https://www.idblanter.com/search/label/Template
https://www.idblanter.com
BLANTERORBITv101

কাশী শাস্ত্রার্থ এবং সত্যব্রত সামশ্রমীর নির্লজ্জ মিথ্যাচার

Monday, April 24, 2023

 


কাশী শাস্ত্রার্থের ৩ (তিন)  বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল পৌরাণিকদের দ্বারা - 

 
(১) দয়ানন্দপরাভূতি: সংস্কৃত ভাষায় এই গ্রন্থটি কাশী নরেশের যন্ত্রালয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এতে কিছু না কিছু, অর্থাৎ পণ্ডিতরা স্বেচ্ছাচারিতভাবে স্বামীজির কথা সম্পূর্ণরূপে তাঁর অভিপ্রায়ের বিপরীতে প্রকাশ করেন। এটি সম্পূর্ণরুপে পক্ষপাতযুক্ত ছিল, কারণ গ্রন্থটির নামকরণ থেকে এটিই বিদিত হয় যে প্রকাশকের উদ্দেশ্য ছিল স্বামী দয়ানন্দের পরাজয়ের মিথ্যা ও কাল্পনিক বার্তা দিয়ে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করা।


(২) পৌরাণিক পণ্ডিতগণ 'দুর্জনমতমর্দন' শিরোনামে কাশী শাস্ত্রার্থের আরেকটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৯ পৃষ্ঠার এই বইটি পুরাণের বাক্যে ভরপুর ছিল। সমগ্র গ্রন্থে একটি বেদমন্ত্রও ছিল না। মূল শাস্ত্রার্থের অতিরিক্ত অনেক বাক্য যুক্ত করা হয়েছিল, কিন্তু বেদাদি সত্যশাস্ত্রের প্রমাণ দেখতে পাওয়া যায়নি। পণ্ডিত লেখরামের মতো নীরক্ষীরবিবেকী মনস্বী এই গ্রন্থটির সম্পর্কে একটি টিপ্পণী লিখেছেন - 

'যারা এটি অধ্যয়ন করে তাদের কাছে পণ্ডিতদের অসভ্যতা, অযোগ্যতা, বেদ ও শাস্ত্রের অনভিজ্ঞতা তথা অসত্যের পরাজয় স্পষ্টভাবে প্রকট হয় এবং একইভাবে রাজা সাহেবের মাটির মাধো বা মহাদেব হওয়া সবার কাছে প্রকাশ পায়।' (পণ্ডিত লেখরাম-ঋষি দয়ানন্দের জীবন চরিত্র, পৃষ্ঠা ১৫৬)


(৩) পণ্ডিত সত্যব্রত সামশ্রমী  'প্রত্নকম্রনন্দিনী' এর ডিসেম্বর ১৮৬৯ (সম্বত্ ১৯২৬ বি০ মার্গশীর্ষ মাস) অংক সং ২৮ মে 'কাশীস্থরাজসভায়াং প্রতিমাপুজনবিচারঃ' শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত করেন। এই পত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণসমূহ সম্পূর্ণরুপে সত্য ও প্রামাণিক নয়। যেমন  'জ্ঞানপ্রদায়িনী পত্রিকা'( সংখ্যা ৪ এপ্রিল ১৮৭০ ইং) এর সম্পাদক লিখেছেন -- উক্ত পুস্তক ( মুন্সী হরবংশলাল দ্বারা ১৯২৬ বি০ এ 'সত্যধর্মবিচার' শিরোনামে প্রকাশিত) তথা পত্রিকার ( 'প্রত্নকম্রনন্দিনী' তে প্রকাশিত) বর্ণনায় পরষ্পর কিছু বিরোধ পাওয়া যায়।


এই বিরোধের কারণ হল, সামশ্রমী মহাশয় কাশী নরেশের কৃপার আকাঙ্খা রাখতেন , তাই তিনি পৌরাণিক পক্ষের আশ্রয় নিয়ে স্ববিবরণ প্রকাশ করেছিলেন। যদিও সামশ্রমীর বর্ণনা সম্পূর্ণ অসত্য ছিল না, যেমন 'দয়ানন্দ পরাভূতিঃ' তথা 'দূর্জনমতমর্দন' নামক পুস্তকে ছিল। সামশ্রমী কর্তৃক প্রকাশিত বর্ণনা থেকে এটা ভাল ভাবেই বিদিত হয় যে 'কাশীস্থ পণ্ডিত স্বামীজির প্রশ্নের না তো কোন  উত্তর দিতে পেরেছিল আর না তো মূর্তিপূজার পক্ষে একটিও বেদ-মন্ত্র উপস্থাপন করতে পেরেছিল, কিন্তু বার বার প্রসঙ্গান্তর অবশ্যই করেছিল।

 

  • রাজসভায় শাস্ত্রার্থ নয়-


এই শাস্ত্রার্থ অবশ্যই কাশী নরেশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তবে রাজসভায় নয়। দুর্গা কুণ্ডের নিকট আনন্দ বাগে (আমেঠীর নরেশ রাজা লাল মাধো সিংয়ের স্থান) এই শাস্ত্রার্থ হয়েছিল। পণ্ডিত রঘুনাথ প্রসাদ কোতওয়াল স্বামীজিকে রাজসভায় কাশী নরেশ শ্রী ঈশ্বরীনারায়ণ সিং-এর সামনে শাস্ত্রার্থ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু স্বামীজি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে 'আমার নিয়ম হচ্ছে যে কেউ আমার কাছে আসবে, যতক্ষণ সে চায়, তার সাথে শাস্ত্রার্থ করবে। অন্যথা কোন কারণ ছাড়া আমি কোথাও যাই না। (লেখরাম- ঋষির জীবন চরিত্র, পৃষ্ঠা ১৪৬)। ফলতঃ আনন্দবাগে শাস্ত্রার্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
 

তাই এই শাস্ত্রার্থের বিবরণে সামশ্রমী দ্বারা কাশীস্থ রাজসভায়াম্....  নামকরণ দেয়া কাশীস্থ নরেশকে প্রসন্ন করার জন্য ছিল।


  •  সামশ্রমী মধ্যস্থতাকারী লেখক ছিলেন না-


'প্রত্নকম্রনন্দিনী'-তে সামশ্রমী জী লিখেছেন: 

'কিঞ্চাত্র ন ময়া কোঽপি মধ্যস্থঃ স্বীক্রিয়তে, সর্বেষামেব মিথ্যাচারিত্ব-দর্শনাত্', অর্থাৎ 'আমি কাউকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে স্বীকার করতে পারি না, কারণ সম্প্রতি সমস্ত মানুষ মূর্তিপূজার মিথ্যাচারে লিপ্ত। 


 স্বামীজি দ্বারা এমন বলার পরেও  কোন সে ব্যক্তি যে পণ্ডিত সত্যব্রত সামশ্রমীকে ' উভয় পক্ষের দ্বারা নিযুক্ত বাদী ও প্রতিবাদীর কথা যথাবৎ লেখার জন্য মধ্যস্থের রুপে গণ্য করবে?  

অতঃপর মধ্যস্থতার কথা সামশ্রমী এই শাস্ত্রার্থের বিবরণ প্রকাশের সময় 'প্রত্নকম্রনন্দিনী' পত্রিকায় প্রকাশ না করে  শাস্ত্রার্থের ৩৭ বছর তথা ঋষি দয়ানন্দের মৃত্যুর ২৩ বছর পর তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ 'ঐতরেয়ালোচন' (পৃ. ১২৭)  এ এভাবে লিখেন...


'পরমহো কাশ্যানন্দোদ্যানবিচারে য়ত্র বয়মাস্মঃ মধ্যস্থাঃ, বিশেষতো বাদিপ্রতিবাদিবচসামনু লেখনেঽহমেক এবোভয়পক্ষতো নিযুক্তঃ.......।'


প্রকৃতপক্ষে, কাশী নরেশ বাদী-প্রতিবাদীর কথাগুলি লেখার দায়িত্ব পণ্ডিত সত্যব্রত সামশ্রমীর উপর অর্পণ করেছিলেন যা কাশী নরেশের যন্ত্রালয় থেকে পৌরাণিক পণ্ডিতদের দ্বারা প্রকাশিত 'দয়ানন্দ-পরাভূতি:' গ্রন্থের এই উদ্ধৃতি থেকে জানা যায় 

'সত্যব্রতসামশ্রমিণং প্রতি' 'লিখ্যতাং তাবত্ য়থার্থতো বাদিপ্রতিবাদিবচ'---ইত্যা-জ্ঞাপয়ন্ত- লেখ্যকার্য্যনিযুক্তঃ সামশ্রমী য়থাবৃত্তং শাস্ত্রার্থং লিখতি তথা হি।।


সামশ্রমী কর্তৃক প্রকাশিত বর্ণনায় আরও অনেক ত্রুটি রয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল-


১. কল্মসংজ্ঞার বিষয়ে পন্ডিত লেখরাম, পণ্ডিত দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং পণ্ডিত চন্দ্রধর শর্মা গুলেরী ইত্যাদি সকল  নিষ্পক্ষ মনিষী এটা স্বীকার করেন যে স্বামীজির প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারেনি।

দয়ানন্দ - ব্যাকরণে কল্মসংজ্ঞা কীসের?
এই বিষয়ে বিশুদ্ধানন্দ নীরব হয়ে গেল। তারপর বালশাস্ত্রী এগিয়ে গেলেন এবং বলেছেন- সংজ্ঞা তো দেওয়া হয়নি, কিন্তু একটি সূত্রে ভাষ্যকার উপহাস করেছেন। তখন স্বামী দয়ানন্দ জী বললেন যে কোন সূত্র মহাভাষ্যে সংজ্ঞা করেননি আর উপহাস করেছেন? যদি আপনি জানেন তাহলে মূল উদাহরণসহ সমাধান বলুন? তখন বালশাস্ত্রী ও অন্যরাও কিছু বলেন নি।


এই প্রেক্ষাপটকে সামশ্রমীজী অন্যভাবে বর্ণনা করে কাশিতে অবস্থানরত পণ্ডিতদের পক্ষকে দুর্বল হওয়া থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন-


দয়ানন্দ- ভবতা সর্বম্ পঠিতম্?
বিশুদ্ধানন্দ - সর্বম্
দয়ানন্দ- ব্যাকরণমপি?
বিশুদ্ধানন্দ- তদপি
দয়ানন্দ- কল্মসংজ্ঞা কস্য?
বালশাস্ত্রী- কল্মসংজ্ঞা মহাভাষ্য একত্র পরিহাসনে কথিতা, ন সা প্রকৃতসংজ্ঞা অপিচ প্রকৃতবিচারণে প্রবৃত্তস্ত্বং কথমপ্রকৃতম্ বিচারয়সি?
পুরাণাদীনাম্ বেদবিরুদ্ধতা কথম্? তদেবোদ্ভাবয়।
দয়ানন্দ-শৃণু! শৃণু! ম্লেচ্ছভাষাধ্যয়নাদেঃ পুরাণাদৌ নিষেধোঽস্তি, বেদে ক্বাস্তি?


 এইভাবে সামশ্রমী দ্বারা  কাশিতে অবস্থানরত পণ্ডিতদের প্রতি পক্ষপাত স্পষ্ট হয়েছে। 


২. 'শ্রী হরিকৃষ্ণা ব্যাসঃ জয়নারায়ণতর্কপণ্চাননঃ, শ্রী শিবকৃষ্ণো বেদান্তসরস্বতী হস্তেবমাদয়ো বিদ্বাম্সঃ কতিপয়া বদন্তি বিচারস্তু সম্যক্ ন ভূতঃ পরং দয়ানন্দঃ পরাজিত ইতি সত্যম্।' 

 
সামশ্রমীজী নিজস্ব বিবরণে উক্ত বচন লিখেছেন। শাস্ত্রার্থে  কাশিতে অবস্থানরত পৌরাণিক পণ্ডিতের পক্ষ থেকে উপস্থিত এই বিদ্বানদের সম্মতিগুলো লেখার কী আবশ্যকতা ছিল ? জেনে রাখা ভালো যে উক্ত তিন বিদ্বান পৌরাণিক পক্ষের বিদ্বান ছিলেন। কাশীশাস্ত্রার্থে স্বামী দয়ানন্দের সামনে যে পৌরাণিক বিদ্বান শাস্ত্রার্থের জন্য উপস্থিত ছিল, তাদের মধ্যে ডানদিকে ৬ষ্ঠ স্থানে প০ জয়নারায়ণ তর্কবাচস্পতি, ১৪ নাম্বারে হরিকৃষ্ণা ব্যাস তথা ২৫ নম্বরে শিবকৃষ্ণ বেদান্তী ছিল (দ্র০ প০ লেখরাম ঋষি দয়ানন্দ কা জীবন চরিত্র, পৃ০ ১৪৪)।

কাশী শাস্ত্রার্থে অনেক নিরপেক্ষ ভালো মানুষ ছিলেন তথা বিদ্বান মনীষীও ছিলেন, উনাদের সম্মতিতে সামশ্রমীজীকে উদ্ধৃত করে দেওয়া উচিত ছিল।


৩. সামশ্রমীজী নিজস্ব বিবরণে কাশী নরেশের সম্বন্ধে লিখেছেন -

 'অহমপি বাদিপ্রতিবাদিবচঃ সারাতুবদনে নিযুক্তোঽগ্রসরহঃ পক্ষপাতশূন্য বিচারদত্তকর্ণঃ সংযতোঽস্মি'। অর্থাৎ- ' আমি  বাদি-প্রতিবাদিদের বচন সমূহ পক্ষপাতশূন্য হয়ে মনযোগ দিয়ে শুনবো। 


সেই কাশী নরেশ শাস্ত্রার্থ সমাপ্তি সমাপ্তির পরে বলেন যে-

 'দয়ানন্দ ধৃষ্টো মূর্খশ্চ পরং ন একেন কেনচিত্কোবিদেন পরাজেয়ঃ সংভ্যাবতে। স হি ষঢ্‌ভিঃ কর্ণো নিপাতিত ইতি ন্যায়েন ধ্বস্তবলো নিরুস্তঃ।' অর্থাৎ দয়ানন্দ ধৃষ্ট ও মূর্খ , কিন্তু কোন একজন বিদ্বানের দ্বারা তাকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। ছয়জন যোদ্ধা দ্বারা যেভাবে কর্ণকে পরাজিত করা হয়েছিল ঠিক একইভাবে দয়ানন্দও ধ্বংসযোগ্য করে দেওয়া হয়েছে।"


স্বমীজী'কে ধৃষ্ট এবং মূর্খ বলা কাশী নরেশের অশিষ্টতার চরম সীমা ছিল। আচ্ছা এমন ব্যক্তি কোনভাবে পক্ষপাতশূন্য হতে পারে ?  

তাছাড়া স্বামী দয়ানন্দের সাথে শাস্ত্রার্থ করা ব্যক্তি একজন-দুইজন নয়, ২৭(সাতাশ) ছিল। মহাভারতের কর্ণের উদাহরণ এই বিষয়ে সমুচিত ছিল না‌। অভিমন্যুকে কর্ণ সহ ছয়জন মহারথী অন্যায়পূর্বক হত্যা করেছিল। কর্ণকে কখন সেই মহারথদের দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল ?  এই প্রকারের বিচ্ছিন্ন পাগলের প্রলাপ দ্বারা কাশীরাজের  অসভ্যতা এবং অযোগ্যতা প্রকট হয়। 

পুনরায় এই প্রকার পক্ষপাতগ্রস্ত কাশীরাজের প্রতি প০ সত্যব্রত সামশ্রমীর এই লেখা- 

'শ্রীমন্মহারাজস্তু গভীরধীরশ্চারুচক্ষুর্দ্দষ্ট্‌বাঽঽদ্যন্তম্' অর্থাৎ গম্ভীর বুদ্ধি এবং উত্তম দৃষ্টিশক্তির শ্রীমান মহারাজ

- অর্থলোভী রাজার চাটুকারিতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। রাজ্যের অধীনে বসবাস করা সংস্কৃতের বিদ্বানদের দ্বারা রাজাদের চাটুকারিতাপূর্ণ মিথ্যা প্রশংসার উদাহরণ সংস্কৃত সাহিত্যে কম নেই। কাশী শাস্ত্রার্থের প্রমুখ পৌরাণিক পণ্ডিত বালশাস্ত্রী রাণী ভিক্টোরিয়া দ্বারা ভারতবর্ষের শাসন অধিকার নিজের হাতে নেওয়ার পর তার প্রশংসায় মহাকবি বাণভট্টের প্রসন্ন এবং প্রাঞ্জলশৈলীতে অভিরাম বচনাবলী সংস্কৃততে লিখেছিল, যেটাকে অত্যান্ত আনন্দদায়ক ভাবে প০ বলদেব উপাধ্যায় ' কাশীর পণ্ডিত পরম্পরা' নামের পুস্তকে পৃষ্ঠা ১৯২-এ উদ্ধৃত করেছেন।


  • কাশী শাস্ত্রার্থের সম্বন্ধে পদ্মবিভূষণ পং০ বলদেব উপাধ্যায়ের মিথ্যা লেখন - 

কাশী শাস্ত্রার্থের সম্বন্ধে বাস্তবিকতাকে গোপন রেখে মিথ্যা কপোকল্পিত লেখার জন্য পৌরাণিক পণ্ডিতদের পরম্পরায় পদ্মভূষণ প০ বলদেব উপাধ্যায়ের শীর্ষ স্থান রয়েছে। উনি তার প্রসিদ্ধ বই 'কাশীর পণ্ডিত পরম্পরা' (বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশন বানারসী, প্রথম সংস্করণ ১৯৮৩ খ্রি.) এ নিজের পক্ষ থেকে মিথ্যা মনগড়া বানিয়ে লিখেছেন যে- 

' শাস্ত্রার্থের সমাপ্তির পরে দয়ানন্দ জী চিন্তিত তথা অন্যমনস্ক হয়ে গেছে। পরাজয়ের পীড়া উনার হৃদয়কে আঘাত করতে শুরু করে। স্বামী বিশুদ্ধানন্দ জী  তখন দয়ানন্দের পীঠ নিজের হাত দিয়েবুলিয়ে দিয়ে বনারসী ভোজপুরীতে অনেক ভালোবাসার সাথে বললেন- 'স্বামী,  কিছুদিন কাশীর পণ্ডিতদের সাথে থেকে কিছু শিখুন । উদাস হয়ে থাকলে হবে না।' বিশুদ্ধানন্দ জী প্রেমভরা কথা শুনে দয়ানন্দ জী হাসতে লাগলেন, প্রসন্ন হলেন এবং এই প্রসন্ন বাতাবরণে এই ঐতিহাসিক শাস্ত্রার্থের সমাপ্তি ঘটলো। ' (কাশী কে পণ্ডিত পরম্পরা (দ্বিতীয় ভাগ) পৃ০ ৪২)।

প০ বলদেব উপাধ্যায় কাশী শাস্ত্রার্থের এই বিবরণের উপর ভিত্তি করে গ্রন্থ হিসেবে প০ সত্যব্রত সামশ্রমী দ্বারা 'প্রত্নকম্ননন্দিনী' তে প্রকাশিত বিবরণ মেনেছেন এবং এই বিবরণের পুনরায় প্রকাশিত করে সর্বসুলভ করানোর জন্য স্বামী কেশবপুরীজী কে ধন্যবাদ দিয়েছেন। 

উপাধ্যায়জীর দ্বারা প্রমাণ রুপে নির্দিষ্ট 'সচ্চা কাশী শাস্ত্রার্থ' (পণ্ডিত মথুরাপ্রসাদ দীক্ষিত দ্বারা প্রকাশিত) এর স্বামী কেশবপুরীজী দ্বারা পুনর্মুদ্রিত সংস্করণ আমার কাছে আছে, কিন্তু এটাতে কোথাও উক্ত উদ্ধৃতি নাই, যা উপাধ্যায়জী লিখেছেন। এর দ্বারাই পণ্ডিত বলদেব উপাধ্যায়জীর মিথ্যা লেখা উন্মোচিত হয়ে যায়। পণ্ডিত বলদেবজী উপাধ্যায় এতো অধিক অসত্য লেখার পরও লজ্জিত হননি।

 

যখন স্ব০ পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসকজী 'বেদবাণী' তে নিজের লেখার দ্বারা কাশী শাস্ত্রার্থ এর বাস্তবিক বিবরণ সম্পর্কে উনাকে অবগত করালে উপাধ্যায়জী বেদবাণী তে লেখেন যে 

'আমি কাশী শাস্ত্রার্থ সম্বন্ধে আর্যসামাজিক সাহিত্য পাইনি। আপনার (মীমাংসকজী) দ্বারা পাঠানো সামগ্রীর প্রয়োগ নিজের পুস্তকের পরবর্তী সংস্করণে করবো।' 

কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। কারণ বলদেব উপাধ্যায়জীর কাছে পণ্ডিত যুধিষ্ঠির মীমাংসকজী দ্বারা কাশী শাস্ত্রার্থ বিষয়ক পাঠানো সামগ্রী পূর্বেই বিদ্যমান ছিল। তিনি (উপাধ্যায়জী) নিজের এই পুস্তক 'কাশী কি পাণ্ডিত্য পরম্পরা' (দ্বিতীয় ভাগ) এর পৃষ্ঠা ৩৭ এ বেদবাণী এর বিশেষাংকে (নভেম্বর ১৯৭০ ইং) কাশী শাস্ত্রার্থে উপস্থিত ৪০ চল্লিশ বিদ্বানদের নামের তালিকার সাথে সহমত প্রকাশ করেছেন এবং শাস্ত্রার্থে জনতার উপস্থিতি ৬০ ষাট হাজার সংখ্যাকে 'অতিশয়োক্তি' লিখেছেন। 

শুধু এটাই নয় উপাধ্যায়জী স্পষ্টতঃ নিজের এই গ্রন্থে বেদবাণী এর নভেম্বর ১৯৭০ ইং অংকে, পৃষ্ঠা-১৫ এর উল্লেখ করেছেন তারপরও 'বেদবাণী' তে নির্জলা  মিথ্যা লেখায় তিনি ক্ষান্ত হননি যে 'আমি কাশী শাস্ত্রার্থ এর বিষয়ে অন্য সামগ্রী পাই নি, অনেক প্রচেষ্টা করায় লালা লাজপত রায় এর লেখা এক উর্দু পুস্তক পাই।' 

উপাধ্যায়জীর এই মিথ্যা লেখাকে স্ব০ মীমাংসকজী সহজ সাধু স্বভাবের কারণে সত্য মেনে নিয়েছেন। যখন আমি এই সম্বন্ধে অনুসন্ধান করি এবং সম্পূর্ণ তথ্য সম্পর্কে অবগত হই তখন আমার মিত্র পণ্ডিত প্রশস্যমিত্র শাস্ত্রীর সাথে আনুমানিক আজ থেকে ১৩-১৪ বছর পূর্বে [ এই লেখা ১৯৯৮ ইং এর। অতএব উপাধ্যায়জীর সাথে দেখা করার ঘটনা ১৯৮৪ ইং এর বোঝা উচিত ] উপাধ্যায়জীর সাথে দেখা করতে তার আবাসস্থানে যাই তো অনেক কষ্টে তিনি দেখা করতে রাজি হন। কিন্তু কথা শুরু হতেই তার পুত্র বা পৌত্র আসে আর আমাদের উপর রাগান্বিত হয়ে তার পিতা বা পিতামহ মহোদয়কে প্রায় ঠেলে জোরপূর্বক ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। এটা পদ্মবিভূষণের মতো সম্মানিত পদবী দ্বারা বিভূষিত বারাণসীর পণ্ডিতদের মধ্যে অগ্রগণ্য বিদ্বানের অসদ্ ব্যবহার আর মিথ্যা লেখার লজ্জাস্পদ প্রসঙ্গ। 


শেষে আমি প্রসিদ্ধ সনাতন ধর্মাবলম্বী বিদ্বান, ব্যাকরণ, কাব্য, পুরাতত্ত্ব এবং ভাষাবিজ্ঞানের মর্মজ্ঞ ও হিন্দি সাহিত্যের অমর শিল্পী পণ্ডিত চন্দ্রধর শর্মা গুলেরী এর দ্বারা কাশী শাস্ত্রার্থ এর সম্বন্ধে তার লেখার আবশ্যক উদ্ধৃত করে এই প্রসঙ্গকে সমাপ্ত করছি-


' আর না এই সময় আসবে যে এক বেদপাঠী গুজরাতী সন্ন্যাসী কাশীর পণ্ডিতদের ঘায়েল করে ছেড়ে দিবে ---- স্বামী দয়ানন্দ ধূমকেতুর মতো কাশীতে এসে পৌঁছায় এবং অটল সমুদ্রের মতো কাশীর সৈকত তার আসায় গোড়া পর্যন্ত নড়ে ওঠে। মানুষ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় যে স্বামী যেখানেই মন্ত্রপাঠকারী বৈদিকদের সাথে দেখা করে সেখানেই তাদের ভাষ্যব্যাপী ব্যাকরণের উপর স্থিত অর্থজ্ঞান দ্বারা বাকরুদ্ধ করে দেয় আর যেখানেই নব্য ব্যৈয়াকরণ দেখে সেখানেই তিনি 'ঘটো ঘটঃ' এর বাণ নিক্ষেপ করে তাদের নিজের সহজ ব্যাকরণের কুশলতায় হাবুডুবু খাওয়ায়। যিনি [অর্থাৎ স্বামী দয়ানন্দজী] নব্য নির্দয়তার সাথে [পণ্ডিতদের] 'কল্মসংজ্ঞা' তে জড়জড়িত করে দিয়েছেন আর যাদের সম্পূর্ণ শতপথ ব্রাহ্মণ কণ্ঠস্থ ছিল তাদের একটি শব্দের অর্থ জিজ্ঞেস করে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছেন।' ('মর্যাদা' পত্রিকা, ভাগ-৩, পৃষ্ঠা ১৫২-১৫৮, সাল ১৯১১ ইং)।