর্ব কালে বিমল শুদ্ধ জ্ঞনের দ্বারা নিজের আত্মায় (পশ্যন্তি) অনুভব করে থাকে ॥২০॥
(বিষ্ণোঃ) ব্যাপক পরমেশ্বরকে (তত্) সেই (পরমম্) পরম (পদম্) পদ, বেদ্য [ জানার যোগ্য বা জ্ঞেয় ] স্বরূপকে (সূর্যঃ) বিদ্বান পুরুষ (দিবি) আকাশে (আততম) উন্মুক্ত (চক্ষুঃ) সর্ব পদার্থের দর্শক সূর্যের সমান স্বতঃপ্রকাশ রূপে (সদা পশ্যন্তি) সদা দেখেন ।
এখানে স্পষ্টত দৃশ্যমান এই যে, উক্ত বেদ মন্ত্রে বিষ্ণু হলে সর্বপরি, সর্বত্র বিরাজমান পরমাত্মা । তিনি কোনো একদেশী সাকার দেবতা নন । তীব্র শক্তি স্বরূপ বিষ্ণু [ পরমাত্মা ] সর্বত্র বিরাজমান ।
অতঃ তিনি নিরাকার পরমাত্মা ।
বেদাঙ্গ ছাড়া বেদের অর্থ নির্ণয় করা চরম মূর্খতা স্বরূপ । এই মূর্খতার উদাহরণ সাকারবাদী, স্বাধ্যায়হীন মূর্খের দল দিয়ে চলেছেন ।
চলুন দেখে নেই, মহর্ষি যাস্কাচার্য বেদে বিষ্ণু শব্দের কী করেছেন ।
আচার্য যাস্ক বিষ্ণুশব্দের ব্যাখ্যায় লিখেছেন,
“অথ যদ্বিষিতো ভবতি তদ্বিষ্ণুর্ভবতি, বিষ্ণুর্বিশতের্বা ব্যশ্নোতোর্বা ।” নিরুক্ত ১২.১৮— অতঃপর যখন আদিত্য রশ্মিসমূহে পরিব্যাপ্ত হন, তখন তাঁহার নাম হয় বিষ্ণু ; বিষ্ণুশব্দ ‘বিশ্’ ধাতু হইতে অথবা বি+অশ্, ধাতু হইতে নিষ্পন্ন।
যাস্কাচার্যের নিরুক্ত ব্যাখ্যায় ডঃ অমরেশ্বর ঠাকুর লিখেছেন,
“পূষাবস্থা অতিক্রম করিয়া আদিত্য বিষ্ণু হন, — রশ্মিসমূহে পরিব্যাপ্ত আদিত্যই বিষ্ণু । বিষ্ণুশব্দ প্রবেশনার্থক ‘বিশ’ ধাতু হইতে অথবা বি পূর্বক ব্যাপ্ত্যর্থক ‘অশ’ ধাতু হইতে নিষ্পন্ন বিষ্ণু তীব্র রশ্মি সমূহের দ্বারা সর্বত্র প্রবিষ্ট হইয়া থাকেন, রশ্মিসমূহের দ্বারা নিজেই অত্যধিক পরিব্যাপ্ত হন ।
সুতরাং, বেদে বিষ্ণু শব্দের যে, নিরাকার, সর্বব্যাপী, সর্বদেশী, পরমাত্মাকে ও আধিদৈবিকে সূর্যকে বোঝানো হয়েছে তা প্রমাণিত হলো ।
এখন আমারা উক্ত মন্ত্রে পদ বলতে কী বুঝিয়েছে তা দেখে নেই ।
সর্বে বেদা যৎ পদমামনন্তি তপাংসি সর্বাণি চ যদ্বদন্তি ।
যদিচ্ছন্তো ব্রহ্মচর্যঞ্চরন্তি তত্তে পদং সংগ্রহেন ব্রবীম্যোমিত্যেতৎ ॥কঠঃ ১/২/১৫॥
অন্বয়ঃ [যম বলিলেন] (সর্বে বেদাঃ) সকল বেদ (যৎ পদম্ আমনন্তি) যে পদকে বা প্রাপ্তব্য বস্তুকে কীর্তন করে (সর্বাণি তপাংসি চ) সমস্ত তপসা (যত বদন্তি) যাহাকে ব্যক্ত করে (মত ইচ্ছন্তঃ) যাহাকে পাইবার ইচ্ছা করিয়া [ব্রহ্ম-জ্ঞানার্থিনঃ] (ব্রহ্মচর্যং চরন্তি) ব্রহ্মজ্ঞানার্থীগণ ব্রহ্মচর্যের অনুষ্ঠান করেন, (তে তৎপদম্) তোমার সেই পদ [অহম] (সংগ্রহেন ব্রবীমি) আমি সংক্ষেপে বলিতেছি (ওম্ ইতি এতৎ) ওম ই সেই পদ ।
সরলার্থঃ যম বলিলেন-সমস্ত বেদ যে পদকে (স্বরূপকে) প্রাপ্তব্য বলিয়া কীর্তন করে, যাঁহার উদ্দেশ্যে সমস্ত তপস্যা অনুষ্ঠিত হয়, যাঁহাকে পাইবার বাসনায় সাধকগণ ব্রহ্মচর্যের অনুষ্ঠান করেন আমি সংক্ষেপে সেই ব্রহ্মের পদ বা স্বরূপ তোমাকে বলিতেছি সেই পদ হইল “ॐ” ।
সুতরাং আমরা স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছি বিষ্ণু-পরমাত্মার পদ শব্দের যথার্থ অর্থ । ঋগ্বেদ ১/২২/২০ এ “পদ” শব্দের অর্থ চাওয়ার এবং জানার যোগ্য, বেদ্য [ জানার যোগ্য বা জ্ঞেয় ] স্বরূপ বলতে “ॐ” কে বোঝানো হয়েছে । কোনো সাকার দেবতার চরণকে বোঝানো হয় নাই ।
আধিদৈবিক ব্যাখ্যা পড়ুন - http://back2thevedas.blogspot.com/2018/06/blog-post_14.html
অতঃ অবিবেকীর, ঋগ্বেদ ১/২২/২০ মন্ত্রে সাকার বিষ্ণুর আক্ষেপ ভ্রান্ত প্রমাণ করে খণ্ডন করা হলো ।
ও৩ম কৃণ্বন্তোবিশ্বমার্যম্
ও৩ম শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ
0 মন্তব্য(গুলি)